Lifan KPR 150 নিয়ে ঢাকা>কক্সবাজার>ঢাকাঃ ৮৫০ কিমিঃ ২৫ ঘণ্টা রাইড
This page was last updated on 04-Jul-2024 12:29pm , By Shuvo Bangla
অনেকদিন ধরেই বাইকে ট্যুর দেয়ার জন্য মন আনচান করছিল।যাব যাব করে সময় করতে পারছিলাম না। তাই চিন্তা করলাম ঈদের পরেই একটা ট্যুর দিয়ে দিব। ঈদের পর দুইদিন, তিনদিন, চারদিন চলে গেল কিন্তু ট্যুর দেয়া হল না। শরীরে কেমন জানি একটা আলসেমি ধরে গেছে। কোথায় যাব, কাকে নিয়ে যাব কিছুই ঠিক করতে পারছিলাম না।
Lifan KPR 150 নিয়ে ঢাকা>কক্সবাজার>ঢাকাঃ ৮৫০ কিমিঃ
২৪-০৭-২০১৫ (শুক্রবার) সকালে ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করলাম এভাবে আলসেমি করতে থাকলে ট্যুর দেয়া হবে না। ফেসবুকে ঢুকে ফ্রেন্ডস এবং বড় ভাইদের ট্যুরের ছবি দেখে শরীরের আলসেমি সব কেটে গেল। ঠিক করলাম আজকে ট্যুর দিয়েই দিব। যা থাকে কপালে। সাথে সাথে দেখি প্রিয় বন্ধু এবং আমার ট্যুরের বেস্ট পার্টনার মোর্শেদের কল। জানাল সে পল্টনে। বললাম তাড়াতাড়ি বাসায় চলে অ্যায়, ট্যুরে যাব, ফুল প্রিপারেশন নিয়ে আসিস। কোথায় যাব, কিভাবে যাব না জানতে চেয়েই বলল আসতেছি। যেহেতু সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল তাই দুইটা রেইনকোট সহ ব্যাগ গোছাতে লাগলাম।
এফজেডএস নিয়ে এর আগে বিছানাকান্দি, বগুড়া আরও অনেক জায়গায় গেছি।তাই ঠিক করলাম কেপিআরটা নিয়ে ট্যুরে যাব। কিন্তু কেপিআর কিছুক্ষন চালালেই শরীর ব্যাথা করে, এটা নিয়ে এত বড় ট্যুর কিভাবে দিব টা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। তার উপরে আমিই একমাত্র রাইডার। মোর্শেদ বাইক চালাতে পারে না। এর আগে সিলেট থেকে এফজেডএস নিয়ে টানা ২৩০ কিলো কোন বিরতি ছাড়াই আসছিলাম। ভাবলাম, নাহ আমি পারব ইনশাআল্লাহ।
দুপুরে জুম্মার নামাজ পড়ে ২ টার সময় আমি আর মোর্শেদ রওনা দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশে। শুরু হল আমাদের ট্যুর। ২০ মিনিট পরেই শুরু হল বৃষ্টি। আমরা রেইনকোট গুলো পরে নিলাম। আগে থেকেই প্ল্যান ছিল বৃষ্টি-বাদল যাই হোক, কোন বিরতি দিব না।এত বৃষ্টির মধ্যেও কেপিআরের ব্রেকিং আর ব্যালেন্স দেখে অবাক হয়ে গেলাম। একবারে থামলাম কুমিল্লা টিপরা বাজার গিয়ে। দুইজনে দুইপ্লেট চটপটি খেয়ে আবার রউনা দিলাম। অবিরাম বৃষ্টি চলছে। আমরা রেইনকোট পরা থাকলেও বৃষ্টি বাদ মানল না।রেইনকোটের ভেতরে পানি ঢুকে অনেক আগেই জামাকাপড় সব ভিজে গেছে।
ভেজাকাপড় চেঞ্জ করে অন্য জামাকাপড় পরবো তারও উপায় নেই, কারন বৃষ্টি এখনও চলছে। এরপর থামলাম চোদ্দগ্রাম গিয়ে। কলারুটি খেয়ে তাড়াতাড়ি রউনা দিলাম আবার। ফেনি পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে গেল। ঢাকা থেকে ফেনি আসা পর্যন্ত বৃষ্টির জন্য বাইকের স্পিড বেশি তুলতে পারিনি। তার উপরে রাস্তার যে বেহাল দশা। টানা বৃষ্টিতে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে নুরি পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর বড় বড় গর্ত তো আছেই। ফেনিতে ২০ মিনিটের একটা বিরতি নিলাম। রউনা দিলাম চিটাগাং এর উদ্দেশে। বৃষ্টি যেন থামতেই চায় না।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে চিটাগাং গিয়ে পৌছালাম। সারা শরীর ভিজে ঠকঠক করে কাপছে। পায়ের জুতা দুইটা ভিজে লোহার মত ওজন হয়ে আছে। একটা তেহারীর দোকানে তেহারি খেলাম। কেপিআররের সিটিং পজিশনের কারনে সারা শরীর অবশ হয়ে আছে। তারপরেও ক্ষান্ত হচ্ছি না। খেয়ে রউনা দিলাম নেভালের উদ্দেশে। চিটাগাং পৌঁছানোর পর বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে গেল। হেলমেটের গ্লাসে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আবার গ্লাস খুললে চোখে ব্যাথা লাগে। কোন রকমে বাইক চালাতে লাগলাম। নেভাল গিয়ে দেখি সব ঠাণ্ডা। কোন সাড়াশব্দ নেই।
দেরি না করে ওইখান থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রউনা দিলাম।অইদিন চিটাগাং শহরটা যে কত বড় টা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। রাত বারটার সময় আমরা চিটাগাং আমানত শাহ ব্রিজ ক্রস করলাম। সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব একটু বেশি তাই যতই সামনে এগচ্ছিলাম ততই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছিল। বৃষ্টির ফোটা রেইনকোটের উপর পড়া সত্তেও শরীরে ব্যাথা লাগছিল। সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কাকভেজা হয়ে আমাদের বাইক অনবরত চলছেই।
চিটাগাং থেকে কক্সবাজারের রাস্তাটা রাতের বেলা একটু নিরব এবং ভয়ঙ্করও বটে । তার উপরে আমরা বাইকে এবং অবিরার বৃষ্টি নামছে। মাথার মধ্যে অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু আমি বাইক চালিয়েই যাচ্ছি। সারা শরীর ব্যাথায় অবশ হয়ে যাচ্ছে। একটু পরে খেয়াল করলাম এতক্ষন রাস্তায় যাও দেখছিলাম এখন তাও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বাইক কোনভাবেই থামানো যাবে না কারন জায়গাটা নির্জন। শুধু রাস্তার মাঝখানের সাদা বিট অনুসরন করে বাইক চালাতে থাকলাম। ভুতুড়ে পরিবেশ, প্রচণ্ড বৃষ্টি, নির্জন রাস্তা এসবের মধ্য দিয়েই আমাদের যাত্রা চলতে থাকল। পথে অনেক প্যারানরমাল জিনিস দেখলাম যা এখানে না বলাটাই ঠিক হবে।
হাঁটু পানি, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা কোনকিছুই যেন পরোয়া করছি না। রাত ৪টায় আমরা কক্সবাজার কলাতলি গিয়ে পোঁছালাম। ১৪ ঘন্টা অলমোস্ট টানা বৃষ্টিতে বাইক চালানোর পরে আমরা শার্ক ফোয়ারার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল। বিশ্রাম দরকার খুব। বন্ধু মারুফকে কল দিলাম। বেচারা আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন জানি নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে গেছে। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবারের সাথে সাথে বিশ্রাম নিতে থাকলাম এবং আসায় থাকলাম কখন মারুফ কল দিবে। অপেক্ষা করতে করতে ভোর ৬টা বেজে গেল। চিন্তা করলাম নাহ, এভাবে বসে থাকলে হবে না। তাই ভেজা কাপড়েই আবার হিমছড়ির উদ্দেশে রউনা হলাম। ইচ্ছা ছিল পুরো ট্যুরের ছবি তুলব কিন্তু রেইনকোটের ভিতরে পানি ঢুকে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইলটা কুমিল্লা থাকতেই বন্ধ হয়ে গেছে।
হিমছড়ি যাবার পথে ডানে উত্তাল সমুদ্র আর বামে পাহাড়। টানা বৃষ্টিতে প্রকৃতি আরও সবুজসুন্দর হয়ে গেছে। সমুদ্র দেখে মনে হল ঢেউগুলো যেন মারামারি করছে। বৃষ্টির মধ্যে আমরা বাইক চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর হিমছড়ি থেকে এসে কক্সবাজার আরও একটু ঘুরলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সময় ৮টা । শরীর আর মানতে চাইছে না। কক্সবাজারে পরিচিত ৩ জনকে কল দিয়ে একজনকেও পেলাম না। হোটেলও ভাড়া করছি না কারন এত অল্প সময়ের জন্য হোটেল ভাড়া করা লস। তখন মোর্শেদ পরামর্শ দিল বিচে গিয়ে সীট ভাড়া করে রেস্ট নেয়ার জন্য।
বাইক নিয়ে সোজা বিচে চলে গেলাম। ইচ্ছা ছিল বাইক সীটের পাসে রেখেই ঘুমাব। একজন এসে জানালো বিচে বাইক আনা নিষেধ, একটু পরে পুলিশ আসলে ৫০০ টাকা জরিমানা করবে। বাধ্য হয়ে বিচের পাসে রাস্তায় বাইক পার্ক করে লক করলাম যাতে বিচের সিট থেকেই বাইকটা সরাসরি দেখা যায়। বিচে গিয়ে সীটের উপর আমার শরীর ছেঁড়ে দিলাম। সমুদ্রের ঢেউ আর বৃষ্টির পানির ছিটা মুখে লাগছিল তাই হেলমেট পড়েই ওই অবস্থাতেই ঘুম দিলাম। বন্ধুকে বললাম, আমাকে দুইটা ঘন্টা ঘুমাতে দিতে আর বাইকের দিকে খেয়াল রাখতে। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ত আমার।
সমুদ্রের উত্তাল গর্জন আর বৃষ্টির কারনে ১ ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারলাম না। ঠাণ্ডা বাতাসের কারনে আরও বেশি ঠাণ্ডা লাগতে লাগল।১৯ ঘন্টা ধরে ভিজা জামাকাপড় পরে আছি তাই চিন্তা করলাম এবার জামাকাপড় বদলানো দরকার। বিচের পাসে একটা ড্রেসিং রুম আছে। ওইখানে জামাকাপড় বদলাতে গিয়ে দেখি ব্যাগের জামাকাপড় সব ভিজে গেছে। খুজেটুজে যেগুলো কম ভিজেছে সেগুলো পড়ে মারুফকে শেষ বারের মত কল দিলাম ।
মারুফ ঘুমের মধ্যে কল ধরল সাথে সাথে আমাদের ওদের বাসায় যেতে বলল। মারুফ বেচারা ঘুমিয়ে যাওয়ায় অনেক লজ্জিত। ওদের বাসায় গিয়ে গরম পানি দিয়ে গোছল করলাম। গোছল করতে গিয়ে দেখি হাতের পশমের ছিদ্র দিয়ে বালুর কনা ঢুকে লাল হয়ে আছে এবং জায়গাগুলো অনেক জালাপোড়া করতেছে। গোছল শেষে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠলাম ১.৩০এর দিকে। উঠে দেখি এখনও বৃষ্টি পরছে এবং বন্ধু ইয়াসির আমাদের জন্য বসে আছে । এত ঘন্টা ধরে টানা বৃষ্টি আমি কখনও দেখি নাই। ওদেরকে জানালাম বাসায় ব্যাক করব। মারুফ কোনভাবেই রাজি না। ওকে কোনমতে বুঝালাম যে আজকে ব্যাক করাটা জরুরী। পরে ওর এক আত্মীয়ের বিয়ে খেয়ে দুপুর ৩টার দিকে রউনা দিলাম।
প্ল্যান ছিল কক্সবাজার পৌঁছে একটা ঘুম দিব এবং সকালে উঠে খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক যাব। তারপর ঢাকায় ব্যাক করব। কিন্তু তা আর করা গেল না। বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানো যে কি পরিমান কষ্টদায়ক তা এই ট্যুরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। ব্যাক করার সময় পায়ের মুজা খুলে পলিথিন পেচালাম এবং তা স্কচটেপ দিয়ে ভালভাবে পায়ের সাথে লাগালাম যেন কোনভাবেই পায়ের মধ্যে পানি না ঢুকে। ঠিক করলাম যেভাবেই হোক সন্ধার আগেই চিটাগাং পৌছাতে হবে।বৃষ্টির তীব্রতা গতকালের চাইতে আরও বেশি। রাস্তার আসে পাশের সব পুকুর পানি দিয়ে ভর্তি টিনের বাড়িগুলো অর্ধের পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে।
আমি বৃষ্টির মধ্যেই খুব জোরে বাইক চালাতে লাগলাম এবং আসেপাশের সব যানবাহনকে অভারটেক করতে থাকলাম। বাইকের ব্রেক এবং কন্ট্রলিং আমাকে ফুল সাপোর্ট দিতে থাকল। হঠাত খেয়াল করে দেখলাম বাইকে মবিলের সিগন্যাল দিচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে রউনা দেউয়ায় ঢাকা থেকে আসার সময় মবিল নিয়ে আসা হয়নাই। সঠিক গ্রেডের মবিল খুজতে খুজতে বেশ ভাল সময় চলে গেল কিন্ত পেলাম না, তাই অই অবস্থায় ই রউনা দিলাম। সন্ধার মধ্যে চিটাগাং চলে আসলাম। চিটাগাং শহরটা খুব ভাল ভাবে চিনিনা তাই কোনরকমে জিজ্ঞেস করতে করতে মবিল পেয়ে গেলাম। একটা মোটরসাইকেলের গ্যারেজে গিয়ে মবিল চেঞ্জ করলাম। মবিল চেঞ্জ করতে করতে কিছুটা রেস্ট নেয়া হয়ে গেছে। ক্ষুধা লেগে গেছে কিন্তু খেতে গেলে অনেক সময় চলে যাবে তাই ওই অবস্থাতেই রউনা দিলাম।
চিটাগাং থেকে একেবারে ফেনী মহিপাল গিয়ে থামলাম। একটা দোকানে গিয়ে কলা-রুটি আর চা খেলাম। ভারী খাবার খাওয়া যাবে না,খেলে পেট ব্যাথা করবে কারন রাস্তার অবস্থা ভাল না, জোরে চালালে অনেক ঝাকুনি লাগে। তাড়াতাড়ি রউনা দিলাম আবার। থামলাম আবার একবারে কুমিল্লা পার করে গৌরীপুরে। শরীর আর কাজ করছে না। আবার মাথায় টেনশন ও কাজ করছে কারন আমি একমাত্র রাইডার। যত যাই হোক বাইক আমাকেই চালাতে হবে। রাত তখন ১২টা বা ১২টার কিছু বেশি। চায়ের দোকানে থেমে চা খেলাম আর একটা কাপে গরম পানি নিয়ে সেই পানি জুতার ভিতরে ঢাললাম।
যে কোন উপায়ে নিজেকে রিলাক্স করার ট্রাই করছিলাম। ঢাকার উদ্দেশে রউনা দিলাম। ১১ঘন্টা বাইক রাইড করার পর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে রাত দুইটায় বাসায় গিয়ে পৌছালাম। নিজের বাসা দেখে এত খুশি মনেহয় কখনও লাগেনি। বাইকটার দিকে তাকিয়েও খুব শান্তি লাগল কারন রাস্তায় কোন ট্রাবল করেনি এবং খুব ভাল সার্ভিস দিয়েছে।
ঢাকা>কক্সবাজার>ঢাকা- প্রায় ৮৫০ কিলোমিটারের লংট্যুর শেষ করলাম। যেতে সময় লেগেছে ১৪ ঘন্টা আর আসতে ১১ ঘণ্টা, মোট ২৫ ঘন্টা। ট্যুরের অলমোস্ট পুরো সময়টাতেই বৃষ্টি ছিল। তেল লেগেছে মাত্র ২০ লিটার। এবার বাইকের কথায় আসি।
লুক- কেপিআরের লুকের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এর রেসিং লুক অন্যের দৃষ্টি খুব সহজেই আকর্ষণ করে। কক্সবাজারে না হলেও ১০ জন আমাকে জিজ্ঞেস করেছে এটা অকশনের বাইক কিনা। ঢাকার রাস্তায় সিগন্যালে দাঁড়ালেই এই বাইকের বর্ণনা দিতে দিতে আমার সময় চলে যায়।
স্পিড- কেপিআরের স্পিড R15 এবং সিবিআর ছাড়া অন্য যেকোন ১৫০ সিসি বাইকের চাইতে বেশি। রাইডার ভাল হলে এটা দিয়ে R15 এবং সিবিআর বিট করা যাবে। এখন পর্যন্ত এই বাইকের টপ স্পিড ১৩৩ । তবে চেইনস্পকেট চেঞ্জ করলে বাইকের স্পিড আরও বাড়বে। হাইওয়েতে আমরা রাতের বেলা বাইকে চলাচলের সময় সাধারণত একটা কারকে ফলো করি। কিন্তু ১১০-১২০ স্পিডের একটা কারের পেছনে লেগে থাকা খুব টাফ। আপনি এটা দিয়ে যেকোন কারের পেছনে খুব সহজেই লেগে থাকতে পারবেন।
গিয়ার- কেপিআরের গিয়ার ৬টা। সামনে একটা আর পেছনে ৫ টা । বাইকের মিটারে গিয়ার কত নাম্বারে আছে টা দেখা যায়। ১ম,২য় এবং ৩য় গিয়ারে এক্সিলারেশন একটু বেশিই মনে হয়েছে। নতুন রাইডার হলে বাইক হাতে রাখতে পারবে না।
মাইলেজ- কেপিআরের মাইলেজ সিটিতে ৪০+ এবং হাইওয়েতে ৪৫+। আমি নিজে ৪২-৪৩ পেয়েছি কারন আমার পেছনে পিলিওন ছিল এবং রাস্তা ভাল ছিল না।
ব্রেকিং সিস্টেম- কেপিআরের ব্রেকিং সিস্টেম এক কথায় অস্থির। ডুয়েল ডিস্ক আর সামনের ডিস্কটা বড় হউয়ায় ব্রেকিং সিস্টেম খুব ভাল। বৃষ্টিতে হার্ড ব্রেক করলেও বাইক স্লিপ করে না।
সাস্পেন্সন- কেপিআরের সাস্পেন্সন মোটামুটি ভাল। ভাঙ্গাচোরার মধ্যে বাইকের ব্যালেন্স ঠিক থাকে। আমি পুরো ট্যুরের সময়ে কত গর্তে পড়েছি আর কত স্পিডব্রেকার না দেখেই চলে গেয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।
টায়ার- কেপিআরের টায়ার খারাপ না তবে একটু বেশি শক্ত হওয়ায় ভাঙ্গাচোরা আর স্প্রিডব্রেকার ক্রস করার সময় একটু বেশি ঝাকুনি লাগে এবং পায়ে এবং কোমরে ব্যাথা লাগে। স্টক টায়ার চেঞ্জ করে MRF এর টায়ার লাগালে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং আরও ভালো ব্যালেন্সিং এবং গ্রিপ পাওয়া যাবে।
ইঞ্জিন- কেপিআরের সবচাইতে ভালো জিনিস হল এর ইঞ্জিনটা। ওয়াটারকুল ইঞ্জিন হওয়াতে অনেক সময় ধরে রাইড করার পরেও ইঞ্জিন ভালো পারফরমেন্স দেয় এবং সাউন্ড নস্ট হয় না। কেপিআরের সাথে বাংলাদেশের অন্যান্য চাইনিজ বাইকের কোন মিল নেই। এটা চালালে ব্র্যান্ডের বাইকের ফিল পাওয়া যায়।
হেডলাইট- কেপিআরের LED প্রজেকশন লাইট বাংলাদেশের অন্য ১৫০ সিসি বাইকের চাইতে অনেকগুনে ভালো এবং হাইওয়েতে খুব ভালো পারফরমেন্স দেয়।
সিটিং পজিশন- কেপিআরের একমাত্র খারাপ দিক হল এর সিটিং পজিশন। স্পোর্টস লুক বাইক হওয়ায় এটার হ্যান্ডেল পজিশন একটু নিচে এবং কুজো হয়ে বাইক চালাতে হয়। ফলে কিছুক্ষন বাইক চালালেই হাত ব্যাথা করে । সিটিতে এই বাইক চালানো একটু কষ্টদায়ক কারন বাইকটা ঘুরাতে অন্যান্য বাইকের চাইতে একটু যায়গা বেশি লাগে। যাদের স্পোর্টস বাইক চালানোর অভ্যাস আছে তাদের চালাতে কোন সমস্যা হবে না। তবে এততুকু বলতে পারি এটার হ্যান্ডেল আর সিটিং পজিশন ফেজারের মত হলে এটা বাইক অফ দা ইয়ার হত।
পরিশেষে বলব, Lifan KPR 150 এর কেনা দাম বাংলাদেশের টাকায় ৬৫-৭০ হাজার টাকা। ধরা যাক এর দাম ৭০ হাজার টাকা। ভ্যাট ১২০% ৮৪ হাজার টাকা। তারপর ট্রান্সপোর্ট খরচ, শোরুম ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, নিজেদের লাভ, ডিলারদের লাভ সব কিছু মিলিয়ে বাইকের দাম হয় ১৯২০০০-১৯৯০০০ টাকা। আমার মতে ৭০হাজার টাকায় এর চাইতে ভালো বাইক বানানো সম্ভব না।
-Samiul Azad Shishir