Yamaha FZS FI V3 রিভিউ - টীম বাইকবিডি
This page was last updated on 14-Jul-2024 09:33am , By Ashik Mahmud Bangla
ইয়ামাহা এফজেডএস সিরিজ ছিলো সম্পূর্ন ভিন্ন একটি আইডিয়া, যা পরবর্তীতে অন্যান্য কোম্পানিও ফলো করে। এটা এমন একটি বাইক সিরিজ, যা এতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো যে এটা ১১ বছর ধরে প্রোডাকশন করা হচ্ছে, এবং বাইকটি তার থার্ড জেনারেশনে প্রবেশ করেছে। স্বাগতম, টীম বাইকবিডির Yamaha FZS FI V3 টেস্ট রাইড রিভিউতে।
Yamaha FZS FI V3 রিভিউ - টীম বাইকবিডি
২০০৮ সালে যখন ইয়ামাহা এফজেডএস লঞ্চ করা হয় তখন অনেকেই কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। ১৫০ সিসি সেগমেন্টে এটাই প্রথম বাইক যাতে ১৪০ সেকশনের রিয়ার টায়ার দেয়া হয়েছিলো। বাইকে মোটা টায়ার ব্যবহার করলে ড্র্যাগ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বাইকের এক্সেলেরেশন, মাইলেজ এবং টপ স্পীড কমে যায়। কিন্তু ইয়ামাহা চেয়েছিলো বাইকের পারফর্মেন্স এর বদলে এর হ্যান্ডলিং ও ব্রেকিং এর দিকে নজর দিতে, এবং তারা সেটাই করেছে।
Yamaha FZS FI V3 টেস্ট রাইড রিভিউ - ভিডিও রিভিউ
বাইকটি বাংলাদেশে আসার পরে আমরা দেখতে পাই যে সেসময়ের অন্য যেকোন বাইকের চাইতে ইয়ামাহা এফজেডএস এর লীন এঙ্গেল সেরা, এবং একইসাথে হাইওয়েতে রাইডের ক্ষেত্রে বাইকটির কমফোর্ট লেভেল সম্পূর্ন অন্য মাত্রায়।
Yamaha FZS FI V3 - ইঞ্জিন এবং পারফর্মেন্স
ইয়ামাহার একটি ট্যাগলাইন রয়েছে, রেভস ইয়োর হার্ট। এবং, ইয়ামাহা এফজেডএস এর ইঞ্জিনটি তারা কখনোই পরিবর্তন করেনি, শুধু কিছু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করেছে এবং কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন করেছে। এই ১৫০ সিসি এয়ার কুলড ফুয়েল ইনজেক্টেড ইঞ্জিনটি বর্তমানে ১৩ বিএইচপি শক্তি এবং ১২.৮ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। ইঞ্জিনটির সাথে একটি স্মুথ ৫-স্পীড গিয়ারবক্স রয়েছে। ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেমের কারনে ইঞ্জিনটি খুবই স্মুথ। এছাড়াও বাইকটিতে বেশ ভালো পরিমানে লো এন্ড টর্ক দিয়েছে, যার ফলে ০-৮০ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত বাইকের এক্সেলেরেশন টের পাওয়া যায়, যা আগের ভার্শনের চাইতে কিছুটা বেটার। ইঞ্জিনটি ৬৫০০ আরপিএম এর দিকে কিছুটা ভাইব্রেশন করে, এবং ৭ হাজার আরপিএম এর পরে বাইকের হ্যান্ডেলবারে এবং ফুটপেগে কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভব করা যায়।
হাইওয়েতে ইমার্জেন্সি ওভারটেকিং এর সময় কিছুটা সতর্ক থাকা প্রয়োজন, কারন এতে অন্যান্য বাইকের মতো ইঞ্জিন থেকে ইন্সট্যান্ট বুস্ট পাওয়া যায় না। আমাদের টেস্ট রাইডের সময় আমরা ১১৭ কিমি/ঘন্টা এর টপ স্পীড পেয়েছি। বাইকটির মাইলেজ আমরা শহরে পেয়েছি ৪০ কিমি/লিটার, এবং হাইওয়েতে পেয়েছি ৪৫ কিমি/লিটার পর্যন্ত। বাইকটির ইঞ্জিনটি ফুয়েল এর প্রতি খুবই সেনসিটিভ, এবং আপনাকে অবশ্যই বাইকে সেরা মানের তেলই ব্যবহার করতে হবে। বাইকটির নতুন স্পীডোমিটারটি রাতেরবেলা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে, তবে অন্ধকারে এটা আরেকটূ উজ্জ্বল হবার দরকার ছিলো।
Yamaha FZS FI V3 - ফিচারস
বাইকটিতে ইয়ামাহা আর১৫ ভার্শন ৩ এর সকল সুইচ গিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এর পাস লাইটটি খুবই অদ্ভুত একটা পজিশনে দেয়া হয়েছে, এবং এতে অভ্যস্ত হতে রাইডারের কিছুটা সময় লাগবে। বাইকটিতে এলইডি হেডলাইট দেয়া হয়েছে, নতুন নেগেটিভ এলইডি স্পীডোমিটার দেয়া হয়েছে, ইঞ্জিনকে কাদা এবং ধূলো থেকে রক্ষা করতে ইঞ্জিন কাওয়েল দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাইকে রয়েছে ক্রোম ডাক্ট প্লেটিং, নতুন মিড শিপ মাফলার কভার, টায়ার গার্ড এবং সম্পূর্ন নতুন ডিজাইনের সিট, যেখানে পিলিয়ন আগের চাইতে প্রায় ১৬% বেশি সিটিং স্পেস পাবেন। পিলিয়ন সিটটি ২৬ মিলিমিটার চওড়া, এবং প্রায় ৫ মিলিমিটার উচু।
পিলিয়ন সিটের কমফোর্ট নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইয়ামাহা বাইকটিতে নতুন গ্র্যাব রেইল দিয়েছেযা একটি সিঙ্গেল ইউনিট হলেও আকারে বেশ বড়। এসকল পরিবর্তন এর কারনে বাইকটি আগের ভার্শন ২ এর চাইতে প্রায় ৫ কিলোগ্রাম ভাড়ি। তবে, বাইকটি রাইড করার সময় আপনি এটা খেয়ালই করবেন না। বাইকটির ইগনিশন কী এখন বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের সাথে দেয়া হয়েছে। Yamaha FZS V3 বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের দুপাশে বড় আকারের ফুয়েল ট্যাংক কভার দেয়া হয়েছে, যার ফলে বাইকটিকে আরো বেশি বড় দেখায়। বাইকটির নতুন ডিজাইন আগের চাইতে কিছুটা বড় আকৃতির, কাজেই বাইকটির হ্যান্ডেলবার আগের চাইতে সামান্য উচু করা হয়েছে। তবে, এই বিষয়গুলো বাইকের রাইডিং পজিশনে কোন প্রভাব ফেলেনি, বাইকটি রাইড করা এখনো প্রচন্ড কমফোর্টেবল।
বাইকটির ১৩ লিটারের ফুয়েল ট্যাংকের সামনের এয়ারস্কুপে ব্যবহার করা হয়েছে ক্রোম প্লেটিং, এবং এই এয়ার স্কুপগুলো চলার সময় বাইকটির ইঞ্জিন ঠান্ডা হতে সাহায্য করে। বাইকটির এলইডী হেডলাইটটি আশানুরূপ পারফর্ম করেছে, তবে বাইকটির মাসকুলার বডি ডিজাইন এর তূলনায় বাইকটির হেডলাইটটি বেশ ছোট দেখায়। এছাড়াও কোম্পানি চাইলেই বাইকটির পেছনের অংশের ডিজাইন আরেকটু ভালো করে ডিজাইন করতে পারতো।
Yamaha FZS FI V3 - ব্রেকিং এবং সাসপেনশন
বেশিরভাগ বাইকারই Yamaha FZS FI V3 এর একটা জিনিস খুবই পছন্দ করেছেন,স এটা হচ্ছে এর সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস যা বাইকের সামনের চাকায় ফিট করা হয়েছে। বাইকের সামনে এবং পেছনে ডিস্ক ব্রেক দেবার পাশাপাশি বাইকে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস দেয়ার কারনে বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম এখন সম্পূর্ন পারফেক্ট। ইতিপূর্বে আমরা একমাত্র সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস সমৃদ্ধ বাইক যেটা টেস্ট করেছি সেটা হচ্ছে KTM Duke 125। সেই বাইকটি হালকা ভেজা আবহাওয়াতে মিডিয়াম বা হার্ড ব্রেকেও বাইকের পেছনের চাকা স্লাইড করতো তবে Yamaha FZS FI V3 বাইকটি বৃষ্টির মাঝে প্রায় ৮০ কিমি/ঘন্টা স্পীডে রাইড করেও আমরা বাইকের পেছনের চাকায় কোন স্লাইড পাইনি। এটা পুরোটাই সম্ভব হয়েছে বাইকের পেছনের টায়ার এবং চ্যাসিস সেটাপ এর জন্য।
সাসপেনশন এর কথা যদি বলা হয়, তবে বাইকের সামনের অংশটি সবসময়েই ভালো পারফর্ম করে এবং শক এবজর্ব করে , তবে বাইকের পেছনের সাসপেনশনটা কিছুটা শক্ত থাকে। প্রায় ২০০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে পেছনের সাসপেনশনটি সফট হয়। পেছনের মনোশক সাসপেনশনে দেয়া হয়েছে ১২০ মিলিমিটার এর ট্রাভেল, যার ফলে ব্রেকিং এর সময় বাইকটি ব্যালেন্স করা সহজতর হয়। বাইকটিতে পিলিয়ন নিয়ে রাইড করা মাঝেমধ্যে কিছুটা বিরক্তির মনে হতে পারে, বিশেষত রাইড করার সময় ভাঙাচোরা গর্তে বাইক পড়লে রাইডারের কিছুটা আনকমফোর্টেবল লাগতে পারে।
বাইকটির রাইডিং পজিশন আপরাইট, এবং শহরে বা হাইওয়ে যেখানেই চালানো হোক না কেনো, বাইকটি রাইড করা খুবই আরামদায়ক। যদিও বাইকটির টার্নিং রেডিয়াস খুব বেশি নয়, তবে এর ব্রেকিং, চ্যাসিস এবং সাসপেনশন ও কমফোর্ট লেভেল সেগমেন্টের অন্যতম সেরা। শহরে হোক বা হাইওয়েতে, আপনি খুবই কনফিডেন্স এর সাথে বাইকটি লীন করে বাইকের ফুটপেগ ঘষা খাওয়াতে পারবেন। এর পেছনে মূল সাপোর্ট দেয় বাইকের পেছনের সাসপেনশন এবং ১৪০ সেকশনের রিয়ার টায়ার। সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে, বাইকটি নিয়ে কর্নারিং করার সময় যদি আপনি কোন কারনে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন, তবে বাইকটির হালকা ওজনের কারনে খুব সহজেই আপনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পারবেন। এছাড়াও বাইকটিতে এবিএস সহ ভালো ব্রেকিং সিস্টেম থাকার কারনে বাইকটি খুব সহজেই থামিয়ে ফেলা যায়।
যখন আমরা Yamaha FZs FI V2 বাইকটি টেস্ট করেছিলাম তখন বাইকটি নিয়ে বড় দুইটি অভিযোগ ছিলো বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি এবং চেইন। ভালো ব্যাপার হচ্ছে, ইয়ামাহা এই ভার্শন ৩ এ এই ইস্যুগুলো আসতে দেয়নি। সকল এফজেডএস বাইক ম্যাট কালার অপশনে বিল্ড করে হয়েছে, এবং আমাদের টেস্ট রাইডিং এর সময় আমরা বাইকটিতে কোনপ্রকার জং বা কোন ইস্যু এর দেখা পাইনি। একইসাথে বাইকটিতে সীল চেইন ব্যবহার করার ফলে বাইকটির চেইন ঢিলে হয়ে যায় না।
বর্তমানে বাংলাদেশে সকল Yamaha FZS FI V3 বাংলাদেশে সিবিইউ কন্ডিশনে আনা হচ্ছে যেখানে বাইকে ১৫৩% ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এরফলে বাইকটির বিক্রয়মূল্য ২,৯৫,০০০ টাকা! এটা খুবই ভালো হবে যদি এসিআই মোটরস বাইকটিকে সিকেডি ফরম্যাটে বাইকটী আমদানী করুক। সেক্ষেত্রে বাইকটির দাম বেশ অনেকখানিই কমে আসবে।
Yamaha FZS FI V3 - ভালো দিকসমূহঃ
- ফুয়েল ইনজেকশন এর কারনে ইঞ্জিনটি খুবই স্মুথ
- সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস এর কারনে খুবই ভালো স্ট্যাবিলিটি পাওয়া যায়
- ভালো কর্নারিং এবিলিটি
- ফিনিশিং এবং বিল্ড কোয়ালিটি ভালো
- ২০০০ কিলোমিটার এর পরে সাসপেনশন ফিডব্যাক খুবই ভালো পাওয়া যায়
- শহরে এবং হাইওয়েতে রাইড করা খুবই কমফোর্টেবল
Yamaha FZS FI V3 - খারাপ দিকসমূহঃ
- বাইকের ওভারঅল ডিজাইন এর সাথে হেডলাইটটি মানানসই নয়
- হাইওয়েতে রাইডিং এর ক্ষেত্রে এলইডি হেডলাইটস কিছুটা আশাহত করতে পারে
- ভালো কোয়ালিটি ফুয়েল ব্যবহার না করলে ইঞ্জিনের পারফর্মেন্সে ঘাটতি পাওয়া যাবে
- যদিও বাইকটির এক্সেলেরেশন বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও এর কম্পিটিটরদের তূলনায় এটা বেশ কম।
- বাইকটার টার্নিং রেডিয়াস বেশ বড়, ফলে বাইকটি ঘোরাতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে।
Yamaha FZS FI V3 বাইকটি Yamaha FZS সিরিজ এর সকলকিছুই এখনো ধরে রেখেছে, এবং এখন এবিএস যুক্ত হওয়ায় বাইকটির হ্যান্ডলিং এবং ব্রেকিং আরেকধাপ বৃদ্ধি পাবে। আশা করা যায় সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকও এর সাথে প্রতিযোগীতা করার জন্য খুব দ্রুতই এবিএস সমৃদ্ধ বাইক নিয়ে আসবে।