Suzuki Gixxer Double Disc Edition মালিকানা রিভিউ -আশিক
This page was last updated on 29-Jul-2024 04:25pm , By Raihan Opu Bangla
আমি ইমরান খান আশিক । আমি চট্টগ্রামে বসবাস করি । আমার প্রথম বাইক ছিল Yamaha Fazer , ২০১২ সালের মডেল। কিন্তু আজ আমার সব গল্প হবে বর্তমান বাইক নিয়ে । বর্তমানে আমি Suzuki Gixxer Double Disc Edition বাইকটি ব্যবহার করছি। বাইকটি আমি এখন পর্যন্ত ১২,০০০+ কিলোমিটার রাইড করেছি।
Suzuki Gixxer Double Disc Edition মালিকানা রিভিউ
কিছু ভালবাসার যেমন কোন কারণ থাকেনা, ঠিক তেমনি কেন যে এত ভালবাসা দুই-চাকার প্রতি তার মানে আজও বুঝতে পারলাম না। আমার দুই চাকার প্রতি এই ভালোবাসা একদম ছোটবেলা থেকে।
নেকেড বাইক ব্যাবহার করার ইচ্ছেটা অনেক আগে থেকেই ছিল, আর সুজুকির উপর অন্য রকম একটা আস্থা ছিল জাপানিজ কোম্পানি হিসেবে। বাইক নিয়ে আমার পুরো পৃথিবীটা ঘুরে দেখার ইচ্ছা, আর সেই ইচ্ছা থেকই বাইক কেনা। বিশেষ বাইক নিয়ে লং ট্যুরের আনন্দটা অন্য কোন যানবাহন দিতে পারবেনা। বাইক প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ করে দেয় ।
আমি যখন Suzuki Gixxer Double Disc Edition বাইকটি কিনি তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিল ২,৩০,০০০ টাকা। ১৭-০২-২০১৯ তারিখে বাইকটি আমি চৌমুহনী, চট্টগ্রাম থেকে ক্রয় করি। আর সেই সাথে জিক্সারের মালিকানার খাতায় নিজের নাম লিপিবদ্ধ করি। সেই দিনটা ভুলে যাওয়ার মত না যেদিন আমি আমার সখের বাইকটি কিনতে যাই। খুব কাছের এক বাইক লাভার বড় ভাইকে নিয়ে যাই সাথে করে। সব দেখে-শুনে অবশেষে আমার লালপরী কে কিনে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
একমাত্র বাইক প্রেমিকরা বুঝতে পারবে, নিজের টাকায় বাইক কিনে তা চালানোর অনুভুতি কেমন হয়। আমার কাছে মনে হয় Suzuki Gixxer Double Disc Edition একটি অসাধারন বাইক। এই বাইকটি যেমন দ্রুতগতির ঠিক তেমনি এর ব্রেকিং সিস্টেমও অসাধারন। বাংলাদেশে যতগুলো গুড লুকিং বাইক রয়েছে তাদের মধ্যে সুজুকি জিক্সার আমার চোখে সেরা। Suzuki Gixxer Double Disc Edition এর ইঞ্জিন অনেক বেশি রিফাইন এবং শক্তিশালী। এর রয়েছে ১৫৪.৯ সিসি একটি ইঞ্জিন। 14.1ps@8000rpm এবং 14.0 Nm@6000rpm টর্ক যা মোটরসাইকেলটিকে করেছে অনেক বেশি শক্তিশালী। Suzuki Gixxer Double Disc Edition এর ইঞ্জিন অয়েল এর পরিমাপ হচ্ছে ৮৫০ মিঃলিঃ। ইঞ্জিনের একটি স্বচ্ছ গ্লাস উইন্ডো রয়েছে যা ইঞ্জিন অয়েল এর লেভেল দেখায় যা খুব জরুরী।
Suzuki Gixxer Double Disc Edition এর ইঞ্জিন সাউন্ড ভালো তবে হাই আর পি এম এ এই সাউন্ড চমৎকার ফিল দেয়। আপনি যখন বাইকটি স্টার্ট দিবেন এর সাউন্ড শুনে তখনি বুঝতে পারবেন এটা কতটা পাওয়ারফুল বাইক। আমার মতে Suzuki Gixxer Double Disc Edition এর মত সেরা সাউন্ড আর কোন বাইক এর নেই। সার্ভিসের ব্যাপারে বলতে গেলে, আমি কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী সময় মত সব সার্ভিস করিয়েছি সুজুকি অথোরাইজড সার্ভিস সেন্টার থেকে। এখন পযন্ত আটটি সার্ভিস করিয়েছি। বাইকটি ২৫০০ কিলোমিটার রান করার আগে ৩৮-৪০ মাইলেজ পেতাম। এর পর থেকে সিটিতে এখন পর্যন্ত মাইলেজ পাচ্ছি ৪২-৪৫ এবং হাইওয়েতে ৪৫-৫০। বাইকের যত্ন নেওয়ার কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয়, নিজের চেয়েও বেশি যত্ন করা হয় আমার বাইকের। নিয়মিত চেইন ক্লিন করা এবং লুব করা, প্রতি সপ্তাহে টায়ারের হাওয়া চেক করা, নিয়মিত ওয়াস করা আমার বলতে গেলেঅভ্যাস এ পরিনত হয়ে গেছে।
বাইকটির পিলিয়ন সিট ভালো লাগেনি সিটি বা হাইওয়ে যে কোনো রাস্তায় পিলিয়নকে খুব অস্বস্তিকর একটা অবস্থায় থাকতে হয়। এই সিট টা অনেক শক্ত মনে হয় আমার কাছে।
আমি আমার বাইকে শুরু থেকে Motul এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি। প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করেছি, এর পর থেকে সিনথেটিক Motul 7100 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি। আমি আমার Suzuki Gixxer Double Disc Edition বাইকে তেমন কোন মডিফিকেশন করিনি। শুধুমাত্র হর্ন আর হেডলাইট পরিবর্তন করেছি। পার্টস পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে ব্রেক প্যাড আর এয়ার ফিল্টার ছাড়া আর তেমন কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি। আমি সাধারণত খুব একটা স্পিডিং করিনা। তারপরও একবার টপ স্পিড চেক করতে গিয়ে ১১৫ পর্যন্ত স্পিড তুলেছিলাম। এরপর আর চেষ্টা করিনি। বাসে করে কক্সবাজার অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু বাইক নিয়ে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ যাওয়ার অনুভুতিটা অন্যরকম ছিল। এছাড়াও এই বাইক নিয়ে আমি কাপ্তাই, রাংগামাটি,বান্দরবন, সাজেক ট্যুর করেছি।
Suzuki Gixxer Double Disc Edition বাইকটির কিছু ভাল দিক -
- এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরম্যান্স এক কথায় অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে।
- বাইকটি সিটিতে জ্যামের ভিতর মুভ করতে খুব সুবিধা হয়।
- বাইকের কর্নারিং অসাধারণ লাগেছে আমার কাছে।
- পাহাড়ি আপহিল আর ডাউনহিলে বাইকটি চালিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাললাগা অনুভব করি আমি।
Suzuki Gixxer Double Disc Edition বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা হল এর পিলিয়ন সিট ।
- জিক্সারের মত একটা বাইকে এমন লো পাওয়ারের হেডলাইট আমার কাছে গ্রহণ যোগ্য মনে হয়না।
- সবচেয়ে খারাপ লেগেছে এর হর্ন । এত পাওয়ারফুল একটা বাইকে এই নরমাল সিঙ্গেল হর্ন থাকাটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি আমার কাছে।
সুজুকির সব বাইকের দাম এবং সুজুকির শো-রুম সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসুন। নতুন নতুন মোটরসাইকেল এর বিষয়ে খবর জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে বাইক কিনলে সেটার প্রতি তো অবিরাম ভালবাসা জড়িয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি আমার বাইকটির পার্ফরমেন্স এ খুশি । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ ইমরান খান আশিক
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।