Race Fiero 150FR টীম বাইকবিডি ২৫০০ কিমি টেস্ট রাইড রিভিউ
This page was last updated on 18-Aug-2024 10:52am , By Shuvo Bangla
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটের সিংহভাগই দখল করে রেখেছে ভারতীয় মোটরসাইকেল আমদানীকারকেরা। এবং, এই মার্কেটের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশে নিজেদের স্থান ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশের চাইনিজ মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো যাদের মার্কেট শেয়ার দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসকল চাইনিজ কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রেস মোটরবাইকস, এবং গত তিনমাস ধরে একটানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে আজকে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, Race Fiero 150FR এর টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ নিয়ে।
Race Fiero 150FR এর ভিডিও রিভিউ দেখতে এখানে ক্লিক করুন
অতীতে আমরা যেকোন বাইক ৭০০-১০০০ কিলোমিটার টেস্ট করে সেটার সম্পর্কে রিভিউ পাবলিশ করতাম ।তবে, বর্তমানে বাইকবিডি ফ্যানদের সুপরামর্শের ফলে আমরা এই সময়কালটি বাড়িয়ে নিয়েছি। এবং, বর্তমান বছর থেকে আমরা প্রতিটি বাইক কমপক্ষে ২৫০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড করে তবেই টেস্ট রাইড রিভিউ প্রকাশ করবো যাতে করে আমরা বাইকটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারি এবং এর সকলকিছু সম্পর্কে বাংলাদেশের বাইকারদেরকে জানাতে পারি।
আরো পড়ুনঃ বাইক নিয়ে ঈদের যাত্রায় এই ৫ টি জিনিস অবশ্যই মেনে চলুন
চলুন আপনাদের সকলকে রেস ফিয়েরো ১৫০এফআর বাইকটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক। এই বাইকটি মূলত CFMoto Fiero 150NK, যেটা বাংলাদেশে Race Fiero 150FR নামে রিব্র্যান্ডেড হয়ে এসেছে। কাজেই, যারা মনে করছেন যে এই বাইকটি একটি ভালোমানের চাইনিজ বাইকের খারাপমানের ভার্শন, তারা ভুল ভাবছেন।
Race Fiero 150FR এর লেটেস্ট বিক্রয়মূল্য
CFMoto চায়নার অন্যতম সেরা মোটরসাইকেল কোম্পানি। তাদের ডিজাইন টীম KISKA মূলত তাদের সকল বাইকের ডিজাইন করে, এবং সেই একই টীম KTM DUKE এর ডিজাইন এর পেছনে রয়েছে কাজেই প্রথম দেখায় Race Fiero 150FR এবং KTM Duke 125 এর মধ্যে প্রচুর সাদৃশ্য পাওয়া যেতে পারে। চলুন, বাইকটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক Race Fiero 150FR – টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ এর মাধ্যমে।
ডিজাইন
বাইকটির ডিজাইন বেশ আক্রমনাত্মক। এর ডিজাইনিং এ KTM Duke 125 এর বেশ প্রচ্ছন্ন ছাপ রয়েছে। বাইকটির হেডলাইট একটি হিংস্র শিকারীর মতো করে ডিজাইন করা, এবং বাইকটিতে AHO - অটোমেটিক হেডলাইট অন সিস্টেম থাকার ফলে বাইকটির হেডলাইট সর্বদা চালু থাকে। বাইকটির ইন্ডিকেটরগুলো এলইডি এবং সেগুলোতে রাবার সংযুক্ত করা রয়েছে যার ফলে যেকোন প্রকার সংঘর্ষে সেগুলো ভাঙে না বরং বেকে যায়।
বাইকটির টেইললাইট একটি এলইডি ইউনিট। হ্যান্ডেলবারটি চকচকে একটি সোজা রড হ্যান্ডেল । বাইকটির রাইডিং ডিজাইন অনেকটা ইয়ামাহা এম-স্ল্যাজ এর সাথে মিলে যায়, কিন্তু ফিয়েরো তে একটি ভালোমানের পাইলিয়ইন সিট এবং গ্র্যাবরেইল রয়েছে। সামনের ইনভার্টেড ফ্রন্ট সাসপেনশন বাইকটিকে একটি আকর্ষনীয় চেহারা প্রদান করে, এবং অন্যান্য নেকেড স্পোর্টস বাইকের মতোই বাইকটির ইগনিশন কী-হোল বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের সামনে অবস্থিত।
ফিচারসমূহ
Race Fiero 150FR বাইকটিতে এমন কিছু অসাধারন ফিচার রয়েছে যা বাংলাদেশের বেশিরভাগ চাইনিজ বা ভারতীয় বাইকে নেই । যেমনঃ
- ১৫০ সিসি ওয়াটার কুলড ইএফআই ইঞ্জিন
- ৬-স্পীড গিয়ারবক্স
- দুইটি রাইডিং মোড – ইকো এবং স্পোর্টস
- ইনভার্টেড ফ্রন্ট সাসপেনশন
- ২৯২ মিলিমিটার ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক এবং ২২০ মিলিমিটার রিয়ার ডিস্ক ব্রেক
- ১৩০ সাইজের রিয়ার টায়ার
- বহুল ফিচারসমৃদ্ধ স্পীডোমিটার
- ছোট এক্সহস্ট
- পাইলিয়নের জন্য গ্র্যাবরেইল
বাইকটির স্পিডোমিটারের কথা আলাদা করে না বললেই নয়! এতে একটি এনালগ আরপিএম কাউন্টার এবং একটি ডিজিটাল স্পীডোমিটার রয়েছে। এছাড়াও এতে ডিজিটাল অডোমিটার, ইঞ্জিন টেম্পারেচার মিটার, ফুয়েল ইন্ডিকেটর, ব্যাটারী ইন্ডিকেটর, ঘড়ি, ও ল্যাপ টাইমার রয়েছে।
Also Read: প্রথম দেখায় Race Fiero 150FR - টীম বাইকবিডি ফার্স্ট ইমপ্রেশন রিভিউ
এছাড়াও এতে একটি রেডলাইন লাইট সুইচ রয়েছে যেটা রাইডার নিজের পছন্দমতো সেট করতে পারে। যেমন, যদি কেউ সবসময় কম আরপিএমে রাইড করতে চায়, তবে সে চাইলেই রেডলাইন লাইট ৬০০০ আরপিএমে সেট করে রাখতে পারে ফলে যখনই সে ৬০০০ আরপিএম ক্রস করবে তখনই রেডলাইট তাকে সংকেত দিতে থাকবে।
এছাড়াও বাইকটিতে একটি অসাধারন সেফটি ফিচার রয়েছে। সেটি হচ্ছে, বাইকটি যদি গিয়ারে রাখা থাকে এবং বাইকের সাইড স্ট্যান্ড যদি নামানো থাকে, তবে বাইক স্টার্ট নেবে না। যদিও সাইড স্ট্যান্ড ফেলা অবস্থায় বাইকটি নিউট্রালে স্টার্ট করা সম্ভব তবে সেক্ষেত্রে বাইকটি গিয়ারে ফেলামাত্রই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। বাইকটির সকল সুইচের মান মোটামুটি, তবে বাইকের বাকি সবকিছু হিসেব করলে সুইচগুলোর মান আরেকটু ভালো হওয়া দরকার ছিলো।
যেহেতু বাইকটিতে এএইচও সিস্টেম রয়েছে, কাজেই বাইকটিতে কোন হেডলাইট অফ বাটন নেই। বাইকটির হেডলাইট রাতের রাইডের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বাইকটির হেডলাইট পরীক্ষা করেছি এবং সেখানেও বাইকটির হেডলাইট যথেষ্ট পরিমানে আলো দিচ্ছিলো।
ইঞ্জিন
Race Fiero 150FR বাইকটিতে একটি ওয়াটার কুলড ইঞ্জিন রয়েছে।ইঞ্জিনটি একটি ১৫০ সিসি ২ ভালভবিশিষ্ট ইউনিট। বাইকটির ইঞ্জিন কেবলমাত্র ১১.৯ বিএইচপি শক্তি এবং ১০.৭ এনএম টর্ক উতপন্ন করে, যেটা বর্তমানের ১২৫ সিসি বাইকের তূলনায়ও খুবই কম। CFMoto এর ভাষ্যমতে, এই বাইকটি স্পীডের জন্য নয় বরং ক্রুজিং এবং কমফোর্টের জন্য তৈরী করা হয়েছে। আমাদের মনে হয় যে সকলেরই উচিত বাইকটির স্পীড নয়, বরং বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটির প্রশংসা করা।
বাইকটির দুইটি রাইডিং মোড রয়েছে। ইকো মোডে বাইকটি স্বয়ংক্রীয়ভাবে জ্বালানী বাচায় এবং খুব দ্রুত এক্সেলেরেট করে না। তবে, একটি বাটনের চাপেই বাইকটি স্পোর্টস মোডে রূপান্তরিত হয়, এবং এই মোডে বাইকটির ইঞ্জিন সাধারনের চাইতে অনেক বেশি দ্রুত এক্সেলেরেট করে এবং তূলনামূলকভাবে বেশি তেল খায়। দুটো মোড এর মধ্যে মূল্য পার্থক্য মূলত মাইলেজ এবং এক্সেলেরেশন এবং মাইলেজেই। বাইকটির এক্সহস্ট এর শব্দ হোন্ডা মোটরসাইকেল এর মতো নিশ্চুপ ও শান্তশিষ্ট নয়, বরং অনেকটা আমেরিকান মাসল কার এর মতো ভারী। বাইকটির গিয়ার রেশিও ভালো তবে প্রথম ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ার পরিবর্তন করাটা অনেক শক্ত ও কষ্টকর। বাইকটির ইঞ্জিন ১২০০ মিলি ইঞ্জিন অয়েল ধারনক্ষমতা সম্পন্ন।
সাসপেনশন ও ব্রেকিং সিস্টেম
পূর্বে যেরকমটা বলেছি, যে বাইকটির সামনে একটি ইনভার্টেড ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং পেছনে মনোশক এবজর্ভার রয়েছে। HRZ এর স্টান্ট রাইডার কাইয়ুম জানান, বাইকটি খুব সহজেই অসাধারন স্টপি পারফর্ম করতে পারে তবে এর শক্তি কম থাকায় এটা দিয়ে চেইন হুইলি পারফর্ম করা কিছু কষ্টকর। বাইকটির সাসপেনশন পুরোপুরি ভালোভাবে কাজ করার জন্য ১০০০-১২০০ কিলোমিটার সময় প্রয়োজন।
তবে, বাইকটির অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে এর পেছনের সাসপেনশন । রিয়ার সাসপেনশনটি স্মুথ রাস্তা ব্যতিত অন্য কোন সারফেসে কাজ করে না, এবং কর্নারিং করার সময় এটার কারনে বাইক স্লাইড করে! বিষয়টি নতুন বাইকারদের জন্য অত্যান্ত ভয়ের বিষয় হলেও আমার কাছে অসাধারন লেগেছে!
বেশকিছু সময় আমি ভেবেছিলাম যে বাইকটির পেছনের সাসপেনশন হয়তো ঠিকভাবে লাগানো হয়নি, তবে পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি যে বাইকটির মূলনীতিই হচ্ছে হাই স্পীড কর্নারিং এর সময় ড্রিফট করা! এই বাইকটি সকলের জন্য উপযুক্ত নয়, এবং সবাই বাইকটি রাইড করা উপভোগও করবে না!
রাইডিং এবং পারফর্মেন্স
বাইকটির সিটিং পজিশন সম্পূর্ন আপরাইট এবং লং ডিসট্যান্স রাইডিং এর জন্য আরামদায়ক, এবং সিটি রাইডেও এটা খুবই সহায়ক তবে, পাইলিয়নের সিটটি মোটেই আরামদায়ক নয়। বিশাল বড় টার্নিং রেডিয়াস এর জন্য বাইকটি ট্রাফিকের ভেতর দিয়ে চালানো খুবই কষ্টকর। কখনো কখনো বাইকটির সাইজের কারনে এটাকে কোন গ্যাপ এর মধ্য দিয়ে রাইড করা খুবই কষ্টকর।
বাইকটি নিয়ে উম্মুক্ত রাস্তায় রাইড করা খুবই আনন্দের। তবে,এর রিয়ার টায়ার ভেজা রাস্তা বা অফ রোডে পর্যাপ্ত পরিমান গ্রিপ প্রদান করতে পারে না। বাইকটির ব্রেকগুলো অত্যান্ত উন্নতমানের, কেবলমাত্র বাইকটির পেছনের টায়ারটি ভালোমানের হলেই বাইকটি নিয়ে যেকোন ধরনের রাস্তায় অসাধারন ব্রেকিং এবং কর্নারিং করা সম্ভব হতো। বাইকটি সম্পর্কে অন্যতম বড় প্রশ্ন হলো এর স্পোর্ট মোড এবং ইকো মোড কিভাবে কাজ করে?
এই দুটি মোড এর মধ্যে মূল্য পার্থক্য হলো, স্পোর্ট মোড বাইকটির ইঞ্জিনের আরপিএম দ্রুত বাড়ায় এবং গিয়ার চেঞ্জ দ্রুত হয়। স্পোর্ট মোড বাইকে কোনপ্রকার বাড়তি শক্তি যোগ করে না। বাইকটির ব্রেকগুলো খুবই ভালোমানের। সামনের ইউনিটটি ২৯২ মিলিমিটার টুইন পিস্টন ইউনিট এবং পেছনেরটি ২২০ মিলিমিটার সিঙ্গেল পিস্টন ইউনিট। আমি বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ে খুবই আনন্দিত। বাইকটির কর্নারিং করার ক্ষমতাও ভালো তবে আমি সবাইকে পরামর্শ দেবো উচ্চগতিতে বা ভেজা রাস্তায় বাইকটি নিয়ে কর্নারিং না করার।
বাইকটির ইঞ্জিন রেসপন্স খুব বেশি উচু নয় এবং এতে খুব বেশি রেডি পিকাপও নেই, তবে, বাইকটির মিড-রেঞ্জ পিকাপ যথেষ্ট ভালো। বাইকটি খুব সহজেই ৯০-১০০ গতিবেগে ক্রুজিং করতে পারে। বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকের ধারনক্ষমতা কেবলমাত্র ১০ লিটার যা লং ডিসট্যান্স রাইডের জন্য পর্যাপ্ত নয় এবং যেহেতু বাইকটিতে RON93 গ্রেডের ফুয়েল ব্যবহার করতে হবে, সেহেতু ঢাকার বাইরের সাধারন তেল ব্যবহার করলে বাইকটির পারফর্মেন্স কমে যাবে। উচ্চ আরপিএমে বাইকটির ইঞ্জিন কিছু ভাইব্রেট করে। যদিও একটা একটি স্পোর্টস বাইক হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে তবে বাস্তব পৃথিবীতে বাইকটি একটি লং-ডিসট্যান্স রাইড হিসেবেই ভালোভাবে কাজ করবে।
পারফর্মেন্স চার্ট
টপ স্পীডঃ ১২০ কিমি/ঘন্টা মাইলেজঃ ৩২-৩৫ (ঢাকা শহরে) মাইলেজঃ ৩৮-৪০ (হাইওয়েতে)
পরিসংহার
Race Fiero 150FR বাইকটির বেশকিছু আপসাইড রয়েছে, বেশকিছু ডাউনসাইড রয়েছে।এটা মূলত সেসকল রাইডারের জন্য, যারা বাইকিংকে একটি এডভেঞ্চার হিসেবে গন্য করেন, এবং বাইককে নিজের কথা শুনতে বাধ্য করেন।
রেস ফিয়েরো এর সাথে টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইডার ওয়াসিফ আনোয়ার বর্তমানে আমাদের দেশের ২ লাখ টাকা দামের মধ্যে সকল বাইকই কমিউটিং এর জন্য ভালো। সেগুলো ফুয়েল সেভ করে এবং নিঃসন্দেহে রেস ফিয়েরোর চাইতে অনেক বেশি প্র্যাকটিক্যাল। তবে রেস ফিয়েরো ১৫০এফআর এর রয়েছে ভালো বিল্ড কোয়ালিটি, অসাধারন ব্রেকিং সিস্টেম এবং উম্মাদতূল্য পারফর্মেন্স। এই ছিলো Race Fiero 150FR এর ২৫০০ কিলোমিটার এর টীম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ। আশা করা যাচ্ছে এই রিভিউটি সবাইকে বাইকটি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারনা দিতে সক্ষম হয়েছে।