TVS Apache RTR 160 4V ৮০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - ফেরদৌস জাহিদ
This page was last updated on 16-Jul-2024 02:52am , By Ashik Mahmud Bangla
TVS Apache RTR 160 4V ৮০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
আমি ফেরদৌস জাহিদ। আমি গাইবান্ধা থাকি। আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমি আজ আপনাদের সাথে আমার TVS Apache RTR 160 4V এর ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
বর্তমানে বাইকটি আমি ৮০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। ছোট থেকেই বাইকের প্রতি আসক্তিটা একটু বেশিই ছিল। তখন বাবার ছিল Xingfu 125 সিসি। সবে প্রাইমারী লেভেল পার করছি। শখের বশেই তখন থেকেই বাইকটি রোজ পরিষ্কার করতাম। ছোট ছিলাম বলেই বাবা কখনো বাইক চালানোর পারমিশন দিত না। কিন্তু শেখার আগ্রহ ছিল প্রচুর। তাই ছোট চাচার সাথে একটি মৌখিক চুক্তি করলাম।
তার ছিল Bajaj Enduro SX 100 সিসি টু স্ট্রোক বাইক। চুক্তিটি ছিল প্রতিদিন তার বাইক পরিষ্কার করে দেব বিনিময়ে আমাকে সামনে বসিয়ে ১০ মিনিট করে চালানো শিখাবে। অবশ্যই বাবাকে লুকিয়ে। এভাবে চলল বেশ কিছুদিন। সময়টা ক্লাস সিক্সের মাঝামাঝি। প্রথম সাহস করে বাবার বাইকের চাবি লুকিয়ে নিয়ে বাইক নিয়ে রাস্তায় বেরোই। সেদিনটা কখনোই ভোলার নয়। বাবার কাছে ধরা পড়েছিলাম। ফলে উত্তম মধ্যমও খেয়েছিলাম। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়েও প্রথম বাইক চালানোর স্বাদটা বেশ উপভোগ করেছিলাম।
এরপর থেকেই শুরু হল বাইক চালানোর জার্নি। ক্লাস নাইনে ওঠার পর বেশ ভালোভাবেই বাইক চালানোটা রপ্ত করেছিলাম। তাই বাবাও আর কিছু বলতেন না। এরপর বাবা দ্বিতীয় বাইকটি কিনলেন Bajaj Discover 125 সিসি কিক স্টার্ট। তখন থেকেই বাইক সম্পর্কে আইডিয়া নেয়া শুরু। এরপর রাস্তা কাঁপাতে বাজারে এল TVS Apache RTR 150 সিসি ফার্স্ট মডেল। অনেক বোঝানোর পর বাবাকে বাইকটি কেনার জন্য রাজি করাতে সক্ষম হলাম। সে বাইকটি রাইড করলাম দীর্ঘ ছয় বছর প্রায় ৫২০০০ কিলোমিটার। এরপর নিলাম Yamaha Fazer 150 সিসি ৩ বছরের মত প্রায় ৩২,০০০ কিলোমিটার বাইকটি চালিয়েছিলাম। এরপর TVS Metro Plus 110 সিসি যা এখনো বর্তমান আছে। এখন পর্যন্ত ১৫০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি।
এর এক বছরের মাথায় কিনলাম TVS Apache RTR 160 4V । এই বাইকটি নেয়ার পেছনে কিছু কারন ছিল। এর ইনিশিয়াল পিকআপ, টপ স্পীড, লুকস্, এক কথায় কম বাজেটে স্পোর্টস ও ট্যুরিং বাইকের ফিলিংস। বাইকটি কিনেছিলাম ২০১৯ সালের জানুয়ারীর ৩ তারিখে। লাল রঙের প্রতি আসক্তি থাকায় এই বাইকটি কেনার জন্য তিনটি শোরুমে গিয়েছিলাম। অবশেষে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কাঙ্ক্ষিত বাইকটি কিনতে পারি।
TVS Apache RTR 160 4V বাইকটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০০ কিলো চালিয়েছি। বাইকটি যত রাইড করছি তত এর প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে। এই ৮০০০ কিলোর মধ্যে সিটি রাইডের চেয়ে হাইওয়ে লং রাইড বেশি। বাইকটি নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি সেই গল্পে পরে আসছি।
সার্ভিসিং- বাইকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর সার্ভিসিং। আর এই সার্ভিসিংটা কোম্পানির রিকমেন্ডেড সার্ভিস সেন্টার থেকে করা উচিত এবং আমি সেটাই করেছি। যেহেতু আমি বেশিরভাগ সময়ই বাইকটি নিয়ে লং রাইড দেই সেহেতু আমি ম্যানুয়েলের টাইম মত সার্ভিসগুলো করেছি। এখন পর্যন্ত ৫ম সার্ভিস সম্পন্ন করেছি। টপ স্পীড- আমি বাইকটিতে টপ স্পীড পেয়েছি ১৩৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। আর এই বাইকের আরো একটি সুবিধা হল ০-৬০ কত সেকেন্ডে ওঠে তা রেকর্ড হয়। আমি ০-৬০ পেয়েছি ৪.৩ সেকেন্ডে।
বাইকের পারফর্মেন্স- প্রথম ২০০০ কিলো ব্রেক ইন পিরয়ড হিসেবে মেনেছিলাম। তখন আরপিএম ৪০০০ - ৫০০০ এর মধ্যেই রাখতাম। তারপর ২০০০ কিলো পার হওয়ার আস্তে আস্তে আরপিএম বাড়ানো শুরু করি। প্রথমের দিকে RTR এর মজাটা তেমন পেতাম না কারন তখন ব্রেক ইন পিরিয়ড চলছিল। তারপর ৩০০০ কিলোমিটারের পর থেকে RTR এর ফুল মিনিং (Racing Throttle Response) হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করি।
৩০০০ কিলোমিটারের পর থেকে ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার শুরু করি সে ব্যাপারে পরে বলছি। বাইকের ব্রেকিং কন্ট্রোল ব্যালেন্স আমার কাছে মোটামুটি পার্ফেক্ট লাগে। এটা একেক জনের কাছে একেক রকম। আমার সাথে সেট হয়ে গেছে তাই আমার কাছে সব পার্ফেক্ট লাগে।
ইঞ্জিন অয়েল- ৩০০০ কিলো পর্যন্ত Castrol Activ 10w30 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতাম। এরপর থেকে Motul 7100 10w40 ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার শুরু করি। 10w40 ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে তখনো বাংলাদেশের বাজারে Motul 7100 10w30 আসেনি। এই অয়েলটি ব্যবহারে বাইক অনেক স্মুথ লাগে তাই এখন পর্যন্ত এটিই ব্যবহার করে যাচ্ছি।
মাইলেজ- লো আরপিএম এ ৪৫ - ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা স্পিড এ ৪০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার পাই যেটা ২৫০০ কিলো এর মধ্যে ছিল ৩৭ কিলোমিটার প্রতি লিটার। আর হাই আরপিএম এ ৩৫-৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার। আর স্পিড ১১০+ হলে ৩০-৩৪ কিলোমিটার প্রতি লিটার এ চলে আসে। আমার রাইডিং স্টাইল অনুযায়ী আমি এমনটাই পেয়েছি। বাইকের মডিফিকেশন- হেডলাইটের বাল্ব চেঞ্জ করে প্রজেকশন এলিইডি বাল্ব লাগিয়েছি। এতে হেডলাইটের পারফর্মেন্স অনেক বেড়ে গেছে। বাইকটিতে 4V 200 এর স্টীকার সেট ও মিটার ভাইজর লাগিয়েছি। শুরুতেই বলেছিলাম বাইক অনেক ভালোবাসি। তাই এর যত্নটাও নিজেই নেই। এবং সঠিক সময়ে সব কিছু করার চেষ্টা করি।
বাইকটির পাঁচটি ভালো দিক-
- খুব দ্রুত স্পীড ওঠে
- কমফোর্ট রাইড পাওয়া যায়
- ডাবল ডিক্স আর মোটা চাকার জন্য কন্ট্রোল ভালো হয়
- তুলনামূলক আরামদায়ক সীট
- অয়েল কুল ইঞ্জিন হওয়াতে লং জার্নিতে ইঞ্জিন হিট কম হয় ফলে পাওয়ার ড্রপ করেনা
বাইকটির পাঁচটি খারাপ দিক-
- ইউটার্ন নিতে জায়গা বেশি লাগে
- তেল খরচ তুলনামূলক বেশি
- ১২০০ এমএল ইঞ্জিন অয়েল লাগে যা কালেক্ট করা মুশকিল হয়ে যায়
- ৫০০০ এর মধ্যেই এয়ার ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায়
- ৫০০০ এর মধ্যেই প্লাগ চেঞ্জ করতে হয়েছে
ভ্রমণ কাহিনী-TVS Apache RTR 160 4V নিয়ে আমি একদিনে একটানা প্রায় ৫০০ কিলো রাইড করেছি। অনেক জায়গায় ট্যুর করেছি যেমন- গাইবান্ধা টু ঢাকা, গাইবান্ধা টু তেতুলিয়া, গাইবান্ধা টু রাজশাহী, গাইবান্ধা টু দিনাজপুর, গাইবান্ধা টু লালমনিরহাট, গাইবান্ধা টু ঝালকাঠী। আপনাদের সাথে ঝালকাঠীর গল্পটাই কিছুটা শেয়ার করছি।
TVS Apache RTR 160 4V Review By BikeBD
সকাল ৭:৩০ মিনিটে বাসা থেকে রওনা দিয়ে ৩:৩০ টার মধ্যে ঝালকাঠীর রাজাপুর উপজেলায় পৌঁছে যাই। প্রায় ৪৮৫ কিলোমিটারের মত রাস্তা। পথি মধ্যে ব্রেক নেই তিনবার প্রত্যেক জায়গায় ১০-১৫ মিনিটের জন্য। একটানা এ রাইডে আমি কোনো রকম ঘাড়, কোমড়, হাতের ব্যাথা অনুভব করিনি।
ওখানে দুইদিন থাকার পর আবার একই ভাবে একই সময়ে বাসায় ফিরে আসি। এ রাইডে আমি আমার বাইকের সেইরকম ফিডব্যাক পেয়েছি। আর আমার এই রাইডের রুট ছিল (নিজ বাসা-বগুড়া-নাটোর-পাবনা লালন শাহ সেতু-কুষ্টিয়া- রাজবাড়ী- ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-ঝালকাঠী-রাজাপুর)। এই রুটে ভাঙ্গা রাস্তা যেমন ছিল তেমন আবার মসৃন রাস্তা আবার ইটের রাস্তাও ছিল। পুরো রাস্তাতেই বাইকের বেশ ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। পরিশেষে আমি এতটুকুই বলব ২,০০,০০০ টাকার মধ্যে বেস্ট বাইক এখন পর্যন্ত TVS Apache RTR 160 4V আমার মনে হয়। তবে বাইকের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হলে একটু সময় দিতে হবে। বাইকের প্রতিটা ম্যুভমেন্ট নিজেকে ফিল করতে হবে। তাহলেই আর বাইকটি চালাতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবেনা। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ ফেরদৌস জাহিদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।