Yamaha FZS Fi V3 ২৫০০ কিলোমিটার রাইড - সাজিন খন্দকার

This page was last updated on 28-Jul-2024 08:55am , By Raihan Opu Bangla

আমি সাজিন খন্দকার। আমার ঠিকানা চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা। বর্তমানে আমি একটি Yamaha FZS Fi V3 বাইক ব্যবহার করতেছি । বাইকটি এখন ২৫০০ কিলোমিটার রানিং । আমি Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি ২৫০০+ কিলোমিটার চালিয়ে আমাার অনুভূতি সম্পর্কে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

Yamaha FZS Fi V3 ২৫০০ কিলোমিটার রাইড - সাজিন খন্দকার

yamaha fzs fi v3 user

 বাইক আসলে কি জিনিস আমি তা চালানোর আগ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি এবং বাইকের প্রতি আমার তেমন নেশা ছিলো না। বাইকের প্রতি আকর্ষণ বাড়ার কারণে আমি Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি ক্রয় করি। ২০১৩ সাল থেকে আমি আমার চাচার Yamaha R15 V2 বাইকটি দেখতে দেখতে আমার ৭ বছর পার হলো। কিন্তু তার আগে আমি বাইক সম্পর্কে তেমন বুঝতাম না এবং চালানোর ইচ্ছে ছিল না। তার বাইক দেখে আমি বাইকের সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকি।


এক পর্যায়ে আমার বাইক চালানোর শখ জাগে। আমি আমার চাচাকে বলি আমি বাইক চালাতে চাই এবং সে তার বাইক আমাকে চালাতে দিতে রাজি হয়। আমার জীবনের প্রথম শখ তার বাইকটি দিয়েই পূরণ হয়। আস্তে আস্তে বাইক চালিয়ে বাইক সম্পর্কে আরো ধারণা নিতে থাকলাম এবং এক পর্যায়ে বাইক চালানো মোটামুটি শিখে গেলাম। সেখান থেকেই বাইকের প্রতি এক অন্য রকম আকর্ষন সৃষ্টি হয় । 


আমি পিতা-মাতার একমাত্র ছেলে সন্তান বলে খুব আদরের ছিলাম। আমার পিতা বাইক পছন্দ করতেন না কারণ বাইক দিয়েই প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ এক্সিডেন্ট করে। যার ফলে আমার বাইক কিনার ইচ্ছা অপূরণীয় হয়ে গেলো। আমি এসএসসি পাশ করার পর আমার পিতাকে আরো জোর দেই বাইক কিনে দেওয়ার জন্যে। এক পর্যায়ে সে আমাকে বাইক কিনে দেওয়ার জন্যে রাজি হয়ে যায়।fzs fi v3 showroom

 আমি BikeBD এর Youtube channel থেকে বাইকের রিভিউ দেখা শুরু করি। এরপর রিভিউ দেখে মনে হলো Yamaha FZS Fi V3 বাইক আমার জন্যে বেষ্ট হবে কারণ এর লুক, মাইলেজ, কমফোর্ট, ব্রেক পারফরম্যান্স এবং বিশেষ করে দামটা হাতের নাগালে ছিলো। আমার পিতা যদিও বাইক কিনে দিতে রাজি ছিলো না তবুও আমি প্রতিদিন আমার চেষ্টা চালিয়ে যেতাম বাইক কিনে দেওয়ার জন্যে। 


তারপর এই বাইক এর বিশেষত্ব এবং গুণগত মান সম্পর্কে তাকে ধারণা দিতে লাগলাম এবং তাকে বিশ্বাস দিলাম যে আমি বাইক সাবধানে চালাবো এবং এক পর্যায়ে আমার পিতা আমাকে বাইক ক্রয় করে দেন। 


নারায়ণগঞ্জের একমাত্র Aci motor Bangladesh এর Authorised showroom "Brothers Motors" থেকে আমার জীবনের প্রথম বাইক Yamaha FZS Fi V3 বাইকটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুর দিকে ২,৬৩,০০০/- টাকা দিয়ে ক্রয় করি যার বর্তমান দাম ২,৪০,০০০/- টাকা। সেদিন আমার পিতা এবং আমার মামাকে নিয়ে যাই আমার সেই স্বপ্নের বাইক ক্রয় করতে।

Yamaha FZS FI V3 Test Ride Review


আমার খুশির অনুভূতিই ছিলো অন্যরকম যা বলে বোঝানো যাবে না। বাইক ক্রয়ের পর যখন প্রথম বাইকে বসি তখন মনে হচ্ছিলো যে এই বাইকটি আমার সবসময়ের খুশির কারণ থাকবে। বাইক চালাতে চালাতে ইচ্ছে হয় অনেক দূরে দূরে ভ্রমন করি। ৩ মাসে ২৫০০+ চালিয়ে এই বাইকের বিশেষত্ব যা বুঝতে পারলাম এর লুকস, মাইলেজ ৪৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার, ABS ব্রেকিং সিস্টেম এবং এর পারফরমেন্স তা অসাধারণ। 


এছাড়া এই বাইকে আরো রয়েছে Fi ইঞ্জিন, এয়ার কুল ইঞ্জিন, পাওয়ার 13.2 ps @ 8000 rpm , টর্ক 12.8 Nm @ 6000 rpm , ৫টি গিয়ার, ২ টা ব্রেক ডিক্স ব্রেক সাথে সিংগেল চ্যানেল ABS সিস্টেম ।fzs fi v3 headlight bd

আমি বাইকটি এ পর্যন্ত ২ বার ফ্রী সার্ভিস করিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের একমাত্র Aci Motor Bangladesh এর Authorised showroom "Brothers Motors" থেকে সার্ভিসিং করাই। তারা আমার বাইকটি খুব যত্ন সহকারে সার্ভিসিং করে। আমার বাইকে এ পর্যন্ত তেমন বড়ো কোনো সমস্যা হয়নি। 


আমি আমার বাইকের প্রতিদিন যত্ন করি এবং যখন সার্ভিসিং এর সময় হয় তখন সার্ভিসিং করাতে নিয়ে যাই। আমি এতে ইঞ্জিন অয়েল এবং অয়েল ফিল্টার ৩ বার পরিবর্তন করিয়েছি। আমি ইঞ্জিন অয়েল Yamalube Optima 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি এবং নিয়মিত পরিবর্তন করি কারণ এতে ইঞ্জিন ভালো থাকে।


এই বাইকের লুক অসাধারণ থাকার কারণে মডিফিকেশন এখনো করিনি।আমি সর্বোচ্চ স্পিড পছন্দ করি না তবুও ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা উঠিয়েছি। আমি ব্রেকিং পিরিওড সঠিক ভাবে পালন করেছি যার ফলে বাইকটি আরো স্মুথ হয়েছে।yamaha rider yrc

বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • লুক যা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে
  • ব্রেক যা Single channel ABS থাকার কারণে খুব ভালো ব্রেক হয়
  • সিটিং পজিশন পিলিয়নসহ বেশ আরামদায়ক
  • Fi প্রযুক্তি থাকার কারণে ৪৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পেয়েছি
  • এই বাইকের মোটা টায়ার বাইকের কন্ট্রোলিং আরো উন্নত করেছে


প্রত্যেক বাইকের যেমন ভালো দিক থাকে তেমন খারাপ দিক ও থাকে যা এই বাইকে ও রয়েছে।

বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • হেডলাইট যা হাইওয়ে রোডের জন্যে পারফেক্ট না
  • বাইকের অন্যতম খারাপ দিক হচ্ছে এই দামে বাইকের Air cooled ইঞ্জিন
  • এই বাইকে Gear indicator নাই যার ফলে যারা গিয়ার সিফটিং করার পর কতো গিয়ার এ বাইক চলছে তা মনে রাখতে না পারলে তাদের জন্যে সমস্যা হবে
  • এর রেডি পিকাপ কম হওয়াতে হাইওয়ে রোডে কোনো ট্রাক বা গাড়ি ওভারটেক করতে কষ্ট হবে
  • এই বাইকের ভাইব্রেশন একটু বেশি পেঁয়েছি


এছাড়া এ বাইকের আর তেমন কোনো খারাপ দিক অনুভব করিনি। আমি এখন পর্যন্ত লং ট্যুরে কোথাও যাইনি। পরে একটি বাইকিং গ্রুপে যুক্ত হই যার নাম YRC Bangladesh। একদিন তাদের আয়োজিত ৩০০ফিট পূর্বাচল প্রোগ্রাম আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথম বার সেখানে যাই। যেটা আমার জন্য ছিলো প্রথম লম্বা দূরত্বের ভ্রমন ।yamaha fzs fi v3 ride review

 আমার বাইক সম্পর্কে চূরান্ত মতামত হচ্ছে এই বাইক আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বাইকটি ব্যবহার করছি। তেমন কোনো বড় সমস্যায় পরিনি। ভালোভাবে মেইনটেন করতে পারলে এবং যত্ন নিতে পারলে বাইকটি দীর্ঘদিন স্মুথ থাকবে যা চালিয়ে বেশ মজা পাওয়া যাবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে মিডরেঞ্জ বাজেট এর এই বাইকটি বেষ্ট। তবে যারা স্পিড বেশি পছন্দ করেন না অথবা লম্বা দূরত্বের ভ্রমন দিতে চান তাদের জন্যে এই বাইক। 

Also Read: Yamaha Scooty Price In Bangladesh

আর যারা রেডি পিকাপ চান তারা এই বাইকে এটা বাদে বাকি সব পাবেন। আমি আমার Yamaha FZS Fi V3 বাইকটির সম্পর্কে মতামত দিয়ে আজকে এখানেই শেষ করলাম। এছাড়াও সব ইয়ামাহা বাইক দাম এবং অন্যান্য ব্রান্ডের বাইকের দাম দেখতে আমাদের সাথে থাকুন।  ধন্যবাদ।


লিখেছেনঃ সাজিন খন্দকার 


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে