Runner AD 80s Deluxe ৩০০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - জহির

This page was last updated on 13-Jan-2025 02:06pm , By Raihan Opu Bangla

দুই চাক্কা প্রতিটা পুরুষের একটা আকর্ষনের জায়গা। এই আকর্ষণ অনেকের ক্ষেত্রে শৈশবেই জাগ্রত হয়। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। আসসালামু আলাইকুম আমি মোঃ জহির উদ্দিন। নদীবেষ্টিত পটুয়াখালী জেলায় আমার জন্ম। পেশায় একজন বেসরকারী চাকরিজীবী। বর্তমানে একটি Runner AD 80s Deluxe বাইক ব্যবহার করছি ।

Runner AD 80s Deluxe ৩০০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  runner ad 80s deluxe red color bike

Also Read: Runner Bullet নিয়ে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা ভ্রমন-তানভীর হাসান

আজ আমি আমার Runner AD 80s Deluxe বাইকটি ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইডের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । চাকরির সুবাদেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন যায়গায় যাতায়ত করতে হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত কাজকর্ম তো থাকেই। সুতরাং এই ব্যস্ত শহরে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য স্বল্প বাজেটে একটি বাইক কেনা আমার জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল।

যেহেতু জীবনে প্রথম একটি বাইক কিনবো তাই অনেক খোজ খবর নিয়ে অনেক বিষয় চিন্তা করে রানার কোম্পানির Runner AD 80s Deluxe বাইকটি আমার জন্য পারফেক্ট মনে হয়। 

Also Read: Runner bike price in Bangladesh

অবশেষে ২০১৭ সালের অক্টোবরে আমি যাত্রাবাড়ি রানার বিক্রয়কেন্দ্র থেকে কিস্তিতে আমার পছন্দের Runner AD 80s Deluxe বাইকটি কিনে ফেলি। আমার ব্যবহৃত এই Runner AD 80s Deluxe বাইকটি সম্পর্কে কিছু বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যই আমার এই লেখা।

runner ad 80s deluxe headlight

Also Read: Top 5 Best Moped Bikes in Bangladesh At A Glance | BikeBD

আজ আমার বাইকের বয়স প্রায় ৩ বছর। এই ৩ বছরে Runner AD 80s Deluxe বাইকটি আমি ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড করেছি। যেহেতু এটা আমার প্রথম বাইক তাই প্রথম ১০০০ কিলোমিটার বা ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করা আমার জন্য খুব কষ্টসাধ্য ছিল। সত্যি বলতে আমি জানতাম না যে ব্রেক ইন পিরিয়ড আসলে কি। 

কিন্তু আমার এক বড় ভাই আমাকে ব্রেক ইন পিরিয়ডের ব্যাপারে ডিটেইলস বলে এবং আমাকে পরামর্শ দেয় কিভাবে এই ব্রেক ইন পিরিয়ড যথাযথভাবে মেইনটেইন করতে হবে। তার পরামর্শ মতে ৩০০ কিলোমিটার চালানোর পর প্রথমবার আমি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি এবং ইঞ্জিনে কোন প্রেসার না দিয়ে চলতে থাকি। 

প্রথম ১০০০ কিলোমিটারের মধ্যে টোটাল ৩ বার আমি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। এবং ধীরে ধীরে আমি আমার বাইকের স্মুথনেস ফিল করতে থাকি।

আমি সিটিতে ৫২-৫৫ মাইলেজ পাই এবং হাইওয়েতে মোটামুটি ৫৮-৬০ মাইলেজ পাচ্ছি আমার বাইকটিতে। বাইকটি কেনার পরে কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে কখনও কিছু ভাবতে হয়নি। ঢাকা ও ঢাকার আশে পাশের মোটামুটি সব যায়গায়-ই একাধিক বার ঘুরে বেড়িয়েছি আমার এই লিটল হর্স কে নিয়ে। বেশ কয়েকটা লং-ট্যুর দিয়েছি আমার এই ৮০ সিসির বাইক নিয়ে। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ঢাকা-কুমিল্লা-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী। ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী ট্যুরটি ছিল একটা এক্সট্রিম ডে-নাইট ট্যুর। 

runner ad 80s deluxe

Also Read: Runner Bike Showroom In Noakhali (Sudharampur) 

কিছু অনাকাঙ্খিত সমস্যা ছাড়া নির্দিধায় আমাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই Runner AD 80s Deluxe বাইকটি।অনেকেই মনে করে এত ছোট বাইক দিয়ে হাইওয়েতে রাইড করা অসম্ভব। যারা এটা ভাবে তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, অসম্ভব বলে কোন কিছু নেই। হাইওয়েতে রাইড করার জন্য যেটা জরুরী তা হল সাহস, চালানোর দক্ষতা আর হাইওয়েতে চালানোর অভিজ্ঞতা। প্রথম দুইটা থাকলে শেষেরটা অটোমেটিক হয়ে যাবে।

Runner AD 80s Deluxe বাইকটি নিয়ে আমার এই ৩০,০০০ কিলোমিটার পথ চলায় বাইকের কিছু যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিছু বেসিক যন্ত্রাংশ যেমন ব্রেক সু, ব্যাটারী,  ক্লাচ কেবল, ব্রেক কেবল, চেইন সেট ইত্যাদি একটা নির্দিষ্ট সময় পর সব বাইকেই পরিবর্তন করতে হয়। আমারও তাই করতে হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনে এখনো কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি। নিয়মিত বাইকের পরিচর্যা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয় বলে আমি মনে করি।

ইঞ্জিন হল একটি বাইকের প্রাণ, আর ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের প্রাণ। আমি আমার বাইকে Shell Advance 20w40 ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। প্রতি  ১০০০কিলোমিটার পর পর আমি আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। 

এখন পর্যন্ত এটা আমাকে ভালো পারফরমেন্স দিয়েছে। আমি প্রতি ৫০০-৬০০ কিলোমিটার পর পর বাইকের চেইন পরিস্কার করে চেইনে লুব দেই। প্রতি ১৮০০ - ২০০০ কিলোমিটার পর রানার কোম্পানির নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার থেকে বাইকের সার্ভিস করাই। এছাড়াও কিছু দিন পর পর টায়ার প্রেসার চেক করে সামনের চাকায় ৩০ পি এস আই এবং পিছনের চাকায় ৩৫ পি এস  আই টায়ার প্রেসার মেইনটেইন করি।

runner ad 80s deluxe bike

Runner AD 80s Deluxe বাইক এর কিছু ভাল দিক-

  • ইঞ্জিন কোয়ালিটি যথেষ্ট ভাল।
  • স্বল্প বাজেটে বাংলাদেশে যে কয়টা বাইক আছে তার মধ্যে Runner AD 80s Deluxe আমার কাছে বেষ্ট বাইক মনে হয়।
  • রানার কম্পানি কাষ্টমারদের স্বার্থে কিস্তি সুবিধা প্রদান করে যেটা আমার কাছে অনেক সুবিধাজনক একটা বিষয় মনে হয়।
  • এর মাইলেজ যথেষ্ট ভাল।
  • স্বল্প বাজেটে সেল্ফ স্টার্টার বাইক খুব কমই পাওয়া যায়। কিন্তু Runner AD 80s Deluxe বাইকটিতে সেল্ফ স্টার্টার সুবিধা আছে।
  • এক্সস্ট সাউন্ড আমার কাছে দারুন লাগে।
  • এর ডুয়াল হর্ণের বিষয়টিও আমার ভাল লাগে যা অনেক দামি বাইকেও নেই।


Runner AD 80s Deluxe বাইক এর কিছু খারাপ দিক-

  • ওজন কম হওয়ার কারনে হাইওয়েতে রাইড করতে কিছু সমস্যা ফিল করেছি।
  • বাইকের গতি ৬০+ হলেই ভাইব্রেশন অনুভূত হয়।
  • এর হেডলাইটের আলো অনেকটাই কম মনে হয় আমার কাছে। ফলে রাতের বেলা বিশেষ করে হাইওয়েতে চালানোর ক্ষেত্রে একটু বেগ পেতে হয়।
  • সামনে পিছনে উভয় ড্রাম ব্রেক হওয়ার কারনে ইমারজেন্সি ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা হয়।
  • এই বাইকে কোন ফুয়েল ইন্ডিকেটর মিটার নেই। ফলে মাঝে মধ্যে ট্যাংকির মুখ খুলে ফুয়েল চেক করাই একমাত্র উপায়।
  • টিউবলেস টায়ার না হওয়ার মাঝে মধ্যেই চাকা লিক হওয়ার মত বিড়ম্বনায় পরতে হয়।


পরিশেষে, এই স্বল্প বাজেটে এবং কিস্তি সুবিধার আওতায় থাকা Runner AD 80s Deluxe বাইকটি এর পারফরমেন্স দ্বারা একটি অনন্য বাইক। আমি আমার বাইকের পারফরমেন্স এ শত ভাগ খুশি এবং এজন্যই আমি আমার এই লিটল হর্স কে এতটা ভালবাসি। ধন্যবাদ ।


লিখেছেনঃমোঃ জহির উদ্দিন


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।