জাপান থেকে ৮০০ সিসির মোটরসাইকেল এসেছে চোরাইপথে
This page was last updated on 06-Jul-2024 12:18pm , By Ashik Mahmud Bangla
জাপান থেকে ৮০০ সিসির মোটরসাইকেল এসেছে চোরাপথে। মিথ্যা ঘোষণায় আনা চালানটি গতকাল মঙ্গলবার কমলাপুর আইসিডি থেকে জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তবে এই চালানটি পরীক্ষার জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই করতে হয়েছে শুল্ক গোয়েন্দাকে।
এর মধ্যে চালান থেকে ৮০০ সিসির ছয়টি মোটরসাইকেল গায়েব হয়ে গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, আটক করা বাইকের চালানের মূল্য প্রায় সাত কোটি টাকা।
এতে বিভিন্ন মডেল ও সিসির ৭০টি মোটরসাইকেল আছে। অপরাধমূলক কাজের জন্য এসব আনা হয়েছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিকে চালানটি আটক করা হয়। এত বেশি সিসির মোটরসাইকেল আগে কখনো আমদানি হয়নি।
তিনি বলেন, সংরক্ষিত এলাকা থেকে কীভাবে মোটরসাইকেল চুরি হলো সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে।
আমদানি কাগজপত্রে দেখা গেছে, কাঁঠালবাগান প্রি স্কুল স্ট্রিটের মেসার্স বলাকা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব মোটরবাইক আমদানি করেছে। কাগজপত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম রয়েছে রফিকুল ইসলাম। গতকাল বিকেলে কাঁঠালবাগানের ওই ঠিকানায় গিয়ে এ নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। কাস্টমস সূত্র জানায়, হোন্ডা কোম্পানির বিভিন্ন মডেলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলো আমদানি করা হয় জাপান থেকে।
২০১৪ মাসের ১৬ মার্চে এগুলো আমদানির পর তা কমলাপুর আইসিডিতে আনা হয়। এরপর পণ্য ছাড় করানোর কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান (সিঅ্যান্ডএফ) ওভারসিজ লাইনার কাস্টমসের কাছে বিল অব এট্রি দাখিল করে। এতে বলা হয়, ১০০ ও ৫০ সিসির মোটরসাইকেল আছে। আইসিডির কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রথম দফায় চালানটির সবকিছু সঠিক আছে বলে মত দেন। কিন্তু পরে তাঁরা দেখতে পান মোটরসাইকেলে ইঞ্জিনের ক্ষমতা ও তৈরির সাল নেই।
সবগুলোই মুছে ফেলা হয়েছে। তারা যে কাগজপত্র দাখিল করে তা-ও ছিল জাপানি ভাষায়। শুল্ক গোয়েন্দারা গোপন সূত্রে জানতে পারেন, আমদানি করা চালানের ব্যাপারে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কনটেইনারে বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল আছে। আমদানি নীতি অনুসারে ১৫৫ সিসির বেশি নয় এবং তিন বছরের বেশি পুরোনো মোটরসাইকেল আমদানি করা যায় না। সন্দেহ করে শুল্ক গোয়েন্দারা চালানটি আটক করেন।
কিন্তু আমদানিকারক এ ব্যাপারে আদালতের আশ্রয় নেন। হাইকোর্টে রুল জারি করলে শুল্ক কর্মকর্তারা এর জবাব দেন। এরপর আদালত আমদানি রীতি অনুসারের পণ্য খালাসের আদেশ দেন। সূত্র জানায়, চালানটি ঠিক আছে সে জন্য প্রথম দফা ছয়টি মোটরসাইকেলের নমুনা পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে জালিয়াতি করা হয়। কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তারা সবচেয়ে কম সিসির বাইক পরীক্ষার জন্য পাঠান।
এতে আমদানিকারকের পক্ষে মত আসে। এরপর শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, সবার উপস্থিতিতে কনটেইনারের সব পণ্য পরীক্ষা করা হবে। এরপর গতকাল কমলাপুর আইসিডিতে পুরো কনটেইনার খুলে সব পণ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের একজন শিক্ষক এসব পরীক্ষা করেন। ওই সময় আমদানিকারক সেখানে ছিলেন না।
কনটেইনার খুলে দেখা যায়, ২৩৩ সিসির হোন্ডার রিবেল, ৮০০ সিসির হোন্ডার স্টিড, ৮০ সিসির লেবেল লাগানো হোন্ডা সিডিসহ বিভিন্ন মডেলের বাইক রয়েছে। কিন্তু কনটেইনার খোলার পর পর শুল্ক গোয়েন্দারা দেখেন, আমদানির সময় কনটেইনারে মোট ৭০টি মোটরসাইকেল ছিল। এর মধ্যে আটটি ছিল ৮০০ সিসির। কিন্তু গতকাল দেখা গেল, ৮০০ সিসির ছয়টি মোটরসাইকেল নেই।
আমদানিকারকের কাগজপত্রে ৭০টি থাকলেও বাকি ছয়টি কীভাবে হাওয়া হয়ে গেল সে ব্যাপারে কেউ কোনো জবাব দিতে পারেননি। শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, এসব ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এ ছাড়া আটক করা চালানোর ব্যাপারে ফৌজদারি মামলা করা হবে।