Race fiero 150fr নিয়ে সাতছড়ি ভ্রমন অভিজ্ঞতা

This page was last updated on 29-Jul-2024 08:01am , By Raihan Opu Bangla

ইদ মানে হচ্ছে খুশি আর আনন্দ। ইদের সময়টা হচ্ছে খুশির সময়। এই সময়টা আমরা অনেকেই পরিবারে এবং আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কাটাই। অনেকেই আবার ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ শহরে ফিরে যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বসত আমি এবার ইদে কোথায় যেতে পারিনি। তাই ইদের পর হবিগঞ্জ জেলার সাতছড়ি আর চা বাগান ঘুরে এসেছি আমরা রেস ফিয়ারো১৫০ বাইকে।  তাই আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Race fiero 150fr নিয়ে সাতছড়ি ভ্রমন অভিজ্ঞতা।

Race Fiero 150FR এর ভিডিও রিভিউ দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Race Fiero 150fr নিয়ে সাতছড়ি ভ্রমন অভিজ্ঞতা

Race Fiero 150fr

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। ২০০৫ সালে সরকার পরিবেশ ও বন্যপ্রানী সংরক্ষনের জন্য ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা করে। এই জায়গাটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্থান। তাছাড়া ঢাকা থেকে মাত্র ১২৫-১৩৫ কিলোমিটার এর দূরত্ব। এই জায়গাটি এমন এক স্থানে যেখানে আপনি একদিনের মধ্যে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারবেন।

কিভাবে যাবেন:

আমি আমরা Race fiero 150fr যাত্রা শুরু করি মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে এবং পূর্বাচল ৩০০ফিট হয়ে ঢাকা-সিলেট  হাইওয়েতে পৌছাই। প্রথমে আপনি নরসিংদী এবং তারপর ভৈরব পার হবেন। এরপর আপনি ব্রাহ্মন-বাড়িয়া পৌছবেন। তারপর আপনি বামে যাবেন। কিছু দূর এগিয়ে মাধবপুরে আপনি পাবেন হোটেল পানশী। এরপর সেখান থেকে ঘুরে আপনি ১২০ কিলোমিটার যেতে হব

এই গোল চত্ত্বরের ডানে ঢাকা সিলেট হাইওয়ে অন্য দিকে সাতছড়ি। আপনি যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে সহজে যাবার রাস্তা বলে দেবে। এরপর আপনি ছোট বাজার পার হবেন। তারপর আরো ৫কিলোমিটার যাবার পর আপনি রাস্তার দু-পাশে পাবেন চা-বাগান।

সেখানে যা যা পাবেন:

প্রথমে আপনি যা দেখবেন তা হলো চা গাছ। রাস্তার দুপাশে সবুজ আর সবুজ। তাছাড়া সেখানে বাংলাদেশের অন্যতম বড় চা-বাগান সুরমা টি স্টেট পাবেন, তেলিপাড়া যুদ্ধ স্মৃতি সংসদ, ডান কান টি স্টেট, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। আপনি তেলিপাড়া যুদ্ধ স্মৃতি সংসদ ঘুরতে পারেন। এটি বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে অবস্থিত।

৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ আর্মি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সাক্ষাৎ এখানেই হয়, এই তেলিপাড়া টি স্টেটে। এই মিটিং ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ন যা পরবর্তি ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রভাব ফেলে। এই স্মৃতি যাদুঘরে বুলেট মেমরি নামে একটি ঘর আছে যা বাংলাদেশ শহীদ সৈন্যদের নাম লেখে রয়েছে। আপনি ঘুরে আসতে পারেন আর জনপ্রতি টিকেট মাত্র ৫ টাকা।

সুরমা টি স্টেট বাংলাদেশের পুরাতন চা-বাগান গুলোর মধ্যে একটি। আপনি ডান কান টি স্টেট ঘুরে আসতে পারেন। যা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পর অবস্থিত। সেখানে প্রায় ৯টির মত চা-বাগান রয়েছে। প্রায় ২০০+ প্রজাতির গাছ রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। চুনারুঘাট হয়ে রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই আপনি পেয়ে যাবেন ঢাকা-সিলেট মেইন হাইওয়ে। রাস্তা প্রায় ২০কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং দুপাশে সবুজ। আর বেশির ভাগ গাছ হচ্ছে চা গাছ।

সেখানে কিনতে পারবেন:

আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমী হন তবে জায়গাটি আপনার অনেক ভালো লাগবে। তাছাড়া আপনি চারিদিকের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। এক দিনে ঘুরে আসার মত এত সুন্দর জায়গা বাংলাদেশে  আপনি খুব কম পাবেন। ভাগ্য ভালো থাকলে আপনি তাজা ফল এবং সবজি কিনে নিয়ে আসতে পারেন। চাইলে আপনি আদিবাসীদের তৈরি করা কাপড় কিনতে পারেন।

স্পেশাল নোট:

কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে যখন আপনি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ভ্রমন করবেনঃ

  • সেখানে কোন হোটেল বা রেস্ট হাউজ নেই। তাই এক দিনেই ভ্রমন করার চেষ্টা করুন।
  • ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার।
  • সেখানের পরিবেশ একটু গরম আর শুস্ক।
  • সাথে পানি রাখুন।
  • পলিথিন এবং প্লাস্টিক ডাস্টবিনে ফেলু। যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়।
  • যদি ডাস্টবিন না পান, তবে সব কিছু একটা পিলিথিন এ ভরে ফেলুন এবং ঢাকায় এনে ডাস্টবিনে ফেলুন।
  • যদিও সেখানে ট্রাফিক কম। তবুও সেখানে অনেক ট্রাক এবং সিএনজি রয়েছে। তাছাড়া চা-বাগানের শ্রমিকরাও আছে। তাই চোখ খোলা রাখুন এবং সাবধানে রাইড করুন ।
  • স্পিড ৬০ এর বেশি তুলবেন না।
  • অনেক তীক্ষ্ণ বাক রয়েছে। তাই কর্নারিং এর সময় হর্ন দিতে ভুলবেন না।
  • আপনি সরীসৃপ আর বানরের দেখা পাবেন। তাদের বিরক্ত করবেন না বা ক্ষতি করবেন না।
  • ঢাকা থেকে ফুয়েল ট্যাঙ্ক ফুল করে নিন।
  • ভোর ৬টায় যাত্রা করুন যাতে আপনি ৭-৮টার মধ্যে ঢাকায় ফিরতে পারেন।
  • আসা-যাওয়াতে ১১-১২ ঘন্টার বেশি সময় লাগবে না।
  • ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে অনেক স্পিড ব্রেকার আছে যা চিহ্নিত করা নেই। তাই হাইওয়েতে রাতে রাইড করা থেকে বিরত থাকুন। দিনের বেলায় সাবধানে রাইড করুন।
  • সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া দুস্কর।

Race Fiero 150FR এর সাথে যাত্রা যেমন ছিল:

Race fiero 150fr বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। তাই যাত্রার অভিজ্ঞতায় ছিল দারুন। রেস ফিয়ারো ১৫০এফআর এর সাসপেনশন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। হর্ন যদিও বেস্ট নয়। তবে রাইডিংটা কমর্ফোটেবল ছিল। যেহেতু এই বাইকে দুটি মোড। দুটি মোড ই কাজ করে হাইওয়েতে। আমি মাইলেজ পেয়েছি ৩৮ এবং টপস্পিড ছিল ১১৫কিলো প্রতি ঘন্টায়। বাইকের ব্রেক ছিল অসাধারন। আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এর ফুয়েল। Race fiero 150fr বাইকটিতে হাই গ্রেডের অনেক ব্যবহার করতে হয়, যা হাইওয়েতে খুজে পাওয়া মুশকিল। তাছাড়া এর ফুয়েল ট্যাঙ্ক মাত্র ১০ লিটারের, তাই ৩৫০ কিলোমিটার আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।

Also Read: Race GSR125 ফিচার রিভিউ - বাংলাদেশে Race এর নতুন স্পোর্টসবাইক

যেকোন হাইওয়ে রাইডের ক্ষেত্রে সব সময় রাইডের আগে বাইক সার্ভিস করে নেয়া উচিত। ইঞ্জিন ওয়েল, ব্রেক, কুলিং সিস্টেম, টায়ার প্রেশার, ইলেক্ট্রিক সিস্টেম সব কিছু চেক করে নেয়া। যদি কোন কারণে কোন সমস্যা হয় তবে এটা অনেক কষ্টের। কারণ তখন সাহায্য পাওয়া অনেক দুস্কর। আমরা সপ্তাহের শেষে অফিসের পর রিফ্রেশমেন্ট খুজে থাকি। অনেকে বাইকারাই শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়াতে একটু স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে চান। আমরা সবাই ঢাকার কাছাকাছি সুন্দর আর নির্মল পরিবেশ খুজে থাকি। যেখানে আমরা রাইডারা ইনজয় করতে চাই রাইড এবং প্রকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চাই। আমি আশা করি Race Fiero 150FR নিয়ে সাতছড়ি ভ্রমনের এই কাহিনী আপনাদের উপকারে আসবে এবং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান আপনার ছুটিকে এবং রাইডিং কে অনেক আনন্দায়ক করবে। ধন্যবাদ সবাইকে। ভাল থাকবেন।