Suzuki Gixxer SF Fi ABS নিয়ে ছোট ট্যুরের গল্প - আরিফ রায়হান অপু
This page was last updated on 09-Feb-2022 11:54am , By Shuvo Bangla
আমার বাইকের স্বপ্ন ছোট বেলা থেকে। তখন টিভিতে মটোজিপির রেস দেখতাম। ঘরে বসে আমি নিজে নিজে সেই স্টাইল কপি করতাম। পরে যখন সাইকেল চালানো শুরু করি তখন মনে হত আহা বাইক চালাতে পারলে তো ভালই হতো। বাইক চালানো মাঝে মাঝে মনে হত অনেক কঠিন। কারণ সবাই সেভাবেই বর্ণনা করত। আমি যখন চালানো শিখলাম তখন মনে হল এটা এত কঠিন নয়। শুধু ভয় দেখানোর জন্যই এভাবে হয়ত বলা হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে বাইকের সাথে একটা সখ্যতা গড় উঠল। পরে নিজেই ঠিক করলাম বাইক কিনব। ২০২০ এ এসে কিছু টাকা জমিয়ে কিনে ফেললাম রানার বুলেট। এখনও এটা রাইড করছি। তবে একটা স্পোর্টস বাইকের স্বপ্ন সব সময় ছিল। আর সেটা ২০২১ এ এসে পূরণ হয়েছে। প্রথমে ভেবে ছিলাম Suzuki GSX-R কিনব। কিন্তু বাজেট না থাকায় Suzuki Gixxer SF Fi ABS বাইকটি ক্রয় করি। আমি বাইকটি সুজুকির শোরুম মটো লাইফ বিডি, মোহাম্মদপুর থেকে ক্রয় করি। Suzuki Gixxer SF Fi ABS আসার আগে কয়েক বার আমি তাদের বিরক্ত করেছি। যখন দেখলাম লিমিটেড এডিশন আসবে তখন তাদের বলি যে আমি ওইটাই নেবো। সুজুকির ১০০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এই এডিশন নিয়ে আসা হয়েছে।
Click To See Suzuki Gixxer SF Fi ABS Price In Bangladesh
যেদিন বাইকটি ডেলিভারী নিতে যাই। সেদিনের কথা এখনও মনে আছে। অন্য রকম এক অনুভুতি হচ্ছিল। আবার ভয় লাগছিল রাইড করতে পারব তো। এরপর লক ডাউনে কাগজের জন্য বসে ছিলাম। সেভাবে রাইড করতে পারনি। তবে কয়েক দিন আগে সুযোগ হল একটা ছোট ট্যুর দেয়ার। বরিশাল-খেপুপাড়া-ঢাকা এই ছিল ট্যুর - খেপুপাড়া আমার শহর। তবে ঢাকা থেকে আমি আর আমার বন্ধু রিজভী দুজনে প্রথমে লঞ্চে বরিশাল যাই। এরপর রাইড করে খেপুপাড়া। লঞ্চে করেই বাইক নিয়ে গিয়েছি। বলে রাখা ভাল, আমি Suzuki Gixxer SF Fi ABS নিয়ে যাচ্ছিলাম ও বন্ধু ওর Honda CB Hornet 160R CBS বাইকটি নিয়ে যাচ্ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে এটাই আমার প্রথম হাইওয়ে রাইড ছিল। বৃষ্টির মাঝে রাইড করতে করতে চলে গিয়েছি। একদম সুস্থ ভাবে খেপুপাড়া পৌছাই। মাঝে একবার ব্রেক দিয়েছিলাম। সকালে কিছু না খেয়ে রাইড করার কারণে মাঝে ব্রেক দিয়ে হালকা খেয়ে নিয়েছিলাম। এর মাঝে বাইকটি আমাকে হতাশ করেনি। বরং আমি অবাক হয়েছি এর স্মুথনেস দেখে। দারূণ ভাবে ফিডব্যাক দিয়েছে। স্প্লীপ বা স্কিড করেনি। যদিও আমি স্পিডে রাইড করিনি। তারপরও কোথাও একটুও সমস্যা হয়নি। সময়মত বাসায় পৌছে গিয়েছি। ভেবে ছিলাম কুয়াকাটা যাব। কিন্তু বৃষ্টির জন্য মাঝ পথেই ফিরে আসতে হয়। সে এক অন্য অভিজ্ঞতা অন্য সময় লিখব। এরপর ১৫ অগাস্ট আবার ফিরে আসি। খেপুপাড়া থেকে আবার ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু হবে। বন্ধু রিজভীকে সকাল উঠালাম। আমরা সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যেই বেরিয়ে পরি। যদিও সূর্য্যি মামা তেতে উঠেছেন আগেই। তবুও যাত্রা শুরু। মাঝে এক জায়গাতে একটু দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। প্রকৃতির মাঝ দিয়ে যেতে যেতে খেয়াল করলাম আমার বাইকের ওয়ার্নিং লাইট ব্লিংক করছে। দেখি স্পিড ৮০ কিলোমিটার এ উঠে গিয়েছে, গতি কমিয়ে ৭০ এ নিয়ে আসলাম। আমতলী এসে চা খেলাম। এরপর বন্ধু আর আমি কোন ব্রেক না দিয়ে সোজা বরিশাল শহরে ঢুকে গেলাম। ফুয়েল নেয়ার জন্য। যদিও মিটারে তখনও হাফ ট্যাঙ্ক শো করছিল। তাও রিস্ক নেইনি। ফুল করলাম এবং রাইড শুরু। এই বরিশাল শহরের সমস্যা হচ্ছে তিন চাকার অটো আর সিএনজি গুলো হুটহাট এসে পরে। এখানেই এবিএস তার খেলা দেখিয়েছে। সুন্দর ভাবে আমি এসব কাটিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে চলে এলাম। দুজনেই নাস্তা করলাম। খেয়েদেয়ে আবার রাইড শুরু। এবার ব্রেক দেবার কোন চিন্তা না করে রাইড করা আরকি। সমস্যা হচ্ছে আমার বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ হয়নি। তাই স্পিড ওঠানো সম্ভব ছিল না। আর এভাবে রাইড করেও মজা পাচ্ছিলাম না। আবার ভাল বিষয় হচ্ছে আস্তে রাইডের কারণে খুব সহজে সব কিছু পাশ কাটিয়ে যেতে পেরেছি। আমি আর বন্ধু রেইনকোট পরলাম কারণ আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কিন্তু না এই বৃষ্টি জোরে বৃষ্টি না, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। যাইহোক কিছু দূর যাবার পর বৃষ্টি নেই। তবে থামানো যাবে না। যদিও কিছুটা গরম লাগছিল। একে তো জ্যাকেট পরা ছিলাম তার উপর দিয়ে রেইনকোট, সব মিলিয়ে ভিতরে ভিতরে ঘেমে যাচ্ছিলাম। এক সময় বৃষ্টির রাস্তা ও পিচ্ছিল রাস্তা পার হলাম। এবার কিছুটা ব্রেক নেবো ভেবে নিলাম। যারা বরিশালের আছেন তারা চিনবেন ভূরাঘাটা নামক জায়গা। সেটা পার হলাম কারও ওখানে বাসের কারণে সেভাবে সাইডে দাড়াইনি। আরও সামনে গিয়ে ছোট একটা ব্রেক দিলাম। তখন রেইনকোট খুলে ফেললাম। এই বৃষ্টির মধ্যেও Suzuki Gixxer SF Fi ABS বাইকটি কোন ধরনের স্কিড করেনি এবং ইঞ্জিনের স্মুথনেসও কমে যায়নি। একটুও সমস্যা করেনি। বলা যায় আমাকে আরামদায়ক একটি রাইড দিয়েছে। এখানে কফি খেলাম। তখন দেখ প্রায় এগারোটা বেজে গিয়েছে। বন্ধুকে বললাম আমি না থাকলে তুই তো এখন মাওয়া থাকতি। এই দিকে মাওয়ার কথা মনে পরতেই মাথায় একটা চিন্তা আসল। মাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না তো। এই দিকটাও ভেবে দেখে উচিত ছিল। এখন একটি বিষয় বলে নেয়া ভাল। বরিশাল হাইওয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তিন চাকা। ভ্যানের সাথে ব্যাটারি বা মেশিন লাগিয়ে এরা উড়তে থাকে। বাস ছাড়া আর কাউকে তেমন পরোয়া করে বলে মনে হয় না। হঠাৎ করে মনে চাইল ঘুরিয়ে দিলাম। সাইড রাস্তা থেকে উঠে আসে হঠাৎ করেই। যেন রাস্তায় আর কেউ নেই। আমাদের সাথেই এটা তিন চার বার হয়েছে। তবুও আমরা আরও সাবধান হয়ে রাইড করেছি। যাই হোক, আবার যখন রাইড শুরু করলাম। মাওয়ার দিক থেকে যেসব বাস চলা চল করে তার কিছু বাস আসতে দেখালম। দুজনেই ইশারায় বলে নিলাম খোলা। তাই এবার একটু স্পিড আপ করে ৭৫ থেকে ৮০তে নিয়ে গেলাম। এর বেশি গেলে ব্লিংকার চোখে লাগে তাই আর উঠাইনি। আবার দুই সাইডে পাট দেখতে পেলাম। ছবি তুলব ভেবেছিলাম। কিন্তু থামানো হয়নি। এই পাট আমাদের সোনালী আশ ছিল। একে চাইলে আমরা বিশ্বের কাছে এক রপ্তানী যোগ্য পন্য হিসেবে তুলে ধরতে পারতাম। তবে এখন এটা ধ্বংসে মুখে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। পাটের গন্ধ অনেকটাই গোবের সাথে তুলনা করা যায়। যাই হোক দুপাশের পানি পাট এসব দেখতে দেখতে এভাবেই ভাঙ্গা চলে এলাম। এ এক গোলক ধাধার নাম। কোন রাস্তা কোন দিক দিয়ে নিয়েছে বুঝতে পারছিলাম না। একবার চলে গেলাম খুলনার দিকে। পরে ঘুরিয়ে আবার মাওয়ার দিকে আসলাম। তবে সবচেয়ে ভাল লাগল রাস্তার দুপাশে দৃশ্য। হাইওয়ে এমনই তো হওয়া উচিত। বন্ধু তো তার হর্নেট নিয়ে টেনে অনেক দূর চলে গেল। আমি আস্তে আস্তে রাইড করছি হাইওয়ের মজা নিচ্ছি। ভাল ই লাগছে আমাদের দেশেও উন্নত হাইওয়ে বেশ ভাল লাগল ব্যাপারটা। সাইডে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। এরপর ঘাটে চলে গেলাম। গিয়েই পেয়ে গেলাম ফেরি। মজার ব্যাপার হচ্ছে ফেরিতে আমরা সোজা উঠে গিয়েছি। অনেকেই দেখালাম বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। বন্ধুর পিছনে পিছনে উঠে বাইক পার্ক করে বসলাম। ভেবে ছিলাম উপরে যাব। কিন্তু যেই অবস্থা ছিল তাতে যাওয়া সম্ভব ছিল না। মাওয়া পার হলাম ১২ ও ১৩ নাম্বার পিলারের মাঝ দিয়ে। পদ্মা ব্রীজেও উঠব এখন আশা করতেই পারি। অনেক দিনের স্বপ্ন চোখের সামনে। দেখেই তো আনন্দ লাগছে। তখন মনে পরছিল যেখন রাজশাহী গিয়েছিলাম যমুনার ব্রীজের কথা। এখন আমরাও বলতে পারব আমাদের পদ্মা আছে। হাস্যকর মনে হলেও যতবার মাওয়া দিয়ে যাওয়া আসা করেছি। তখন এই ফেরির কারণে সকালে ঘুম নষ্ট করে বাসে উঠতাম। বাস ফেরি ঘাটে এসে আটকে থাকত। রাত বারোটায় আসলে ফেরি পেতাম সকাল ৮টায়। আবার কখনও পেতাম না। লঞ্চে পার হতে হত। সে এক ইতিহাস হয়ে থাকবে। ফেরির ব্যাপারে কিছু বলে নেই। যদিও আমি নতুন বাইকার। ফেরিতে বাইক এমন স্থানে রাখা উচিত যেখানে মানুষ চলা চল করে না। কারণ সাধারণ মানুষ বাইকের গুরুত্ব বোঝে না। বন্ধুর হর্নেটের গ্লাস লুজ করে ফেলে যাওয়া আসার সময়। আমার Suzuki Gixxer SF Fi ABS বাইকের ইন্ডিকেটের দুই তিনবার বাড়ি লেগেছে ভাগ্য ভাল ভেঙ্গে যায়নি। এরপর বাইকে উঠে ইন্ডিকেটর এর পাশে পা ঝুলিয়ে বসে ছিলাম। ফেরি থেকে উঠেই আস্তে আস্তে রাইড আবার শুরু। এভাবে করে হানিফ ফ্লাইওভার চলে এলাম। এবার দুজনের গন্তব্য দুই দিকে। আমি যাব মোহাম্মদপুর ও বন্ধু ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার। দুজন দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। যখন বাসায় ঢুকলাম দেখি তিনটা বাজে। সকাল সাড়ে ছয়টায় রওনা দিয়ে তিনটায় বাসাতে পৌছানো, প্রথম রাইড হিসেবে খারাপ নয় একে বারে। বন্ধুকে অনেক ধন্যবাদ যে আমাকে সাথে নিয়ে রাইড করেছে। বলা যায় আমার জন্য ও কষ্ট করেছে নয়ত। আরও আগেই চলে আসতে পারত। Suzuki Gixxer SF Fi ABS বাইকটি এভাবে আমাকে স্মুথ একটা রাইডের আনন্দ দেবে ভাবিনি। হাইওয়েতে রাইডের সময় একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি যে এখানে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। আপনি স্পিডে রাইড করুন তবে সেফ রাইড করুন। ধন্যবাদ, ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আর হেলমেট ও সেফটি গিয়ার্স পরে রাইড করুন। লিখেছেনঃ আরিফ রায়হান অপু।