দেশীয় পোশাকে মোটরসাইকেল চালানো কতোটা যৌক্তিক?
This page was last updated on 04-Nov-2023 06:00am , By Saleh Bangla
দেশীয় পোশাকে মোটরসাইকেল চালানো বিশ্বের অনেক দেশেই বেশ সাধারণ একটি প্রবণতা। এশিয়ান দেশগুলিতে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়, লোকেরা প্রায়শই লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, শাল ইত্যাদির মতো দেশীয় পোশাক পরে মোটরসাইকেল চালায়। এই সংস্কৃতি গ্রামাঞ্চলেতো বটেই এমনকি এই অঞ্চলের শহরগুলোতেও ব্যাপকভাবে চর্চা হয়। সুতরাং, প্রশ্ন উঠতেই পারে এই অভ্যাসটা কি আসলে ঠিক নাকি এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। চলুন তবে আজ সেই বিষয়েই আলোচনা কারা যাক।
দেশীয় পোশাকে মোটরসাইকেল চালানো কতোটা যৌক্তিক?
মোটরসাইকেল সারাবিশ্বে খুব সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত একটি বাহন। লোকেরা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সাধারণ যাতায়াতের প্রয়োজনে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বা চালায়। আর এই মোটরসাইকেল ব্যবহার করা বা চালানো একটি গ্লোবাল কালচার, যার অভিজ্ঞতা নি:সন্দেহে বেশ আনন্দদায়ক এবং অনেকক্ষেত্রেই এটি এক প্রকার এ্যাডভেঞ্চার এক্টিভিটি হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
তো গ্লোবাল কালচার অনুসারেই, মোটরসাইকেল চালানোর জন্য একজন মোটরসাইকেল রাইডারের নির্দিষ্ট ধরনের বা বৈশিষ্টের পোশাক পড়তে হয়, আর সেইসাথে কিছু নূন্যতম সেফটি গিয়ারও ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বের বিপরীতে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বাস্তব অবস্থা অনেকটাই বিপরীত। সেখানে সাধারণ মানুষ বিশ্বব্যাপী মোটরসাইকেল চালানোর সাধারন রীতি-রেওয়াজ, রাইডিং স্ট্যান্ডার্ড এবং সেফটি রেগুলেশন থেকে অনেকটাই দূরে।
আর বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে, এশিয়ার দেশগুলিতে লোকেরা লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, শাড়ি, কামিজ, সালোয়ার, শাল ইত্যাদির মতো দেশীয় পোশাক পরেই মোটরসাইকেল চালানোতে অভ্যস্ত। সেই সূত্রেই প্রশ্ন ওঠে, আসলে এসব দেশীয় পোশাক পরে মোটরসাইকেল চালানোতে কি সত্যিকার অর্থে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া যায়, নাকি এটা একদমই ক্ষতিকর একটি অভ্যাস? চলুন বিষয়টি মূল্যায়ন করা যাক।
Also Read: Dhaka Bike Carnival 2017 - কি কি হলো এই কার্নিভালে?
সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশ ও এর আশেপাশের দেশগুলির বাস্তবিক অবস্থা মূল্যায়নে দেখা যায় যে, দেশীয় পোশাক পরে মোটরসাইকেল চালানো কেবলই একটি অভ্যাসগত চর্চা মাত্র। মূলত: সাধারন মানুষজন দেশীয় পোশাক পরে বেশ আরামদায়ক এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আর তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই একই পোশাক পরে ঘরে-বাইরে চলাফেরা করে, কাজে যায় বা কাজ করে, আবার সেই একই পোশাকেই মোটরসাইকেলও চালায়। তাই নৈমিত্তিক পোশাক পরে চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা একটি সাধারন অভ্যাস ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এখন আমাদের এই অঞ্চলে প্রচলিত ঢিলেঢালা দেশীয় পোশাক পরিধান করে মোটরসাইকেল চালানোর বিপরীত দিকের বিষয়গুলিতে যদি নজর দেই তবে দেখা যাবে যে, এসব পোশাকে মোটরসাইকেলের মতো খোলা একটি বাহন নিয়ে ব্যাস্ত রাজপথে চলাচল সত্যিই বিপজ্জনক। কেননা আমাদের এই অঞ্চলের দেশীয় পোশাক যেমন লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, শাল, ইত্যাদির অনেকগুলিতেই বেশ বিপদজনক ঢিলেঢালা প্রান্ত রয়েছে, যা নিরাপদে মোটরসাইকেল চালানোর পোশাকের সেফটি স্ট্যান্ডার্ডের পরিপন্থী।
এখানে উল্লেখ্য যে, মোটরসাইকেল চালানোর জন্য স্ট্যান্ডার্ড পোশাকের মূল বৈশিষ্ট্য হলো মোটরসাইকেলের চলমান বা ঘুর্নয়মান অংশগুলো এবং রাস্তায় থাকা অন্যান্য যানবাহনের সাথে কোন প্রকার সংস্পর্শ এড়াতে চালক ও সহযাত্রীর পোশাকে কোনও ধরণের ঢিলেঢালা প্রান্ত থাকবে না। বরং তা যথাযথভাবে শরীর আবৃতকারী হবে ও তাতে বাড়তি কোন অংশ থাকবে না, যা বাতাসে উড়বে অথবা অন্য যানবাহন বা পথচারীকে ছুঁয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের এদিকে প্রচলিত পোশাকগুলি মোটরসাইকেল চালানোর উপযুক্ত পোশাকের এই মূল বৈশিষ্টের বিপরীত।
সুতরাং, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, শাল, স্কার্ফ, ওড়না ইত্যাদি পোশাকের ঢিলেঢালা প্রান্ত, ফিতা, এবং ঝুলন্ত অংশ একজন মোটরসাইকেল চালক ও তার সহযাত্রীর বিপদের মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। এসব পোষাক চালক ও মোটরসাইকেল উভয়েরই নিরাপদ ভারসাম্যকে আক্ষরিকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে এগুলো মুলত: সত্যিকার অর্থে রাইডিং সেফটি ব্যাহত করে, চালকের মনোযাগ নষ্ট করে, এবং চলাচলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
তাই ঢিলেঢালা দেশীয় পোষাক, মূলত: যেসব পোষাকে খোলা প্রান্ত, লেইস, লম্বা স্ট্র্যাপ বা অন্যান্য ঝুলন্ত অংশ থাকে সেসব পরে মোটরসাইকেল চালানো কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। আর সেসব দেশীয় পোষাকই পড়া যেতে পারে যাতে এরকম কোন ঝুলন্ত অংশ নেই। সেইসাথে চালকের নিজে ও সহযাত্রীকে মোটরসাইকেলে চলাচলের সময় পোষাক সামলে নিয়ে চলা খুবই জরুরী। আর এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, চালক ও সহযাত্রী উভয়ই সম্পূর্ণ সেলাই করা পোশাকতো বটেই, পায়ের আঙুল-ঢাকা জুতা এবং মাথায় সেফটি হেলমেট ব্যবহার করবেন। তবেই আশা করা যায় প্রতিদিনে আপনার মোটরসাইকেল রাইডগুলি আরো নিরাপদ হবে। ধন্যবাদ।