Lifan KPR 165R Carb ২০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - হাবিব উদ্দিন
This page was last updated on 13-Jul-2024 02:37pm , By Ashik Mahmud Bangla
আমি হাবিব উদ্দিন । বর্তমানে আমি সিলেট থাকি । আজ আমি আমার বর্তমানে ব্যাবহার করা Lifan KPR 165R Carb বাইকটি নিয়ে পথ চলার কিছু গল্প শেয়ার করবো । আমি বর্তমানে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকেটিং এবং রিজারভেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত আছি।
আমি বর্তমান Lifan KPR 165R Carb বাইকটি মাত্র ২ হাজার কিলোমিটার রাইড করলেও আমি আরো আগে থেকেই লিফান ব্যবহার করছি । আমার জীবনের প্রথম বাইক Lifan KP V2। স্বাভাবিক সবার মত আমারও বাইকের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা ছিল , কিন্তু আমি কখনো চিন্তা করিনি আমার নিজেরও একটা বাইক হবে। কারন আমি এটা নিয়ে কখনো স্বপ্ন দেখতাম না। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হিসেবে এরকম একটা স্বপ্ন দেখার সময় ও ছিলনা । আমার মটোজিপি এর রেস গুলো দেখে অনেক ভালো লাগে । অনেক সময় অফিসে কাজ কম থাকলে ইউটিউবে মটোজিপি দেখতাম । আর এই মটোজিপি থেকেই হোন্ডা র্যাপসল আমার অনেক ভালো লাগে। আর তার চালক মার্ক মারকুয়েজ কে অনেক ভালো লাগতো । এখনো যদি কোন রেপসল আমার পাশ থেকে যায় খুব ভালো লাগে । ২০১৭ সালের দিকে আমার অফিসের কলিগ আমার এক ছোট ভাই Lifan KP V2 বাইকটি ক্রয় করে। তাই মাঝে মাঝে বাইকটি চালাতাম ভালোই লাগতো। ওই বছর ঈদের ছুটিতে যখন বাড়ি যাবো তখন ভাবতেছিলাম যদি আমারো একটি বাইক থাকতো তাহলে ঈদের ছুটিতে বন্ধুরা মিলে ঘুরতে পারতাম ।
Lifan KPR 165R Carb Price In Bangladesh
মাঝে মাঝে ওই ছোট ভাইর সাথে মজা করে বলতাম তোর বাইক আমার কাছে বিক্রি কর। ও বলতো ভাই নিয়ে নিন। ঈদের আগে যেদিন বাড়িতে চলে যাবো সেদিন ওকে বললাম সত্যি সত্যি বাইক বিক্রি করবি কিনা, ও বললো ভাই টাকা দিয়ে নিয়ে বাইক নিয়ে নিয়ে নিন। আমি ওকে টাকা দিয়ে দিলাম আর বাইক নিয়ে নিলাম, তখন বাইকের পেপার্স হয়নি। ও বাইকটি ইনেস্টলমেন্ট এ নিয়েছিল। কথা ছিল বাকি ইনেস্টলমেন্ট এর টাকা আমি দিয়ে দিবো ।
বাইকের মালিক হয়ে গেলাম, তখন খুব অসাধারন লাগতেছিল। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসলাম, ছুটি শেষে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করলাম। ওই সময়টা অসাধারন ছিল বলে বুঝানো সম্ভব নয় । অফিসে যাওয়ার পর শুরু হল নতুন সমস্যা যার কাছ থেকে বাইক নিয়েছিলাম ও বললো ভাই আমি বাইক ছাড়া চলতে পারতেছিনা। বাইক ফেরত চাইলো । কিছুদিন পর ভেবে চিন্তে বাইক ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে নিলাম । যেহেতু একবার বাইক কিনে ফেলেছি এবার আর বাইক ছাড়া ভালো লাগেনা । লিফানের শো-রুম আমার অফিসের সামনেই ছিল তাই প্রায়ই ওখানে যেতাম । চিন্তা করলাম আমি Lifan KP V2 বাইকটি কিনবো । শো-রুমে গিয়ে জানতে পারলাম KP V2 বাইকটি ওখানে নেই । আর আসার সম্ভাবনাও কম । তখন মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল । শো-রুমের ম্যানেজার আমাকে বললো Lifan KPR 150 V2 বাইকটি নিতে । একই ইঞ্জিন কিন্তু আমার নেকেড বাইক ভালো লাগতো। তাই আমি কেপিয়ার নিতে চাইনি । একদিন আমার ভাইকে সাথে নিয়ে শো-রুমে গেলাম, তার কেপিয়ার খুব পছন্দ হলো এবং আমাকে কিনতে বললো । এরপর শুরু হলো রিভিউ দেখা Bikebd এর KPR 150 বাইক রিভিউ যে কতবার দেখেছি তার কোন হিসেব নেই । অনেক ভাবনা চিন্তার পর KPR 150 V2 বাইকটি কেনার সিদ্ধান্ত নেই। দিনটি ছিল সোম বার ৮ জানুয়ারি ২০১৮। সকাল ৯ টায় শো-রুমে গিয়ে লাল কালারের বাইকটা পছন্দ করে অফিসে গেলাম । কিছুক্ষন পরে বাইক নিতে আসলাম তখন যে আনন্দ লাগতেছিল ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় । টেস্ট রাইড দিলাম যেহেতু কেপিয়ার একটু সামনের দিকে ঝুকে চালাতে হয় তাই একটু কষ্ট হচ্ছিল চালাতে ।
আসলে গল্পটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে । শুরু থেকে শুরু করতেছি তাই এত বড় হয়ে যাচ্ছে । প্রথম ২০০০ কিলোমিটার খুব সাবধানতার সাথে ব্রেকিং করেছি । যদিও Lifan KPR 165R Carb এর রিভিউ কিন্তু আমি আগেই বলেছি লিফান এর সাথে আমার আগে থেকেই সম্পর্ক তাই KPR 150 চলে আসে । Lifan KPR 150 14,000 হাজার কিলোমিটার চালানোর পরে টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করে দেই । আর মনে মনে চিন্তা করি কেপিয়ার এর ABS ভার্সন নিবো । ABS ভার্সন এখনো বাংলাদেশে আসেনি । কখন আসবে তাও সঠিক সংবাদ নেই । তাই এত দিন অপেক্ষা করা সম্ভব ছিলনা । তাই KPR 150 বিক্রি করার ৬ মাস পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ Lifan KPR 165R Carb কিনি । তারপর থেকে শুরু হলো নতুন করে পথচলা । যেহেতু আমি এর আগেও কেপিয়ার ব্যবহার করেছি । তাই KPR 165R Carb নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন সমস্যায় পরতে হয়নি । লকডাউন থাকার কারনে অনেক সময় লেগে যায় ২০০০ কিলোমিটার শেষ করতে । লিফান চায়না ব্রান্ড হওয়া স্বতেও আমি পূনরায় কেপিয়ার কিনতে ইচ্ছে হয়নি। যদিও আমার বন্ধুরা বা বড় ভাইরা সবাই নিষেধ করেছিল না কিনার জন্য কিন্তু আমি কারো কথা না শুনে একই কাজ করি কারন এর পার্ফরমেন্স ছিল অসাধারন । যাদের ব্রান্ড নিয়ে সমস্যা আছে তারা চায়না ব্রান্ড নিয়ে অনেক কথা বলেন তবে তাদের জন্য আমি বলবো আগে যাচাই করুন তারপর মন্তব্য করুন । বাইকের পার্ফরমেন্স আগে তারপরে হচ্ছে ব্রান্ড ।
Click To See Lifan KPR165R NBF2 Test Ride Review
বাইকটিতেআছে -
- ১৬৫ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
- লিকুইড কুলিং সিস্টেম
- ডুয়াল ডিক্স
- পাওয়ারফুল প্রজেকশন হেডলাইট
- 17 NM torque এবং 17 BHP
- টিউবলেস টায়ার
- ৬ টি গিয়ার
- ১৭ লিটার আয়তনবিশিষ্ট ফুয়েল ট্যাংক
- সামনের টায়ার ৯০-৯০-১৭
- পেছনের টায়ার ১৩০-৮০-১৭
সার্ভিসিং - লকডাউন থাকার কারনে আমি এখনো কোন সার্ভিসিং করাতে পারিনি। আর বাইক আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ ভালোই চলছে । কিছু কিছু কাজ আমি নিজেই করে ফেলি। তাই এখন পর্যন্ত চালাতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা । তবে লিফান থেকে ৮ টি ফ্রি সার্ভিস এবং ২ বছর বা ২০ হাজার কিলোমিটার ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি দেওয়া হয় । মাইলেজ - যেহেতু ব্রেকিং পিরিয়ড এ ছিলাম তাই মাইলেজ চেক করা হয়নি। কারন এই সময় ফুয়েল একটু বেশি খরচ হয়। তাছাড়া মাইলেজ নিয়ে আমার তেমন একটা মাথা ব্যাথা নেই। ১৬৫ সিসি ইঞ্জিনে অন্য বাইকের তুলনা মাইলেজ একটু কম হবে এটা স্বাভাবিক । ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিং - আবার কেপিআর কেনার একটা বড় কারন ছিল এর ব্রেকিং এবং টপ স্পিড কন্ট্রোলিং। অসাধারন ব্রেকিং যা হাই স্পিডে থাকা অবস্থায় বাইক খুব সহজে কন্ট্রোল করা যায়। বাইকের এত ওজন হওয়া স্বত্ত্বেও কখনো কন্ট্রোলিং এ সমস্যা মনে হয়নি ।
Lifan Bike Price In Bangladesh
বাইকের যত্ন এবং মেইন্টেনেন্স - আপনি কোন ব্রান্ড এর বাইক চালান সেটা বড় কথা নয় কারন বড় কথা হচ্ছে আপনি বাইকের কিভেবে যত্ন নিচ্ছেন । আমি নিজে যখন বাইক পরিস্কার করি তখন ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে । আমি সবসময় চাই বাইকে যেহেতু কোন ময়লা না থাকে । আমি সবসময় চাই যখন বাইক নিয়ে বের হবো মানুষ দেখে ভাবুক বাইক হয়তো ২ - ৩ দিন আগে শো-রুম থেকে বের হয়েছে । ক্লাচ এডজাসমেন্ট, চেইন টাইট, চেইন ক্লিন, চেইন লুব, ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ, অয়েল ফিল্টার ক্লিন এরকম অনেক কাজ আমি নিজেই করতে পছন্দ করি । ইঞ্জিন অয়েল - শুরু থেকেই আমি আমার বাইকে পেট্রনাস 10w40 সেমি-সেন্থেটিক ব্যবহার করতেছি । প্রথম দিকে মিনারেল ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে শুরু থেকে সেমি - সেন্থেটিক ব্যবহার করছি। প্রথমে ১৫০ কিলোমিটার চলার পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । এরপরে ৫০০ কিলোমিটার, এরপরে ৯০০ কিলোমিটার, এরপরে ১৪০০ কিলোমিটার, এরপরে ২০০০ কিলোমিটার এ ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । ইঞ্জিন অয়েল হচ্ছে অনেক প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, যা আমরা বাইক কেনার পরে অনেকেই অবহেলা করি এবং পরে আমাদের বাইকের পার্ফরমেন্স কমে যায়। আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারি অনেকে তার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড বলতে পারবেনা । সবসময় কোম্পানির রিকমেন্ড ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিৎ। আপনার বাইকের রিকমেন্ড গ্রেড অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন । তবে বার বার ব্রান্ড পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকুন। 1200 ml ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি । ফুয়েল হিসেবে সবসময় অকটেন ব্যবহার করি । আমি সবসময় এক পাম্প থেকে ফুয়েল নেই ।
মডিফিকেশন- এই পর্যন্ত কোন মডিফিকেশন করিনি তবে ইচ্ছে আছে পালসার ১৩৫ এর ইন্ডিকেটর লাগাবো । আমার আগের লিফান কেপিআর ১৫০ তে লাগানো ছিল । টপস্পিড - যেহেতু ব্রেকিং পিরিয়ড ছিল তাই টপ চেক করা হয়নি। আর এখন গ্রামের বাড়িতে আছি ওইভাবে টপ চেক করার রাস্তা নেই । তবে আমি আশাকরি ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা টপ পাবো।
বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- ১৬৫ সিসি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
- প্রজেকশন হেডলাইট এর আলো যথেষ্ট ভালো
- সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেল পজিশন বেশ ভালো লাগে
- সামনের চাকাইয় ৩০০ এমএম ডিক্স ব্রেক থাকায় অল্প জায়গার মধ্যে বাইক থামানো যায়
- লিকুয়িড কুল ইঞ্জিন হওয়ায় পার্ফরমেন্স কখনো ড্রপ করেনি
- ওয়েট বেশি হওয়ায় কনফিডেন্স বেশি পাওয়া যায়
বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- পেছনের মনোশক ভালো লাগেনি
- টারনিং রেডিয়াস বেশি
- চেইন খুব তাড়াতারি লুজ হয়ে যায়
- ভেজা রাস্তায় টায়ার এর পার্ফরমেন্স কম
- সিটি রাইড হিটিং ইস্যু
সবশেষে, চায়না বেশি দিন যায়না কথাটি মিথ্যা প্রমান করার জন্য একটা কেপিআর ই যথেষ্ট। অনেক বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে কেপিআর নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ্ কেপিআর নিয়ে অনেক ভালো আছি। নিজের মত করে মনের ভাব প্রকাশ করলাম । কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । সবাই একটি ভালো মানের হেলমেট পরিধান করে বাইক চালাবেন । ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ মোঃ হাবিব উদ্দিন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।