TVS Apache RTR 160 ৩৫,০০০ কিলোমিটার রিভিউ - হাবিবুর

This page was last updated on 29-Jul-2024 10:48am , By Shuvo Bangla

আমি হাবিবুর রহমান। মানিকগঞ্জ এর সিংগাইর উপজেলার উত্তর জামশার ছেলে। আমি পেশায় একজন ছাত্র। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার TVS Apache RTR 160 বাইকটির সম্পর্কে ছোট একটি রিভিউ শেয়ার করছি।

tvs apache rtr 160 bike p

ছোটবেলা থেকে বন্ধুদের সাথে সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন এদিক সেদিক ঘুড়ে বেড়ানোই ছিলো নেশা। তখন থেকেই বাইকের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ কাজ করতো। তখন ভাবতাম কবে একটা নিজস্ব বাইক হবে! বন্ধুদের নিয়ে বাইক ভ্রমণ করবো।

আমি প্রথম বাইক চালানো শিখি Bajaj Pulsar ug2 দ্বারা ২০১৫ সালে। আমার TVS Apache RTR 160 বাইকটি নেওয়া হয় ঘুরাঘুরি, সখ ও পারিবারিক প্রয়োজনে। আমার এই বাইকটি ক্রয় করার প্রধান কারণটি হচ্ছে এই বাইকটির  লুকস। সেই সাথে রেডি পিকাপ ( ০-৬০ মাত্র ৪.৬ সেকেন্ডে )।

এই বাজেটের মধ্যে বাইকটির টপ স্পীড আমার মন ছুয়েছে। সেই ভালো লাগা থেকেই বাইকটি ক্রয় করা। প্রত্যেকের সামর্থ অনুযায়ী তার ব্যক্তিগত পছন্দ থাকে, আর আমার পছন্দ TVS Apache RTR 160। বাইকটি কেনার পেছনে আমার বড় ভাইয়ার ভূমিকা অতুলনীয় কারণ বাইকটি আমার বড় ভাইয়া কিনে দিয়েছে।

tvs apache rtr 160 bike

বাইকটি আমার মা-বাবারও অনেক পছন্দের কারণ এই বাইকটির পিলিয়ন সিটিং পজিশন তাদের জন্য কম্ফোর্টেবল। আমার বাইকটি নেওয়া হয় ২২ জানুয়ারি ২০১৭ সালে " নাসির টিভিএস সিংগাইর থেকে তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিলো ১,৭৯,৯০০/= টাকা।

বাইকটি আমি হাতে পাই বলতে গেলে সারপ্রাইজ এর মাধ্যমে । আমি রাতে বাসায়  এসে দেখি আমার পছন্দের বাইকটি আমার রুমে উঠানো। আমার সেই অনুভূতিটা কখনোই ভোলার নয়। ঐ রাতে আমার ভালোমত ঘুম হয়নি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম কখন সকাল হবে বাইক নিয়ে ঘুরবো।

তার পরেরদিন বাইকটি প্রথম রাইড করি আমার ভাইয়াকে নিয়ে। সেই দিনটি আমার জীবনের সব থেকে ভালো লাগার দিনগুলোর মধ্যে একটি। নতুন বাইক কেনার পর থেকে, আমি TVS সার্ভিস পয়েন্ট থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সার্ভিস করেছি। এর মধ্যে আটটি ছিল বিনামূল্যে।

আমি আমার বাইকের প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক-ইন পিরিয়ড বজায় রেখেছি। আমি সর্বদা আমার বাইকের রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্বকে সবার উপরে রাখি। আপনি যদি ভাল পারফরম্যান্স পেতে চান, তাহলে আপনাকে  সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

সময় অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা, চেইনে গিয়ার অয়েল দেওয়া, টায়ারে সঠিক মাপে বাতাস রাখা মাঝে মাঝে বাইক ধোয়া ইত্যাদি নিয়মিত করে থাকি।

tvs apache rtr 160 blue

আমি আমার নিজের মতো করে আমার প্রিয় বাইকটির ভালোমন্দ দিক তুলে ধরছি, যা যা আমার কাছে মনে হয়েছে - এই বাইকটি সম্পর্কে -

ডিজাইন - 
প্রথমেই আসি এর ডিজাইনের ব্যপারে,
TVS Apache RTR 160 এ যে দিকটি আমার সবথেকে বেশি ভাল লেগে আসছে সেটা হল এর লুকস, বিশেষ করে এর সামনের দিকটা আমার কাছে আসাধারন লেগেছে ।

হেডলাইট, ডিজিটাল স্পিডোমিটার, বিশাল বড় (16L) ফুয়েল ট্যাংক, কম্ফোর্টেবল সিটিং পজিশন  সব মিলিয়ে বাইকটা আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। প্রত্যেক মানুষের কাছে তার বাইকের বিশেষ ভালো লাগার একটা দিক থাকে, আর আমার কাছে ভালো লাগে এর ফ্রন্ট লুকস ।

ব্রেকিং সিস্টেম - 
বাইকের সামনের চাকায় 270mm হাইড্রোলিক ব্রেক ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে রেয়ার ব্রেকের ক্ষেত্রে 130mm ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। চাকায় নিদিষ্ট পরিমান হাওয়া দিয়ে বাইক রাইড করলে ব্রেকিং এ অনেক ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায়।

বর্তমানে লক্ষ করি অনেকের কাছে এই বাইকের ব্রেকিং ভালো লাগে না, কিন্তু আমি আমার বাইকের ব্রেকিং নিয়ে সন্তুষ্ট কেননা আমি এখনো কোন সমস্যা সম্মুখীন হইনি। "আলহামদুলিল্লাহ" সিটি রাইড অথবা হাইওয়ে রাইডে আমার কখনো ব্রেকিং জনিত সমস্যায় পরতে হয়নি।

tvs apache rtr 160 review

রিম ও টায়ার - 
বাইকের সামনে 90/90-17 এবং পিছনে 110/80-17 মাপের টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি টায়ার টিউবলেস। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে পেছনের চাকাটা আরো একটু বড় সাইজের হলে আরো দৃষ্টিনন্দন হতো এবং বাইকের ব্যালেন্সটাও ভালো পাওয়া যেতো।

তাই আমি বাইকের ২৫,০০০ কিলোমিটার পরে টায়ার পরিবর্তন করার সময় CEAT ZOOM 120-70-17 টায়ার ইনেস্টল করি । এতে আমার কাছে মনে হয়েছে ব্যালেন্স অনেকটা ভালো পাওয়া যায় এবং বাইকটির রেয়ার লুকস টাও ভালোই দেখায়।

সাসপেনশন -
TVS Apache RTR 160 এ ডাবল-ক্র্যাডেল ফ্রেম সাথে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন রয়েছে এবং মোনোটিউব ইনভার্টেট গ্যাস-ফিল্ড রেয়ার শক এবসর্বার রয়েছে। সামনের সাসপেনশনটি কিছুটা সফট যা অফ রোডিং এর জন্য খুবই ভালো। ভাংগা রাস্তায় বাইকটির পেছনের সাসপেনশন দারুন সাপোর্ট দেয়।

মাইলেজ -
বাইকটার মাইলেজ নিয়ে আমি একদম সন্তুষ্ট। এখানে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমার কাছে বিষয়টা আসাধারন মনে হয়েছে। ব্রেক-ইন পিরিয়ডের সময় লিটারে ৩৬-৩৮ মাইলেজ পেয়েছি।

বর্তমানে বাইকটি ৩৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর পরও আমি এভারেজে ৪৩+ প্রতি লিটারে মাইলেজ পাই। সব ধরনের মানুষ ভালো মাইলেজ এর জন্য এই বাইকটি পছন্দের তালিকায় রাখতে পারে।

সাইলেন্সরের শব্দ -
বাইকটির ইঞ্জিন থেকে আসা শব্দ সাইলেন্সর মাধ্যমে খুবই ভালো মানের শব্দ দিতে সক্ষম। স্টক সাইলেন্সর প্রায় এক্সস্টের মতো শব্দ দিতে সক্ষম। বাইকটা আমার পছন্দ হওয়ার মূল কিছু কারনের মধ্যে এটাও অন্যতম।

tvs apache rtr 160

সিটিং পজিশন -
বাইকটির সিটিং পজিশন আমার অনেক ভালো লেগেছে। টানা রাইড করার পরও আমার কোনো সমস্যা হয়নি। বাইকের পেছনে মহিলা বা বয়ষ্ক মানুষ বসানোর জন্য বাইকটির পিলিয়ন সিটিং পজিশন একদম পারফেক্ট।

রেডি পিকাপ -
বাইকটাতে রেডি পিকাপ থাকায় অতি সহজে যেকোনো গাড়িকে ওভারটেক করতে পারি। সব ধরনের মানুষ বাইকটির দ্রুত রেডি পিকাপ এর কারনে বাইকটি পছন্দের তালিকায় রাখতে পারে।

টপ স্পীড -
এই বাজেটে বাইকটির টপ স্পিড এক কথায় অসাধারণ। আমি প্রতি ঘন্টায় ১২৪ কিলোমিটার গতিবেগ পেয়েছি ( মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়েতে ) । অনেকে ১২৭ + টপ স্পীড পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আমি এই দিক দিয়ে আমার বাইকটির প্রতি সন্তুষ্ট ।

ইঞ্জিন অয়েল -
আমি সবসময় "Motul 5100 10W30 Semi Synthetic" ব্যাবহার করে থাকি। এর বাজার মূল্য ৭৫০/= টাকা। যার ফলে ইঞ্জিনের শব্দ স্মুথ ও ভাইব্রেশন কম পাই। যা আমাকে একদম সন্তুষ্ট করেছে ।

TVS Apache RTR 160 বাইকের খারাপ দিকসমূহ -

চেইন -
স্টক চেইন সেট ১২,০০০-১৫,০০০ কিলোমিটারেই নষ্ট হয়ে যায় এবং প্রচুর শব্দ করে ও দ্রুত লুজ হয়। এর কারনে ১৬,০০০ কিলোমিটার চালানোর পর স্টক চেইন সেট পরিবর্তন করে এখন "Rolon" চেইন সেট ব্যবহার করছি। এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালই ফিডব্যাক পাচ্ছি, আগের মত দ্রুত চেইন লুজ হচ্ছে না এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার করছি কোনো অসুবিধা ছাড়াই।

ইঞ্জিন ভাইব্রেশন -
বাইকটির একমাত্র এবং বড় সমস্যা হচ্ছে এর ইঞ্জিন ভাইব্রেশন। বাইকটি টানা রাইড করা খুবই কষ্টকর। ভাইব্রেশনটি ৫ হাজার আরপিএম থেকে শুরু হয় এবং ৭ হাজার আরপিএম পর্যন্ত চলতেই থাকে।
৭ হাজার আরপিএম এর পরে ভাইব্রেশন ফুটপেগ এ প্রসারিত হয়। নিয়মিত বাইকটি ব্যবহার করতে করতে এতে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি।
ভাইব্রেশন এর জন্য বাইকটির রাইডিং কমফোর্ট একটু কম।

স্টক হেডলাইট -
বাইকটিতে ৩৫ ওয়াটের হ্যালোজেন হেডলাইট ব্যবহার করা হয়েছে যা রাতে হাইওয়ে রাইডের জন্যে খুবই বাজে। যার কারনে বর্তমানে স্টক হেডলাইট এর পরিবর্তে "Novsight F03" LED লাইট ব্যবহার করছি। এখন পূর্বের তুলনায় রাতে রাইড করা আরামদায়ক হয়েছে।

tvs apache rtr 160 review

রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স -
বাইকটির হাইট কম উচ্চতা হওয়ার কারনে বাইকটি রাইড করতে খুবই আরামদায়ক আমার কাছে, কারণ আমি ৫.১০” ইঞ্চি যার ফলে বাইকটির উচ্চতা আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। আমার কাছে বাইকটির সাসপেনশন ঠিকঠাক মনে হয়েছে।

সামনের এবং পেছনের উভয় সাসপেনশনই ভালো ফিডব্যাক দিয়েছে এবং বাইকটি মাঝারি হাইটের কারনে অফরোডিং এর সময়েও ভালো কনফিডেন্স পাওয়া যায় ।

TVS Apache RTR 160 এর  এই ইঞ্জিন 15.2BHP @ 8500 RPM সর্বোচ্চ শক্তি এবং 13.1 NM @ 4000RPM সর্বোচ্চ টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। বাইকটির সেরা জিনিস হচ্ছে এর ইঞ্জিন, শুরু থেকে এটা আমাকে ভালো ফিডব্যাক দিয়ে আসছে।

বাইকটি আমি অফরোড, হাইওয়ে ও সিটিতে রাইড করেছি। আমার কাছে বাইকটি যথেষ্ট পরিমানে ভালো পারফর্ম করেছে, তবে এর থেকেও সেরা পারফর্মেন্স বাইক রয়েছে যা আমার সামর্থের বাইরে।

মোটরসাইকেলে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলো যাওয়ার ইচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ঘুরতে চাই। আর আমার জীবনের অনেক বড় একটি স্বপ্ন  "সম্ভব হলে বাইক নিয়ে হজ্জ (উমরাহ) করবো" ইনশাল্লাহ। আপনাদের দোয়া,ভালবাসা ও সাপোর্ট থাকলে ইনশাল্লাহ সম্ভব হবে।

tvs apache rtr 160 bike

বাইকটি আমার কয়েকটি জেলা ভ্রমনের সঙ্গী হয়েছে -

  • মানিকগঞ্জ।
  • টাংগাইল।
  • সিরাজগঞ্জ।
  • নবাবগঞ্জ।
  • মুন্সিগঞ্জ।
  • ফরিদপুর।
  • রাজবাড়ী।

পারিবারিক কিছু বাধ্য বাধকতার জন্য বেশি ঘুরতে পারিনি ইনশাল্লাহ আর কিছু দিন পর থেকে আরো লং টুর দিবো প্রিয় বাইকটি নিয়ে।

আলহামদুলিল্লাহ →
বাইকের মাধ্যমে পেয়েছি অনেক ভালোবাসার বড় ভাই,স্নেহের ছোট ভাই ও অনেক বন্ধুবান্ধব। "আলহামদুলিল্লাহ" বাইকটি নেওয়ার পর অনেকের বিপদে বাইক দ্বারা অনেক উপকার করতে পেরেছি।

জানি না কত টুকু গুছিয়ে লেখতে পেরেছি ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পরিশেষে বাইকার বড় ও ছোট ভাইদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই সব সময় ভালো মানের হেলমেট পরিধান করবেন এবং সাবধানে বাইক রাইড করবেন। ধন্যবাদ ।

 

লিখেছেনঃ হাবিবুর রহমান

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।