কেন ই-বাইক দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াতের জন্য বেশি উপযুক্ত?

This page was last updated on 28-Mar-2024 04:37pm , By Saleh Bangla

ই-বাইক বা ইলেকট্রিক বাইকগুলিকে বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের বাহন হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই ই-বাইকগুলি এখন স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান ও জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম হয়ে উঠছে।

ই-বাইকগুলির সব মডেল মূলত: পুরোপুরি বাইসাইকেল নয়, বরং সেগুলি ইলেকট্রিক মোটর এবং ব্যাটারি দিয়ে সজ্জিত পুরোপুরি সাধারন মোটরসাইকেল বা স্কুটারের মতোই ডিজাইন নিয়ে বাজারে আসছে। তাই এসব বাহন দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তো আজ আমরা আলোচনা করবো, কেন ই-বাইক দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াতের জন্য বেশি উপযুক্ত।

 

কেন ই-বাইক দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াতের জন্য বেশি উপযুক্ত?

সামগ্রিকভাবে, ই-বাইককে এখন সারাবিশ্বে একটি নতুন প্রজন্মের বাহন হিসাবে গন্য করা হয়, যা বর্তমান সময়ে যাতায়াতের জন্য বেশ প্রমিজিং একটি মাধ্যম। ই-বাইক হিসাবে তাই ইলেকট্রিক সাইকেল, মোটরসাইকেল, এবং স্কুটারগুলিতে ম্যানুফ্যাকচারারা তাদের প্রযুক্তির উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে।

সেইসাথে এখনকার ই-বাইকগুলি বিভিন্ন জনপদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রয়োজনের সাথে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলে, এসব বাহন আজকাল সহজেই প্রচলিত বাহনের পাশাপাশি যাতায়াতের জন্য একটি জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে উঠছে। তাই কেন ই-বাইক দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াতের জন্য বেশি উপযুক্ত সে কারণগুলি আমরা এখানে কিছুটা উল্লেখ করছি।

ই-বাইকগুলি খরচ সাশ্রয়ী

দৈনন্দিন জীবনের যাতায়াতের প্রয়োজনে কমিউটার ই-বাইকগুলি প্রচলিত যানবাহনের তুলনায় বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। এই বাড়তি সুবিধার সবচেয়ে আকর্ষনীয় একটি দিক হলো এই ই-বাইকগুলি সবদিক দিয়েই তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ সাশ্রয়ী। কেননা ই-বাইকে সাধারণ মোটরসাইকেলের মতো কোনো জ্বালানি লাগে না। বরং ই-বাইকের ব্যাটারি একবার চার্জের খরচ প্রচলিত মোটরসাইকেলের এক ট্যাঙ্ক তেলে খরচের তুলনায় অনেক অনেক কম। ফলে ই-বাইক অত্যন্ত সাশ্রয়ী।

ই-বাইকের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কম

ই-বাইকগুলির দাম সাধারণত গাড়ি এবং একইধরনের প্রচলিত অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে ই-বাইকগুলিকে সাধারন বাহনের পাশাপাশি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে যারা কম বাজেটে এবং কম খরচে যাতায়াতের জন্য একটি ভালো বিকল্প বাহন খুঁজছেন তাদের চাহিদা এবং বাজেটের সাথে মিলিয়ে এখনকার বাজারে অনেক মডেলের ই-বাইক রয়েছে।

ই-বাইকগুলির রাইডিং ও হ্যান্ডেলিং অত্যন্ত সহজ

ই-বাইকগুলি সাধারণত চালানো এবং হ্যান্ডেল করা অত্যন্ত সহজ। প্রচলিত পেট্রোল ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল এবং স্কুটারের বিপরীতে ই-বাইকগুলিতে কোনো কিক স্টার্টার বা সেলফ-স্টার্টার এবং তারপরে কোনো গিয়ার বা ক্লাচ অপারেশনের প্রয়োজন হয় না।

এমনকি যারা এই ধরনের মোটরযান চালানোর ক্ষেত্রে মোটেও অভিজ্ঞ নন কিন্তু হয়তো কেবল সাইকেল চালাতে জানেন তারাও সহজে ই-বাইক চালাতে এবং হ্যান্ডেল করতে পারবেন। ফলে কিছু ই-বাইক ব্যবহার সাধারন মানুষজনতো বটেই এমনকি প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও সীমিত পরিসরে ব্যবহার করতে পারেন।

ই-বাইকগুলি শহরের টাইট ট্র্যাফিকেও চলাচলের জন্য বেশি উপযুক্ত

ই-বাইকগুলি প্রচলিত গাড়ি বা স্ট্যান্ডার্ড মোটরসাইকেল ও স্কুটারের তুলনায় আকারে বেশ ছোট। ফলে ই-বাইক ব্যস্ত শহরের টাইট ট্রাফিক কন্ডিশনেও চমৎকারভাবে চলাচলের জন্য আরো বেশি সক্ষম। আর ই-বাইকগুলি রাস্তায় যেমন কম জায়গা নেয়, তেমনি গাড়ি বা অন্যান্য বাহনের তুলনায় শহরের ট্র্যাফিকের মধ্য দিয়ে সামান্য ফাঁকফোঁকড় দিয়েও সহজে চলে ফিরে বেড়াতে পারে। তাই ই-বাইক সিটি কমিউটিংয়ের জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত।

ই-বাইক মেইনটেন্যান্সের প্রয়োজন বেশ কম

ই-বাইকের কন্ট্রাকশন যেমন খুব সাধারন তেমনি এতে প্রচলিত গাড়ি, মোটরসাইকেল, বা স্কুটারের তুলনায় মেকানিক্যাল জটিলতাও অনেকটা কম। ই-বাইকের ভেতরে কেবল একটি ইলেকট্রিক মোটর, ব্যাটারি, এবং চার্জিং সার্কিট থাকে যেখানে অপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স এবং বাড়তি মেকানিজমও অনেকটাই কম। ফলে, ই-বাইকে ইঞ্জিন লুব পরিবর্তন, টিউন-আপ, বা অন্যান্য ব্যয়বহুল মেইনটেন্যান্সেরও তেমন প্রয়োজন হয় না।

ই-বাইক সময় সাশ্রয়ী

এখনকার সময়ের ই-বাইকগুলি তাদের গতিসীমার মধ্যে যথেষ্ট দ্রুতগামী এবং এগুলি পরিচালনাও অত্যন্ত সহজ। তাই ব্যস্ত শহরে যাতায়াতে যেখানে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা একটি সাধারণ ঘটনা, সেখানে ই-বাইক যানজট গলে বা এড়িয়ে, সরু রাস্তা বা গলির মধ্য দিয়ে সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। আর এছাড়াও সাধারন বাইকের মতো এতে ক্লাচ বা গিয়ার না থাকায় এসব নিয়ে চলাচল আরো সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও দ্রুত হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। ফলে সবমিলিয়ে ই-বাইক যথেষ্ট সময় সাশ্রয়ী।

ই-বাইক পরিবেশ বান্ধব একটি বাহন

ই-বাইকগুলি একচেটিয়াভাবে পরিবেশ বান্ধব একটি বাহন, যার পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব অত্যন্ত কম। এতে ডিজেল বা পেট্রল-ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের মতো ধোঁয়া নির্গমন হয় না, আর এতে শব্দের পরিমানও একেবারে কম। ফলে এর কার্বন ফুটপ্রিন্ট একেবারেই নেই বললেই চলে। ফলশ্রুতিতে, ই-বাইকগুলি শহরাঞ্চলে ব্যবহারে কার্বন নি:সরণ, বায়ু দূষণ, এবং শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রনে সরাসরি সাহায্য করতে পারে। আর তাই পরিবেশ দূষণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষিতে ই-বাইকগুলি একটি টেকসই পরিবেশ বান্ধব বাহন হিসেবে এখন সারাবিশ্বে অত্যন্ত সমাদৃত। 

ই-বাইক চালানো বেশ মজার এবং উপভোগ্য

ই-বাইকগুলি চালানো এবং এসব নিয়ে চলাফেরার আভিজ্ঞতা যথেষ্ট মজার ও উপভোগ্য। কেননা, সাধারন মোটরসাইকেল বা স্কুটারের গিয়ার এবং ক্লাচ অপারেশনের মতো এতে তেমন মেকানিক্যাল জটিলতা নেই, তাই এগুলি চালানোও অত্যন্ত সহজ। আর ই-বাইকগুলি অত্যন্ত নি:শব্দে চলে, এতে কোন ধোঁয়া নেই, তাই ধোঁয়ার গন্ধও নেই। ফলে, ই-বাইক নিয়ে যে কেউই একটি শান্তিপূর্ণ রাইড উপভোগ করতে পারেন। তাই ই-বাইক চালানো সবসময়েই অত্যন্ত মজাদার এবং উপভোগ্য।

 

সুতরাং সব মিলিয়ে এটি পরিস্কারভাবে বলা যায় যে, আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনে যাতায়াতের জন্য ই-বাইকগুলি আরও বেশি যোগ্য বিকল্প একটি বাহন। এগুলি কেবলমাত্র অত্যন্ত খরচ সাশ্রয়ী নয়, বরং এগুলি চালানো ও নিয়ন্ত্রন করা যেমন সহজ তেমনি এগুলির মেইনটেন্যান্সও অত্যন্ত কম। সেইসাথে ই-বাইকগুলি পরিবেশ-বান্ধব ও নি:শব্দ প্রকৃতির হবার ফলে এগুলি রাইড করাও অনেক বেশি উপভোগ্য। তাই শহর হোক বা গ্রাম, সবখানেই ই-বাইকগুলি দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াতের জন্য বেশি উপযুক্ত।