কেন বাংলাদেশে বাজাজ মোটরসাইকেল এত বেশি জনপ্রিয়?
This page was last updated on 15-Jul-2024 02:40pm , By Ashik Mahmud Bangla
আপনারা টাইটেল দেখে বুঝতেই পারছেন যে এই লক ডাউনে আমরা কিছু ইনভেস্টিগেশন করেছি। আর সেটা হচ্ছে গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে কেন বাজাজ মোটরসাইকেল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
বাংলাদেশে কেন বাজাজ মোটরসাইকেল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
এই বিষয়টি বোঝার জন্য আপনাকে বাংলাদেশী বাইকারদের সাইকোলজি বুঝতে হবে। প্রতিটি দেশের বাইকারদের বাইকের প্রতি আকর্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ইন্ডিয়ার বাইকাররা সাধারণত মাইলেজ এর ক্ষেত্রে একটু বেশি নজর দিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি যদি বাংলাদেশের দিকে লক্ষ্য করেন তবে দেখতে পাবেন যে এখানের বাইকাররা স্টাইল ও লুকস এর ক্ষেত্রে বেশি নজর দিয়ে থাকেন। এখানেই বাজাজ অন্যান্যদের থেকে বাজাজ সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। আপনি যদি দেখেন তবে দেখতে পাবেন যে, Bajaj Pulsar 150 বাইকটি বাইকারদের মাঝে স্টাইলিং এর ক্ষেত্রে একটা রেভিলিউশন নিয়ে এসেছে। ২০০৬ সালে UG3 যখন লঞ্চ করা হয় তখন বাজাজ স্টাইলিং কে অন্য একটি লেভেল এ নিয়ে যায়। বাইকটিতে দেয়া হয়েছিল আলাদা হেডল্যাম্প, ইন্ডিকেটরস, সেলফ ক্যান্সেলিং ইন্ডিকেটরস (ওই সময়ে অল্প কিছু গাড়িতে এই ফিচারটি ছিল) এলইডি টেইললাইটস, শার্প সাইড প্যানেল এবং এর আগের ভার্সনের সাথে কম্পেয়ার করে দেখলে বাইকটি অন্যান্যদের থেকে অনেক বেশ এগিয়ে ছিল।
UG3 এর ১৫০ সিসি বাইকাটি বাংলাদেশ এত বেশি জনপ্রিয় ছিল যে, ওই সময়ে বাজাজ পালসারের প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে খুব কম বাইক ছিল বাংলাদেশের বাজারে । এছাড়া আর অনেক গুলো মডেল ছিল বাজেটের মধ্যে যেমন, CT100 Platina (১০০ সিসি সেগমেন্ট) এবং ডিস্কভার ১০০-১৩৫ সিসি সেগমেন্টে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। বাজাজের এই সফলতার কারণ হচ্ছে গত ২০ বছর ধরে তারা স্টাইলিং এর সাথে যুক্ত করেছে বিল্ড কোয়ালিটি, যা বাজাজ পালসার কে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বাজাজ এর অন্যতম সফলতার কারণ হচ্ছে বাজাজের বেশি ভাগ বাইক গ্রাম্য এলাকাতে বেশি জনপ্রিয় এর লম্বা সিটের জন্য। আপনি ভাল ভাবে খেয়াল করে দেখবেন যে এক মাত্র Pulsar NS160 ছাড়া বেশির ভাগ মডেলের সিট হচ্ছে লম্বা, যাতে এক সাথে তিনজন মানুষ বসা যায়। বরিশাল এলাকাসহ অনেক গ্রাম্য এলাকাতে মোটরসাইকেল ট্যাক্সি অনেক জনপ্রিয় যাতে এক সাথে তিনজন লোক নেয়া যায়।
তিন চার জন লোকের ওজন কম করে হলেও ২২০+ কেজি এর বেশি হবে। এত ওজন নেয়ার জন্য বাইকের শক্ত ও মজবুত চেসিস এবং অনেক ভাল সাসপেনশন। বাজাজের সকল বাইকেই এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আছে, এমনকি NS160 (সিঙ্গেল ডিস্ক) এর চাকা চিকন হওয়া সত্ত্বেও এর কন্ট্রোলিং তেমন কোন প্রভাব পরেনি। কারণ এর রেয়ার মনোশক সাসপেনশন এবং পেরিমিটার ফ্রেম। Uttara Motors Ltd হচ্ছে বাংলাদেশে বাজাজ মোটরসাইকেলের একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটর, তারা তাদের নেটওয়ার্ক অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩০০ এর বেশি ডিলার রয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে।
Also Read: বাজাজ মোটরসাইকেল ক্যাশব্যাক অফার । ১০০% ক্যাশব্যাক
এছাড়া বাজাজের রয়েছে ৪০০ এর বেশি সার্ভিস পয়েন্ট সেন্টার। তাই কাস্টোমারদের কাছে বাইক সার্ভিসং অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। স্পেয়ার্স পার্টস এর কথা যদি বলা হয়, তবে প্রতিযোগিদের চেয়ে বাজাজের বাইকের পার্টসের দাম তুলনামুলক ভাবে কম। গ্রামের এলাকার দিকের কিছু ডিলার রয়েছেন যারা কাস্টোমারদের কিস্তি সুবিধার মাধ্যমে বাইক দিয়ে থাকেন, যা বাইকারদের মাঝে বাজাজ কে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
সবশেষে, এখন আসা যাক রিসেইল ভ্যালু নিয়ে কথা। এখানেই বাংলাদেশের কাস্টোমাররা যখন ই তারা গাড়ি, বাইক বা মোবাইল ফোন কিনলেও তার রিসেইল ভ্যালুর কথা চিন্তা করে থাকে। যদি আমাকে কিছু দিন পর এটি বিক্রি করতে হয়, তবে আমি কেমন দাম পেতে পারি। সেদিক থেকে হিসেব করলে এখানেও বাজাজ অন্যান্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। বাজাজ মোটরসাইকেল বাংলাদেশ প্রায় ২৫ লাখ এর উপর মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে এবং তাদের মধ্যে বাজাজ পালসার রয়েছে প্রায় ৫,০০,০০০ ইউনিটস। গত বছরের হিসেব অনুযায়ী বাজাজ গত বছর ইন্ডিয়াতে সেলস এর দিক থেকে ৪র্থ ছিল এবং বাংলাদেশে তারা নাম্বার ১।
ইন্ডিয়াতে বাজাজের প্রোডাক্টের অনেক বড় একটি লাইন আপ রয়েছে। শুধু মাত্র বাজাজ পালসার সিরিজেই ১২৫সিসি থেকে ২২০সিসি পর্যন্ত প্রোডাক্ট রয়েছে। আমরা জানি অনেক বাংলাদেশী বাইকার রয়েছেন যারা Bajaj RS200 ক্রয় করতে চান আবার অনেক বাইকার চান Pulsar 220 DTsi বাইকটি, তবে বর্তমান পরিস্থিতি মানে আমাদের সিসি লিমিটেশন এর কারনে এটি সম্ভব হচ্ছে না। আশা করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সরকার সিসি লিমিটেশন ধীরে ধীরে আরও উপরে তুলে দিবে, যাতে করে বাইকাররা আরও অনেক বেশি সিসির বাইক রাইড করতে পারেন।