Honda XBlade 160 ২৩০০ কিলমিটার রাইড রিভিউ - চয়ন শেখ
This page was last updated on 18-Jul-2024 03:54am , By Raihan Opu Bangla
আমি চয়ন শেখ। আমি খুলনা থাকি। Honda XBlade 160 আমার জীবনের প্রথম বাইক এবং এখন এটাই ব্যবহার করছি । এটি ১৬২.৭১ সিসি এর নেকেড স্পোর্টস সেগমেন্ট এর বাইক। আজ আমি আমার বাইকটি ২৩০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে এই রাইডের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো।
Honda XBlade 160 ২৩০০ কিলমিটার রাইড রিভিউ
আমি বাইক চালানো শিখেছি ২০০৯ সালে "ইয়ামাহা ৮০" দিয়ে। আমি বাইকিং ভালবাসি। কারন, এমন কোন যুবক নেই যে বাইকিং পছন্দ করেন না এবং তাই আমিও এর বাইরে নই । প্রতিদিনের চলাফেরার জন্য বাইক যেমন সাশ্রয়ী তেমনি সময় বাচায় একই সাথে আপনাকে আরাম ও সাচ্ছন্দ্য দেয়। আমি ঘুরতে পছন্দ করি যার জন্য বাইক এর চেয়ে উত্তম কোন যানবাহন নেই। বাইকিং আকর্ষণীয় করে তোলে আপনার ব্যক্তিত্বকে। জীবনসঙ্গিনীকে সাথে নিয়ে ঘুরতেও বাইকিং এর জুরি নেই । আমার বাইকটি জাপানিজ কোম্পানি Honda এর Honda XBlade 160 ।
আমার প্রয়োজন এবং শখের জন্য একটা বাইক কেনার দরকার হয়ে পরে। আমি বেশ কিছু অনলাইন সাইট এবং চ্যানেল এর ভিডিও, পোস্ট দেখে এবং বিভিন্ন শো-রুমে গিয়ে টেস্ট রাইড দিয়ে দেখলাম আমরা বাজেট ২ লাখ, আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। আমার পছন্দ ও কম্ফোর্ট, ব্রেকিং, মাইলেজ, কন্ট্রোলিংয়ের দিক দিয়ে Honda X-Blade বাইক টি আমার জন্য পারফেক্ট, তাই বাইকটি আমি বেছে নিয়েছি।
আমার Honda XBlade 160 বাংলাদেশে অফিসিয়ালি লঞ্চ করে ডিসেম্বর ২০১৯ সালে এবং আমি বাইকটি নিয়েছি ১২ জানুয়ারী ২০২০ এ। হোন্ডার অফিসিয়াল ডিলার মমো মোটরস, নিরালা, খুলনা থেকে। বাইকটি কিনেছিলাম ১,৭২,৯০০ টাকা দিয়ে ।
যেহেতু শখের জিনিস হচ্ছে বাইক আর বলে রাখি আমার বাইকটি আমাকে কিনে দিয়েছে আমার বড় ভাই (দাদাভাই)। কয়েক মাস ধরেই নিজে বাইক কিনবো কিনবো করে বাইক চয়েজ করতে ঝামেলা হয়ে যাচ্ছিলো । অবশেষে Honda X-Blade পছন্দ করেই ফেল্লাম এবং কেনার দিন ও নির্বাচন করে ফেল্লাম। কিন্তু হঠাৎ আমার আর তাড়া সহ্য হলোনা, নির্বাচিত দিনের আগেই তাতক্ষনিক সিন্ধান্ত নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আধ-ঘন্টার মধ্যে চলে গেলাম শো-রুমে বাইক নিয়ে আসতে। এর ২দিন আগে অল্প কিছু টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে আসছিলাম। বাইক কেনার সময় আমার সাথে ছিল আমার দুলাভাই এবং দুই বন্ধু। বাইকটির চাবি যখন আমাকে দেওয়া হলো আমার কাছে মনে হলো আমি দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। আকাশের চাঁদ পেয়েছি কারন এর আগে পরিবারের বাইক সব সময় চালালেও নিজের ব্যক্তিগত বাইক এটাই প্রথম। আমার বাইকটি প্রথম বার চালানোর অনুভূতি টা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এটা সকল বাইকারই বুঝতে পারবেন । খুব আনন্দের এবং আবেগঘন মূহুর্ত ছিল সেটা । বাইকটি হাতে পেয়েই সবাইকে শো-রুমে বসিয়ে রেখে আমি এক টানে খুলনা শহর এক-চক্কর দিয়ে আসলাম ।
বাইক চালানোর পেছনের মূল কারনঃ
- প্রতিদিন যাতায়াত
- শখ
- ব্যক্তিত্ব বজায় রাখা
- বাইকিং ভালবাসা
- ঘুরতে যাওয়া
- সময় এবং টাকা সাশ্রয়ী
Honda XBlade 160 বাইকটি চালানোর মূল কারনঃ
- রোবো ফেইস লুক
- ব্রেকিং
- ওয়েট ব্যালান্স
- কন্ট্রোলিং
- মাইলেজ
- অলটাইম হেডলাইট অন (AHO)
- আমার বাজেটের মধ্যে
হোন্ডা এক্স-ব্লেড বাইকটি ১৬০ সিসি সেগমেন্ট এর নেকেড স্পোর্টস বাইকের মধ্যে অন্যতম সুন্দর এবং অসাধারণ একটি বাইক।
Honda XBlade 160 এর প্রধান ফিচারগুলো হচ্ছেঃ
- রোবো ফেস এলিডি হেডল্যাম্প
- স্ট্রিট টেক ডিজিটাল মিটার
- ডুয়াল আউটলেট মাফলার
- রেয়ার এজ T শেপইড এলইডি টেল ল্যাম্প
- এগ্রেসিভ ও মাস্কুলার ফুয়েল ট্যংক
- হাগার ফেন্ডারের সাথে মোটা টায়ার
- শক্তিশালী ১৬০ সিসি ইঞ্জিন
- আরামদায়ক গ্রেইব রেইল
- হ্যাজারড সুইচ
- লো মেইন্টেনেন্স সিল চেইন
সার্বিক দিক দিয়ে ডিজাইনটা ব্যতিক্রম, মাস্কুলার এবং এগ্রেসিভ শেপ ফুয়েল ট্যংক এবং বডি কিটস সব কিছু অনেক যত্নসহকারে এখানে স্থাপন করা হয়েছে। সিটিং পজিশন স্প্লিট না কিন্তু পেছনের দিকে একটু উচু, গ্রাবরেল যেটা বোঝায় যে হোন্ডা সুনিপুণ ভাবে ডিজাইনের বিশেষ ছোঁয়া দিয়েছে। ডুয়াল আউটলেট মাফলার স্পোর্টস লুক এনে দিয়েছে এবং নতুন সংযুক্ত বিষয় গুলো ডিজাইনে অতিরিক্ত একটা প্রভাব ফেলেছে। শুধু তাই নয় পাঁচ স্টেপের এলয় রিম এবং সুন্দর ডিজাইনের ডিস্ক প্লেট , দারুণ কালার কম্বিনেশন বাইকটাকে আরও বেশি ফুটিয়ে ও চোখ ধাঁধানো করে তুলেছে ।
সাসপেনশনের দিক থেকে হোন্ডার এই বাইকটিতে এর সহদর বাইক গুলোর মতই ফিচারস রয়েছে । সামনের দিকে টেলিস্কোপিক এবং পেছনের দিকে মনোশন সাসপেশন ব্যবহার করা হয়েছে । যা চলার পথকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে । ভালো কন্ট্রোলিং ও সেফটির জন্য হয়তো নতুন এই মডেলের সাথে CBS অথবা ABS আশা করা যায়। কিন্তু এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক কিন্তু সেগুলোর কার্যকারিতা অন্যান্য বাইকের থেকে অনেকগুণ ভালো। সামনের চাকায় ২৭৬ মিমি এর ডায়ামিটার ডিস্ক প্লেট এবং পেছনের চাকায় ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে ।
Honda X Blade 160 In Bangladesh
দুই দিকেই ৫ স্টেপ এলয় হুইলসহ টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। আরও ভালো গ্রিপিং এবং করনারিং এর জন্য পেছনের দিকে বেশ চওড়া টায়ার লক্ষ্য করা যায় । সামনের দিকে ৮০/১০০-১৭ এবং পেছনের দিকে ১৩০/৭০ -১৭ টিউবলেস টায়ার রয়েছে । তাই বলা যায় যে হ্যান্ডেলিং কিংবা কর্নারিং করতে রাইডারকে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে না। এক্স ব্লেডে ফুল ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট লক্ষ্য করা যায়।
সেটাকে বলে স্ট্রিট টেক ডিজিটাল মিটার যা যে কেউ একবার দেখলে পছন্দ করবেই এবং সেগুলো ভালোভাবে পড়া যায়। আরপিএম ইন্ডিকেটর, গিয়ার ইন্ডিকেটর এবং স্পিডোমিটার, ঘড়ি, দুইটা ট্রিপ এবং একটি ওডোমিটার ও ফুয়েল গেজ ইন্ডিকেটর লক্ষ্য করা যায়। ইলেকট্রিক্যাল দিকের মধ্যে আমি প্রথমেই উল্লেখ করেছি যে এখানে প্রথমবারের মত রোবো ফেইস এলইডি হেডল্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাথে পেছনের দিকে রয়েছে টি শেপের এলিডি রেজর এডজ টেল ল্যাম্প। অন্যদিকে আরেকটি নতুন ফিচারস রয়েছে সেটা হল হ্যাজারড ল্যাম্প, যা রাইডার জরুরী কোন মুহূর্তে দুইটা ইন্ডিকেটর একত্রে ব্যবহার করতে পারবেন । আর এসকল ইলেকট্রিক্যাল দিক পরিচলনা করার জন্য ১২ ভোল্টের ব্যাটারী হোন্ডা এক্স ব্লেডে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিদিন বাইকটি চালানোর সময় সত্যি বলতে আমার মনের মধ্যে অসাধারণ অনুভূতি কাজ করে । নিজেকে খুব সুখী মনে হয় ।
সার্ভিসিংঃ আমার বাইকটি এখন অবধি এক বার সার্ভিসিং করেয়েছি। মমো মটর্স খুলনা, নিরালা থেকে এবং তারা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। আমি সার্ভিসিং নিয়ে সন্তুষ্ট ।
মাইলেজঃ আমি প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার রাইড করেছি আমার বাইকটি। যার এভারেজ মাইলেজ পেয়েছি সিটি তে ৫২/৫৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার অকটেনে এবং হাইওয়ে তে পেয়েছি ৫৬/৫৭ কিলোমিটার প্রতি লিটার অকটেনে যা আমাকে সত্যি অবাক করেছে এবং আমি হাইলি স্যাটিসফাইড মাইলেজ নিয়ে ।
ইঞ্জিন ওয়েলঃ আমি আমার বাইকে প্রতি ৫০০ - ৬০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করি। এবং ইঞ্জিন ওয়েল হিসাবে ব্যবহার করি Honda 10W30 Genuine । আমার নতুন ইঞ্জিনের জন্য পারফেক্ট বলেই মনে হচ্ছে আমার কাছে ।
সবাই যেনে থাকবেন যে Honda bikes এর পার্টস যথেষ্ট বেশি টেকসই । এখনো অবধি আমার বাইকের কোন পার্টস চেইঞ্জ করতে হয়নি এবং কোন মডিফাইড ও করা হয়নি । বাইক টিতে আমি সর্ব্বোচ্চ গতি তুলেছি ১১৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা । তবে উচ্চগতি পরিহার করাই বুদ্ধিমান ও স্মার্ট বাইকারের কাজ ।
বাইকটির ৫ টি প্রধান ভাল দিকঃ
- পারফেক্ট ভ্যাল্যু ফর মানি
- ভেরি নাইস ব্রেকিং,কন্ট্রোলিং ওবং ওজন ভারসাম্য
- অসাধারণ রোবোটিকস লুকস + অলটাইম হেডলাইট অন
- এই সেগমেন্ট এ বেস্ট মাইলেজ
- ভেরি কম্ফোর্ট রাইডার এবং পিলিয়ন সিটিং পজিশন ও স্মুথ সাউন্ড + স্মুথ রাইডিং
বাইকটির ৫টি খারাপ দিকঃ
- সামনের চাকার টায়ার টা ৮০/১০০/১৭ মানে একটু চিকন
- বিল্ড কোয়ালিটি আরেকটু ভাল আশা করেছিলাম
- বাইকটির ২য় গিয়ারে তুলনামূলক পাওয়ার কম। তবে ৩য় ও ৪র্থ গিয়ারে খুব ভাল পাওয়ার জেনারেট করে
- বাইকটিতে ইঞ্জিন লিকুইড কুলিং করতে পারতো
- পেছনের ড্রাম ব্রেকটা ভাল যথেষ্ট। তবুও দাম একটু বাড়িয়ে হলেও রেয়ার ব্রেকটা ডিস্ক দিলে বেশি বেটার হতো বা এই সময়ে এবিএস/সিবিএস সব বাইকারেরই কাম্য ।
লং ট্যুর বাইকটি দিয়ে এখনো খুব বেশি লম্বা দুরত্বে যাইনি। তবে কয়েকবার খুলনা-গোপালগঞ্জ-খুলনা গিয়েছি । হাইওয়ে তে বাইকটি অনেক বেশি স্মুথ বিশেষত ৪র্থ এবং ৫ম গিয়ারে এবং রেডি পিক-আপ যথেষ্ট ভাল । পরিশেষে আমি এই মন্তব্য করতে পারি যে, কিছু সামান্য নেগেটিভ সাইড বাদে এই বাজেটের মধ্যে আমার কাছে বাংলাদেশে Honda XBlade 160 বাইকটি সেরা মনে হয়েছে । যে কেউ ২ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে নেকেড স্পোর্টস, সুন্দর লুক এবং স্টাইলিশ, স্টান্ডার্ড,সাশ্রয়ী একটি বাইক যদি খুজে থাকেন তবে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে; "The street-allrounder Honda X-Blade"। ধন্যবাদ সবাইকে ।
লিখেছেনঃ চয়ন শেখ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।