ওয়ালটন কোম্পানি মোটরবাইক উৎপাদন প্লান্টে তালা ঝুলিয়েছে
This page was last updated on 04-Jul-2024 10:52am , By Shuvo Bangla
লোকসান কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়ে মোটরবাইকের সংযোজন বন্ধ করে দিয়েছে ওয়ালটন । ইতোমধ্যে মোটরবাইক উৎপাদন প্লান্টে তালা ঝুলিয়েছে কোম্পানিটি। শেষ উৎপাদন করা অতিরিক্ত খুচরা যন্ত্রাংশ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে নিলামে। তবে বাজারে থাকা মোটরবাইকগুলো বিক্রি করতে এসব তথ্য গোপন রেখেছে ওয়ালটন।
ওয়ালটন কোম্পানি মোটরবাইক উৎপাদন প্লান্টে তালা ঝুলিয়েছে
জানা গেছে, গাজীপুর হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মোটরবাইক উৎপাদনের তিনটি প্লান্টই এখন বন্ধ। এর মধ্যে দুটি বন্ধ হয়েছে কয়েক মাস আগে। শেষ প্লান্টটি চালু থাকলেও তাতে উৎপাদন হতো না, সংযোজন করা হতো যন্ত্রাংশ। সম্প্রতি সেটিও বন্ধ করে ফ্রিজের কমপ্রেসার প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া বাইক সংযোজন, যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও বিপণনে থাকা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। সবমিলিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ হলো ওয়ালটনের মোটরবাইক।
সূত্র বলছে, লোকসানের কারণেই বন্ধ হয়েছে ওয়ালটনের বাইক সংযোজন প্রকল্প। শুরুর দিকে দেশি পণ্যের ভাবমূর্তীকে পুঁজি করে চায়না যন্ত্রাংশের সংযোজিত মোটরবাইক বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। তবে নিম্নমানের ওইসব যন্ত্রাংশের বাইক কিনে প্রতারিত হয়েছেন ক্রেতারা। এতে তৈরি হয় ওয়ালটন ব্র্যান্ডে অনীহা। চাহিদা কমে যাওয়াতে কোম্পানিটির লোকসানের দিকে যেতে থাকে।
সে অবস্থায় লোকসান কাটাতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ওয়ালটন। দেশের বাজার দখলকারী কয়েকটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে যৌথ সংযোজনের চেষ্টা চালায় তারা। এটলাস বাংলাদেশ, জাপানি কোম্পানিহোন্ডারের সঙ্গে একাধিকবার যৌথভাবে সংযোজনের চুক্তির চেষ্টা করে কোম্পানিটি। তবে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। শেষ দেশে ভারতের হোন্ডা ও ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের বাজারজাত চুক্তি শেষ হওয়ার পর তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে তারা। কিন্তু দুই ব্র্যান্ড সম্প্রতি দেশের অন্য বেসরকারি বাজারজাতকারীর সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ওয়ালটন তাদের সঙ্গে অটোমেকানিক্স দ্বারা ডিজাইন করা নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোটরবাইক তৈরি ও বাজারজাত করতে চেয়েছিল। যাতে আগ্রহ দেখায়নি কেউ। সবমিলে শেষদিকে লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে ওয়ালটন। এসব ব্র্যান্ডকে সঙ্গে না পেয়ে আরও অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। সব সম্ভাবনা শেষে এখন এ লোকসানি প্রকল্প আর দীর্ঘায়িত করতে চায় না কোম্পানিটি। তবে বাজারে থাকা মোটরবাইক বিক্রি প্রভাবিত হবে বলে তা গোপন রাখছে ওয়ালটন।
জানতে চাইলে ওয়ালটনের হেড অব মার্কেটিং এমদাদুল হক সরকার শেয়ার বিজ্্কে বলেন, উৎপাদন বন্ধ হয়েছে সেটা সত্যি। তবে তা সাময়িক বলেই আমরা জানি। এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। বাজারে এখনও আমাদের বাইক রয়েছে, তা বিক্রিও হচ্ছে। ফলে উৎপাদন বন্ধ হলেও সরবরাহ চালু রয়েছে।
গত কয়েক বছর কোম্পানির মোটরবাইক চাহিদায় ধস নামে। প্রথম দিকে বছরে প্রায় ৫০ হাজার মোটরবাইক বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। সে সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে গত বছর ২০১৫ সালে মাত্র ছয় হাজার বাইক বাজারজাত করতে পারে ওয়ালটন। আর এ বছরে তা আরও কমেছে। বছরের আট মাস পেরিয়ে গেলে এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ২০০টি বাইক।
বছরে প্রায় তিন লাখ মোটরবাইক উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ওয়ালটনের। চাহিদা না থাকায় কোনো সময়ই সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদনে আসতে পারেনি তারা। এতে যন্ত্রাংশ উৎপাদন ব্যয় ক্রমেই বেড়েছে। গত দুই বছরে চাহিদা একেবারেই তলানিতে যাওয়ায় এই বৃহৎ সক্ষমতার তিনটি প্লান্ট চালাতে প্রচুর লোকসান দিতে হয়েছে ওয়ালটনের।
এদিকে এ পর্যন্ত বাজারে লক্ষাধিক মোটরবাইক বিক্রি করে বন্ধ হচ্ছে কোম্পানিটির সংযোজন। তাদের বাজারজাত প্রক্রিয়া বন্ধ করার লক্ষ্যেই যন্ত্রাংশ বিক্রি করা হয়েছে নিলামে। এতে করে ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীরা যন্ত্রাংশ ও সেবা পাওয়াতে অনিশ্চয়তায় পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়ালটনের শেষ নতুন তিনটি বাইকের মডেলেও কোনো সাড়া নেই। নতুন মডেলের রেনজার, লিও ও স্টাইলেক্সসহ পুরনো কয়েকটি ব্র্যান্ডের বাইক বাজারে রয়েছে ওয়ালটনের। সারাদেশে দুই শতাধিক নিজস্ব প্লাজা, ৭০০ ডিলারের শো-রুমে রয়েছে বাইকগুলো। এসব বিক্রিতে কিস্তি ও ছাড়ে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ওয়ালটন। তবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন বন্ধ হওয়াতে ওইসব বাইক কিনে বিক্রয়-পরবর্তী সেবা পেতে বিপাকে পড়বেন বলে মনে করছে বাজার-সংশ্লিষ্ট ক্রেতারা।
ক্রেতা হিসেবে ইস্কাটন রোডের ওয়ালটন প্লাজায় খোঁজ নিলে বিক্রয় কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান স্বীকার করেন বন্ধ হওয়ার কথা। তিনি জানান, গত ঈদের আগেই ফ্যাক্টরিতে থাকা সব মোটরবাইক প্লাজাগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রচুর বাইক প্লাজায় রয়েছে। সেগুলো ছাড় ও কিস্তিতে বিক্রির চাপ রয়েছে।
বন্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চাহিদা না থাকায় বাইক উৎপাদনে লোকসান হতো। নতুন কয়েকটি মডেল এসেছে। এগুলোও বিক্রি হচ্ছে না। বাজার চাহিদা অনুযায়ী ১৫০ সিসি ইঞ্জিন সংযোজন করলে তা খরচে পোষাবে না। ফলেই কোম্পানি লোকসান টানতে রাজি নয়। টিভি, ফ্রিজ ও হোম আপ্লাইন্স বিক্রিতে কোম্পানি মনোযোগ দিচ্ছে।
বন্ধ হওয়ার বিষয়ে এ খাতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী বলেন, যারা এদেশে বিদেশি মোটরবাইক আমদানি করে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করছে তারা অনেক শক্তিশালী কোম্পানি। লোকসানের পরও তাদের সঙ্গেই যেতে চেয়েছিল ওয়ালটন। এছাড়া বাজারে তাদের প্রতিপক্ষ দেশি উৎপাদকরা ভালো করছে, যা ওয়ালটনের বাজার দখল করেছে। সবমিলে এখন বাজারে কুলিয়ে উঠতে পারছে না উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে দেশে বছরে তিন লাখ পর্যন্ত মোটরবাইকের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করে মোটরবাইকের চাহিদা মেটানো ৮৫ শতাংশ। দেশে বেশিরভাগ মোটরবাইকই আমদানি করা হয় ভারত থেকে। এর পাশাপাশি চীন থেকেও মোটরবাইক আমদানি করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি রানার এখন দেশে মোটরবাইক উৎপাদন করছে।
ওয়ালটনের মোটরবাইক ব্যবহারকারী মাহফুজ উল্লাহ বাবু বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছে। ‘ওয়ালটন আমাদের পণ্য’ শুধু এ সেøাগানেই লক্ষাধিক বাইক বিক্রি করেছে। এসব ভাবমূর্তিকে পুঁজি করে দেশে নিম্নমানের চায়না বাইক বিক্রি করেছে। এখন বন্ধ হবার পরেও বাজারে এসব বাইক বিক্রি করে নতুন করে ক্রেতা প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। চলতি মডেল কিনেই বাইক নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে; যন্ত্রংশ পাওয়া যায় না। আর বন্ধ হবার পরে তো যন্ত্রাংশ পাওয়াই যাবে না।
খবর সুত্রঃ http://dailysharebiz.net/?p=15880#prettyPhoto