New Suzuki Gixxer ৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - মাসুদ

This page was last updated on 30-Jul-2024 08:34am , By Shuvo Bangla

আমার নাম মোঃ মাসুদ রানা। আমি একটি New Suzuki Gixxer বাইক ব্যবহার করি । আজ বাইকটি নিয়ে আপনাদের সাথে রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

new suzuki gixxer

আমি বরিশাল জেলার উজিরপুরের ৯নং গুঠিয়া উনিয়নের দোসতিনা গ্রামে বসবাস করি। আমি একজন ফ্রীলান্সার। সবার আগে বলে নেই আমি কোন প্রো লেভেলের রাইডার না। আমি একজন সাধারণ রাইডার। আমার জীবনের প্রথম বাইকের নাম ইয়ামাহা আর এক্স-এস ১১৫ সিসি(জাপান)।

আমি এই বাইকটি ২০১৬ সালের শেষের দিকে সেকেন্ড হ্যাঁন্ড ক্রয় করি। দীর্ঘ ৫ বছরেরও বেশি সময় ব্যবহার করেছি, এবং এখনো বাইকটি আমার কাছে আছে। এই বাইকের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একবার হিলি যাচ্ছিলাম রংপুর থেকে , রংপুর হিলি হাইওয়েতে একটা পালসারের সাথে টক্কর দিচ্ছিলাম আর কি।

তখন আমি আমার বাইকে নতুন আমার চালানোর দক্ষতা অত বেশি ভালো ছিল না। আমি পালসার কে কয়েকবার ওভারটেক করছি ওভারটেক করে দেখি আমার বাইক ১২০ এ , এরপর হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি একটি বাজার, এবং সামনে একটি মোর, একটা স্পিড ব্রেকার, আসলে ওই মুহূর্তে ব্রেক করতেছিলাম তো ব্রেক কাজ করতে ছিল না মনে হচ্ছিল ।

আমি স্পিড ব্রেকারে বাইক তুলে দেই এবং বাইক নিয়ে প্রায় ৩-৪ হাত উপরে উঠে যাই, এবং স্টিল বাইকটি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাই, হয়তো আর এক্স বলেই এটি সম্ভব হয়েছে, ঠিকভাবে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম। যদিও তখন বড় ধরনের একটি দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি ওইবার। তারপর থেকেই ওভার স্পিড কন্ট্রোল করে বাইক চালাই।

new suzuki gixxer

এই জিক্সার বাইকটি কেনার পেছনে একটাই কারণ, সেটা একটু ডিটেলসেই বলি, আমার পছন্দ ছিল মূলত ইয়ামাহা এফ জেড ভার্সন থ্রি। তো আমরা যারা RX চালাই তারা সব সময় একজন এক্সপার্ট লেভেলের আর এক্স মেকারকে দিয়া গাড়ি সার্ভিস করাই। আর মূলত যারা আর এক্সের মেকার হয় তারা একটু এক্সপার্ট লেভেলেরি হয়, বলা যায় তারা একদম গাড়ি জগতের প্রথম মেকার এবং অনেক অভিজ্ঞ।

তো আমারও এরকম একজন বরিশালের এক্সপার্ট লেভেলের মেকার এর কাছে জিজ্ঞেস করছিলাম যে ভাই নতুন কোন গাড়ি নিলে ভালো হবে, তো সেই ভাই আমাকে সাজেস্ট করল সুজুকি বাইকের কথা , তার কথা মতে সুজুকি বাইক ইয়ামাহা বাইকের চেয়ে অনেক ভালো, ইঞ্জিন কোয়ালিটি অনেক ভালো ।

তাই তার কথামতো অন্য কোন ব্রান্ডে যাওয়ার আর চিন্তা করি নাই , সুজুকির মধ্যেই বাজেটের বেস্ট বাইকটা খোঁজা শুরু করলাম, আমার প্রথম পছন্দ ছিল জিক্সার এস এফ। আমি জুলাই মাসে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেই ওই মাসে আসলে প্রচুর গাড়ির ক্রাইসিস ছিল সারা বাংলাদেশে কোথাও এস এফ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

জুন মাসে খুবই গাড়ি ক্রাইসিস ছিল, আমি আমার আশেপাশে মোটামুটি সব জায়গায় যোগাযোগ করছি কোথাও গাড়ি ছিল না, এমনকি জিক্সার গাড়িটাও খুব একটা বেশি ছিল না। আরো একটি সমস্যা দেখা গেল যে ওই সময় গাড়ির দামও বেড়ে গেল। আমার বাজেট ছিল ৩ লাখ টাকা তিন লাখের ভিতরে জিক্সার এসএফএ বেস্ট ছিল। তো কোথাও যখন গাড়ি পাচ্ছিলাম না তখন সিদ্ধান্ত নেই যে জিক্সার এফ আই - এ বি এস গাড়িটি কিনব।

জিক্সার গাড়ির কেনার পিছনে আমার মূল কারণ ছিল তার লুক এবং প্রিমিয়াম একটি ভাব, আমার কাছে বেশি পছন্দ ছিল ব্ল্যাক কালার , বাট ওই সময় ব্ল্যাক কালার ছিলনা পরবর্তীতে আমি রেড কালারটা কিনি।

বাইকটি আমি সুজুকির শোরুম বরিশালের এস ডি এল মটরস থেকে ক্রয় করি, তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিল ২,৫৭,৯৯০ টাকা। আমি যখন বাইকটি ক্রয় করি তার পাঁচদিন আগে বাইকটির মূল্য ছিল ২,৪৭,০০০ হাজার টাকা।

বাইকটি যখন কিনতে যাই তখন আমি আমার সাথে আমার আব্বুকে নিয়ে গেছিলাম । আব্বু জানতো না যে আমি বাইক কিনতে যাব , আসলে আব্বুকে বলছিলাম যে বরিশাল কাজ আছে, তো যখন মোটরসাইকেল শোরুমে ঢুকি তখনই আব্বু আসলে সারপ্রাইজড হয়ে যায়। এবং গাড়িটি বাসায় নিয়ে আসি তখন আমার আশেপাশের সবাই আমার আত্মীয়-স্বজন সবাই টোটালি সারপ্রাইজড হয়ে যায়।

গাড়িটি যখন চালিয়ে আসি তখন আমার অনুভূতিটা সত্যিই অন্যরকম ছিল। নিজের টাকায় নতুন গাড়ি সত্যি অন্যরকম এক অনুভূতি। বাবাকে পিলিওন হিসেবে নিয়া আসি।

new suzuki gixxer

গাড়ি কেনার পেছনে আমার কোন উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য ছিল না। আমি গাড়ি কিনেছি আমার শখের জন্য। শখ ছিল শখ পূরণ করেছি জাস্ট। নির্দিষ্ট কোন যাতায়াতকে লক্ষ্য করে কিনি নাই।

বাইকের ফিচার নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমে আমি একটা ফিচারের অসম্পূর্ণতা নিয়ে বলতে চাই সেটা হল ১০০০ কিলোমিটার হলে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জের যে নোটিফিকেশন টা ডিসপ্লে তে শো করে, সেটা ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করলে অটোমেটিক চলে যায় না ম্যানুয়ালি এটাকে সরাতে হয়।

আমার কাছে এই ফিচারটা অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়েছে। কারণটা ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ এর সময় হলে যখন ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ নোটিফিকেশনটা শো করবে তাহলে উচিৎ ইঞ্জিন অয়েল যখন চেঞ্জ হয়ে যাবে নোটিফিকেশনটা অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যাবে। এটা আমার কাছে অসম্পূর্ণ ফিচার মনে হয়েছে।

আমি যখন গাড়িটি চালাই তখন আমার কাছে খুবই ভালো লাগে খুবই ইসমুথ এবং চালাতেও খুবই কমফোর্ট ফিল হয় আমার। আমি যখন আরএক্স চালাতাম তো, আর এক্সে তো সবাই জানেন যে শব্দ বেশি, তো জিক্সার গাড়িটি যখন আমি চালাই তখন প্রথম প্রথম আমার কাছে মনে হত এই গাড়ির কোন সাউন্ড নাই আমি চালাচ্ছি কোন সাউন্ড পাচ্ছি না।

আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত ৫,০০০ কিলোমিটার চলছে, এর মধ্যে আমি তিনটা ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি, সুজুকির অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার থেকে। প্রতিবারই ওই একই সার্ভিস। তবে তাদের ব্যবহার যথেষ্ট ভাল ছিল এবং জিজ্ঞেস করেছে গাড়িতে কোন অসুবিধা আছে কিনা, এবং সার্ভিস শুরু করার আগে তারা চালিয়েও দেখেছে কোন প্রবলেম আছে কিনা যাচাই করার জন্য।

আমি গাড়ির মাইলেজ কত পাই এটা কোন সময় একচুয়াল ভাবে কখনোই জানার চেষ্টা করিনি, আমি যখন আর এক্স চালিয়েছি তখনও জানার চেষ্টা করিনি আমার আর এক্স লিটারে কত যাচ্ছে, এবং আমার এই জিক্সার এর ক্ষেত্রেও আমি ওইভাবে জানার চেষ্টা করিনি , তবে ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি মাইলেজ ৫০ এর উপরে পাইছি। তখন আমি সর্বোচ্চ গাড়ির গতি ৫০ পর্যন্ত চালিয়েছি ৫০ এর উপরে গাড়ি চালায়নি।

২৫০০ কিলোমিটারের পর আমার কাছে মনে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে আছে মাইলেজ। যদিও আমি একচুয়াল ভাবে এটা মাপিনি আমার আইডিয়া বললাম। আমি প্রতিমাসে একবার গাড়ি ওয়াশ করি, এবং শাইনিনেস এর জন্য আমি একটি নেনো কোটিং ক্রিম ইউজ করি। এবং প্রতি 1000 কিলোমিটার পর পর আমি ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি সাথে প্রতিবার অয়েল ফিল্টার ও চেঞ্জ করি।

আমি আমার প্রথম ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ৩৫০ কিলোমিটার হয় তারপর। প্রথম ইঞ্জিন অয়েল লাগিয়েছিলাম MOTUL 10w4T । তারপর ECSTAR 10w4T ব্যবহার করছি। আমার কাছে যথেষ্ট স্মুথ মনে হয়েছে এই মবিলটি । এই মবিলটি মূলত সুজুকি সার্ভিস সেন্টারে পাওয়া যায়, বাইরে সম্ভবত এখনো পাওয়া যায় না, সার্ভিস সেন্টারে এই মবিলটির দাম রাখে 650 টাকা। এবং ওরা এক হাজার কিলোমিটার পরপর এই মবিল চেঞ্জ করার জন্য সাজেস্ট করে।

আমি আমার বাইকে বলার মত তেমন কিছুই এখন পর্যন্ত চেঞ্জ করি নাই, তবে ৩৫০০ কিলোমিটার হওয়ার পর আমি এয়ার ফিল্টারটি পরিবর্তন করেছি। সার্ভিস সেন্টার থেকে ওরা বলে একটি এয়ার ফিল্টার ৩৫০০-৪০০০ কিলোমিটার এরমধ্যে চেঞ্জ করা উচিত।

new suzuki gixxer

বাইকে মডিফাই বলতে আমি শুধু হ্যান্ডেল এ গ্রীপ লাগিয়েছি আরসিবি ব্র্যান্ডের এবং সিট কভার লাগিয়েছি জাস্ট, এছাড়া বলার মত আর কোন কিছুই চেঞ্জ করিনি। প্রথমেই বলি আমি একজন সাইলেন্ট রাইডার, সাইলেন্ট রাইডার এই জন্যই বললাম যে, কেউ আমাকে ওভারটেক করে গেল আমি তাকে ওভারটেক করব বা রাস্তায় রেস করব এরকম রাইডার আমি না।

ওভার স্পিডে আমি গাড়ি চালাই না, আমি নিজেকে সব সময় সংযত রেখে গাড়ি চালাই। আমি আমার জিক্সার এর গতি সর্বোচ্চ ১০০ পর্যন্ত গতি তুলেছিলাম এর বেশি গতি তোলার চেষ্টা করিনি।

New Suzuki Gixxer বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • লুক আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লাগে ।
  • গাড়ির সেলফ যথেষ্ট ভালো সেলফ একবারও ফল করে নাই আমার হাতে ।
  • বাইকটির হেডলাইট আমার যথেষ্ট পছন্দের, এবং লাইটের আলো বেশ পাওয়ারফুল মনে হয়েছে আমার কাছে, লোকাল
  • রোডে চললে লো বিমের আলোই যথেষ্ট।
  • বাইকের সেটিং পজিশনটাও বেশ ভালো লাগছে আমার কাছে।
  • কন্ট্রোলিং খুব ভালো মনে হয়েছে ।
  • থ্রটল রেস্পন্স যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে ।

New Suzuki Gixxer বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • প্রথম অবস্থায় ৩০-৪০ মিনিট চললেই ইঞ্জিন খুব হিট হয়। ইঞ্জিনের সাউন্ড চেঞ্জ হয়ে যায়।
  • পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে হাতে প্রচুর ব্যথা হয়, কারণ পিলিয়নের ভর রাইডারের উপর চলে আসে।
  • আমার কাছে গিয়ারবক্সটা একটু হার্ড মনে হয়েছে গিয়ার দিলে একটা শব্দ হয় শব্দটা বেশ টের পাওয়া যায় আর কি।
  • তিন চার নম্বর গিয়ারে গাড়ির শক্তিটা বেশ কম মনে হয়েছে আমার কাছে।
  • পিলিয়ন নিয়ে রাইড করলে অনেক সময় বড় বড় স্পিড ব্রেকারের সাথে নিচে বারি খায়।

জিক্সার নিয়ে লং রাইড বলতে গেলে বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ গিয়েছিলাম , বাইকটি কেনার প্রথম অবস্থাতেই আমি এই রাইড দিয়েছিলাম। তখন আমার আরপিএম লক ছিল ৫০ এর উপরে গাড়ির গতি উঠাই নাই। রাস্তায় কোন ধরনের প্রবলেম ফিল করি নাই। বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ যেতে আমার প্রায় দুই ঘন্টার মত সময় লাগছিল তাতে আমি শুধু একবারই গাড়ি ব্রেক দিছিলাম ১০-১৫ মিনিটের মত। এবং কন্ট্রোলিংও বেশ ভালো ছিল।

new suzuki gixxer

বাইকটি নিয়ে আমার তেমন কোন অবজেকশন নাই, অভারল দিক বিবেচনা করে আমার কাছে বেশ ভালই মনে হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত ৫ হাজার কিলোমিটারের উপরে চালিয়েছি, আমি মেজর কোন প্রবলেম ফিল করি নাই। প্রথমের দিকে ইঞ্জিন ওভার হিটিং এর একটা ইস্যু ছিল, ৩০-৪০ মিনিট রাইড করার পর ইঞ্জিন হিট হয়ে যেত ইঞ্জিনের সাউন্ড চেঞ্জ হয়ে যেত ।

এই একটা ইস্যু ছাড়া আমি আমার জিক্সার এ তেমন কোন বড় প্রবলেম ফেস করি নাই। এবং আমার কাছে মনে হয় এটা তেমন কোনো ইস্যুই না ৪০০০ কিলোমিটার হওয়ার পর আমি এই প্রবলেমটা তেমন একটা ফিল করি নাই, ইঞ্জিন ওভার হিটিং ইস্যুটা অনেক কমে গেছে। তো সবমিলে আমি বলতে চাই এক হাতে চালালে এবং নিয়ম মেনে চালালে এটা বেস্ট একটা বাইক । ধন্যবাদ ।

 

লিখেছেনঃ মোঃ মাসুদ রানা
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।