Znen T10 নিয়ে ঢাকা সিন্দুকছড়ি ৫৭৪ কিলোমিটার ভ্রমন কাহিনী - লিমা সিমু

This page was last updated on 16-Nov-2023 09:18am , By Shuvo Bangla

আমি লিমা সিমু । একজন ভ্রমন প্রেমিক বলতে পারেন । আপনাদের সাথে আমি Znen T10 নিয়ে ঢাকা সিন্দুকছড়ি ৫৭৪ কিলোমিটার ভ্রমন কাহিনী শেয়ার করবো । 

Znen T10 স্কুটার নিয়ে ঢাকা সিন্দুকছড়ি ৫৭৪ কিলোমিটার রাইড

ঢাকা থেকে আমার যাত্রা শুরু হয় ভোর ৫ টায় আমি ঢাকা থেকে সিন্দুকছড়ি - মহালছড়ি - খাগড়াছড়ি হয়ে আবার রাত ৯ টায় ঢাকা চলে আসি । 

স্কুটার Znen T10

সবসময় ট্যুরে আমার বাহন ছিল স্কুটার Znen T10 । টোটাল ট্যুরে মোট দুরত্ব ছিল ৫৭৪ কিলোমিটার স্কুটারের অডোমিটার অনুযায়ী ।

আলহামদুলিল্লাহ একদিনে স্কুটারে ৫৭৪ কিলোমিটার রাইড করি । সময় ও দুরত্বের হিসেবে একদিনে এটাই আমার সবচেয়ে দীর্ঘতম স্কুটার রাইড।

ছয় মাসের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল এ লম্বা ট্যুর খানি, এ লম্বা ট্যুরের জন্য নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে নিয়েছিলাম।

প্রথমে ধন্যবাদ জানাই আমার স্বামীকে, উনি সব সময় আমাকে ট্যুরের ব্যাপারে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। উনি আমার জন্য পাহাড়িদের Traditional Dress Pinon এর ব্যবস্থা করেন যাতে এ ড্রেস পরিধান করে পাহাড়ি রাস্তায় স্কুটার রাইড করলে যে কেউ মনে করবে কোন পাহাড়ি কন্যা পাহাড় পর্বত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

স্কুটার Znen T10

ধন্যবাদ জানাই আমার পরিবারের সকলকে, তারা সব সময় আমার পাশে ছিলেন ও আছেন। আরও এক সপ্তাহ আগে কথা ছিল এ ট্যুরটা সম্পন্ন করার , কিন্তু শারীরিক ও মানসিক কারনে বিলম্ব হল।

বাইরে রাত কাটানোর অনুমতি পারিবারিকভাবে পাই নি, তাই দিনে গিয়ে দিনে বাসায় ব্যাক করতে হবে বিধায় ভোর ৫ টায় মহালছড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। এত সকাল সকাল যাত্রা শুরু করেও কুমিল্লার মিয়ামী হোটেলে পৌছালাম সাড়ে সাতটায়, কারন রাস্তায় ছিল ট্রাকের ব্যাপক যানজট। সকালের নাস্তাটা মিয়ামীতেই সেরে নেই। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চলতে চলতে সকাল দশটার দিকে বারৈয়ারহাট চলে এলাম; খাগড়াছড়ি বরাবর রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। রাস্তাটির অবস্থা মোটেও ভালো নয়, এখনও কাজ চলছে। 

৫ কিমি অতিক্রম করে করেরহাটে ডান দিকে ঢুকে গেলাম। এখান থেকে পাহাড়ি রাস্তার সূচনা। এটাই আমার প্রথম পাহাড়ে স্কুটার রাইড। হেয়াকো পৌছার আগ পর্যন্ত ঐ রাস্তায় চলাকালীন মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় নি।

স্কুটার Znen T10

হেয়াকোর পর পর বাম পাশে বিশাল রাবার বাগান এবং জায়গাটির নাম সেলফি রোড। একটু পর চলে এলাম চিকনছড়া নামক এলাকায়। 

কিছুক্ষন পর চলে এলাম রামগড় টি এস্টেট নামক সুবিশাল চা বাগানে। আর কিছুক্ষন পর চলে এলাম ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর সামনে, ব্রিজটি ফেনি নদীর উপর যা কিনা ভারতের সাবরুম ও বাংলাদেশের রামগড়কে সংযোগ করেছে। 

একটু পর চলে এলাম রামগড় থানা সদরে; এখান থেকে সুন্দর রাস্তার সূচনা। এ রাস্তা ধরে চলে এলাম জালিয়াপাড়া, এখান থেকে শুরু সিন্দুকছড়ির রাস্তা। এ রাস্তায় প্রবেশ করে আমি শিহরত; যেমন আকাবাকা আবার ঢালগুলোতে রোলার কোস্টার ফিল পাচ্ছিলাম।

ছবির থেকেও সুন্দর এ পাহাড়ি জায়গাগুলো; দুপাশে সুবিশাল সবুজ পাহাড়। কিছু কিছু জায়গাতো মাটি থেকে অনেক অনেক উপরে।

সিন্দুকছড়ি ভিউ পয়েন্টে আসার পর পর বৃষ্টি শুরু হলো। পাহাড়ি আকাবাকা রাস্তা, তার উপর বৃষ্টির দরুন খুব ধীরে ও সাবধানে স্কুটার রাইড করতে থাকলাম।

স্কুটার Znen T10

এরকম অদ্ভুত বৃষ্টি কখনও সমতলে দেখি নি; ভাষায় বলে বুঝানো যাবে না। বৃষ্টির সাথে সাথে ধুয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। মেঘগুলো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে তা বেয়ে বেয়ে পড়ছে; এমনকি রানিং অবস্থায় ভাসমান মেঘ আমাদের শরীর স্পর্শ করে আমাদেরকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল।  

রোডে কিছু কিছু জায়গায় দেখলাম পাহাড় ধসে রাস্তার কিছু অংশ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে ফেলেছে। মহলাছড়ির ইসিবি চত্বরে পৌছা মাত্র ঢাকার উদ্দেশ্যে U Turn নিলাম। সিন্দুকছড়ি রোডে পানছড়া নামক স্থানে একটি দোকানে প্রবেশ করলাম। 

ছোট দোকানে কয়েকজন পাহাড়ি মহিলাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম। আমার গায়ে তাদের Traditional Dress থাকায় তারা প্রথমে আমাকে তাদেরই একজন মনে করেছিল; এক বয়স্ক মহিলা তো বলেই দিল, "তোমারে আমার মেয়ে ভাবছিলাম"। 

তাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে থাকলাম। সেখানে দাবা নামের বাশের একটা জিনিস দেখলাম যা দিয়ে ধুমপান করা হয়। বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলে সেই দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লাম সোজা ঢাকার উদ্দেশ্যে।

স্কুটার Znen T10

Also Read: সর্বশেষ জিনান বাইক নিউজ বাংলাদেশ

ঢাকা থেকে মহালছড়ি যাওয়ার পথে ফেনী পর্যন্ত কোন বাস নজরে আসল না; হয়ত ঢাকা থেকে বাসগুলো ছাড়ার আগেই আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেন ঢেউটিন; ভুমধ্যসগারের বড় বড় ঢেউ; লেন চেঞ্জ করতে গেলে গাড়ি জাম্পিং করে।

আমি আমার Znen T10 দিয়ে এত লম্বা রাইড করে খুবই সন্তুষ্ট; ১৬ ঘন্টায় ৫৭৪ কিলোমিটার রাইড করেও শরীরে কোন ক্লান্তির রেষ ধরে নি। Znen এর বাইকগুলো বেশ কম্ফোর্টেবল । 

আসলে একদিনে জার্নি করে ঐ রকম মজা পাওয়া সম্ভব না সিন্দুকছড়ি-মহালছড়িতে। আল্লাহ তৌফিক দিলে এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে চাই। ধন্যবাদ । 

লিখেছেনঃ লিমা সিমু
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।