টিভিএস এ্যাপাচি RTR 150 বনাম বাজাজ পালসার 150

This page was last updated on 06-Jul-2024 01:49pm , By Ashik Mahmud Bangla

বাংলাদেশে যেখানে সরকার ২ চাকার কোন যানের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আমরা বলতে পারি বাইকের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ সিসি নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৫০সিসি , সেখানে বাংলাদেশে সবথেকে স্মার্ট এবং প্রিমিয়াম বাইক হিসেবে ১৫০ সিসির বাইক গুলোকেই ধরা যায় । 

বাংলাদেশে ১৫০ সিসির বাইকের অভাব নেই , কিন্তু ব্রান্ডের ১৫০সিসি বাইক এর সংখ্যা কমই বলা যায় । আর এই ১৫০ সিসির বাইকের ভেতর সবথেকে উজ্জ্বল যে দুটি নাম বের হয়ে আসে সে দুটি হল TVS APACHE RTR 150 এবং Bajaj Pulsar 150 । 

তাই আজ আমরা টিভিএস এ্যাপাচি RTR 150 বনাম বাজাজ পালসার 150 বাইকের ভেতর একটা তুলনামূলক রিভিউ করতে যাচ্ছি । আশা করি আপনারা এই রিভিউ থেকে ডিসিশন নিতে পারবেন যে আপনার জন্য পারফেক্ট বাইক কোনটি ?

tvs apache rtr 150 vs bajaj pulsar 150

 টিভিএস এ্যাপাচি RTR 150 বনাম বাজাজ পালসার 150

সম্পদ হিসেবে :

বাইক যখন একটা সম্পদ হিসেবে দেখা বা বিবেচনা করা হয় তখন বাজাজ পালসার একটা বিষয় হয়ে দাড়ায় । এটা প্রথম ২০০১ সালে বাজারে আসে এবং প্রবলভাবে বাইকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয় । পালসার বাইকই প্রথম এই উপমহাদেশে ১৫০ সিসি বাইকের জগতে এসে বাইকারদের ভেতর একটা স্পোর্টি ফিল নিয়ে আসে এবং যখন এটা DTSI ইন্জিনের সাথে ২০০৩ সালে নতুন রূপে বাজারে আসে , তখন এটা বাংলাদেশের বাজারে সবথেকে বেশী পপুলারিটি পায় এবং এটা আরও বেশী ডায়নামিক হয়ে ওঠে । এবং এটা বর্তমানেও বাংলাদেশে সবথেকে বেশী দেখতে পাওয়া ১৫০ সিসির বাইক ।

অপরপক্ষে TVS APACHE RTR 150 বাজারে আসে ২০০৬ সালে এবং আসার পরই এটা ৬ টা পুরস্কার পায় , কিন্তু এটা তখনও খুব বেশী বাইকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়নি , কিন্তু যারা আগ্রহী হয়ে এটা ইউজ করেছে তারা এটার পারফরমেন্স নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট । কিন্তু , ২০১২ সালে এ্যাপাচি RTR মডেল আসার পর এটার চরম লুক , পারফরমেন্স সবকিছু মিলিয়ে এটা বাইকারদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয় যার ফল স্বরূপ আমরা আজ বাংলাদেশের রোডে প্রচুর পরিমাণে এ্যাপাচি RTR বাইক দেখতে পাচ্ছি ।

Bajaj Pulsar 150

ইন্জিন এবং গিয়ারবক্স :

ইন্জিনের ক্ষেত্রে উভয় বাইক ই সমানভাবে ১৫০ সিসির পাওয়ারফুল ইন্জিন নিয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে । এক্ষেত্রে উভয় ইন্জিনই ১৫ PS শক্তি উৎপন্ন করতে পারে । পালসারের ক্ষেত্রে এটার ইন্জিন ১৫ PS শক্তি এবং ১২.৫ N/M টর্ক উৎপন্ন করে । পালসারের ইন্জিন RTR এর থেকে বেশী রিফাইন্ড বলা যায় । এর একটি নম্র ভদ্র এক্সেলেরেশন ও টপ স্পীড রয়েছে । যেটা এই বাইকটিকে অত্যান্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে সেটা হল এর অত্যান্ত বেশী স্পীডেও কোন রকম ভাইব্রেট করে না । আপনি ১০০ কিমি/ঘন্টা স্পীড তুললেও আপনার মনে হবে যে আপনি ৬০-৭০ স্পীডে বাইকটি রাইড করছেন । মাঝেমধ্যে এমন হবে যে আপনি খুব বেশী স্পীডে বুঝবেনই না যে আপনি এত বেশী স্পীডে আছেন ।

তবে একটা বিষয় যেটা আপনি এ্যাপাচি তে পাবেন সেটা হল কুইক এক্সেলেরেশন । এটা ১ম ও ২য় গিয়ারে থাকা অবস্থায়ই চরমভাবে স্পীড আপ করতে পারে যেটা করতে পালসারের কমপক্ষে ৩য় গিয়ার লাগবেই । পালসার ৩ টি গিয়ারে না গিয়ে বেশী এক্সেলেরেট করতে পারে না । বিশেষ করে শহরের ভেতর পালসার নিয়ে RTR এর সাথে রেসিং এ গিয়ে জেতা কখনওই সম্ভব না । আর পালসারের সবথেকে বড় যে সমস্যা সেটা হল এর স্পীড আপ করার সাথে সাথে এর প্রচন্ড বাজে আওয়াজ । ৮০+ স্পীড তুললে পালসার থেকে খুবই বাজে সাউন্ড বের হয় ।

TVS Apache RTR 150

পালসারের গিয়ার শিফটিংটা খুবই ভাল , কিন্তু এর ইন্জিন অয়েল একটু বেশী পুরানো হলেই এটা অনেক হার্ড ও বিরক্তিকর হয়ে যায় । তবে , পালসারের ইন্জিনটা খুবই স্মুথ এবং লং জার্নির জন্য একটা খুব্ই ভাল মেশিন এটা , আর এটা লাস্ট ১২-১৩ বছর ধরে এটা বাংলাদেশের সব মানুষকে খুবই ভাল সার্ভিস দিয়ে আসছে ।

এ্যাপাচি হাইপার এডজ ২০১৪ সালের এডিশনে রয়েছে ১৫PS শক্তির একটা ইন্জিন যেটা 13.1 nm @4000rpm টর্ক উৎপন্ন করতে পারে । এই উচ্চ মানের টর্ক বাইকটিকে একটা ফুল রেসিং সেটআপ দিয়েছে যেটা আপনি শহরে বা হাইওয়েতে উপভোগ করতে পারবেন । আপনি জাস্ট কোন যানবাহন ওভারটেক করতে চাইলে এর একটা গিয়ার শিফট করে থ্রোটলটা একটু বাড়িয়ে দিন , তারপর মজা নিন । টিভিএস তাই এটা বলতে কখনই লজ্জাবোধ করে না যে এটা পালসার বা অন্য যেকোন বাইক এর থেকে অনেক বেশী দ্রুত এক্সেলেরেট করে এবং এর টপ স্পীড ও অনেক বেশী । আর RTR এর ইন্জিন সবসময়ই পালসারের থেকে অনেক বেশী রেসপন্সিভ ।

আর যেটা এই বাইকটিকে আরও মজার করে তুলেছে সেটা হল এর শহরের ভেতর চালানোর সময় পাওয়ার-ওয়েট রেশিও । আপনি ২ বা ৩ যে গিয়ারেই থাকুন না কেন , জাস্ট ৪০০০RPM এ পৌছানোর পর এটা আপনাকে যখনই আপনি স্পীড আপ করতে চাইবেন তখনই এটা স্পীড আপ করে ফেলবে , সেটা হোক শহরের প্রচুর জ্যামের ভেতরেও । আপনার পেছনে কেউ বসে থাকলেও আপনি এক্সেলেরেশনের সময় এটা বুঝতেই পারবেন না যে আপনার পেছনের সিটে একজন বসা আছে । এর এক্সেলেরেশনটা বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোন বাইকের থেকে অনেক বেশী আর অনেক হাই RPM এ গিয়েও এটা ক্লান্ত হয় না । অনেকে RTR থেকে ১৩৮ কিমি/ঘন্টা টপ স্পীড পেয়েছে বলেও রিভিউ দিয়েছেন । 

Bajaj Pulsar 150

বাইকটির একটা নেগেটিভ দিক হল এটা অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের থেকে একটু বেশী ভাইব্রেট করে বিশেষকরে ৪০০০ RPM এ ২ বা ৩ নম্বর গিয়ারে এটা অনেক ভাইব্রেট করে । কিন্তু , ৫০০০ বা ৮০০০ কিলোমিটার চলার পর এটার ইন্জিনে আর কোন ভাইব্রেশন থাকে না । RTR এর ইন্জিন সবসময়ই ভাল একটা সাউন্ড ক্রিয়েট করে । এটা ৪০০০RPM পেরিয়ে যাবার পর টপ স্পীডেও কোন ভাইব্রেট করে না । এর গিয়ার শিফটিং টাও খুবই স্মুথ । এর ছোট্ট গিয়ার বক্সটা দ্রুত এক্সেলেরেশনের জন্য ও বেশ ভাল কাজ করে ।

ব্রেকিং ও হ্যান্ডেলিং :

পালসারের ব্রেকিং অবশ্যই একটা লিজেন্ডারি ব্রেকিং , তবে FZS বাজারে আসার পর ব্রেকিং একটা অন্য স্তরে বা স্ট্যান্ডার্ড এ পৌছে গেছে । পালসারের ব্রেকিং অবশ্যই একটা স্ট্যান্ডার্ড ব্রেকিং কিন্তু এক্সেলেন্ট বলা যায় না , তবে এটার হ্যান্ডেলিং অবশ্যই কোন আগ্রহী ক্রেতাকে হতাশ করবে না । পালসারের সামনের ২৪০মিমি ডিস্ক এর স্টপিং পাওয়ার অসাধারণ এবং এর সাথে MRF টায়ারের সাথে এটা বেশ ভাল ভাবেই কন্ট্রোল করা সম্ভব । এর পেছনের চাকায় রয়েছে একটা ১৩০মিমি ড্রাম ব্রেক যেটা ইমিডিয়েটলি স্টপিং এর জন্য যথেষ্ঠ এবং এটার পেছনের ড্রাম ব্রেকটা RTR এর থেকে যথেষ্ঠ শক্তিশালি ।

TVS APACHE RTR 150 

পালসারের হ্যান্ডেলিংটা যথেষ্ঠ ভাল এবং এর ১৪৩ কেজি ওজন এর কর্ণারিং এর সময় কোন সমস্যাই করে না । এটার হ্যান্ডেলিং এর জন্য রাইডার হাই স্পীডে বেশ ভালভাবেই এবং খুব নিরাপদভাবে কর্ণারিং করতে পারে ।এটা এর বেশী ওজনের কারণে এর হাই স্পীড অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায় বেশ আয়েশের সাথেই । এসব দিক থেকে এটাকে বর্তমানে FZS বা TRIGGER এর সাথেও তুলনা করা যায় ।

RTR(Racing throttle response ) যেটা নামের সাথেই একটা স্পোর্টি ভাব ফুটে ওঠে , তাই এটাও ব্রেকিং ও হ্যান্ডেলিং এর দিক থেকে আপনাকে হতাশ করবে না । শহরে চালানোর জন্য একটা পারফেক্ট সিটিং পজিশন রয়েছে বাইকটিতে । আর এটা পালসারের থেকে অনেক দ্রুত রেসপন্স করতে পারে । ঘোরানো প্যাচানো রাস্তায় আপনি এটা নিয়ে হার্ডলি কর্নারিং করতে পারেন কিন্তু এটার টিভিএস টায়ার যেটার কম গ্রীপের কারণে হাই স্পীডে ব্রেকিং এর সময় এটা খুব ভাল রেসপন্স করতে পারে না ।

Bajaj Pulsar 150

 

RTR এর সামনের চাকার ২৭০মি.মি ডিস্ক ব্রেক অনেক পাওয়ারফুল এবং এর স্টপিং পাওয়ার অনেক বেশী , কিন্তু এর পেছনের ১৩০মি.মি ড্রাম ব্রেক পালসারের থেকে অনেক দূর্বল । অবম্য দুইটা ব্রেক একসাথে ইউজ প্রাকটিস করে এটা থেকেও ভাল ব্রেকিং পাওয়া যায় । তবে আগ্রহী রাইডারদের ক্ষেত্রে RTR এর পেছনের স্টক টায়ার চেঞ্জ করে অভিজ্ঞদের রিকমেন্ডেড কোন টায়ার ইউজ করাই ভাল ।

TVS APACHE RTR 150

 

মাইলেজ এবং টায়ার :

মাইলেজের দিক থেকে বিবেচনা করলে RTR পালসারের থেকে এগিয়ে আছে । এটা শহরে রিয়েল লাইফে ৪০-৪২ কি.মি/লিটার এবং হাইওয়েতে ৪৮-৫০কি.মি/ঘন্টা মাইলেজ দিয়ে থাকে যেখানে পালসার শহরে ৩৫-৩৮ এবং হাইওয়েতে ৪০-৪৫ কি.মি/লিটার মাইলেজ দিয়ে থাকে ।

Bajaj Pulsar 150

RTR এর টায়ার হল সবথেকে বিতর্কিত একটা পার্টস । এর সামনের চাকায় 90/80/17 এবং পেছনের চাকায় 110/80/17 সাইজের টায়ার রয়েছে । এর টায়ার শুকনা রোডে রাইডিং এর জন্য বস , কিন্তু ভেজা রোডে এর টায়ার হার্ড ব্রেকিং এর সময় বেশ অসুবিধা করে থাকে ।

বাজাজ পালসারে সামনের চাকায় 90/90/17 সাইজের টায়ার এবং পেছনের চাকায় 100/90/17 সাইজের বেশ ভাল টায়ার রয়েছে যেটা শুকনা ও ভেজা উভয় রাস্তায়ই ভাল পারফরমেন্স দেয় এবং হার্ড ব্রেকিং ও কর্নারিং এর ক্ষেত্রেও এটা ভাল রেসপন্স করে । পালসারের টায়ার নিয়ে কোন অভিযোগ শোনা যায় না এবং এটার টায়ার টিউবলেস হলে আরও ভাল হত ।

বাংলাদেশে দাম :

pulsar 150 price in bangladesh ২,০৫,০০০ টাকা  এবং এ্যাপাচি আরটিআর ১৫০ এর দাম হল সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেক ২,১০,০০০ টাকা, ডাবল ডিস্ক ব্রেক ২,১৭,০০০ টাকা।

শেষ কথা : 

শেষ কথা হিসেবে বলা যায় বাজাজ পালসার এবং টিভিএস এ্যাপাচি উভয় বাইকই অনেক দিক থেকে একই রকম , আবার অনেক দিক থেকে কোনটা এগিয়ে পিছিয়ে আছে । এদের ভেতর অনেক মিলও আছে আবার অনেক পার্থক্যও আছে । এই দুটি বাইকই বাংলাদেশের রাইডারদের বহুদিন থেকে সেবা প্রদান করে আসছে বিশ্বস্থতার সাথে ।

এখন , যার যেমন পারফরমেন্স দরকার সে সেই দিক ভাল দেখে বাইক কিনতে পারে । ২ টি বাইক নিয়েই আপনি স্ট্যানিং , ড্রাগ রেসিং সবকিছু করতে পারেন এবং উভয় বাইকই ভাল মাইলেজ দিয়ে থাকে । তাই , এই দুই বাইকের ভেতর প্রতিযোগিতা আসলে ড্র বা টাই ঘোষণা করা যায়(TVS Apache RTR 150 vs Bajaj Pulsar 150) ।