Lifan KPR 150 V2 ৪০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সৌরভ
This page was last updated on 02-Jul-2024 07:59am , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ সৌরভ ইসলাম । আমার বয়স 30 বছর, বাসা দিনাজপুর সদর । আমি আমার ব্যবহার করা Lifan KPR 150 V2 বাইকটি ৪০,০০০ কিলোমিটার রাইড করার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
Lifan KPR 150 V2 ৪০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ
আমি যখন ২০০৫ সালে ক্লাস ৮ পাস করি, এরপর আর টাকার অভাবে বাবা পড়ালেখা করাতে পারলো না । তখন বাবা আমাকে ট্রাকটার এর গ্যারেজে কাজ শেখার জন্য দিলো । আমি যেই গ্যারেজে কাজ শিখতাম ওই গ্যারেজ মালিকের ছিলো হোন্ডা ১১০ সিসি ফোর স্টোর্ক বাইক । গ্যারেজের সামনে ছিল ফাঁকা মাঠ সেই মাঠে বাইক চালানো শেখার জন্যা নিয়ে যেতাম। সপ্তাহে পেতাম তখন মাএ ১০ টাকা সেই ১০ টাকার সাথে আরো ১০ বা ১৫ টাকা দিয়ে পেট্রোল ঢুকিয়ে বাইক চালানো শিখতাম ।
আস্তে আস্তে একাই শিখে গেলাম বাইক চালানো, তখন ভাবতাম কখন নিজে ইনকাম করে একটা বাইক নিবো। ভাবতে ভাবতে ৫ বছর কেটে গেল ১০-২০ টাকা করে জমিয়ে ঘরে লুকিয়ে রাখতাম এরপর ট্রাকটারের কাজ যখন সম্পূর্ন শিখে গেলাম তখন আমি নিজেই গ্যারেজ বাদ দিয়ে আইসার ট্রাকটার মেটাল প্লাস কম্পানিতে যোগদান করলাম ।
২০১০সালে ১ নভেম্বর , তখন আমার বেতন ছিলো ৫,৫০০ টাকা । তখন আমার একটাই ইচ্ছা নিজের ইনকামে একটি বাইক ক্রয় করবো । এভাবে আরো ২ বছর কেটে গেল। আমার জীবনের প্রথম বাইক ক্রয় করি ২০১২ সালে Bajaj CT 100 নিজের ইনকাম এর ৭৫,০০০ টাকা দিয়ে । ২ বছর চালিয়ে বাইকটা বিক্রি করে Hero Honda CD Deluxe 100 cc বাইকটি ক্রয় করে ২ বছর রাইড করে Hero Honda Glamaur 125 cc বাইকটি ক্রয় করি । এর মধ্যে একটি Bajaj Pulsar 150 ক্রয় করে ৬ মাস রাইড করি । ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্রয় করলাম আমার পঞ্চম তম বাইক Lifan Bike কোম্পানির Lifan KPR 150 V2 ।
আমি ছোট থেকেই বাইকের প্রতি দূর্বল ছিলাম । বাইক দিয়ে অল্প সময়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে দ্রুত যাওয়া যায়। আমি চতুর্থতম বাইক হিরো হোন্ডা গ্লামার বাইকটি যখন ব্যবহার করতাম তখন ভাবতাম 150cc সেগমেন্ট এর কোন বাইক টা নেওয়া যায় ! তখন ইউটিউবে বাইকবিডির শুভ্র সেন ভাইয়ের Lifan KPR 150 বাইকটির রিভিউ দেখি । বাইকটার রিভিউ দেখে সেকেন্ড হ্যান্ড কেপিআর বাইক খোজা শুরু করলাম ।
খুজতে খুজতে অবশেষে Lifan KPR 150 V2 একটি বাইক পেয়ে গেলাম রংপুরের শোরুমে। কেপিআর বাইকটির লুক, দামে কম , রেডি পিকআপ , মাইলেজ , ব্যালেন্স এসব দিক বিবেচনা করে আমি Lifan KPR 150 V2 বাইকটি ক্রয় করি।
বাইকটি আমি ১,২০,০০০ টাকায় ক্রয় করি । বাইকটি ক্রয় করার দিন এক বড় ভাইকে নিয়ে যাই বড় ভাই ৩ টা কেপিআরবাইক ব্যবহার করেছে । বাইটি প্রথম রাইড দিয়ে অনেক ভালো লাগে , ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এর একটি স্পোর্টস বাইক ক্রয় করতে পারার এই অনুভূতি আসলে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । বাইকটি চালানোর কারন চায়না ব্রান্ড হওয়া সত্বেও অন্যান্য বাইকে সাথে এর পার্টস মিলে যায় এবং স্পোর্টস সেগমেন্ট হওয়া সত্তেও মাইলেজ বেশ ভালো পাওয়া যায় ।
মিটার ফুল ডিজিটাল না হওয়া সত্বেও চাবির সুইচ যখন অন করি ডিস্প্লে অন হয়ে মিটারের কাটা যখন ঘুরে আসে তখন খুব ভাল লাগে এবং বাইকটির লুক অনেক সুন্দর লাগে। আমার বাইকে বেশ কয়েকবার সার্ভিস করেছি লোকাল গ্যারেজ থেকে। আমি আমার বাইকের মাইলেজ পাই ৪৫+ । বাইকটি আমি প্রতি সপ্তাহে ওয়াস করি সকালে স্টার্ট করার আগে চেইন লুজ আছে কিনা রেডিওটরে কুলেন্ট আছে কিনা ইন্জিন ওয়েল ঠিক আছে কিনা চেক করি।
ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে আমি মটুল 20w40 গ্রেডের মিনারেল ইন্জিন অয়েল ব্যাবহার করি এবং ১০০০ কিলোমিটার পর পর ইন্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । মটুল মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলটির দাম ৬০০ টাকা । আমার বাইকটি ৪০,০০০ কিলোমিটার চলতেছে এই ৪০ হাজার কিলোমিটার রাইডের মধ্যে চেইন স্পোকেট দুইবার, সামনের ব্রেক সু একবার, পিছনের ব্রেক সু একবার, হেনডেলের বল রেসার একবার, এয়ার ফিল্টার ৪ বার পরিবর্তন করেছি ।
আমি আমার বাইকে টপ স্পিড চেক করিনি তবে ৫ গিয়ারে ১২৬ পর্যন্ত স্পিড তুলতে পেরেছি । টপ স্পিডে বাইকটির ব্রেকিং এবং ব্যালেন্সিং খুব ভালো পেয়েছি । বাইকটি খুব দ্রুত ১০০+ স্পিড তুলতে সক্ষম ।
Lifan KPR 150 V2 বাইকের কিছু ভাল দিক-
- লুক
- মাইলেজ
- রেডি পিকাপ
- ব্যালেন্স
- লিকুইড কুল ইঞ্জিন
Lifan KPR 150 V2 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- টার্নিং রেডিয়াস কম
- স্টক মনোসক হার্ড
- গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ভালো নাহ
- দ্রুত চেইন লুস হয়ে যায়
- সিটি রাইডে হিটিং ইস্যু রয়েছে
বাইকটি দিয়ে আমি একদিনে ৩০০ কিলোমিটার রাইড করি দিনাজপুর টু নওগাঁ কুসুম্বা মসজিদ পর্যন্ত। সব দিক বিবেচনায় ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এর মধ্যে বাজেট অনুযায়ী বাইকটি বেশ ভালো । বাইকটির ব্রান্ড চায়না হওয়া সত্বেও এর পার্ফরমেন্স খুব ভালো পাশাপাশি অন্য সব চায়না বাইকের মত পার্টস নিয়ে সমস্যায় পরতে হয়না । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোঃ সৌরভ ইসলাম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।