Suzuki Gixxer 250 ও Gixxer SF 250 – ১৫৫ ভার্শন থেকে কতটুকু আলাদা?
This page was last updated on 20-Oct-2024 09:21am , By Badhan Roy
বাংলাদেশে ন্যাকেড স্পোর্টস কমিউটার এবং স্পোর্টি ফেয়ারড কমিউটার ক্যাটাগরিতে অন্যতম জনপ্রিয় বাইক Suzuki Gixxer 155 এবং Gixxer SF 155 তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু বাংলাদেশে বর্তমানে হায়ার সিসি বাইকের এক প্রকার উৎসব চলছে বলা যায় সেহেতু আমরা আশা করতেই পারি Suzuki Bangladesh হয়তো তাদের জনপ্রিয় Gixxer লাইনআপের হায়ার সিসি ভার্শন বাংলাদেশে লঞ্চ করতে পারে। দেখতে মোটামোটি কাছাকাছি হলেও ১৫৫ এবং ২৫০ ভার্শনের বাইকগুলোতে পরিবর্তন কি কি আছে তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
Suzuki Gixxer 250 ও Gixxer SF 250 – ডিজাইন
Gixxer 155 ও 250 বাইকে একই ধরনের ন্যাকেড স্পোর্টস কম্যুটার এবং SF সিরিজে একই স্পোর্টি ফেয়ারড কমিউটার ক্যাটাগরির ডিজাইন লক্ষ করা যায়। দৃশ্যমান কোন পার্থক্য না থাকায় লুক এর দিক দিয়ে তেমন লক্ষণীয় পরিবর্তন নেই, দূর থেকে দেখলে দুইটি বাইক কে হুবুহু একই বলে মনে হতে পারে। পার্থক্যের দিক থেকে বড় সাইজের ইঞ্জিন, বড় ডিস্ক ব্রেক সাইজ ও এক্সটেন্ডেড টায়ার সাইজ দেখে বোঝা যায় দুইটি বাইক একে অপরের থেকে আলাদা। পাশাপাশি, ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারেও খুবই সামান্য কিছু পরিবর্তন রয়েছে।
Suzuki Gixxer 250 ও Gixxer SF 250 – ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন
আন্তর্জাতিক স্পেসিফিকেশন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় Gixxer 155 এবং 250 সিরিজের মধ্যে ইঞ্জিনে বেশ পার্থক্য রয়েছে। ১৫৫ ক্যাটাগরির বাইকগুলোতে রয়েছে BS VI প্রযুক্তির ফুয়েল ইঞ্জেক্টেড (FI) এয়ার কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ১৫৫ সিসির ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন যা ৮৫০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ১৩.৪ হর্সপাওয়ার শক্তি ও ৭৩০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ১৩.৮ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। ১৫৫ ক্যাটাগরিতে কার্বোরেটর ভার্শন এভেইলেবল থাকলেও ২৫০ ক্যাটাগরি তে শুধুমাত্র FI ভার্শন আসে।
অপরদিকে ২৫০ ক্যাটাগরির ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রয়েছে BS VI প্রযুক্তির ফুয়েল ইঞ্জেক্টেড (FI) অয়েল কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ২৪৯ সিসির ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন যা ৯৩০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ২৬.৫ হর্সপাওয়ার শক্তি ও ৭৩০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ২২.২ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। ওয়েট মাল্টিপ্লেট এসিস্ট এন্ড স্লিপার ক্লাচ এবং ৫ স্পিড গিয়ারবক্স স্মুথ এবং প্রতি গিয়ারেই কুইক রেসপন্স দিতে সক্ষম। ২৫০ ক্যাটাগরি তে দেওয়া হয়েছে ৬ স্পিড গিয়ারবক্স। ১৫৫ ক্যাটাগরির সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১২৫-১৩৫ কিমি প্রতি ঘন্টায়, অপরদিকে ২৫০ এর সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৪৫-১৫০ কি.মি প্রতি ঘন্টায়।
Suzuki Gixxer 250 ও Gixxer SF 250 – ফিচারস
Gixxer 155 এবং 250 এর কিছু উল্লেখযোগ্য ফিচারস হলো:
সিট হাইট, ওজন ও গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- দুই ক্যাটাগরির বাইকে সিট হাইটের পার্থক্য মাত্র ৫ মি.মি এর (৭৯৫ ও ৮০০ মি.মি)। যদিও উভয় ক্যাটাগরিতেই ১৬৭ মি.মি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে। কার্ব ওয়েটের দিকে বেশ পার্থক্য দেখা যায়, ন্যাকেড ভার্শনের কার্ব ওয়েট ১৫৫ সিসির ক্ষেত্রে ১৩৭ কেজি ও ফেয়ারড এর ক্ষেত্রে ১৪৮ কেজি, অপরদিকে ২৫০ সিসির ন্যাকেড ভার্শনের কার্ব ওয়েট ১৫৬ কেজি ও ফেয়ারড এর ক্ষেত্রে ১৬১ কেজি। হায়ার সিসি তে কিছুতা বাড়তি ওয়েট থাকার পরেও বেশ ভাল ওয়েট ব্যালান্স এর পরিচয় দেয়।
ইগনিশন সিস্টেম- সেলফ ইলেক্ট্রিক ইগনিশন। (যদিও ১৫৫ সিসির কার্বোরেটর ভার্শনে কিক অপশন ও এভেইলেবল ছিল)
ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার: সম্পূর্ণ ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টারটিতে দুই ক্যাটাগরির মধ্যে সামান্য কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ডিজাইনের দিক থেকে। এতে ফুয়েল লেভেল, একাধিক ট্রিপ মিটার, স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, গিয়ার, সার্ভিস ইন্ডিকেটর, ব্যাটারি ভোল্টেজ ইন্ডিকেটর, এবিএস ইন্ডিকেটর, সাইড স্ট্যান্ড ইন্ডিকেটর, রাইডিং মোড, ঘড়ি ইত্যাদি রয়েছে। ২৫০ ক্যাটাগরি তে ক্লাস্টারটির সাথে অ্যাপ কানেক্টিভিটি অপশন আসে যা দ্বারা ফোনের নোটিফিকেশন ও টার্ন বাই টার্ন নেভিগেশন ফিচারটি সহ বাইকের মেইনটেইনেন্স এর সকল তথ্য সহজেই সিংক করে নেওয়া যায়।
এলইডি হেডল্যাম্প- বাইকটির ডিআরএল এবং হেডল্যাম্প দুই ক্যাটাগরির জন্যেই দেখতে একই। সাথে যেমন এগ্রেসিভ তেমন প্র্যাক্টিকাল, বেশ ভাল লাইট আউটপুট দিতে সক্ষম।
ডুয়াল ব্যারেল মাফলার এক্সহস্ট- বাইকটির এক্সহস্ট সিস্টেম শর্ট ডুয়াল ব্যারেল মাফলার হওয়ার কারনে বেটার বেজ এর সাউন্ডের পাশাপাশি বেটার রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স নিশ্চিত করে এবং বাইকের প্রিমিয়ামনেস ফুটিয়ে তোলে।
টিউবলেস টায়ার: ১৫৫ ক্যাটাগরির বাইকের টায়ার সাইজ- সামনের টায়ার 100/80-17, পিছনের টায়ার: 140/60-17, ২৫৫ ক্যাটাগরির বাইকের টায়ার সাইজ 110/70-17 এবং 150/60-17. MRF এর টিউবলেস টায়ার উভয় বাইকে দেওয়া হয়েছে যা সহজে সব রকম রাস্তায় পাড়ি দেওয়ার সাথে পাংচার বা লিক হওয়ার ঝুঁকি কম ও বেটার পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম।
ব্রেক: ব্রেকিং এর ক্ষেত্রেও ২৫০ ক্যাটাগরি এগিয়ে রয়েছে। যেখানে ১৫৫ ক্যাটাগরির জন্য বাইকটিতে ২৬৬ মি.মি এর ফ্রন্ট ও ২২০ মি.মি এর রিয়ার ডিস্ক ব্রেক ব্যাবহার করা হয়েছে সেখানে ২৫০ ক্যাটাগরিতে ৩০০ মি.মি ফ্রন্ট ও ২৪০ মি.মি এর রিয়ার ডিস্ক ব্যাবহার করা হয়েছে। উভয় বাইকেই এবিএস ব্যবহার করা হলেও ১৫৫ ক্যাটাগরিতে সিঙ্গেল চ্যানেল ও ২৫০ তে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস ব্যাবহৃত হয়েছে যা বৃষ্টি ও অনাকাঙ্খিত সিচুয়েশনে ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট হেল্পফুল।
সাসপেনশন সিস্টেম: বাইকটির সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক ও পিছনে মাল্টি এডজাস্টেবল মনোশক অ্যাবজর্বার ব্যাবহার করা হয়েছে যা রাইডিং আরামদায়ক করে তোলে।
মাইলেজঃ উভয় বাইকেই মোট ১২ লিটারের ফুয়েল ক্যাপাসিটির সাথে প্রতি লিটার জ্বালানী তেলে ১৫৫ ক্যাটাগরির বাইকটি ৪০-৪৫ কিলোমিটার এবং ২৫০ ক্যাটাগরির বাইকটি ৩৫-৩৮ কি.মির আশেপাশে মাইলেজ দিতে সক্ষম। হায়ার সিসির বাইক বিবেচনায় এই মাইলেজ যথেষ্ট ভাল বলা বাহুল্য, তবে জ্বালানীর মান ও রাইডিং স্টাইলের উপরে মাইলেজ কম বেশি হতে পারে।
এই ছিল এক নজরে জিক্সার সিরিজের ১৫৫ ও ২৫০ ক্যাটাগরির এর এক নজরে বিস্তারিত। স্পেসিফিকেশন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় উভয়েই একেবারেই কাছাকাছি বাইক। রাইডার সেম ফিলিং এর সাথে একটু বেশি পাওয়ার আউটপুট এর চাহিদা পোষণ করলে ২৫০ সিরিজ হতে পারে ভাল আপগ্রেড অপশন। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশেও হয়তোবা অদূর ভবিষ্যৎ এ বাইকটি আসতে পারে এবং রিজনেবল প্রাইস দ্বারা হায়ার সিসি মার্কেটে ইতিমধ্যে আসা বাইকগুলোর সাথে ২৫০ সিসি সেগমেন্টে নিজের অন্যতম শক্ত অবস্থান তৈরী করবে র্যানকন মোটরস এর হাত ধরে।
বাইক বিষয়ক সকল তথ্য সবার আগে পেতে বাইকবিডির সাথেই থাকুন।