Yamaha FZS Fi V2 ২২,০০০ কিলোমিটার রাইড - ফয়সাল আহমেদ

This page was last updated on 27-Jul-2024 09:22am , By Raihan Opu Bangla

আমি মোঃ ফয়সাল আহমেদ। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পুরান ঢাকা গেন্ডারিয়ার আদি অধিবাসী। আপনাদের সাথে আজ আমি শেয়ার করবো আমার চালানো Yamaha FZS Fi V2 ভার্সনের এর ২২,০০০ কিলোমিটার পথ চলার অভিজ্ঞতা ।

yamaha fzs fi v2 user 

বাইকের প্রতি ভালবাসা ছোটবেলা থেকেই। স্কুল লাইফে সাইকেল চালাতাম আর স্বপ্ন দেখতাম কলেজে উঠলে মোটরসাইকেল চালাবো। চাচা, মামা খালু সবারই বাইক ছিল সেই সুবাদে বাইকে উঠলেই বাইক কিভাবে চালাতে হয় তা পিছনে বসে দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করতাম। ক্লাস ৯ এ থাকতেই Honda CDI H100 দিয়ে বাইক চালানো শিখে নেই। অবিশ্বাস্য হলেও বাইক চালানো শিখতে আমার ১০ মিনিট ও সময় লাগে নাই কারন ব্যালেন্সিং, ব্রেকিংটা আমার পূর্বে সাইকেল চালানো থেকে এসেছে আর এক্সিলারেটর, গিয়ার চেঞ্জ এটা বাইকে বসে থেকে দেখতাম কিভাবে বাইক চালায় তা দেখে শিখেছি।

নিজের বাইকের স্বপ্ন আমার সত্যি হয় ভার্সিটিতে উঠে ২০০৭ সনে Yamaha Libero G5 বাইকটি ক্রয় করি। সেই থেকে আমার বাইক চালানোর যাত্রা শুরু যা আজো চলমান ও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জীবনের সাথে অতোপ্রতভাবে জড়িত। আমার পূর্বের চালানো Libero বাইকটি সব সময় কর্নফুলী তেজগাও থেকে সার্ভিস করিয়ে নিতাম। সেখানে যারা সার্ভিস করাতে আসতো তাদের বেশিরভাগ Yamaha FZS সিরিজের বাইক থাকতো। তা দেখে আমার আক্ষেপ কাজ করতো FZ বাইক না থাকার। বাংলাদেশে যখন প্রথম FZ বাইক লঞ্চ হয় তখন থেকেই এই বাইকের প্রতি আমার দুর্বলতা ও স্বপ্ন দেখতাম এই বাইকের গর্বিত মালিক হওয়ার। 

yamaha fzs fi v2 user sajek bike tour

ষ্টুডেন্ট হওয়ার কারনে FZ V1 বাইকটি আর কেনা হয়নি। যার প্রথম অন্তরায় ছিল কম মাইলেজ। ২৫-২৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার সিটিতে এই মাইলেজ নিয়ে চলাটা একটু কষ্টকর ব্যপার হয়ে দাঁড়ায় ষ্টুডেন্ট হিসেবে। ইন্ডিয়াতে Yamaha FZS এর বিপুল চাহিদা ও successor মডেল হওয়ার কারনে তারা Yamaha FZS Fi V2 বাইকটি লঞ্চ করে। সেই সময়ে bikeadvise.in এ নিয়মিত রিভিউ গুলো পড়তাম। আকর্ষণীয় লুক ও ভালো মাইলেজ এর কারনে এই বাইক কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকি বাংলাদেশে আগমনের। ২০১৬ সনের সম্ভাবত আগষ্ট মাসে ACI Motors বাংলাদেশে Yamaha বাইকের প্রি-বুকিং চালু করে ও ১০,০০০/= টাকা মূল্যছাড় অফার দেয়। তেজগাও ACI Center এ গিয়ে ৩০,০০০/= বুকিং দিয়ে আসি Viper Black মডেলের জন্য। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে Yamaha প্রথম শোরুম ঢাকার মেরুল বাড্ডায় Toky Trade থেকে ২,৬০,০০০/= দিয়ে Yamaha FZS Fi V2 বাইকটি ক্রয় করি। এই বাইকটি দিয়ে শুরু হয়েছে আমার জীবনে ভ্রমনের নতুন অধ্যায়।

yamaha fzs fi v2 rear view 

৪ বছর ধরে চালানো এই বাইকটি দিয়ে প্রায় ২২,০০০ কিলোমিটার রান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫,০০০ কিলো দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমনে চালানো হয়েছে। বাসার সাথেই অফিস হওয়ার কারনে সিটির মধ্যে বেশি চালানো হয় না। মাইলেজ ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর ভেতরে থাকে সিটি + হাইওয়েতে। সাধারনত ACI 3S Service Center থেকে বাইক সার্ভিসিং করিয়ে থাকি ও ছোট ছোট মেইনটেইনেন্স বলতে বাইক ওয়াস, চেইন লুব ও ক্লিন, এয়ার ফিল্টার ক্লিন, ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ এগুলো নিজেই করি। এই পর্যন্ত বাইকে ১ বার ক্লাচ ও এক্সিলারেটর কেবল, ২টা ফ্রন্ট ব্রেক প্যাড, ৩টা ব্রেক সু, ৩টা এয়ার ফিল্টার, ১টা স্পার্ক প্লাগ, ১টা হেডলাইট ও ৪/৫ টার মতো টেইল লাইট পরিবর্তন করা হয়েছে ও ভালব ক্লিয়ারেন্স (টেপিড এডজাস্ট) ২ বার করানো হয়েছে।

১৯০০০ কিলোমিটারে ফর্ক ওয়েল সিল ২টা একসাথে চেঞ্জ করা লেগেছে। এছাড়া বাইকে অন্য কোন কাজের প্রয়োজন পড়ে নাই। বাইকটি অনরোড ও অফরোড দুইটাতেই সমান পারদর্শী। হাইওয়েতে জ্যামের রাস্তার বামপাশে বালু মাটিতে খুব সুন্দর ব্যালেন্সিং এ চলে যেতে পারে কোথাও আটকাতে পারে না। তার সাথে শক এবজরভার ও ঝাকি গুলো হজম করে নিয়ে শরীলে ঝাকি অনুভব করতে দেয় না। যার কারনে রাইডিং এ ক্লান্তি অনেকটা কম অনুভূত হয়। স্পোর্টস + কমিউনিটি বাইক দুইটার ফিলই এই বাইকে পাওয়া যায় এর সিটিংপজিশন ও এফআই এর জন্যে।

yamaha fzs fi v2 with user 

বাইকের ব্রেকিং বলতে এক কথায় অসাধারণ । যেই জায়গাটাতে টার্গেট করে ব্রেক করা সেই জায়গাতেই সুন্দর করে জমে যায়। এই রকম ব্রেকিং এর জন্যে চাকার হাওয়া সামনে ২৮ ও পেছনে ৩৩-৩৫ রেখে ইঞ্জিন ব্রেক করা লাগে। বাইকটি সম্পুর্ণ এফআই প্রযুক্তির হওয়ার কারনে কম্পিউটারের মাধ্যমে সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা ২/৩ মিনিটের মাধ্যমে সমস্যা নির্নয় করা যায়। গ্রাভিটি সেন্সরের কারনে বাইক ডানে বা বামে পড়ে গেলে সাথে সাথেই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় যা একটি অনেক বড় ফিচার ও সেইফটি এনসিওর করে অনেক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে।

বাইকটি ডানে বা বামে কতবার পরলো তা রেকর্ড হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে জানা যায়। ইকো মুডের (১৩-৬৯) জন্য ডেডিকেটেড লাইট যেইটা মেইনটেইন করলে ভাল মাইলেজ পাওয়া যায় ও বাতাসে কার্বন কম নির্গত হয় যার দরুন বায়ু দূষন অনেক কম হয়। BS4 ইঞ্জিন যেটা তৈরী হয়েছে পরিবেশ দূষন রোধ করতে। বাইক ব্রেকিং পিরিয়ড অবস্থায় হ্যাভোলিন ইঞ্জিন ওয়েল ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৬ টার মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর থেকে Motul 7100 10W40 Full Synthetic ৩০০০ কিলোমিটার অন্তর অন্তর ব্যবহার করা হচ্ছে। হাই রেভ এ মতুলের পার্ফমেন্স অতুলনীয়।

yamaha fzs fi v2 group tour 

বাইকটির সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি ১১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। ১০০ এর পরে বাইকের টান অনেক কমে যায় ও আস্তে আস্তে স্প্রিড উঠে যা বাইকের খারাপ দিক। এই সময়ে ভাইব্রেশনের উপস্থিতিও টের পাওয়া যায়। স্মুথ রাইড ফিল করার জন্য ৮০-৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতি আদর্শ। এক্সিলারেশন কম তবে গিয়ার কম রেখে আরপিএম বেশি রাখলে এই অভাবটা দূর করা যায়। এফআই ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্য একটা নিদিষ্ট স্পিডের পর নিজে থেকেই গতি উঠতে থাকে যার কারনে ওভারটেকিং তেমন সমস্যায় পড়তে হয় না।

এই ইঞ্জিনের একটা বড় অসুবিধা এর ভালভ ক্লিয়ারেন্স অন্যান্য বাইকের তুলনায় বেশি এডজাষ্টের প্রয়োজন পড়ে। বেশি গরম হয়ে গেলে ইঞ্জিন থেকে অতিরিক্ত শব্দ আসতে থাকে টেপিড এর। ৪০০০ কিলোমিটার রানিং অবস্থায় ACI এর ৩০০ ফিট ক্যাম্পিং এ চেইন সেট রিপ্লেস করা হয়। এই চেইন দিয়েই চলছে ২২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সামনের স্পোকেট পরিবর্তন করা হয়েছে তবে নয়েজ আসে কিছুটা। বাইকের টার্নিং রেডিয়াস কম মানে অনেক জায়গা নিয়ে বাইকটি ঘুরাতে হয় যার কারনে সিটি রাইডিং জ্যামে অনেক সময় সমস্যায় পরতে হয়। 

শুরুর দিকে মাইলেজ ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মতো পেয়েছি তবে এখন মাইলেজ কমে গিয়েছে তার সাথে স্মুথনেস ও কমে গিয়েছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় কার্বোরেটর ইঞ্জিনের বাইক রাইড করছি। তেলের রিডিং মিটারে মাঝে মধ্যে ভুল দেখায়। ৪ লিটারের বেশি তেল থাকলেও রিজার্ভ এ দেখায়। সিংগেল হর্ন হওয়ার কারনে হাইওয়েতে হর্নের শব্দ কম শোনা যায়। বিল্ড কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো হলেও সিটের ২ পাশের প্লাষ্টিক কোন আঘাত ছাড়া এমনিতেই ভেংগে যায় যেইটার কোয়ালিটি আরো ভালো হওয়ার দরকার ছিল। হ্যালোজেন লাইটের আলো বরাবরই HID অথবা LED লাইটের থেকে বেটার যার কারনে বেশি একটা সমস্যায় আমাকে পড়তে হয় না নাইট রাইডিং এ। তবে নিরাপদ রাইডিং এর জন্যে অতিরিক্ত ফগ লাইট লাগানো যেতে পারে।

yamaha fzs fi v2 front view 

Yamaha FZS Fi V2 আমাকে এই পর্যন্ত হতাশ করেনি। নতুন থাকতে যেই রকম অনুভুতি বাইক চালানোর আগ্রহ থাকতো ৪ বছর পর একই আছে অনুভুতিগুলো। সময় পেলেই আশে পাশে ঘুরার জন্যে বের হয়ে যাই কোন গন্তব্য ছাড়াই। বর্তমানে ২ লক্ষ টাকার আশে পাশে এই বাইকটি বিক্রি হচ্ছে। আপাতত দৃষ্টিতে অন্যান্য বাইক থেকে এই বাইক বেশি মূল্য হলেও যে ধরনের ফিচার ও সুবিধা দিচ্ছে তার তুলনা করলে বাইকের মূল্য কম বলে আমি মনে করি। ছোট বড় অনেক দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছি সর্বোপরি উপরওয়ালার দোয়া ও এই বাইকের ব্রেকিং ও ব্যালেন্সিং এর কারনে। বিশ্বাস ও আস্থার অপর নাম Yes Yamaha । ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ ফয়সাল আহমেদ

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।