ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ ১৫০ টেস্ট রাইড রিভিউ

This page was last updated on 09-Jul-2024 01:47pm , By Saleh Bangla

ইয়ামাহা বাংলাদেশের জাপানী মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের মধ্যে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড । যদিও দামের দিক থেকে একটু বেশি । তবে প্রিমিয়াম বাইকের ক্ষেত্রে ইয়ামাহার ইনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি । বর্তমানে আমরা তাদের যেসব প্রিমিয়াম বাইক দেখতে পাই তাদের মধ্যে ইয়ামাহা এফজেডএস এফ আই ভি২, ফেজার ও নতুন লঞ্চ করা ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ দেখতে পাই । তবে অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করবেন না যে, ইয়ামাহা অনেক ভাল মানের কিছু কমিউটার বাইক তৈরি করেছে । যার মধ্যে ইয়ামাহা স্যালুটো অন্যতম । তবে বর্তমানে তারা নিয়ে এসেছে এসজেড আরআর ভি২। তাই আজ টিম বাইকবিডি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ ১৫০ টেস্ট রাইড রিভিউ ।  

বাইকটির বেসড এডিশন কালার হচ্ছে ১৮৫,০০০/- টাকা, অপর দিকে এর ম্যাট গ্রীন কালার হচ্ছে ১৯০,০০০/- টাকা । ইয়ামাহা এর কমদামী বাইকের সেগম্যান্টের মধ্যে এই বাইকটি অনেক বেশি স্টাইলিশ । এছাড়া এর মাইলেজ এর দিক থেকেও অনেক ভাল ফিডব্যাক দেয় । 

ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ ১৫০ - ইঞ্জিন ও পারফর্মেন্স এই বাইকটিতে একদম সেম ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা মুলত ব্যবহৃত হচ্ছে ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ভি২ বাইকের । তবে ফুয়েল সাপ্লাই সিস্টেমটা কার্বুরেট । এর ইঞ্জিন থেকে প্রায় ১১.৯ বিএইচপি @ ৭৫০০ আরপিএম এবং ১২.৮ এনএম টর্ক @ ৬০০০ আরপিএম পর্যন্ত ক্ষমতা উতপন্ন করতে পারে । বাইকটিতে কিক এবং সেলফ দু ধরনের স্টার্ট সিস্টেম রয়েছে । 

 ইয়ামাহা এই বাইকের ইঞ্জিনে ব্যবহার করেছে ব্লু কোর টেকনোলজি, যা রাইডিং স্মুথ হয় বরং এর কারনে ফুয়েল ইফিশিয়েন্সি ও বেরে যায় । বাইকটি টেস্ট রাইড করার সময় আমরা প্রায় ৪২ কিমি প্রতি লিটার পেয়েছি শহর এলাকায় এবং হাইওয়েতে পেয়েছি ৪৫ কিমি প্রতি লিটার । যদিও বাইকটি স্পিডের জন্য নয় তবে আমরা ১০৫ কিমি প্রতি ঘন্টায় স্পিড তুলতে সক্ষম হয়েছি । বাইকটি হাই আরপিএম এ কিছুটা শব্দ করে, তবে হাই আরপিএম এর ইঞ্জিন একটুও ভাইব্রেট করে না । কিন্তু আপনি একটু ভাইব্রেশন অনুভব করবেন যখন আপনি ৭০০০ আরপিএম ক্রস করবেন । এই ভাইব্রেশন আপনি অনেক স্পিড থাকাকালীন সময়ে ম্যানেজ করে নিতে পারবেন । একটি কমিউটার মোটরসাইকেলের জন্য এর এক্সেলারেশন অনেক ভাল ।


ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি ১৫০ - ফিচার্স ও স্টাইল এই বাইকটি ওজনে হালকা এবং ড্রাই ওয়েট হচ্ছে মাত্র ১২৫কেজি । এর ফুয়েল ট্যাঙ্ক এ প্রায় ১৪ লিটার ফুয়েল নেয়া যায় । এই বাইকটি ইয়ামাহা এর ১৫০ সিসি কমিউটার সেগম্যান্টের বাইক । এর হেডলাইট হচ্ছে হ্যালোজেন এবং এর সাথে এএইচও দেয়া হয়েছে । বাইকটিতে স্পিডোমিটার সম্পূর্ন এনালগ রেভ কাউন্টার, স্পিডোমিটার ও ফুয়েল গেজ দেয়া হয়েছে । তবে কোন ট্রিপ মিটার দেয়া নেই । সুইচ কোয়ালিটি ও দারুন; এই সুইচ গুলো ব্যবহৃত হয়েছে ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ভি২ বাইকে । আমার ২০০০কিমি টেস্ট রাইডে কালার নিয়ে কোন ইস্যু পাইনি । হ্যান্ডেলবার বেশি প্রশস্ত নয় আর এর টার্নিং রেডিয়াসও অনেক ভাল । যেহেতু বাইকটি স্লিম তাই আপনি ট্রাফিকে খুব সহজেই পার করতে পারবেন, এছাড়া এর টার্নি রেডিয়াসের কারনে খুব সহজে বিভিন্ন এঙ্গেল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবেন । 

পিলিয়ন সিট বেশ আরামদায়ক এবং পিছনে বসার জন্য গ্রেইব রেইল দেয়া হয়েছে, যাতে লং রাইডের সময় আরাম করে বসা যায় । সিট অনেক বড় ও প্রশস্ত, তাই লং রাইডে বেশ আরামদায়ক । আমি বাইকটি অনেক ধরনের রোডে রাইড করেছি শহর এবং হাইওয়েতে, এর সাসপেনশন আমাকে ভাল ফিডব্যাক দিয়েছে । বাইকটিতে স্ট্যান্টডার্ড শারি গার্ড ও চেইন কভার দেয়া হয়েছে । মাড গার্ড অনেক বেশি প্রশস্ত যার কারনে রাইড ও পিলিয়নের পা কাদা ও ধুলাবালি থেকে রক্ষা পায় । ইয়ামাহা কোন সাধারন মোটরসাইকেল তৈরি করেনি । বাইকটি পেশিবহুল শার্প এজড এবং ফুয়েল টাংকের দুই পাশে এয়ার স্কুপ দেয়া হয়েছে । ইয়ামাহা বাইকটিতে স্টাইলিং এর ক্ষেত্রে কোন ভুল করেনি । 

ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ ১৫০ - ব্রেক ও সাসপেনশন

সামনের দিকের ইয়ামাহা ব্যবহার করেছে ২৪৫মিমি নিশিন ক্লিপার ডিস্ক ব্রেক । রেয়ার ব্রেক হচ্ছে ড্রাম ব্রেক । আমার উচ্চতায় নিয়েও আমি খুব সহজেই রাইড করেছি । এছাড়া এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেক ভাল । পিলিয়ন নিয়েও অনেক সহজেই রাইড করা যায় । আমার কাছে বাইকের সবচেয়ে বেস্ট পার্ট মনে হয়েছে এর সাসপেনশন । তারা ফ্রন্টে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন ব্যবহার করেছে । অপরদিকে রেয়ার সাসপেনশন হচ্ছে ১০০মিমি লাইট ওয়েট স্প্রিং কয়েল সাসপেনশন । এর ব্রেক ও ব্যালেন্স এর কারনের ১০০ সেকশন টায়ার নিয়েও এই বাইকটি তার ব্যালেন্স এ তেমন সমস্যা হয় না ।  তবে ইয়ামাহা কে ধন্যবাদ যে তারা এলয় হুলইস ও টিউবলেস টায়ার দিয়েছে । প্রথম ৫০০ - ৬০০ কিমি রেয়ার সাসপেনশন কিছুটা হার্ড পাবেন । তবে ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে সাসপেনশন আপনাকে ভাল ফিডব্যাক দেবে । যদিও বাইকটি একটি কমিউটার মোটরসাইকেল, তবে ইয়ামাহা এর বিল্ড কোয়ালিটি ভাল করার জন্য অনেক সময় নিয়ে বাইকটি তৈরি করেছে । এই প্রাইস রেঞ্জ এ বিল্ড কোয়ালিটি কালার এবং ফিনিশিং অনেক দারুন হয়েছে ।


ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি ২ ১৫০ - রাইডিং অভিজ্ঞতা এই বাইকটিতে সিটি রাইড করার অনেক মজার ও আনন্দদায়ক । আপনি খবু সহজেই রাস্তার ট্রাফিকের মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে পরবেন এবং সাসপেনশনের কারনে অনেক খারাপ রাস্তায়ও পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার সময় ভাল ফিডব্যাক পাবেন । এছাড়া এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স আপনাকে অনেক বেশি হেল্প করবে । টায়ারের গ্রিপ যদিও সেভাবে বেস্ট নয়, তবে আমার ফ্রন্ট ডিস্ক এর ব্যাপারে অভিযোগ আছে । হ্যা এটা সত্যি যে বাইকটির ডিস্ক ব্রেকের ক্ষেত্রে কোন ভুল নেই । তবে আমি আশা করেছিলাম এই প্রাইস রেঞ্জে ইয়ামাহা ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক দিতেই পারত । 

ব্রেকিং এর ব্যালেন্স ৯০কিমি প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত ভাল ই থাকে এর উপর চলে গেলে আপনি আত্মবিশ্বাস হারাতে পারেন ।   রেয়ার ব্রেক হচ্ছে ড্রাম ব্রেক এর ফিডব্যাক ও বেশ ভাল । তবে ঠিক ভাবে এডজাস্ট করা না হলে এটি কিছুটা হার্ড মনে হবে । টায়ার গুলো যদিও চিকন তবে আপনি সিটি বা হাইওয়েতে রাইড করার সময় ভাল ফিডব্যাক পাবে কারন এর সাসপেনশন ও চেসিস এর সকল সম্বনয় দারুন ভাবে একে ব্যালেন্স করেছে । টিউবলেস টায়ার হওয়ার কারনে আপনি ঝামেলাহীন ভাবে হাইওয়ে রাইড করতে পারবেন । আপনি হাই স্পিড কর্নারিং করতে পারবেন । হেড লাইট হচ্ছে হ্যালোজেন, তবে আমরা বলব আপনি ভাল মানের কোন ইউনিট বাল্ব ব্যবহার করুন । ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ - ভাল দিক

  • স্মুথ ইঞ্জিন
  • ফিনিশিং ভাল
  • সাসপেনশন ফিডব্যাক ভাল
  • সিটি এবং হাইওয়েতে কমফোর্টেবল ভাবে রাইড করতে পারবেন
  • ফুয়েল ট্যাঙ্ক অনেক বড়, তাই লং রাইড করতে পারবেন সহজেই
  • পেশীবহুল ডিজাইন

ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ - খারাপ দিক

  • দাম একটু বেশি । (সিবিউ কন্ডিশন)
  • ইঞ্জিন বেশি পাওয়াফুল নয়
  • ফুয়েল মিটার ভুল রিডিং দেখায়
  • হ্যান্ডলবার বেশি প্রশস্ত নয়   ইয়ামাহা এর অন্যতম স্টাইলিশ মোটরসাইকেল হচ্ছে ইয়ামাহা এসজেড আরআর ভি২ । এর থেকে অনেক বেশি পারফর্মেন্স আশা করা ভুল তবে দামের কথা চিন্তা করলে যদি ধরা হয় ওভারঅল কমফোর্ট অনুযায়ী একদম খারাপ নয় । এই বাইকটি তাদের জন্য যারা প্রতিদিনের চলাচলে বাইক ব্যবহার করেন এবং স্পিডের চেয়ে রাইডিং কেই বেশি গুরুত্ব দেন । এই টেস্ট রাইড রিভিউতে আমাদের পার্টনার হিসেবে ছিল রেস, গিয়ারএক্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স ও টুরিনো টায়ার ।