Keeway RKV 150cc মালিকানা রিভিউ লিখেছেন আলিফ
This page was last updated on 06-Jul-2024 08:59pm , By Ashik Mahmud Bangla
বাইক চালানো শিখি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। তাও বড় ভাইকে ফাঁকি দিয়ে। সামনে বসে বললাম,’আমি চালাতে পারি।’ কিছুতেই ফার্স্ট গিয়ার দিয়ে ক্লাস এডজাস্ট করতে পারছিলাম না। ভাই শিখিয়ে দিল। তারপর তো পাঙ্খা। সুযোগ পেলেই বাবার হোন্ডা সিডিআই ১২৫ নিয়ে চালক হওয়া।
Keeway RKV 150cc মালিকানা রিভিউ
১০.১০.১০। জীবনের প্রথম নিজের বাইক কিনি ঢাকাতে। যদিও আমার জন্ম স্বর্গরাজ্য বান্দরবানে। পালসার ১৩৫। চার ভাল্ব বিশিষ্ট আকর্ষণীয় লুকিংয়ের বাইকটা প্রথমে এসেই সবার নজর কেড়েছিল। পালসারের সাথেই চারটি বছর। এরই মাঝে অনেক নতুন নতুন বাইক শহরের রাস্তায়। একদিন এক কলিগের দেখি ১০০ সিসির একটি মটর সাইকেল যা দেখতে এফজেডএসের মতোই। প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল।
যদিও বাইকের কোম্পানি ছিল অচেনা। Keeway RKS 100 । সে কলিগের সাথেই একদিন বৃষ্টি ভেজা বিকেলে আটকে গেলাম স্পিডোজের প্রধান শো রুমে। কথা হলো ডিএমডি জামান ভাইয়ের সাথে।
Keeway RKV 150cc, প্রথম দেখাতে আপনার বাইকটাকে ভীষণ এক রোখা মনে হবে। হেডলাইটের চাহনিটা যেন এখনি শোরুম ছেড়ে যাবে। তামার সাসপেনশন, মোটা চাকা, ডবল হাইড্রোলিক, বৃহত ওয়েল ট্যাঙ্ক, চিত্তাকর্ষক ড্যাশ বোর্ড নজরে লাগার মতো। তার উপর জামান ভাইয়ের Keeway Bike সম্পর্কে ব্রিফিং, বিক্রয়োত্তর সেবা শুনে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম বাইক চেঞ্চ করলে কীওয়ে আরকেভি ১৫০ ই কিনব।
১০.১২.১৪। কিনেই ফেললাম আরকেভি ১৫০। প্যাকেট থেকে বাইক বের করে ডেলিভারি পেতে পেতে বিকেল। ভারতীয় বাইক ছেড়ে অন্য বাইক কিনেছি বলে যত্নটাও একটু বেশি করব ভাবলাম। সবার শত কথা শুনেও চারমাস পর এই বাইকের সাথেই আমার ৩০০০কি.মি. পথ পাড়ি দেয়া। একটা রিভিও লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
কী ওয়ে আর কে ভি ১৫০ সিসি স্পেসিফিকেশনঃ
একটা জিনিস মাথায় সব সময় কাজ করে। কিছুটা শো অফ যদিও। যখন পালসার ১৩৫ কিনেছিলাম তখন ঢাকার বুকেই এই বাইক নতুন এসেছে। তাই রাস্তায় প্রতিদিন কাউকে না কাউকে বাইক সম্পর্কে কিছু না কিছু বলতে হতো। কী ওয়ে আর কে ভি ১৫০ কেনার অন্যতম কারণ ছিল বাইকটা রাস্তায় খুবই কম। তাই আকর্ষণ থাকবেই। সাথে মানুষের জিজ্ঞাসা। এখনও প্রতিদিন কারও না কারও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাই। টাকা দিয়ে বাইক কিনবো মানুষ একটু তাকাবে না!! এটা কি হয়????
Also read: ১ লক্ষ টাকার মধ্যে কিওয়ে বাইক এর দাম | বাইকবিডি
বাইকটার সিটিং স্টাইল খুব ই ভাল। সুপরিসর সিট যদিও একটু নিচু টাইপের। আমার হাইট অনুযায়ী আরেকটু উঁচু হলে ভালো হতো। হ্যান্ডলিং টাও যথার্থ। লুকিং গ্লাস গুলোর ও ভাব আছে। হেডলাইটে দুটি বাল্ব। লো বিমের জন্য একটা আর হাই বিমের জন্য আরেকটা। হেডলাইটের আলোতে আমি সন্তুষ্ট না। তাই আমি এলইডি বাল্ব লাগিয়ে নিয়েছি। সাথে লাগিয়েছি দুটি লাইটগান দুই সাইডের দুই বাম্পারের উপরে। বাইকের হ্যান্ড ব্রেকে এডজাস্টার আছে যা দিয়ে আপনি মন মতো ব্রেক সেট করতে পারবেন।
ইঞ্চিনের সাউন্ড ও মোটামোটি স্মুথ। পেছনের চাকায় ডুয়েল সাসপেনশন। মনো সাসপেনশন হলে আরও ভালো হতো। সাইলেন্সার পাইপের সাথে পেছনের বডির উচ্চতা খুব কম। আরেকটু বেশি হলে পিলিওন বসে আরাম পেত। একটা সাইড বক্সও লাগানো যেত। দাম হিসেবে বাইকের ইঞ্জিন খুবই ভাল। ইটালিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি।আর ডিজাইনড টা বেনেলী নামক বিশ্বখ্যাত কোম্পানির করা। লিটার পার মাইলেজের কথা বলতে গেলে আমি লিটারে সর্বোচ্চ ৩৮ কিমি পেয়েছি। যদিও কোম্পানির ভাস্য লিটারে ৪০+ পাওয়া।
বাইকের ভালো দিক:
১. বাইকের লুকিং আকর্ষণীয়।
২. সোনালী রঙ্গের সাসপেনশন।
৩. নীল কালারের ড্যাশবোর্ড।
৪. ট্যাকো মিটার, স্পিডো মিটার, ফুয়েল মিটার, গিয়ার ডিসপ্লে, মেইনটেইনেন্স আইকন,ঘড়ি।
৫. ১৭ লিটারের সুবৃহৎ ওয়েল ট্যাঙ্ক, বাইককে কন্ট্রোল করতে দেয় আলাদা কনফিডেন্ট।
৬. পেছনের মোটা চাকা কর্নারিং এর জন্য দারুন।
৭. টপ স্পিড ১২০ পযন্ত উঠবে বলে টেকনিশিয়ানদের দাবি।
৮. ডিস্ক ব্রেকগুলো বিপরীত দিকে অবস্থান করায় ব্রেকিং সিস্টেম খুবই ভালো।
৯. জার্কিং অনেক কম।
১০. টিউবলেস টায়ার হওয়াতে নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তা।
১১. ডবল লক সিস্টেম বাইককে নিরাপদ করেছে।
১২. বিক্রয়োত্তর সেবার মান উন্নত।
খারাপ দিকঃ
১. বাইকের হর্ণের সাউন্ড খুব ই কম। (আমি এক্সট্রা হর্ণ লাগিয়ে নিয়েছি)
২. সাইডের বক্সগুলোর চাবি সিস্টেম না। টুল বক্স খুলতেও স্ক্র লাগে।
৩. সিট খোলারও কোন চাবি নেই। স্ক্র খুলে সিট খুলতে হয়। ব্যাপারটা বিরক্তিকর।
৪. সাইড কিটের কালার গুলো উন্নত না। রং চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৫. ক্লাস সিস্টেম ততোটা ফ্রি না।
৬. পার্টস শুধু স্পিডোজের শো রুমেই সহজলভ্য।
মেগেলি স্পিডোজ কোম্পানির আরেকটি সেগমেন্ট। ভারতীয় বাইকের তুলনায় বাইকের টোটাল পারফরমেন্স সমানুপাতিক না হলেও কাস্টমার সেটিসফেকশনের জন্য বাইককে একেবারে নগণ্য ভাবার সুযোগ নেই। আরও উন্নত করার দরকার আছে কথাটা যেমন সত্য, দামের সাথে এর মান যথার্থ। এখন বাইকের স্থায়ীত্বই বলে দিবে বাইক সত্যিকার অর্থে কতটা ফ্রেন্ডলি। চালিয়ে আরাম পাবেন এবং লুকিং প্রশংসনীয় হওয়াতে প্রথম দেখাতে যে কেউ আপনার রুচির প্রশংসা করবে এটা নিশ্চিত।মহাখালির আমতলী, ফ্লাইওভারের পাশেই স্পিডোজের প্রধান শো রুম এবং কার্যালয়।
নতুন বাইক কেনার ক্ষেত্রে এই Keeway RKV 150cc রিভিউটি বাইকারদের সাহায্য করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
-S.M ALAUDDIN AL AZAD ALIF
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।