TVS Metro Plus ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - কামরুজ্জামান
This page was last updated on 31-Jul-2024 09:18am , By Raihan Opu Bangla
আসসালামু আলাইকুম। আমি মোঃ কামরুজ্জামান। রিভিউ লিখছি TVS Metro Plus (Drum) Special edition নিয়ে। আমার বাইক টি ১০,০০০ কিলোমিটার চালানো হয়েছে।আমার বাসা মানিকগঞ্জে। এটি আমার জীবনের প্রথম বাইক। ছোট বেলা থেকেই বাইকের উপর আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। বাইক কেনো ভালোবাসি স্পেসিফিক ভাবে বলা মনে হয় কারো পক্ষেই সম্ভব না।
বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে আমার বাজেট অনুযায়ী বাইক দেখা শুরু করলাম। লিস্টে ৩টা বাইক ছিলো তারমধ্যে খুজে বের করলাম সেগ্মেন্টের সেরা বাইক TVS metro plus ।
লুকিং, ইঞ্জিন কন্ডিশন, রেডি পিকআপ, ব্রেক সব মিলিয়ে একটা দুর্দান্ত কম্বিনেশন। আমার বাইকটি কিনেছিলাম গতবছর ২০২০ এর আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে। বাইকটি যখন ক্রয় করি তখন এর দাম ছিল ৯৬ হাজার টাকা ।
বাইকটি কিনেছিলাম টিভিএস অটো বাংলাদেশ অনুমোদিত ডিলার "ঈশান মটরস" মানিকগঞ্জ থেকে। বাইক কিনতে যাওয়ার দিনটা একদম ই ভালো ছিলো না। বাসা থেকে বের হওয়ার পরেই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। সকালে বাইক কিনতে গিয়ে বৃষ্টির কারনে বাসায় আসতে রাত হয়ে যায়।
তবে ফাইনালি যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম তখন অনুভূতি ছিল অসাধারণ । এই বাইকটি ১১০ সিসি। দুইটি ভার্সনে বাইকটি পাওয়া যায় ডিস্ক ব্রেক এবং ড্রাম ব্রেক। আমার বাজেট কম থাকায় ড্রাম এডিশন এর বাইকটি ক্রয় করেছিলাম। তবে কেউ এই বাইকটি কিনিতে চাইলে আমি ডিস্ক ভার্সনটা সাজেস্ট করবো।
বাইকের লুকিং টা খুবই ভালো এবং আকর্শনীয়। বাইকের সব গুলো বাল্ব হ্যালোজেন। মিটারে মাইলেজ এবং ফুয়েল গেজ শো করে বাকি গুলো এনালগ। স্পিডোমিটার এনালগ, RPM মিটার নেই,গিয়ার ইন্ডিকেটর নেই,ঘড়ি নেই। এছাড়া প্রয়োজনীয় সবই আছে।লুকিং গ্লাস দিয়ে খুব ভালো ভাবে পিছনের দৃশ্য দেখা যায় । ফুয়েল ট্যাংকের মডেল ব্যাক্তিগত ভাবে আমার পছন্দ নয়। তবে ১৪ লিটার ফুয়েল ধরে। বাইকের থ্রটল রেসপন্স খুব ভালো, স্পিড স্মুথলি ৭০ এ চলে যাওয়া যায়।
আমার বাইকটা ড্রাম ব্রেক এডিশন হলেও ব্রেকিং আমাকে কখনো হতাশ করনি। যেকোনো মুহুর্তেই আমি বাইকটি কন্ট্রোল করতে সক্ষম হয়েছি। বাইকের সাউন্ড খুবই চমৎকার অনেকটা RTR এর মতো তবে এতো লাউড না।
তবে এই বাইকের ভাইব্রেশন আমকে হতাশ করেছে। যদি একা রাইড করেন গতি ৬০+ হলেই পা হয়ে হাতে ভাইব্রেশন চলে আসে। বাইকের চাকা গুলো টিউবলেস, ব্যাপার টা খুব ভালো লাগছে আমার। সেই সাথে চাকা গুলা খুবই চওড়া। এতো মোটা চাকা ১১০ সিসি সেগ্মেন্টে আর কোনো ইন্ডিয়ান বাইকে নেই।মোটা চাকা হওয়াতে কন্ট্রোলিং টা অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে। রেডি পিক আপ, ব্রেকিং, কন্ট্রোলিং এই ৩টা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। এরপর আসি কম্ফোর্ট এর দিকে। বাইকটা রাইড করে অভিযোগ খুব একটা নেই তবে আর একটু ভালো হতে পারতো।
পিলিয়ন সিট খুব ভালো, অনেক চওড়া। পিলিয়ন নিয়েও নিশ্চিন্তে রাইড করা যায়। তবে সাসপেনসন আরো ভালো হতে পারতো।
বাইকটি আমি মোট ৫ বার সার্ভিস করিয়েছি। কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি। ৩ বার মানিকগঞ্জ সার্ভিস সেন্টারে এবং ২ বার আমাদের এলাকায় সার্ভিস করিয়েছি। চাবির লকে একবার সমস্যা হয়েছিলো। সার্ভিস সেন্টারে যাওয়ার সাথে সাথেই ঠিক করে দিয়েছে।
১০০০ কিলোমিটার পরপর নিজেই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10w30। ৫০০-৭০০ কিলোমিটার পরপর চেইন ক্লিন করে চেইনে লুব ব্যবহার করি ।আমার বাইকের সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি ৯৫+ । এনালগ মিটার তাই কাটায় কাটায় বলা মুশকিল। তবে আমি বেশিরভাগ সময় ৫০-৬৫ এর মধ্যে রাইড করি।
TVS Metro Plus বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- লুকিং
- ব্রেকিং
- রেডি পিক আপ
- বিল্ড কোয়ালিটি
- রাইডার এবং পিলিয়ন সিট কম্ফোর্ট
TVS Metro Plus বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- পার্কিং লাইট নেই।
- থ্রটল ছেড়ে দিলে আলো কমে যায়।
- ভাইব্রেশন বেশি ।
- প্রচুর কাদা ছিটে ।
- কাপড় রাখার যায়গা কম ।
আমার বাইক নিয়ে এখনো তেমন লম্বা ট্যুর দেয়া হয়নি। তবে একদিনে সর্বোচ্চ রাইড ছিলো ১৪৭ কিলোমিটার । এই ১৪৭ কিলোমিটারে কোনো সমস্যায় পরিনি। ইঞ্জিন ওভার হিট ও হয়নি। সব কিছু ঠিক ঠাক ছিলো। আমি মাইলেজ পাই পার লিটারে ৫৫ থেকে ৬০। তবে আমি সর্বোচ্চ ৬৩ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি।
সব শেষে বলতে গেলে TVS Metro Plus বাইকটি ১১০ সিসি সেগ্মেন্টে এর সেরা বাইক। গত ১ বছরে ১০,০০০ কিলোমিটার রাইডে আমাকে কখনো হতাশ করেনি।
লিখেছেনঃ মোঃ কামরুজ্জামান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।