Keeway RKR165 টেস্ট রাইড রিভিউ - টীম বাইকবিডি
This page was last updated on 31-Jul-2024 11:03am , By Ashik Mahmud Bangla
বাংলাদেশে চাইনিজ স্পোর্টস বাইকের অনেক চাহিদা রয়েছে, এর কারণ অবশ্য বাইকের পারফর্মেন্স অনুযায়ী বাইক গুলোর দাম কিছুটা কম জাপানীজ ব্র্যান্ড গুলোর থেকে । আমরা বর্তমানে দেখতে পেয়েছি যে দুটি বাইক বাংলাদেশের মার্কেটে খুব ভাল পারফর্ম করছে, তাদের একটি হচ্ছে Lifan KPR এবং অন্যটি হচ্ছে Taro GP । তো এখন কথা হচ্ছে কিওয়ে আমাদের জন্য কি নিয়ে এসেছে । তারা নিয়ে এসেছে Keeway RKR 165 । আজ আমরা আমাদের Keeway RKR165 টেস্ট রাইড রিভিউতে বাইকটি নিয়ে আলোচনা করব ।
Keeway Bike বাংলাদেশের রাস্তায় অনেক দিন ধরেই চলছে, চাইনিজ ব্র্যান্ড হিসেবে তারা নিজের একটা অবস্থান ইতিমধ্যে সবার মাঝেই স্থান দখল করে নিয়েছে । কমিউটিং সেগমেন্টে তাদের বেশ কিছু দারুন মোটরসাইকেল রয়েছে । এই প্রথমবারের মত কিওয়ে ১৬৫সিসি স্পোর্টস সেগমেন্টে Keeway RKR165 নিয়ে এসেছে ।
Keeway RKR165 Test Ride - ইঞ্জিন
তো এই নতুন স্পোর্টস বাইকটিতে তারা ব্যবহার করেছে Benelli 165S যে ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে সেটি । ইঞ্জিন থেকে 17.8 BHP @ 9500 RPM এবং 14 NM of Torque @ 7000 RPM উৎপন্ন করতে সক্ষম । কিওয়ে ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত করেছে ৬ স্পিড গিয়ার বক্স এবং EFI (electronic fuel injection) সিস্টেম ফুয়েল ট্যাঙ্ক থেকে ফুয়েল ইঞ্জিনে নিয়ে আসে । বাইকটির এক্সেলারেশন অনেক স্মুথ । এছাড়া এতে দেয়া হয়েছে ৩টি স্পার্ক প্লাগ এবং EFI সিস্টেম বাইকটির এক্সেলারেশন স্মুথ করে তুলেছে । তিনটি স্পার্ক প্লাগ থাকার কারণে ফুয়েল কম খরচ হয় এবং এর সাথে মাইলেজ ও বৃদ্ধি পায় ।
আরকেআর ১৬৫ বাইকটি সাইজের দিকে কিছুটা বড়সড় । এর লুকিং গ্লাসটি বাইক থেকে বেশ বাইরের দিকে দেয়া হয়েছে । তবে বাইকটির হ্যান্ডেলবার আপ রাইট হবার কারনে শহর বা হাইওয়েতে আরামদায়ক ভাবে রাইড করা যায় ।
কিওয়ে আরকেআর এর রাইডিং পজিশন স্পোর্টস বাইকের মতই কম্ফোর্টেবল । আমি তেমন কাউকে খুজে পাইনি যারা বলেছেন যে পিঠের দিকে ব্যথা হচ্ছে বা কব্জি ব্যথা করছে । এছাড়া আপনাকে সামনের দিকে ঝুকে স্পোর্টস বাইকের মত করে চালাতে হবে না ।
Keeway RKR165 Test Ride - ফিচার্স
এই বাইকটির সুইচ গিয়ার গুলো মডারেট, এগুলোকে উন্নত করা প্রয়োজন । স্পিডোমিটারটি ডিজিটাল তবে এর রেভ কাউণ্টার হচ্ছে এনালগ । স্পিডোমিটারে স্পিড, গিয়ার, ফুয়েল গজ, ওডোমিটার এবং ঘড়ি দেয়া হয়েছে । কিওয়ে আরকেআর এর সামনে হ্যালোজেন হেডলাইট দেয়া হয়েছে, যদিও দুটি হেডলাইট দেয়া হয়েছে । বাম পাশের হেডলাইটি রাতের বেলা লো বিম থাকে যেখানে ডান পাশেরটি হাই বিম থাকে । তবে ইন্ডিকেটর গুলো এলইটি এবং সেই সাথে টেইল লাইটস ও এলইডি ।
বাইক হিসেবে এটি অনেক বেশি প্রশস্ত, যদিও বাইকটি একটি স্পোর্টস বাইক । তবে বাইকটি তত বেশি এগ্রেসিভ নয়, যা বর্তমানে মার্কেটে থাকা স্পোর্টস বাইক গুলোতে রয়েছে । বাইকটির গিয়ারের পরিবর্তন ততটা স্মুথ নয় এবং ক্লাচও কিছুটা হার্ড । তবে সাসপেনশন গুলো ততটা হার্ড নয় । সামনের এবং রেয়ার সাসপেনশন এ দেয়া হয়েছে এডজাস্টেবল পেলোড, যা আপনাকে বাংলাদেশের ভাল এবং খারাপ রাস্তায় ভাল ভাবে ফিডব্যাক দেবে ।
আরকেআর ১৬৫ বাইকটি কিওয়ে এর বিল্ড এবং ফিনিশিং কোয়ালিটি ধরে রেখেছে । এছাড়া তারা বাইকটির কালার ফিনিশিংটিও দারুন ভাবে করেছে । তবে তাদের সুইচ গিয়ার গুলো আর ভালো করা প্রয়োজন ।
Keeway RKR165 Test Ride Review - ব্রেক এবং মাইলেজ
স্পোর্টস সেগমেন্টের এই বাইকটিতে কিওয়ে দিয়েছে ২৬০মিমি এর ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক, যা দেয়া হয়েছে বাম পাশে । কিওয়ে এর মতে এটি বাইকের ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশনে সাহায্য করবে । এছাড়া দেয়া হয়েছে সিবিএস (কমাইন্ড ব্রেকিং সিস্টেম) দেয়া হয়েছে ব্রেকিং এর ফিডব্যাক আরও ভাল করার জন্য । এই বাইকটির ফুয়েল ক্যাপাসিটি হচ্ছে ১৫ লিটার, যা আপনাকে লং রাইডের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাহায্য করবে । ঢাকা শহরে আমরা মাইলেজ পেয়েছি ৩৫ - ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৪২ - ৪৫কিলোমিটার প্রতি লিটার । এছাড়া আমরা এর টপ স্পিড পেয়েছি ১৩২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা । যদিও বাইকটি একটি স্পোর্টস বাইক, তারপরও বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স দারুন । এছাড়া এর স্যাডেল হাইটও অনেক বেশ, যার দরুন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির নিচের হাইটের লোকর জন্য বাইকটি রাইড করা কষ্টকর ।
পিলিয়ন সিটটি বেশ আরামদায়ক এবং পিলিয়নের বসার জন্য দেয়া হয়েছে একটি গ্রেইব রেইল । পিলিয়ন সিটটি একটু ছোট, যার কারনে যারা একটু মোটাসোটা তাদের পিলিয়ন সিটে বসে কষ্ট হবে ।
আমি অনেক দিন থেকে চাইনিজ স্পোর্টস বাইক রাইড করছি, কিন্তু সব গুলোর মধ্যে এই বাইকটি সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক । এর অন্যতম কারন হচ্ছে বাইকটির সাসপেনশন অনেক সফট এবং হ্যান্ডেলবার আপরাইট । আবার অন্যদিকে এই হ্যান্ডেলবারের কারনেই বাইকটিতে কর্নারিং এর সময় বেশি নিচু করা যায় না । টায়ার গ্রিপ এবং চেসিস এর সেট আপটি বেশ ভাল ভাবেই করা হয়েছে । তবে বাইকটির হ্যান্ডেলবার ও হাইটের কারনে ভালভাবে কর্নারিং করা যায় না ।
যদি আপনি ফিচার গুলোর দিকে খেয়াল করেন তবে মনে হবে বাইকটির দাম কিছুটা বেশি রাখা হয়েছে । বাইকটির দাম হচ্ছে ২,১৫,০০০/- টাকা যা আমার কাছে কিছুটা বেশি মনে হয়েছে ।
ভাল দিকঃ
- শক্তিশালী ইঞ্জিন
- বিল্ড কোয়ালিটি
- ফিনিশিং
- সাসপেনশন
- রাইডিং পজিশন
খারাপ দিকঃ
- লুকস এগ্রেসিভ নয়
- শহরের রাইড করার জন্য নয় । বাইকটি বেশ বড়সড় ।
- কম উচ্চতার লোকদের জন্য স্যাডেল হাইটের ঝামেলায় পরতে হবে ।
- এক্সহস্ট এর ডিজাইন তেমন ভাল নয় ।
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেট অনেক কঠিন একটা সময় পার করছে। এরফলে এখন অনেকেই ব্যক্তিগত ট্রান্সপোর্টেশন এর দিকে ঝুকছে। অনেকেই আছেন যারা ভাল বিল্ড কোয়ালিট এবং সর্বোচ্চ কম্ফোর্ট দেয় এমন একটি স্পোর্টস মোটরসাইকেল খুজতেছেন, যা Keeway RKR 165 বাইকটি অন্যতম অপশন হতে পারে।