Keeway RKS 150 Sports নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন তানভীর
This page was last updated on 18-Aug-2024 04:25pm , By Shuvo Bangla
শুভেছা সবাইকে। আমি তানভীর আহামেদ, ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছি এবং Keeway RKS 150 Sports বাইকটি চালাচ্ছি। বাইকটির ১০,০০০ কিমি পূর্ণ হবার কারণে আজ আমি এই বাইকটির একটি রিভিউ দেবার চেষ্টা করবো।
আমি বাইক চালাতে পারতাম না এমন কি সাইকেলও না । অন্য সবার মত বাইক থাকবে এটা আমার ছোট কালের স্বপ্নও ছিলো না । ২০১৫ সালের শেষের দিককার সময়ের ঘটনা, ভার্সিটি যাওয়ার জন্য প্রতিদিনই ধানমণ্ডি যেতে হয় কিন্তু রাস্তার জ্যাম, বাস এর চাপ এর জন্য প্রায় প্রতিদিনই যেতে দেরি হত। তখন থেকেই আমি এই সমস্যার এর একটি সমাধান খুজছিলাম। প্রথমেই ইচ্ছা ছিল সাইকেল কিন্তু আমি ওজনে ভারি হবার কারণে সেই ইচ্ছা বাদ দিলাম, ওই অবস্থায় গাড়ী কেনার মত সাহস ছিল না আমার তাই শেষ পর্যন্ত ঝুঁকতে হল বাইক এর দিকেই । শুরু হয়ে গেল বাইক শেখার পালা, আল্লাহর রহমতে ২ঘন্টায় ব্যালেন্সিং শিখে ফেললাম । আমার প্রথম বাইক ছিল আমার বড় ভাই এর বাইক হোন্ডা সাইন, সময়টা জানুয়ারি ২০১৬ এর। তারপর কিছুদিন ওইটা দিয়ে প্র্যাকটিস করলাম । তারপর কিছুদিন ইয়ামাহা ফেযার চালালাম।
কেন Keeway Bike ?? আমি বাইক কেনার সময় ভাবছিলাম এমন কিছু একটা আমার দরকার যেটার মধ্যে স্টাইল,মাইলেজ,আর আরামদায়ক হবে আমার জন্য আর অবশই আমার সাধ্যের মধ্যেই হবে। আমি ছোট কাল থেকেই ভারতীয় পণ্য বর্জন করি, সেই জন্য ই আমি অন্য কোন ব্রান্ড খুঁজতে থাকি, এক পর্যায়ে পেয়ে গেলাম Keeway RKS 150 Sports। কেনার সময় অনেক মানুষ বলেছিল অপরিচিত ব্রান্ড না নিতে, কিন্তু আমার ভালো লেগে গিয়েছিল, প্রেম এ পড়ে গিয়েছিলাম।
যাই হোক ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল বিকালে আমি Keeway RKS 150 Sports বাইকটি ক্রয় করি। ।
প্রথম অভিজ্ঞতা : বাইক টি মধ্যে প্রথম চাবি রেখেছিল আমার বাবা আর স্টার্ট করেছিল আমার মা । অনেক আনন্দের মুহুর্ত ছিল আমার জন্য। যখন প্রথম চালানো শুরু করলাম তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এইটা আমার বাইক । যদিও এখনও বাইকটিতে একই রকম টেস্ট পাই তাও সেই প্রথম দিনের টেস্ট/ অনুভূতি আসলেই ভোলার নয়।
গত ৯ মাস এ আমি বাইক টি চালিয়েছি ১০,০০০ কিমি। এবার আসি বাইক টির সম্পর্কে ভালোলাগা আর মন্দ লাগা গুলো বলি । প্রথমে আসুন জেনে নেই Keeway RKS 150 Sports বাইকটির স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে :
Keeway RKS 150 | |
Engine | Single Cylinder, Four Stroke, Air Cooled, 2-Valve Engine |
Displacement | 149.4 cc |
Bore x Stroke | 57mm x 58mm |
Compression Ratio | 9.27:1 |
Maximum Power | 11,7 hp @ 8500RPM |
Maximum Torque | 10NM @ 7500 RPM |
Fuel Supply | Carbureted |
Ignition | TLI |
Starting Method | Electric Only |
Lubrication | Pressure Splash Lubrication |
Transmission | 5 Speed |
Clutch | Wet Multi Plate |
Dimension (Length x Width x Height) | 2090mm x 790mm x 1090mm |
Ground Clearance | 180mm |
Wheelbase | 1350mm |
Dry Weight | 125 Kg |
Fuel Capacity: | 16 Liters |
Frame Type | Arch Bar Trucke |
Suspension (Front/Rear) | Telescopic with 110mm travel /Twin Telescopic coil spring oil dumped with 30mm travel |
Brake system (Front/Rear) | 230mm Disk / 130mm Drum |
Tire size (Front / Rear) | Front 90/90-17”, Rear 120/80-17”; Both Tubeless |
Maximum Load Capacity | 171Kg |
Battery | 12V, 7Ah |
Speedometer | Analog Rev Counter with Full Digital Display |
ভালো দিকঃ এই বাইকটির প্রায় সবগুলো দিকই ভাল লেগেছে, তার পরেও বিশেষ কিছু দিকঃ
- অসম্ভব সুন্দর দেখতে পুরাই স্পোর্ট লুক।
- পেছনের চাকা যথেষ্ট মোটা (১২০/৮০-১৭’’)। আমি অনেক ভেজা রাস্তায় ও ভাল গ্রিপ পেয়েছি, কাদার মধ্যেও তেমন একটা স্লিপ করেনি।
- পেছনে মনো-সাসপেনশন থাকা এই বাইক এর একটা শক্তিশালী দিক। যেটা একই দামের অন্যান্য বাইকে নেই । সাসপেনশনটি অনেক আরাদায়ক,আমি আমার পিলিওন এর কাছে কখনোই ঝাকুনির ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি।
- বাইক এর কন্ট্রোল নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। খুব ভাল কন্ট্রোলিং, এমন কি টারনিং এর সময় ও কোন অসুবিধা হয়নি।
- সামনের ব্রেক খুব ভাল মনে হয়েছে ।
- বাইকটির যে প্লাস্টিক অংশ আছে সেইটা খুবই ভাল মানের মনে হয়েছে।
- এই বাইক টির আর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এর ইঙ্গিন এর আওয়াজ্, খুব ইউনিক এবং অন্য কোন বাইক এর সাথে মিল পাবেন না। উচ্চ আরপিএমেও শব্দের কোন পরিবর্তন হয়নি।
- বাইকটি তুলনামূলক হাল্কা হবার দরুন, এবং রেডি পিকাপ থাকার কারণে খুব দ্রুত স্পিড উঠে । ০-৬০ কিমি/ঘন্টা উঠতে সময় নেয় মাত্র ৪.৫ সেকেন্ড, ০-১০০ কিমি/ঘন্টা উঠতে সময় নেয় ১২ সেকেন্ড।
- বাইকটি তে একদমই ভাইব্রেশন নেই । ১১০ কিমি/ঘন্টায়ও তেমন ভাইব্রেশন অনুভব করা যায় না।
- বাইটির ইঞ্জিন তেমন একটা গরম হয়না , শুরুর দিকে কিছুটা গরম হলেও ১০০০ কিলোমিটার এর পর আর হয় নি।
- আমি বাইক টিতে এখন পর্যন্ত ৪২+/- কিমি/লিটার (ঢাকায়) বাইরে ৪৫ +/- কিমি/লিটার পেয়েছি, ব্রেকইন পিরিয়ডে পেয়েছিলাম ৩০-৩৩ কিমি/লিটার।
- বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকটি যথেষ্ট বড়। ১৬ লিটার।(১৪.৫+১.৫), যেটি লং টুর এর জন্য সুবিধা জনক।
- বাইকটির সকল পার্টস স্পীডোজ (আমদানীকারক) এর কাছে আছে, এবং বাইরেও ও পাওয়া যায়।
আফটার সেলস সার্ভিসঃ স্পীডোজ বাংলাদেশে কীওয়ে আমদানি করছে, সে হিসাবে তারা সার্ভিস দিচ্ছে। বর্তমানে ঢাকায় তাদের বিশাল একটি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। তা ছারাও তাদের অন-কল সার্ভিস, মোবাইল সার্ভিসিং টিম রয়েছে। ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্রগ্রাম, রাজশাহীতেও সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। যদিও এখন ও তারা সারা বাংলাদেশ এ থানা পর্যায়ে সারাসরি সার্ভিস সেন্টার করতে পারে নি তাই তারা ডিলার এর মাধ্যমে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করছে যদিও আমার মনে হয় তাদের আরো সার্ভিস সেন্টার বাড়ানো উচিত।
মন্দলাগা :
- বাইকটির সবচেয়ে দুর্বল ব্যাপারটি হচ্ছে হছে বাইকটির চাকা টিউব-লেস নয়, যেটি বাংলাদেশের রাস্তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যদিও অল্প কিছু টাকা খরচ করে টিউব-লেস করে নেওয়া যায়।
- বাইকটির হেড-লাইট এর আলো খুব ই দুর্বল মনে হয়েছে আমার কাছে, তবে একটি নব এর সাহায্যে আলোর ফোকাস সামনে পেছনে করা যায় এতে কিছুটা সুবিধা হয় রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে।
- বাইকটির সামনের চাকা টি পেছনেরটির মত খুব ভাল না , স্লিপ করে, এছাড়াও গ্রীপ তেমন একটা পাই নি।
- বাইকটির ফোর্ক লক টি বাইক টির ঘারে অবস্থিত যেটা একটু পুরাতন মডেল এর মত মনে হয়,সাথে সাথে যদি কেউ লক না খুলে বাইক স্টার্ট দেয় তবে বাইকটি গোল হয়ে ঘুরতে থাকবে জেটি বিপদজনক ও বটে।
- বাইকটি কিছুটা ছোট তাই লম্বাদের জন্য কিছুটা অসুবিধা করতে পারে যদিও আজকাল বাইক কে উচু করা যায়।
- বাইটির পেছনে ড্রাম-ব্রেক, যেটা ডিস্ক ব্রেক হলে ভাল হোত।
ট্যুর সমূহঃ আমি বাইক টি নিয়ে খুব দূরে যাই নি । ঢাকার ভেতরে কিছু ট্যুর দিয়েছি সেগুলি উল্লেখ করলাম :
ঢাকা-সোনারগও-পানাম সিটি - ঢাকা | ১০০ কিমি. প্রায় |
ঢাকা-মাওাঘাট-ঢাকা | ১১০ কিমি প্রায় |
ঢাকা-সাটুরিয়া জমিদার বাড়ি-ঢাকা | ১৫৫ কিমি প্রায় |
ঢাকা-মইনট ঘাট- ঢাকা | ১২০ কিমি প্রায় |
ঢাকা-কুমিল্লা - ঢাকা | ২১০ কিমি প্রায় |
ঢাকা-নরসিংদী-গাজীপুর-নন্দন পার্ক- জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা | ২৫০ কিমি প্রায় |
উপরের ট্যুরগুলোতে আমি কোন ধরনের ঝামেলার সম্মুখীন হইনি। প্রত্যেকটি টুরে আমার Keeway RKS 150 Sports বাইকটি নিয়ে অনেক স্মুথ ভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি।
পরিশেষে বলা যায়, Keeway RKS 150 Sports এমন একটি বাইক যা সবাই পছন্দ করবে। যারা একটু দ্রুতগতির সাথে কম্ফোর্ট আর স্টাইল এর কম্বিনেশন চান তাদের জন্যই এই বাইক। আমার একটাই অনুরোধ যারা চাইনিজ/অপরিচিত বাইক কে না দেখে না শুনে অপছন্দ করেন তাদের কে একবার বলবো বাইকটিতে একটি রাইড দিতে, আপনার সব ধারনা বদলে যাবে। সকলেই সাবধানে বাইক চালান, এবং অবশই অবশ্যই আপনি ও আপনার পিলিওন কে হেলমেট ব্যবহার করতে বলুন ।
--- তানভীর আহামেদ