TVS Ntorq 125 স্কুটার নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা - মুন্না

This page was last updated on 01-Aug-2024 03:34am , By Shuvo Bangla

আমি মোঃ শফিউল আজম মুন্না , চট্রগ্রামের চান্দগাঁও এ বাস করি । আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো TVS Ntorq 125 বাইকের মালিকানা রিভিউ । আমার মতে সব ছেলেদেরই জীবনে কোন না কোন সময় বাইকের  স্বপ্ন থাকে , যেটা আমারও ছিল। 

tvs ntorq 125 red

বাবা মারা যাওয়ার পর সেই স্বপ্ন একেবারে মাটিচাপা দিয়ে ছিলাম,পরবর্তীতে নিজের উপার্জনে সংসার চালানোর পর আমার ব্যবসা ভাল হতে থাকল, আম্মাকে ঐ বাইকের কথা বলি তখন তিনি একেবারে না করে দেন,বলেন তুই আমার বড় ছেলে,বাইকের কারনে কোন বিপদ হলে আমাদের কি হবে । তখন আবারও চুপসে যায় স্বপ্নটা, এখন আমার মেয়েকে নিয়ে মাদ্রাসায় যেতে আসতে যখন রিক্সার আসা যাওয়ার ঝামেলায় পরলাম, তখন বাধ্য হয়ে মা'কে বাইকের কথা বলি । 

তখন মা রাজি হন তবে বলেন বাইক না স্কুটি নিতে পারব, এই বয়সে এসেও যে এই স্কুটি নিতে রাজি হন, তাতেই আমি খুশি হয়ে গেলাম। তো স্কুটি কিনতে টিভিএস এর শোরুম আমাদের মুরাদপুর টি ভি এস গ্যালারীতে গেলাম,তখন চোখে পড়ল টি ভি এস রেইস এডিশন এর এনটর্ক স্কুটারটি।

এইটা নতুন মডেল, বেশি পছন্দ হয়েছিল এর আউটলুকিং ,তখন অন্যরকম একটা ভাললাগা কাজ করছিল মনে। আমার উচ্চতা অনুযায়ী এইটা আমার বেষ্ট মনে হল। আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারতাম না তাই শো-রুমের একজনকে দিয়ে ১,৮৬,০০০/= দিয়ে কিনে বাসায় নিয়ে আসলাম।

tvs ntorq 125 red scooter

এটি ১২৪.৮ সিসি এয়ার কুলড ইঞ্জিন ফোর স্ট্রোক, ব্যাটারী ১২ভোল্ট, ৪ এ্যাম্পিয়ার, ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ৯.৩৮ পি,এস, ৭০০০ আর,পি,এম,৩ ভাল্ব যার কারণে অন্যান্য স্কুটারের তুলনায় এটার শক্তি অনেক বেশি। 

এটার কার্বড ওজন ১১৬ কেজি। সামনের ব্রেক ডিস্ক সিস্টেম, পিছনের টা ড্রামব্রেক,ফুয়েল ক্যাপাসিটি ৫.৮ লি: যদি আর একটু বাড়তি দিত লং জার্নিতে তেলের টেনশনটা থাকতো না, এটার আর একটা ফিচার দারুন লেগেছে সেটা হল ব্লুটুথ কানেকশন। তাছাড়া আরও একটা দিক হল স্পিডমোটরটা ডিজিটাল।

১ম দিন ভাতিজা আমাকে পিলিয়ন হিসেবে নিয়ে যায় শেখার জন্য, কিন্তু আসার সময় ভাতিজাকেই আমি পিলিয়ন হিসেবে নিয়ে আসি আলহামদুলিল্লাহ্।এরপর থেকে আমার যাতায়াত সহজ করে দেয় এই টি ভি এস এন টর্ক স্কুটি। 

টি ভি এস গ্যালারীর সার্ভিসিং সেন্টার, মুরাদপুর

এখন পর্যন্ত ২বার সার্ভিস করেছি আমাদের টি ভি এস গ্যালারীর সার্ভিসিং সেন্টার, মুরাদপুরে । প্রথম ২৫০০ কিলোমিটারে ২০-২২মাইলেজ পেতাম, এখন তো ৩৬০০ কিলোমিটারে ৩০-৩২ মাইলেজ পাচ্ছি। আমার এই স্কুটারের ইঞ্জিন অয়েল হল টিভিএস ট্রু ফোর স্কুটার অয়েল । যেটা আমি ২ বার চেইন্জ করেছি, এটার দাম নিছিল ৬৫০/=।

সেল্ফ স্টার্ট কয়েকবার ডিস্টার্ব করাতে ওটাও ঠিক করে নিই সার্ভিস সেন্টার থেকে, আমি বললাম মাইলেজ কম পাই তখন ওনারা বলল আস্তে আস্তে মাইলেজ আরও বাড়বে। প্রতিদিনই আমি এটার যথেষ্ঠ যত্ন নিই। এটা নিয়ে আমার ১ম লং জার্নি ছিল সাজেক, তখন তো আমি একেবারেই নতুন রাইডার তাই কিছুটা ভয় লাগছিল,কিন্তুু আল্লাহর রহমতে এই এনটর্ক আমাকে তেমন একটা কষ্ঠ দেয়নি । 

ঘুরে আসি সাজেক থেকে আলহামদুলিল্লাহ্ কোন সমস্যা ছাড়াই । এটার ইনস্টেন্ট পিকআপ জাস্ট অসাধারণ, এই ট্যুর এ আমি সর্বোচ্চ স্পিড তুলেছিলাম ৮০, ওখান থেকে আসার পর অনেকেই জিগ্গেস করল কেমনে আমি এই স্কুটার নিয়ে সাজেক ঘুরে আসলাম তখন মনে মনে নিজেকে ধন্যবাদ দিলাম।

আমাদের এখানে একটা ট্রেন্ড আছে যে স্কুটার হল মেয়েদের জন্য, কিন্তু এখন সেই কথাটা মিথ্যা,ছেলেমেয়ে উভয়ই এখন স্কুটি চালায়,কারন চালাতে অনেক সহজ ও মোটামুটি রিস্ক কম। আমি মনে করি বর্তমানে সব বয়সেদেরই এই স্কুটার পারফেক্ট। আমি কোন প্রকার পার্টস পরিবর্তন করিনি ,মডিফাইও করিনি। 

TVS Ntorq 125 বাইকের কিছু ভালো দিক

যখন বাইকবিডিতে এড হলাম এরপর থেকে চালানোর টিপস নিয়ে নিয়ে এখন মোটামুটি আয়ত্তে নিয়ে আসলাম, তাছাড়া আরও অনেককিছু শিখতে পারছি এই গ্রুপ থেকে। 

TVS Ntorq 125 বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • স্কুটারটির ১ম ভাল দিক হল এটার লুক অসাধারন। 
  • স্কুটারটি চালানোর সময় খুব আরাম লাগে, অন্যান্য বাইকের সাথে মোটামুটি তাল মিলিয়ে চালানো যায়।
  • জিনিস রাখার বক্সটা এককথায় চমৎকার ।
  • পিলিয়ন বসার জায়গাটা খুবই প্রশস্ত, যেটা এই স্কুটারের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
  • এই স্কুটারের আর একটি দিক হল ৬০ - ৭০ স্পিডেও ভাইব্রেশন করে না।

TVS Ntorq 125 বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • শুরুতে সেল্ফ স্টার্ট খুবই ভুগিয়েছে আমাকে পরে সার্ভিস সেন্টারে বললে তা ঠিক করে দেয় ।
  • হেড লাইটের আলো আর একটু বেশি হলে ভাল হত।
  • ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি কম, যেটা লং ড্রাইভে প্রভাব ফেলে।
  • পিছনে একটা ডিস্কব্রেক হলে আর একটু কনফিডেন্ট লাগতো।
  • বডি কিট বিল্ড কোয়ালিটি যদি আরও মজবুত হত,তাহলে ভাল হত।

এই ছিল আমার এন টর্ক স্কুটার নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা । ধন্যবাদ ।

লিখেছেনঃ  মোঃ শফিউল আজম মুন্না 

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।