Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - তপু

This page was last updated on 29-Jul-2024 08:53am , By Raihan Opu Bangla

আমি তপু। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মাইলাগী গ্রামে বসবাস করি। আমার জীবনের প্রথম বাইক Suzuki GSX-R150। বর্তমানে বাইকটি ১০,০০০ কিলোমিটার রানিং। বাইকটি ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড করতে গিয়ে বাইকটি সম্পর্কে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই আজকের এই লেখা।

Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

  

Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

আমার Suzuki GSX-R150 বাইকটি ২০১৮ এর মডেল,  ব্ল্যাক কালার,  4স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন, নন এবিএস, ইন্দোনেশিয়ান ভার্সন।


অজানা এক ভালো লাগা থেকে বাইকের প্রতি ভালোবাসাটা বাড়তেই থাকে। আর সেই ভালোবাসা থেকেই বাইক কেনা। আমি মনে করি বাইক রাইড করা একটা আর্ট যেটা একজন প্রতিভাবান ব্যাক্তি ভালোবেসেই নিজের মধ্যে রপ্ত করে। সেই ধারণা থেকেই বাইকিং এর প্রতি আগ্রহ। আগ্রহটা এতটাই তীব্র যে এখন বাইক ছাড়া কোন বাহন ভালো লাগেনা। এক কথায় বাইক হলো ভালোবাসা যাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকা যায়না। 


বাংলাদেশে যে কয়টি স্পোর্টস বাইক আছে সেগুলোর মধ্যে Suzuki GSX-R150 বাইকটি-ই আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে। এই বাইক টপ স্পীড এর দিক দিয়ে অন্যতম। সাথে ব্রেকিং সিস্টেমও কিন্তু কোনো অংশে কম না। Suzuki GSX-R150 এর লুক এককথায় মনোমুগ্ধকর।তখন বাইকটির দাম ছিল ৩,৫০,০০০ টাকা। বাইকটি আমি কিনেছিলাম মানিকগঞ্জ সদর এর একটি সুজুকির শোরুম থেকে।


Suzuki GSX-R150 Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD


এবার আসি বাইকটি কিনতে যাবার দিনের ঘটনায় আসলে বাইকটি আমি আমার বউ এর বার্থডে প্রেজেন্টেশন হিসেবে দিতে চেয়েছিলাম এবং ফাইনালি সেটাই হয়েছে। দিনটা ছিল ঈদ এর খুশির দিনের মত এবং স্মরণীয়ও বটে। প্রথমবার বাইকটি চালানোর ফিলিংস ছিল অসাধারণ। 


যেহেতু বাইকটি আমার ড্রীম বাইক তাই রীতিমতো স্বপ্নের রাজ্যে নিজেকে উপস্থিত মনে হয়েছিল নিজের Suzuki GSX-R150 বাইকটিতে প্রথমবার চড়ে বসার পর। কিন্তু প্রথম দিন একটু হাত ব্যাথা হয়েছিল বাইকটি বেশ কিছুক্ষণ চালানোর পর।

Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

  


বাইকটির আউটলুক এবং ফিচার-

  • সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট ১৪৭.৩ সিসি
  • ম্যক্সিমাম পাওয়ার ১৮.৯০ HP @ ১০,৫০০ rpm
  • ম্যক্সিমাম টর্ক ১৪ NM @ ৯০০০ rpm
  • সিলিন্ডার - ১
  • ৬ টি গিয়ার
  • সিট হাইট - ৭৮৫ মিমি
  • গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- ১৬০ মিমি
  • ওজন- ১৩১ কেজি
  • ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি - ১১ লিটার


এই পর্যন্ত বাইকটির ৬টা সার্ভিসিং করিয়েছি  যাত্রাবাড়ী কাজলার পাড় ইন্দো সার্ভিস সেন্টারে। যদিও  অফিসিয়াল ফ্রী সার্ভিস ছিল কিন্তু আমি তা না করিয়ে আনঅফিসিয়ালি সার্ভিসিং করিয়েছি  যাতে ভালো সার্ভিস পাই। আমরা সবাই জানি ফ্রী সার্ভিস এর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় নিজের মনের মত সার্ভিস পাওয়া যায়না। 


এবার আসি মাইলেজ এর বিষয়ে- বাইকের প্রথম ২৫০০ কিমি পর্যন্ত সিটিতে ৩০+ মাইলেজ পেয়েছি আমার Suzuki GSX-R150 বাইকটিতে। এবং ২৫০০ কিমি এর পর থেকে এ্যভারেজ মাইলেজ পাচ্ছি ৩৪+ কিলোমিটার প্রতি লিটার অকটেনে।

  

Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

আমি নিজের চেয়ে বাইক এর যত্ন একটু বেশি নেই যাতে বাইক এর রঙ এবং স্টিকারের কোন ক্ষতি না হয়। আর তাই গ্যারেজ থেকে ওয়াশ না করিয়ে নিজেই ওয়াশ করি আমার Suzuki GSX-R150 বাইকটিকে। কেননা গ্যারেজে মেশিন দিয়ে ওয়াস করার কারণে রঙ বা স্টিকার কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর আমি মোটেও সেই রিস্ক নিতে রাজি নই।


আমি আমার বাইকে ৩ বার মতুল এর সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছিলাম। তার পর থেকে আরো বেটার পারফরম্যান্স পাওয়ার আশায় মবিল ওয়ান প্লাস সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। মবিল ওয়ান প্লাস সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল এর দাম ১১৫০ টাকা। আমার এই Suzuki GSX-R150 বাইকটি নিয়ে ১০,০০০ কিলোমিটার পথ চলতে গিয়ে এখনো পর্যন্ত আমার কোনো পার্টস পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি। 


বাইকটিতে কোনো মডিফিকেশন করিনি এখন পর্যন্ত। বাইকটি স্টক যেমন আছে আমার কাছে তেমনি বেস্ট।আমার Suzuki GSX-R150 বাইকটি দিয়ে আমি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৪৭ কিলোমিটার টপ স্পীড তুলেছি।

  

Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

Suzuki GSX-R150 বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • এর সিটিং পজিশন স্পোর্টি ।
  • এর রেডি পিকআপ খুব ভালো ।
  • এক্সহস্ট লুক এবং সাউন্ড কোয়ালিটি অসাধারণ।
  • বাইকটি কী লেস থাকায় সিকিউরিটির ‍দিক থেকে ভাল।
  • পার লিটার এর মাইলেজ মিটারে দেখা যায় ।


Suzuki GSX-R150 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • পিলিয়ন সিট ছোট ।
  • ইঞ্জিন অয়েল 1300 ml দিতে হয় ।
  • ডাবল স্ট্যান্ড নাই ।
  • মাইলেজ তুলনামুলক কম ।
  • ফুয়েল ট্যাংক এর ক্যাপাসিটি কম ।


Suzuki GSX-R150 বাইকের ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

বাইকটি নিয়ে একবার লং ট্যুরে গিয়েছিলাম। মানিকগঞ্জ থেকে সিলেট গিয়েছিলাম। এই ট্যুরের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই বলা যায় যে Suzuki GSX-R150 বাইকটির ওভারঅল পারফরম্যান্স অসাধারণ। বাইকটি রাইড করে যেমন মজা পেয়েছি তেমনি কোনো রকম ব্যক পেইন হয় নাই যেটা ম্যাক্সিমাম স্পোর্টস বাইকেই হয়। 


কিন্তুু মাইলেজ এবং ফুয়েল ক্যাপাসিটি কম হাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সর্বোপরি এটা বলবো যে, আমার দৃষ্টিতে Suzuki GSX-R150 অসাধারণ একটি বাইক। একের ভিতর সব পাওয়া কখনোই সম্ভব না। তাই খারাপ-ভালো মিলেয়ে বাইকটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। 


কিন্তুু যারা পিলিয়ন নিয়ে রাইড করে তাদের জন্য একটু কষ্টকর। কম উচ্চতার রাইডারের জন্যও এই বাইকটি পারফেক্ট মনে হয়েছে । ধন্যবাদ।


লিখেছেনঃ তপু 


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।