ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন টু নিয়ে দিনাজপুর ভ্রমন
This page was last updated on 10-Jul-2024 10:36am , By Saleh Bangla
ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন টু নিয়ে দিনাজপুর ভ্রমন
আমি আর কাকা(বন্ধু) সুবিশাল দেহের অধিকারি। ২৪ তারিখ রাতে বলছে প্রিন্স দিনাজপুর যাবো বাইক দিয়ে, যাবি নাকি? কোন কিছু চিন্তা না করেই হ্যা যাব। যেই কথা সেই কাজ। ২৫ তারিখ দুপুর ১১ টা ৩০ মিনিটে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি টাংগাইল থেকে, যেহেতু টাংগাইল আমাদের বাসা। বাইক চলছে তো চলছেই, ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন টু । বাইকের যেমন পাওয়ার, তেমন কন্ট্রোল। মাথাই নষ্ট। টাংগাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দূরত্ব ২৫ কিঃমিঃ। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কোন হতাশা নেই, কারন যেতে হবে বহুদূর। সেতুতে টোল দিলাম ৪০ টাকা, সেতু পার হলাম। বাইকের গতি সেতুতে যাওয়ার সময় টপ স্পিড ছিলো ১২৩ কিঃমিঃ। কিন্তু ভিডিও করতে পারিনাই বলে অনেক আফসোস হচ্ছে। সেতু পার হলাম, সিরাজগঞ্জ ঢুকলাম অনেক বৃষ্টি বাইক ব্রেক করলাম চা খাইলাম ২০ মিনিট সময় পাড় করলাম, অকটেন নিলাম ফুল টাংকি, ৮৫০ টাকার আর বাকি তেল আগেই ছিলো। বৃষ্টি হচ্ছে বাইকের গতি তাও ৮০ কিঃমিঃ।
আর কোন জায়গায় থামাথামি নাই একটানে বগুড়া, ও যাওয়ার সময় একটা থেতনা খাইছি ভয় পাইয়া গেছিলাম, মাটগারড এর একটা অংশ ভেংগে গেছে। কি আর করার বগুড়া গেলাম একটা মেকানিক দেখাল বললো সমস্যা নাই। ঐ জায়গাতে ২৫ মিনিটির মত সময় পার হইছে।। পরে মোকামতলা গেলাম এক পরিচিত মানুষের বাসায় তখন বাজে ঠিক ৩ টা ৩০ মিনিটে। খাওয়া দাওয়া করলাম। পরে ৪ টা ১০ মিনিটে আবার দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে বাইক স্টার্ট। যাদের বাসায় গেছি ওনার বলে বাইক নিয়া দিনাজপুর কেমনে সম্ভব, আপনারা পারেন ও বটে। গোবিন্দগঞ্জ থেকে বাম দিকে দিনাজপুরের রাস্তা, সিংগেল রাস্তা, রাস্তা খুব আকাবাকা, আর চারপাশে ধানক্ষেত মাথা নষ্ট পরিবেশ। বাইক চলছে ওর গতিতে, রাস্তায় বলে দেয় কতটুকু গতি চায় বাইক। ফুলবাড়ি গেলাম, তার পর বাম দিকে গেলাম দিনাজপুরের আগে উচিতপুর বাজারে চা খাইলাম। তখন বাজে রাত ৭ টা ৩০ এর মত। তার পর মেডিকেল মোড় পর্যটন মোটেলে উঠলাম। বিয়ে বাড়ির লোকজন খুব করে বলছে তাদের বাসায় থাকার জন্য, কিন্তু আমরা ওনাদের ঐখানে থাকি নাই। যাই হোক মিটার বলছে বাইক চলছে ২৫৫ কিঃমিঃ। রাত তখন ৭ঃ ৫৫ মিনিট। ফ্রেশ হলাম মোটেলে, শরির ক্লান্ত কিন্তু মন ক্লান্ত না। বিয়ে বাড়ি গেলাম ওনারা তো বলছে এইটা কিভাবে সম্ভব বাইক নিয়া দিনাজপুর আইসা পরছেন। খুব আদর যত্ন করছে আমাদের, আন্তরিকতার কোন কমতি ছিলোনা। যাই হোক রাতে ঘুমাইলাম মোটেলে, মোটেল রেন্ট বেশি ছিলো ২৮০০ টাকা প্রতিদিন। সকাল বেলা ঘুম ভাংছে ১০ টায়, দেখি আমাকে রেখে বাইক নিয়া ঘুরতে বের হইয়া গেছে আমি যার সাথে গেছি। নিচে গিয়ে নাস্তা করলাম, কাকা আসলো রুমে ১১ টার দিকে। বললো কাকা এইখানে অনেক ভালো হাসের মাংস পাওয়া যায়। দিনাজপুর শহর ঘুরলাম, এইখানে রামসাগর, সুখ সাগর, সহ আছে জমিদার বাড়ি। তাছাড়াও অনেক কিছুই আছে। এর মধ্যে ইয়ামাহার শোরুম থেকে ইঞ্জিনওয়েল, মাটগারড, প্লাগ, এয়ার ফিল্টার, মবিল ফিল্টার চেঞ্জ করলাম। এফজেডএস ভার্সন টু স্মুথ হয়ে গেছে।আমাদের বিয়ে বাড়ি থেকে ফোন করছে তারা আমাদের জন্য ওয়েট করছে, কিন্তু আমরা যাবো না। ওনারা মানেই না, তারপর বাধ্য হয়ে গেলাম কমিউনিটি সেন্টারে। ওনার গরুর মাংস রান্না করে কালাভূনার মত করে। ২ পিছ খাইছি চইলা আসছি। কাকা আমার খুব সৌখিন, বলে বেটা দিনাজপুর কি খাইতে আইছি। আইছে ঘুরতে। যাইহোক রুমে চইলা আসছি, সন্ধ্যার পর আবার বাইক দিয়া শহরের দিকে ডাব খাইছি অনেক গুলা। এভাবেই চলছে। ২৭ তারিখ দিনাজপুর থেকে বিকাল ৪ টায় রওনা দিছি, এক টানে কোন জায়গায় থামাথামি নাই ১০২ কিঃমিঃ রান করছি, আমি চালাই নাই, চালাইছে আমার Bahar U Sujon কাকা। আমি অনেক জায়গায় ঘুরছি কিন্তু এমন ঘুরাঘুরি নাই। অসাধারণ রাইডার একটানা ১০২ কিঃমিঃ রাস্তা কেউ চালায় নাই আমি শিউর। অসম্ভব ব্যপার। যখন চা খাওয়ার জন্য থামলাম, শরীরের পশম দাড়া হইয়া যাইতেছে, রক্ত বিরবির করে নিচে নামতেছে, এইটা গোবিন্দগঞ্জের ৪ কিঃমিঃ আগে। কিসের হানিফ, কিসের শ্যামলী, কিসের হুন্দাই, স্কেনিয়া, এইটা এফজেডএস ভার্সন টু। ১ঘন্টা ৫০ মিনিটে আসছি ১০২ কিঃমিঃ। গুগল ম্যাপ দেখলাম প্রচুর জ্যাম, মানুষ জনকে জিজ্ঞাস করলাম বললো বাম পাশের এই রাস্তা দিয়ে গেলে মহাস্থানগড় যাইতে পারবেন এই রোডে কোন জ্যাম নাই। গেলাম গ্রামের পরিবেশ ছোট রাস্তা পুরোটাই ফাকা, মাঝে মাঝে অটো আর বাইক যায় রাস্তা দিয়ে। মহাস্থানগড় গেলাম ঐখানে দই খেলাম ১২০ টাকা দাম নিছে, আমাদের জন্য আরেক জন অপেক্ষা করছে সুমন ভাই, ওনার বাসায় রাতে খেলাম ইলিশ মাছ, দেশি মুরগী, ডাল, খাশির মাংস, পেপে ভাজি, ছোট মাছ চচ্চড়ি, আর সাদা দই। খেয়ে দেয়ে হোটেলে গেলাম, আকবোরিয়া হোটেল। রাতে ঘুমাইলাম সকাল ৮ টা উঠলাম, তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেলাম। হোটেল থেকে চেক আউট দিলাম। বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর পরিমানে, ১০ টা ২০ মিনিটে টাংগাইলের উদ্দেশ্যে বগুড়া থেকে রওনা হলাম। রাস্তায় জ্যাম, আস্তে আস্তে চলছে বাইক। সিরাজগঞ্জের ঐখানে গরু ছাগলের হাট হয়, ঐ জায়গায় দাড়ালাম। তারপর ফুড ভিলেজ গিয়া থামলাম, ঐখানে ৩০ মিনিট বসলাম খাইল খুইলাম এই আর কি। তারপর সেতুর আগে কিছু ছবি নিলাম, টোল দিলাম আবারো ৪০ টাকা, টপস্পিড উঠানোর জন্য মোবাইল বের করছি, কিন্তু দুঃখের বিষয় পারি নাই ৯৩ কিঃমিঃ পর্যন্ত উঠছে। সেতুতে বাস নষ্ট হইছিলো এইকারনে। সেতুর ওপারে যমুনা রিসোর্ট এর এইখানে আবারো থামলাম, ১৫ মিনিটের মত সময় পার করছি। আবারো এলেংগাতে গিয়ে চা খেলাম, ২০ মিনিটের মত। তারপর একটানে বাসায়। ৫৪২ কিঃমিঃ এর জার্নি শেষ। টাংগাইল থেকে যাওয়ার সময় একটা জিডি করে গিয়েছিলাম, বাইকের কাগজ সব হারাইয়া গেছে। জিডির কপিটা সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে করে কোন সমস্যা না হয়। বাইক মাইলেজ দিছে ৫০ কিঃমিঃ প্রতি লিটার। এভারেজ বাইক চলছে ৭০/৮০ কিঃমিঃ গতিতে। কন্ট্রোল, কমফোর্ট অসাধারন। এইটা ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন টু । সবচেয়ে মুল কথা আমার দেখা অসাধারন বাইকার Bahar Uddin Ahmed Sujon। সেফটি ফার্স্ট, অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করতে হবে।
লিখেছেনঃ আল-আমিন খান প্রিন্স
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।