বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি ট্যুরিং মোটরসাইকেল

This page was last updated on 18-Aug-2024 02:21am , By Shuvo Bangla

বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি ট্যুরিং মোটরসাইকেল

আজকাল বাংলাদেশের অনেক মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীই তাদের বাইক নিয়ে হরহামেশাই ট্যুরে যাচ্ছেন। তাই তারা বাজারে প্রচলিত ট্যুরিং মোটরসাইকেলগুলো সম্পর্কে অহরহ প্রশ্নও করছেন। তাই আপনাদের সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আজ আমরা হাজির হয়েছি আমাদের ‘বাংলাদেশের সেরা কয়েকটি ট্যুরিং মোটরসাইকেল’ নিয়ে।

-Most-Durable-Touring-Bike

আপনারা জানেন, মোটরসাইকেল নিয়ে ট্যুরে গেলে সেটার ওপর প্রচুর চাপ পড়ে। তাই ট্যুরিংয়ের উপযোগী বাইকগুলোকে শক্ত-সমর্থ, টেকসই এবং রাফ ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারেও ভালো পারফর্ম্যান্স দিতে হয়। তাই বাইকাররা ট্যুরের জন্য টেকসই বাইকই খোঁজ করেন। এর পাশাপাশি সর্বোচ্চ কন্ট্রোল, কমফোর্ট ও নিম্ন রক্ষণাবেক্ষণ খরচও ট্যুরিং বাইকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই সব বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে আমরা বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত বাইকগুলো থেকে তিনটি বাইককে আপনাদের কাছে সেরা ট্যুরিং বাইক হিসেবে মূল্যায়নের জন্য উপস্থাপন করেছি। আপনি যদি বাইক নিয়ে ট্যুর দিতে পছন্দ করেন, তাহলে এদের মধ্য থেকে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। 

yamaha-fazer-full-specification

ইয়ামাহা ফেজার এফআই—বাংলাদেশের সেরা ট্যুরিং মোটরসাইকেল ১৫০ সিসি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত বাইকগুলোর মধ্যে ইয়ামাহা ফেজার সবচেয়ে টেকসই বাইকগুলোর একটি। ইয়ামাহা ফেজার ২০১০ থেকে বাংলাদেশের বাইকারদের বাইক নিয়ে ট্যুরে যাওয়ার পিছনে উৎসাহ জুগিয়ে আসছে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের বাজারে আসার পর থেকেই ইয়ামাহা ফেজার সেরা অবস্থান দখল করে নিয়েছে। এটা ৪ স্ট্রোক এয়ার কুল্ড ইঞ্জিনের সেমি ফেয়ারড সেমি নেকেড একটি বাইক। আগের ভার্সনটির ইঞ্জিন ডিসপ্লেসমেন্ট ছিলো ১৫৩ সিসি এবং এতে মিকুনি কার্বুরেটর ছিলো। কিন্তু নতুন ভার্সনটির ডিসপ্লেসমেন্ট ১৪৯ সিসি এবং এটাতে ফুয়েল ইঞ্জেকশন রয়েছে। সেজন্যই নতুন ভার্সনটিকে ইয়ামাহা ফেজার এফআই বলা হয়। 

 

yamaha-fazer-fi-price-in-bangladesh

ইয়ামাহা ফেজার এফআই এর ইঞ্জিনও ৪ স্ট্রোক এয়ার কুল্ড, কিন্তু এটার ইঞ্জিন ট্যুরিংয়ের জন্য আরো ভালো করে টিউন করা হয়েছে। এটাতে ইয়ামাহার সর্বাধুনিক ব্লু কোর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ধোঁয়া নির্গমন কমায় ও পরিবেশ বান্ধব এবং জ্বালানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে। আর ফুয়েল ইঞ্জেকশন ব্যবস্থা থাকায় এটা জ্বালানি সাশ্রয়ও করে।

নতুন ইয়ামাহা ফেজার এফআই এর সিটিং, কন্ট্রোলিং ও অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন আরো উন্নত করা হয়েছে। তাছাড়া পূর্বের ভার্সনের টেকসই, পারফরমেন্স ও কোয়ালিটিও এই নতুন ফেজারে রয়েছে। তাই সবদিক মিলিয়ে এটি ভ্রমণপিপাসুদের ট্যুরিংয়ের জন্য আরো বেশি উপযোগী হয়ে উঠেছে। তাই বাংলাদেশের ট্যুরিং মোটরসাইকেলের তালিকায় ইয়ামাহা ফেজার এফআই সবার উপরে স্থান পেয়েছে।

Bajaj-Pulsar-AS-150-Top-Speed

বাজাজ পালসার এএস ১৫০—বাংলাদেশের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিং মোটরসাইকেল বাংলাদেশে ১৫০ সিসি ট্যুরিং মোটরসাইকেল সেগমেন্টে বাজাজ অটো গতবছর একটি নতুন বাইক যোগ করেছে। তারা এএস ব্যানারে একটি নতুন ট্যুরিং মোটরসাইকেল বাজারে এনেছে, যা একটি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বাইক। বাজাজ পালসার এএস ১৫০ হচ্ছে বাজাজের সেই নতুন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিং মোটরসাইকেল। বাজাজ পালসার এএস ১৫০ পুরোপুরি অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিংয়ের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এটা একপ্রকার ডুয়েল স্পোর্টস অ্যাডভেঞ্চার মোটরসাইকেল, যা অনেকটা কেটিএম ডুয়েল অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ দ্বারা প্রভাবিত। এটার ইঞ্জিন, ফ্রেম, ডিজাইন সবই মোটামুটি অস্ট্রিয়ার মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড কেটিএম-এর আদলে তৈরি।

Bajaj-Pulsar-AS-150-Specifications

 আসলে এই বাইকটি ২০০ সিসি ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিনের, যা পালসার এনএস২০০ এর নতুন ধারায় তৈরি করা হয়েছে। আর এএস ১৫০ হচ্ছে এর ইকোনোমিক ১৫০ সিসি ভার্সন, যেটা বাংলাদেশে এসেছে। আর এএস ১৫০’র এয়ারকুল্ড ইঞ্জিনটি অ্যাডভেঞ্চার বাইক হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। এই ৪ ভাল্ব ডিটিএস-আই ইঞ্জিনটি সর্বোচ্চ ১৭ পিএস ক্ষমতা উৎপাদন করতে পারে। তাছাড়া এর টুইন স্পার্ক টেকনোলজি যেকোনো আরপিএম-এ সমানতালে কমবাশন চালাতে পারে, যা দ্রুত অ্যাক্সিলারেশনের জন্য খুবই জরুরি। বাজাজ পালসার এএস ১৫০ অনেকটা ডুয়েল স্পোর্টস বাইক, যেটাতে তুলনামূলকভাবে গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশিই রাখা হয়েছে। পাশপাশি এটাতে আপরাইট সিটিং পজিশন ও আপরাইট হ্যান্ডেলবার রয়েছে। ফলে খারাপ রাস্তাতেও দীর্ঘযাত্রায় আরামেই যাওয়া যায়। বাইকটি অফ রোডেও ভালোই চলতে পারে।


বাংলাদেশের বাজারে থাকা বাইকগুলোর মাঝে পালসার এএস ১৫০ অ্যাডভেঞ্চার রাইডারদের সকল প্রয়োজনই যথাযথভাবে মেটাতে পারবে। সেই সঙ্গে বাজাজ পালসারের সফলতা ও দেশব্যাপী বিক্রয়োত্তর সেবার সুবিধা এই অ্যাডভেঞ্চার বাইকের ওপর মানুষের বিশ্বাস আরো জোরদার করেছে। তাই সব কিছুর সংমিশ্রণে বাজাজ পালসার এএস ১৫০ সেরা ট্যুরিং বাইকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

Bajaj-avenger-street-150-top-speed

বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৫০—বাংলাদেশের স্ট্রিট ট্যুরিং মোরটসাইকেল ট্যুরিং বাইক ক্যাটাগরিতে বাজাজ অটো বাংলাদেশে নতুন একটি ১৫০ সিসি বাইক বিক্রয় শুরু করেছে। নতুন এই ট্যুরিং বাইকটি হচ্ছে বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৫০। এটা বাজাজ অটোর স্ট্রিট মডেলের ক্রুজার বাইক। বাজাজ অ্যাভেঞ্জার ২২০, যেটা আবার কাওয়াসাকি এলিমিনেটর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত, সেটারই কনিষ্ট ভ্রাতা বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৫০! কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের বাজারে আসা বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৫০ বিশেষভাবে স্ট্রিট ট্যুরিংয়ের জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

Bajaj-Avenger-Street-150-Specifications

নতুন এই ক্রুজারটিতে পালসার ১৫০ ইউজি৪.৫-এর এয়ার কুল্ড ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিনটিই লাগানো হয়েছে। তাই পালসার ১৫০ সিরিজের উত্তরসূরি হিসেবে এটার প্রতিও আপনি যথেষ্ট ভরসা রাখতে পারেন। তাছাড়া ক্রুজার বাইক হিসেবে দীর্ঘযাত্রার উপযোগী করে এটার ইঞ্জিনকে টিউন করা হয়েছে।


অবশ্য বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৫০ মাত্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশে আসার কারণে এটার টেস্ট রাইডের অভিজ্ঞতা এখনো অর্জন করতে পারিনি। তবে যতোটুকু বোঝা যাচ্ছে, এটা বাংলাদেশের বাজারে আরেকটি সফল ট্যুরিং বাইক হতে যাচ্ছে।

 

Bangladesh-best-touring-bike

প্রিয় পাঠক ও ভ্রমণ পিপাসু, এই ছিলো বাংলাদেশের ট্যুরিং মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আয়োজন। দুঃখের বিষয় হলো, ইঞ্জিনের সিসি সীমাবদ্ধতা ১৫৫ সিসি পর্যন্ত হওয়ায় আমাদের দেশে খুব অল্প কয়েকটি ট্যুরিং বাইকই বাজারে আসতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা ভ্রমণ পিপাসুরা যেকোনো বাইক হলেই সেটা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। তারপরও আপনি যদি বিশেষভাবে ট্যুরিংয়ের প্রতি আগ্রহী হন, তবে এই তালিকা থেকে পছন্দ মতো যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশের সেরা ট্যুরিং বাইক নিয়ে আপনার নিজস্ব মতামতও জানাতে পারেন। বাইক বিষয়ে আরো আপডেট জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে। আর্টিকেলটি পূর্বে ইংরেজিতে প্রকাশ করা হয়েছিলো।