Suzuki Gixxer Monotone – ১৫৫ সিসির অন্যতম জনপ্রিয় ন্যাকেড স্পোর্টস কম্যুটার বাইক

This page was last updated on 02-Feb-2025 05:07pm , By Badhan Roy

বাংলাদেশের বাজারে ১৫৫ সিসি সেগমেন্টে জনপ্রিয় বাইকের কথা উঠলে Suzuki Gixxer  যে প্রথম সারিতে থাকবে তা কিন্তু না বললেও চলে। সময়ের সাথে Gixxer সিরিজের ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ও স্পেসিফিকেশনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে এবং সেইসাথে Gixxerেএর হায়ার সিসি ভার্শন লঞ্চ করা হলেও এখনো প্রথম ভার্শনের Gixxer যা মনোটোন নামে অধিক পরিচিত এখনো জনপ্রিয়তা ও বিক্রয়ের দিকে এদেশের বাজারে শীর্ষের দিকে অবস্থান করছে। 

এফোর্ডেবল প্রাইসিং, এগ্রেসিভ ন্যাকেড ডিজাইন, রিলায়েবিলিটি ও লো মেইনটেইনেন্স কস্ট হওয়ার কারনে ২০২৫ সালে এসেও মানুষ Gixxer মনোটোনের উপর এখনো সমানভাবে আগ্রহী। বর্তমানে Gixxer Monotone এর বাজার মূল্য ২,০৫,৯৫০ টাকা মাত্র। চলুন দেখে আসি এই প্রাইস রেঞ্জে ২০২৫ সালে বাইকটি বাইকারদের জন্য কেমন হবে, কি কি স্পেসিফিকেশন অফার করছে, বর্তমান সময় বিবেচনায় বাইকটির সীমাবদ্ধতা কি কি এবং কোন বাইকারদের জন্য বাইকটি অধিক উপযোগী।

 

Suzuki Gixxer Monotone – ডিজাইন

Suzuki Gixxer Monotone বাইকটিতে একটি ন্যাকেড স্পোর্টস কম্যুটার ক্যাটাগরির ডিজাইন লক্ষ করা যায়। কম্প্যাক্ট মাসকুলার লুক, ভি-শেপ হেডলাইট, এরোডায়নামিক শেপ ও কার্ভি সিঙ্গেল সিট বাইকটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তোলে। সাথে কম্প্যাক্ট ডুয়াল ব্যারেল এক্সহস্ট টি দেখতে খুব সুন্দর এবং সুন্দর বেজ আউটপুট দেয়। সাথে ৫টি আকর্ষনীয় কালারে বাইকটি এভেইলেবল, ভিতরে অন্য কোন শেড বা টোন ব্যাতিত পুরো বাইক এক কালারের হওয়া তে এটি মনোটোন নামে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

Suzuki Gixxer Monotone – ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন

Gixxer 155 বাইকগুলোতে রয়েছে BS-IV প্রযুক্তির কার্বোরেটর এয়ার-কুলড সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ১৫৪.৯ সিসির ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন যা ৮০০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ১৪.৬ হর্সপাওয়ার শক্তি ও ৬০০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ১৪ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। ওয়েট মাল্টিপ্লেট এসিস্ট এন্ড স্লিপার ক্লাচ এবং ৫ স্পিড গিয়ারবক্স স্মুথ এবং প্রতি গিয়ারেই কুইক রেসপন্স দিতে সক্ষম। ১৫৫ ক্যাটাগরির সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১২৫-১৩৫ কিমি প্রতি ঘন্টায়। বাইকটির ইঞ্জিন সাইজ কিছুটা ছোট, এবং এই ইঞ্জিনে মাত্র ৮৫০ মি.লি ইঞ্জিন অয়েল প্রয়োজন হয় এর ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10w40।

Suzuki Gixxer Monotone – ফিচারস

Gixxer 155 এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারস হলো:

সিট হাইট, ওজন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- বাইকটির সিট হাইট ৭৮০ মি.মি এবং ১৬০ মি.মি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে। কার্ব ওয়েট ১৩৫ কেজি এবং ওয়েট ব্যালান্সিং বেশ ভাল হওয়া তে বেটার কন্ট্রোলিং পাওয়া যায়। 

ইগনিশন সিস্টেম- কিক ও সেলফ ইলেক্ট্রিক ইগনিশন।   

ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার: সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারটি সুজুকির আরেক জনপ্রিয় স্পোর্টস বাইক GSXR 155 থেকে ইন্সপায়ারড। এতে ফুয়েল লেভেল, একাধিক ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, গিয়ার, সার্ভিস ইন্ডিকেটর, ব্যাটারি ভোল্টেজ ইন্ডিকেটর, এবিএস ইন্ডিকেটর, সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, রাইডিং মোড, ঘড়ি ইত্যাদি রয়েছে।  

ডুয়াল ব্যারেল মাফলার এক্সহস্ট- বাইকটির এক্সহস্ট সিস্টেম শর্ট ডুয়াল ব্যারেল মাফলার হওয়ার কারনে বেটার বেজ এর সাউন্ডের পাশাপাশি বেটার রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স নিশ্চিত করে এবং বাইকের প্রিমিয়ামনেস ফুটিয়ে তোলে। 

টিউবলেস টায়ার: বাইকের টায়ার সাইজ- সামনের টায়ার 100/80-17, পিছনের টায়ার: 140/60-17। Ceat ও MRF এর টিউবলেস টায়ার উভয় বাইকে দেওয়া হয়েছে যা সহজে সব রকম রাস্তায় পাড়ি দেওয়ার সাথে পাংচার বা লিক হওয়ার ঝুঁকি কম ও বেটার পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম।

ব্রেক: বাইকটিতে ২৬৬ মি.মি এর ফ্রন্ট ডিস্ক ও ১৩০ মি.মি এর রিয়ার ডিস্ক ব্রেক ব্যাবহার করা হয়েছে। তবে কোন এবিএস ভার্শন এই মডেল লঞ্চ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ছিল না।   

সাসপেনশন সিস্টেম: বাইকটির সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক ও পিছনে মাল্টি এডজাস্টেবল মনোশক অ্যাবজর্বার ব্যাবহার করা হয়েছে যা রাইডিং আরামদায়ক করে তোলে।

মাইলেজঃ মোট ১২ লিটারের ফুয়েল ক্যাপাসিটির সাথে প্রতি লিটার জ্বালানী তেলে ১৫৫ বাইকটি ৪০-৪৫ কিলোমিটার এর আশেপাশে মাইলেজ দিতে সক্ষম। ১৫৫ সিসির কার্বোরেটর বাইক বিবেচনায় এই মাইলেজ যথেষ্ট ভাল বলা বাহুল্য, তবে জ্বালানীর মান ও রাইডিং স্টাইলের উপরে মাইলেজ কম বেশি হতে পারে।  

 

কাদের জন্য Gixxer 155 Monotone?

যেসকল বাইকারের হাইট কম তারা এই বাইকটি ইজিলি রাইড করতে পারবেন। বাইকটির সিট হাইট ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেক কম হওয়াতে ৫.৩ ইঞ্চির বাইকারও সহজে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের বাইকারদের এই বাইকের লুক যেমন একটি ভাল রোড প্রেজেন্স দিবে তেমনই এর রেডি পিকআপ ও ব্রেকিং এর কম্বিনেশন সব বয়সের মানুষের সাথে তাল মেলাতে সক্ষম। 

পাশাপাশি Suzuki Gixxer Monotone বাইকটিতে মেইন্টেইনেন্স কস্ট যথেষ্ট কম এবং এর পার্টস সারা বাংলাদেশে অফিশিয়ালি এভেইলেবল হওয়াতে মেইন্টেইনেন্স এর ঝামেলা নিয়ে যারা চিন্তিত তারা অনেকটা নিশ্চিন্তে এটি নিতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, যাদের বাজেট ২ লক্ষ টাকার আশেপাশে এবং এফোর্ডেবল প্রাইসে যারা ১৫৫ সিসির বাইক খুজছেন তাদের জন্য Gixxer Monotone হতে পারে সেরা একটি চয়েস।  

 

জিক্সার ১৫৫ মনোটোনের সীমাবদ্ধতা

জিক্সার ১৫৫ মনোটোন বাইকটিতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও লক্ষণীয়। প্রথম সীমাবদ্ধতার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় এর হেডলাইট। যদিও যে সময়ে এই মডেলটি লঞ্চ হয় সেই সময়ে এলইডি লাইটের তেমন প্রচলন ছিল না,  কিন্তু হ্যালোজেন বাল্ব দিয়ে রাতে রাইড করা খুবই চ্যালেঞ্জিং বটে।

এরপরের সীমাবদ্ধতা দেখা যায় এর পিছনে ড্রাম ব্রেক। যদিও সুজুকির ব্রেকিং বরাবরই সেরা ব্রেকিং গুলোর একটা হিসেবে ধরা হয় কিন্তু তবুও ড্রাম ব্রেকের বদলে ডিস্ক থাকলে রাইডিং কনফিডেন্স আরেকটু বৃদ্ধি পেত। 

বাইকটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা যা প্রায় সব মনোটোন ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন তা হচ্ছে বাইকটির ক্লাচ এবং গিয়ার শিফটার খুবই টাইট। ফলে সিটি রাইডে হাত ও পায়ে বেশ ভাল প্রকার প্রেশার পড়ে। সাথে পিলিয়ন সিট খুব একটা কমফোর্টেবল না লং রাইডের ক্ষেত্রে, ফলে যারা পরিবার নিয়ে লং রুটে চলাফেরা করেন তাদের জন্য এটি একটি নেগেটিভ পয়েন্ট। 

 

তবে সবমিলিয়ে যাদের বাজেট ২ লক্ষ টাকার আশেপাশে, তারা সব দিক বিবেচনা করে সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকগুলোর সাথে তুলনা করে Gixxer Monotone নিতে পারেন। কারন এটার এফোর্ডিবিলিটি ও রিলায়াবিলিটির সঠিক মেলবন্ধনের কারনে আজকের দিন পর্যন্ত এটি এখনো বাংলাদেশের বাজারে অন্যতম সর্বাধিক বিক্রিত ১৫৫ সিসির বাইক। 

 

বাইক বিষয়ক সকল তথ্য সবার আগে পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।