চন্দ্রঘোনা থেকে বগালেক - একদিনের দুঃসাহসিক ট্যুর!
This page was last updated on 18-Aug-2024 05:16am , By Shuvo Bangla
সবাই বগালেক বগালেক করে তাই দিয়েই ফেললাম বগালেক ট্যুর! আইডিয়াটা ছিলো Daulat DK ভাইয়ের, সাথে সাথেই রবিবার রাত ৯টায় প্ল্যান করে হালকা পাতলা বাইক টা চেক করে পরের দিন সকাল আটটায় আমি চন্দ্রঘোনা থেকে রওনা দিলাম। চট্টগ্রামের অক্সিজেনে ডিকে ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একসাথে হয়ে রওনা দিলাম বগালেক এর উদ্দেশ্য ।
চন্দ্রঘোনা থেকে বগালেক - একদিনের দুঃসাহসিক ট্যুর!
এদিকে আনিস ভাই আমাদেরকে সাপোর্ট দিতে নতুন ব্রিজ নামক স্থানে দেখা করলেন । উনার সাথে দেখা করার পর আমরা আবার রওনা দিলাম। যাত্রাপথে প্রথম ব্রেক দিলাম বান্দরবনে, ওখানে হালকা নাস্তা করে আমরা পুনরায় গন্তব্যের উদ্দেশ্য এগোতে থাকলাম। দুপুর ১২টার দিকে আমরা রুমাবাজার পৌছালাম। আমরা এবারই প্রথমবারের মতো গেলাম তাই একটু ভুল করে ফেলেছিলাম, বগালেক যেতে গাইড ও প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়, যেটা আমরা জানতাম না।
রুমাবাজার এর ৮০০ মিটার পরে পুলিশ ক্যাম্পে আমাদেরকে আটকানো হলো , ওনারা আমাদের কে রুমাবাজার থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে বললেন। আমরা রুমাবাজারের বিখ্যাত একটি মন্দির এর নিচে একটা ষ্টেশনারি দোকানে গিয়ে অনেকের সাথে আলোচনা করে একজন গাইডকে আমার সাথে যাবার জন্য ঠিক করলাম। গাইড ঠিক করার পরে প্রশাসনের অনুমতি আদায় করার সময় একটা বিপদে পড়ে গেলাম, কর্মকর্তারা বললো তারা বাইক নিয়ে যেতে দেবে না, বাইক রুমাবাজারে রেখে যেতে হবে। ডিকে ভাই তো একদমই মানেননি, উনি গো ধরে বসলেন যে বাইক ছাড়া আমরা যাব না। তখন আমরা ওই দোকানে আবার গেলাম, উনারা অন্য একজন গাইডকে ঠিক করে দিলেন এবং আমাদের নতুন গাইডকে সাথে নিয়ে আমরা বেশকিছু সময় নষ্ট করলাম বাইক নিয়ে যাবার অনুমতি নেবার জন্য, এবং অবশেষে সফল হলাম! অনুমতি আদায় এর পরে আমরা দুপুর দেড়টার দিকে বগালেকের উদ্দেশ্য রুমাবাজার থেকে রওনা দিলাম। সাথে ছিলো আমাদের গাইড, যার নাম শিয়াং বম্ব ।
রাস্তায় চেকপয়েন্টে পুলিশ আমাদের বাইকের ও অনুমতির কাগজপত্রগুলো ভালোভাবে চেক করে। সেখানকার লোকগুলো আমাদেরকে অনেক বেশি নার্ভাস করে দিয়েছিলো। তারা বারবার বলছিলো যে পাহাড়ে অনেক বেশি বালি আর রাস্তা অনেক বেশি উচু, আপনারা যাইতে পারবেন না, এসব বলে আমাদের মনে আরো বেশি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। ভয়ে ভয়ে শুরু করলাম যাত্রা।
শুরু থেকে আমাদের অন্যতম বড় সমস্যা ছিল পাহাড়ে উঠা। পাহাড়ি রাস্তায় মিহি বালির ভিতরে ইটের কণা আর তীক্ষ্ণ বাক – সব মিলিয়ে রাস্তা ছিলো ভয়াবহ। ধীরে ধীরে পাহাড় উচু হতে থাকলো, ডিকে ভাই পিলিয়ন নিয়ে সাবলীলভাবেই উঠছিলো কিন্তু অপরদিকে আমার একা উঠতেই অনেক কষ্ট হচ্ছিলো।
যেতে যেতে আমরা ১১ মাইল নামক একটা জায়গাতে পৌছালাম, সেখানে একটা পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে নামতে হয়। ওখানের ঢালু রাস্তার অবস্থা দেখে আমি বাইক থেকে নেমে ডিকে ভাইকে বললাম যে আমি আর বাইক চালাতে পারবো না, আমি জীপে করে বাইক নিয়ে যাবো। পাহাড় বেয়ে উঠার কথা চিন্তা করতেই আমার কান্না চলে আসলো। ডিকে ভাই আমাকে একটা বকা দিলো, বললেন “সাহস রাখ, মনোবল রাখ।” উনার আসলেই অনেক সাহস এবং দৃঢ় মনোভাব ছিলো। বগালেকের আগে কমলাপাড়া নামক স্থানে আমার বাইকটা রেখে আমি আর আমাদের গাইড হেটে বগালেকের পাহাড়টাতে উঠলাম ।
ডিকে ভাই বললেন উনি বাইক নিয়ে যাবেন। উনি বাইক নিয়া বগালেকে ঠিকঠাকভাবেই উঠলেন, তবে নামার সময় উনার বাইকটা পড়ে গেলো আর বাইকে একটু আঘাত লাগলো। আমরা লেকে ৫ মিনিট ছিলাম কারন আমাদের সাড়ে চারটার মধ্যে রুমাবাজারে ফিরে আসতে হবে। কমলাপাড়া এসে আমরা আবার রুমাবাজার এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
পথিমধ্যে আরেকটি বিপদ ঘটলো, ডিকে ভাইয়ের বাইকের গিয়ার লিভারটা ভেঙে গেলো। উনি প্রথম গিয়ারে রাইড করে কোনরকমে রুমা বাজারে আসলেন।
এরই মাঝে আমিও একবার বাইক নিয়ে পড়ে গেলাম, এরপরে অনেক বিপত্তির পরে আমরা ১১ মাইল নামক যায়গার পাহাড়ে উঠতে সক্ষম হলাম। সেখানে উঠেই আমি খুশিতে একটা লাফ দিলাম! রুমা বাজার এসে ডিকে ভাইয়ের বাইকটা ঠিক করে আমরা ফেরার পথ ধরলাম। এবং নির্বিঘ্নভাবেই বাসায় এসে পোউছালাম।
সকলের প্রতি পরামর্শ: যারা বগালেক যাবেন সকাল সকাল চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেবেন । রুমাবাজারে একটা মন্দির আছে, মন্দিরের নিচে একটা ষ্টেশনারী দোকান আছে , উনারা গাইড ও অনুমতির ব্যবস্থা করে দিবে। অনেক ভাল ওই দোকানের মালিক । দিন প্রতি ৬০০ টাকা করে গাইডকে দিতে হবে। সাথে করে পানির বোতল এবং ধূলোবালি থেকে রক্ষা পাবার জন্য বড় গামছা নিয়ে যাবেন।
চন্দ্রঘোনা থেকে বগালেক - আমরা মোট ৩২৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলাম যার কোন অংশই ভোলার নয়! এই ট্যুরের স্মৃতিগুলো সর্বদা আমায় স্মৃতিকাতর করে তুলবে ! - CtgBikersbd.