Lifan KPR 165R Carb ৪০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ -পারভেজ

This page was last updated on 13-Jul-2024 02:49pm , By Raihan Opu Bangla

আমি পারভেজ। ঢাকার মিরপুরে আমার বসবাস। বিএসসি ইন্জিনিয়ারিং শেষ করেছি টেক্সটাইল এর উপর। পেশায় একজন মার্চেন্ডাইজার। আশুলিয়ায় একটি পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরত আছি। আজ আমি আমার রাইড করা Lifan KPR 165R Carb বাইকটি নিয়ে কিছু কথা আপনাদের শেয়ার করব।

Lifan KPR 165R Carb ৪০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ -পারভেজ

lifan kpr 165r carb user with bilmola helmet

 বাইক অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতাম। সঠিক ভাবে বলা সম্ভব না কখন থেকে, হয়ত যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই। কারণটা একেবারেই পরিষ্কার আর সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা। স্বাধীনচেতা মানুষ আমি, স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে ভালবাসি। বাইকে বসলে পরাধীনতার শিকলটা মনে হয় একাই শরীর থেকে ঝরে পরে যায়, নিজেকে অনেক বেশি হালকা মনে হয়। প্রথম বাইক চালিয়েছিলাম খুব সম্ভবত ২০০৬-০৭ সালে।

বাইক ছিল ইয়ামাহার খুব সম্ভবত ১০০ সিসির কোন একটা বাইক। মডেল সম্বন্ধে তখন কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না তাই বলতে পারছি না। কাকার কাছ থেকে সেদিন শিখেছিলাম বাইকের কোনটা কি, কিভাবে বাইক চালাতে হয়। যেহেতু সাইকেল চালাতে পারতাম তাই খুব বেশি সময় লাগেনি বাইক চালানো শিখতে। আমি তো খুব খুশি সেদিন বাইক চালানো শিখে। অতঃপর বাইক কেনার স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। যেহেতু মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম এবং বেড়ে উঠা তাই সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। আম্মুর বাইক চলানো পছন্দ না, ভয় পায় তাই পরিবারের কাছে কখনও দাবি করতে পারিনি।

kpr 165r carb black red new bike

অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি। ২০১৯ সালে এসে বন্ধু ও ছোট ভাই কয়েকজনের বাইক হয়ে যায়। মধ্যবিত্তের কিছু থাকুক আর নাই থাকুক মাথা উচু করে থাকতে চায় তারা। আমিও তার বাইরে নই। কখনও কারও কাছ থেকে চাইতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। বাইক কেনার ইচ্ছা তীব্র হতে থাকে। ঐ সময়ই যোগ হয় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বাইক কেনার তীব্র  আকাঙ্খা আমাকে এবার ভালোভাবে পেয়ে বসে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাইক নিয়ে গবেষনা চালাতে থাকি। চোখ খুললেও বাইক চোখ বন্ধ করলেও বাইক দেখতে থাকি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আর অপেক্ষা সম্ভব না, প্রয়োজন হলে লোন করব কিন্তু বাইক আমার এখনই লাগবে। নিজের কিছু টাকা আর কিছু টাকা লোন করে ২০১৯ সালের ৬ই নভেম্বর কিনে ফেলি সেই দীর্ঘ প্রতিক্ষিত স্বপ্নের বাইক। 

kpr 165r carb user selfie

Lifan KPR 165R Carb বাইকটি কিনি গিয়ার এক্সের শোরুম থেকে। বাইকের দাম ১লাখ ৯৯ হাজার। কাগজ করার জন্য দিয়েছিলাম ১৫৫০০ টাকা। খুবই কাকতালীয় ভাবে সেদিন দেখা হয়ে যায় বাংলাদেশে লিফান বাইকের অথোরাইজড ডিলার ও ইম্পোর্টার রাসেল ইন্ডাজট্রিজ-এর মালিক রাসেল ভাইয়ের সাথে। বাইক কেনার কিছুদিন আগেই এক ছোট ভাই এড করে দিন ক্লাব কেপিআর বাংলাদেশ। সেখান থেকেই এই মানুষটাকে ভালো লাগার শুরু। মানুষটার চিন্তা ভাবনাই ব্যতিক্রমধর্মী। এই রকম একটা স্পেশাল দিনে মানুষটার সাথে দেখা হয়ে খুবই ভালোলাগে।

যদিও পছন্দ ছিল সুজুকির জিক্সার এসএফ, কিন্তু পরে কিনি Lifan KPR 165 Carb ভার্সন। বাইকটি ৪০০০ কিলোমিটার রাইডের পর আমার দেখা বাইকটার কিছু ভাল ও খারাপ দিক নিচে তুলে ধরা হল। 

kpr 165r carb speedometer

বাইকটিরকিছুভালোদিক-

  • এর অসাধারণ লুকস। কেপিআর এর লুকস নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই।
  • বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট ভাল।
  • আমার দেখা অন্যতম সুন্দর হেডলাইট। বিশেষ পার্কিং লাইটার লুকস কেপিআর - কে অন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। তার পাশাপাশি কেপিআর এর প্রজেকশন হেডলাইটের আলো রাতে চলার পথে অন্যরকম আস্থা যোগায়।
  • স্মুথ গিয়ার শিফটিং। মাঝে মাঝে বুঝতেও পারি না গিয়ার শিফট হয়েছে নাকি হয়নি।
  • র পাওয়ার। যদিও বা ১৬৫ সি সি কার্ব ইন্জিনে স্মুথনেস বাড়াতে গিয়ে র পাওয়ার কিছুটা কমেছে। তবুও এখনও যে কাউকে প্রতিযোগীতা ছুড়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
  • ইন্জিন স্মুথনেস। হাই আরপিএম - এ একটা স্পোর্টস বাইক কতটা স্মুথ থাকতে পারে তার একটি আদর্শ উদাহরণ কেপিআর ১৬৫ কার্ব।
  • ৩০০ মিমি এর ফ্রন্ট ডিস্ক চলার পথে অন্যরকম একটা আস্থা যোগ করে।
  • অয়েল কুলড ইন্জিন যা আপনাকে লং রাইডে অনেক বেশি সাপোর্ট দিবে।
  • সিট অনেক কমফোর্টেবল। আর তাছাড়া পিলিয়ন সিট এর সাথে গ্রেব রেইল পিলিয়ন নিয়ে চলার সময় সাপোর্ট দেয়।

Lifan KPR165R NBF2 Test Ride Review


বাইকটির কিছু খারাপ দিক-

  • বাইকটার ওজন একটু বেশি (১৫২ কেজি)। যদিও হাইওয়ে রাইডে এই ওজন আপনাকে অনেক সাপোর্ট দিবে, কিন্তু নতুন অবস্থায় সিটি রাইডে একটু সমস্যার সম্মুখিন হওয়া লাগতে পারে।
  • বাইকটার মাইলেজ। বাইকটার মাইলেজ আমি ব্রেক ইন পিরিয়ডে (আমি ১০০০ কিলোমিটার মেইন্টেইন করেছি) পেয়েছি ২৩-২৪ কিলোমিটার প্রতি লিটার আর এখন পাচ্ছি ২৯ - ৩০কিলোমিটার প্রতি লিটার। আমি এখনকার মাইলেজে সন্তুষ্ট, অনেকে নাও হতে পারেন। যদিও ইএফআই ভার্সনের মাইলেজ ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার।
  • যেহেতু স্পোর্টস বাইক, বাইকটার টার্নিং রেডিয়াস কিছুটা কম। কিছুদিন চালানোর পর যা আপনার আর উপলব্ধি হবে না।
  • মনোশক সাসপেন্সনের পারফর্মেন্স পছন্দ হয়নি। লং রাইডে পিলিয়ন থাকলে এটা আপনাকে ভোগাবে।
  • ক্লাচ হার্ড। ১৬৫ সিসির নতুন এই মডেলে রিফায়িন হয়ে আসলেও এখনও আমার কাছে হার্ড মনে হয়।
  • রেয়ার ডিস্ক ব্রেকের পারফর্মেন্স নিয়ে যদিও কাউকে অভিযোগ করতে শুনিনি কিন্তু আমার ভালো লাগেনি। কিন্তু সামনের ব্রেক এতই ভালো সাপোর্ট দেয় যে পেছনের ব্রেক কাজ না করলেও সমস্যা হয়না।
  • যদিও বাইকটার লুকস খুবই সুন্দর তবুও পিছনের সিটটার কারণে লুকসটা আমার কাছে অসম্পূর্ণ মনে হয়।

বাইকটির ভাল দিকগুলো আমার নজর কাড়ে। যার ফলে সিদ্ধান্ত বদলে কেপিআর ১৬৫ কার্বে শিফট করি। 

kpr 165r carb with user side view

বাইকটি কেনার পর থেকে আমি ২৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পেট্রোনাস 20W40 মিনারেল ইন্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। আর তারপর থেকে পেট্রোনাস 10W40 সেমি সিন্থেটিক ইন্জিন অয়েল ব্যবহার করছি। ইন্জিন অয়েল লাগে ১২০০ এমএল। ইন্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি যথাক্রমে ১০৫ কিলোমিটার, ৪৫০কিলোমিটার, ১০৫০কিলোমিটার, ১৯০০কিলোমিটার, ২৭০০কিলোমিটার এবং ৩৮০০কিলোমিটার। Lifan KPR 165R Carb এখন পর্যন্ত লং ট্যুরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। কাছাকাছি যেমন টাঙ্গাইল, সিরাজগন্জ, ময়মনসিংহ যাওয়া হয়েছে। তবে একদিনে টানা ২৮০+ কিলোমিটার রাইড করা হয়েছে। আমি নিরাশ হয়নি। হাইওয়ে তে উঠলে কেপিআর এর আসল রুপ দেখা যায় যা রাইড করা ছাড়া বোঝা সম্ভব না। এখন পর্যন্ত টপ স্পিড পেয়েছি ১৩২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। 

lifan kpr 165r carb user with helmet

পরিশেষে বলতে চাই সব বাইকের মত এই বাইকেরও কিছু খারাপ দিক অবশ্যই আছে তবুও এই দামের মধ্যে আমার মতে এটা সেরা বাইক। এটার পারফর্মেন্স নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর বেশিদিন টেকসই হবে কিনা তার ব্যাপারে যদি বলি তাহলে বলব Lifan KPR 165R Carb বাংলাদেশে আসছে বেশিদিন হয়নি মাত্র এক বছর। কিন্তু কেপিআর ১৫০ সিসি ইতোমধ্যে জানান দিয়েছে তার লং লাস্টিং ক্ষমতার ব্যাপারে। সুতরাং ভরসা করাই যায়। সবার জন্য কিছু কথা, অবশ্যই হেলমেট পরে বাইক চালাবেন। সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করবেন। নিজের এবং বাইকের ক্ষমতার উর্ধ্বে গিয়ে বাইক চালানোর চেষ্টা করবেন না। সম্ভব হলে হেলমেটের সাথে সাথে অন্যান্য সেফটি গিয়ার গুলোও ব্যবহার করবেন। ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ পারভেজ

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।