নিরাপদ মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় রাইডার ফিটনেস সমূহ
This page was last updated on 20-Nov-2024 08:49am , By Saleh Bangla
মোটরসাইক্লিং সারাবিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি আউটডোর এক্টিভিটি। এটি কেবল প্রাত্যহিক চলাচলেই একটি কার্যকরী বাহন নয় বরং এটি রোড এ্যাডভেঞ্চার ও একধরণের স্বাধীনতার স্বাদ পাবারও চমৎকার একটি উপায়। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, মোটরসাইক্লিং অবশ্যই একটি ডিমান্ডিং এক্টিভিটি, যাতে একজন রাইডারের শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতা উভয়েরই অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এটি সরাসরি রাস্তায় চলাচল করা সবার নিরাপত্তার সাথেও সম্পর্কিত। তো সেইসূত্রেই, আজ আমরা নিরাপদ মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় রাইডার ফিটনেস সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো।
নিরাপদ মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় রাইডার ফিটনেস সমূহ
মোটরসাইকেল রাইডিং আক্ষরিক অর্থেই বেশ টাফ একটি এক্টিভিটি। এতে একজন রাইডারের সক্রিয় শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা উভয়েরই প্রয়োজন পড়ে। একটি চার চাকার অথবা তিন চাকার গাড়ি চালানোর বিপরীতে, মোটরসাইকেল চালাতে রাইডারের শরীর ও মনের উচ্চতর প্রয়াস ও সক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে। কেননা, মোটরসাইকেল চালানোর জন্য রাইডারকে যেমন দ্রুত শারীরিক মুভমেন্ট ও দ্রুত রিফ্লেক্স দেখাতে হয়, তেমনি তার মানসিক সহনশীলতা এবং ধৈর্য্যও অপরিহার্য। আর এছাড়াও রাইডারের আরো কিছু বিশেষ ফিটনেস থাকাও জরুরি সেগুলি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
কোর বডি স্ট্রেংথ ও স্ট্যাবিলিটি
নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য একজন রাইডারের মোটামুটি শক্ত-সামর্থ পেশিশক্তি ও শারিরীক স্ট্যাবিলিটি থাকা বাধ্যতামূলক। শক্তিশালী বডি কোর একজন রাইডারের জন্য সঠিক শারীরিক শক্তি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, যা যেকোনো ধরণের রাস্তায় মোটরসাইক্লিংয়ে বৈচিত্র্যময় রাইডিং এবং কন্ট্রোলিং কন্ডিশন ট্যাকল করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, টাইট ও টেকনিক্যাল ট্র্যাফিক কন্ডিশনে চলার সময়, আনপ্রেডিক্টেবল টেরেইনে, টাইট কার্ভের মধ্যে, পাহাড়ী এলাকায়, এবং আকস্মিক বাজে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সময় একটি মোটরসাইকেল যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রন করার জন্য সত্যিকারের দৃঢ় শারীরিক সক্ষমতা এবং স্ট্যাবিলিটি প্রয়োজন পড়ে। তাই একজন ভালো রাইডারের এই ফিটনেস থাকা জরুরী।
আপার বডি ফিটনেস ও স্ট্যাবিলিটি
মোটরসাইকেল সঠিকভাবে এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে চালাতে একজন রাইডারের আপার বডি বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। যেমন: মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলবার দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রন করা, থ্রোটল কন্ট্রোল করা, কার্যকরভাবে ব্রেক করা, এবং বডি কন্ডিশনিংয়ের মাধ্যমে মোটরসাইকেল ব্যালান্স করা, প্রভৃতি কাজের জন্য রাইডারের আপার বডি স্ট্রেংথ ও স্ট্যাবিলিটি বিশেষভাবে প্রয়োজন পড়ে। তাই, সঠিক রাইডিং ভঙ্গি বজায় রেখে পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে মোটরসাইকেল চালাতে রাইডারের কাঁধ, হাত, বাইসেপ এবং আপার ব্যাক-মাসল শক্তিশালি হওয়া প্রয়োজন।
লোয়ার বডি ফিটনেস
মোটরসাইকেল রাইডিংয়ে একজন রাইডারের লোয়ার বডি ফিটনেস থাকাটাও যথেষ্ট জরুরী একটি বিষয়। কেননা মোটরসাইকেল রাইডিং ও কন্ট্রোলিংয়ে শরীরের নীচের অংশ, বিশেষ করে কোমর, উরু, পায়ের পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শরীরের নিচের এই অংশগুলি রাইডারকে সঠিকভাবে বসতে, শরীরের উপরের অংশকে সঠিক ভঙ্গিতে রাখতে, ফুট লিভারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সেইসাথে চ্যালেঞ্জিং রাইডিং কন্ডিশনে দাড়িয়ে চালাতেও সাহায্য করে। আর সবমিলিয়ে শরীরের এই অংশটিই যাবতীয় শক এ্যাবজর্বের কাজটি করে এবং আপার বডিকে স্ট্যাবল রাখতে সাহায্য করে।
কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস
কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ফিটনেস কনসার্ন। কেননা রাইডাররা প্রাত্যহিক ব্যস্ত দিনগুলিতে রাইডের সাথে সাথে অনেকসময়েই দীর্ঘ দূরত্বের রাইড বা ট্রাভেলে বের হন। আর স্ট্রেসফুল লং রাইড ও সাধারন দীর্ঘ সময়ের রাইডগুলোতে শারীরিক সক্ষমতার সাথে সাথে বিশেষভাবে কার্ডিওভাসকুলার স্ট্যাবিলিটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
কার্ডিওভাসকুলার স্ট্যাবিলিটি বা কার্ডিও ফিটনেস একজন রাইডারকে প্রয়োজনীয় স্ট্যামিনা যোগায়, ক্লান্তি কমায়, এবং রাইডারকে বিরক্তিকর ট্র্যাফিক কন্ডিশনেও যথেষ্ট সজাগ ও প্রতিক্রিয়াশীল থাকতে সাহায্য করে। আর এরফলে একজন রাইডার রাস্তায় যেকোনো বাজে পরিস্থিতিকেও স্মার্টভাবে মোকাবেলা করতে সমর্থ হন। আর কার্ডিও ফিটনেসই মানসিক স্বচ্ছতা, রিফ্লেক্স, ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
শার্প আই ভিষন ও পেরিফেরাল ফিটনেস
ভাল দৃষ্টিশক্তি এবং শক্তিশালী পেরিফেরাল ভিষনও মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য অপরিহার্য একটি ফিটনেস কনসার্ণ। এই বিশেষ ফিটনেসটি রোড সারফেস কন্ডিশন দেখতে, অবসট্যাকল চিহ্নিত করতে, ট্র্যাফিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে অতীব জরুরী। সেইসাথে দিনে ও রাতে উভয় সময়েই দূর থেকে রোড সাইন দেখতে ও চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পরিস্কার পেরিফেরাল ভিষন অতীব জরূরী। রাইডারের চোখের এই বিশেষ ফিটনেসটি আক্ষরিক অর্থে তাকে সঠিক পথে থাকতে এবং রাস্তায় বাজে বা আকস্মিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতা
একজন ভালো মোটরসাইকেল রাইডারের অত্যন্ত সাউন্ড মেন্টাল হেলথ ও স্ট্রেস নেবার সক্ষমতা থাকতে হয়। মোটরসাইকেল চালাতে শারিরীক সক্ষমতার পাশাপাশি খুব ঠান্ডা মাথার মানষিকতা থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। কেননা মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে উচ্চস্তরের পরিস্থিতিগত সচেতনতার যেমন প্রয়োজন হয়, তেমনি রাইডারকে তাৎক্ষনিক পরিস্থিতিতে প্রায়শই মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই দরকারী সিদ্ধান্ত নিতে ও প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়। অধিকন্তু, লং রাইডিং কন্ডিশনে একজন রাইডারকে শান্ত থেকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। তাই রাইডারের মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্ট্রং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতা অপরিহার্য।
তো এই হলো নিরাপদে মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য রাইডারদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কিছু ফিটনেস কনসার্ন। যেকোনো ধরনের রাইডে রাইডারদের জন্য উদ্বেগহীন, নিরাপদ, এবং আনন্দদায়ক মোটরসাইক্লিংয়ের জন্য এসব ফিটনেস থাকা অতীব জরুরী। এসব ফিটনেস একজন রাইডারকে নিরাপদে বাইক রাইডে যেমন সহায়তা করে তেমনি রাইডিংয়ে যেকোনো বাজে বা আকস্মিক বিপদের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিও কমায় বরং রাস্তার অন্যান্যদেরও নিরাপদ রাখে। সুতরাং প্রত্যেক রাইডারকে তাদের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে তবেই পথে নামা উচিৎ।