Honda Livo 110cc ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - জহুরুল আলম সানী

This page was last updated on 14-Jul-2024 03:09pm , By Ashik Mahmud Bangla

আমি মোহাম্মদ জহুরুল আলম সানী। Honda Livo 110cc নিয়ে আমার কিছু গল্প আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আমি পেশায় একজন চাকুরিজীবী। বর্তমান এ চট্টগ্রাম এর দামপারায় বসবাসরত আছি।

Honda Livo 110cc ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - জহুরুল আলম সানী 

honda livo 110cc bike in bangladesh

একটা সময় ছিল যখন আমার বাসা থেকে বাইক চালানোর অনুমতি ছিল না। সাধারণত সাইকেল কিনে দেওয়া নিয়েই বাসায় অনেক ঝগড়া হতো আমার। আমি এক কোচিং এ পড়তাম। সেখানের স্যার সাদ্দাম ভাই ছিল একদম'ই বন্ধু সুলভ ব্যক্তি। তার একটা Bajaj Pulsar বাইক ছিল। তার কাছ থেকেই বাইক নিয়ে লুকিয়ে বাইক ড্রাইভ করা শিখি আমি। জাস্ট তার চাবিটা পেলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিতাম। এই বাইক চালানো শেখার জন্য বন্ধু রিয়াজও আমাকে অনেক হেল্প করতো। মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ যাওয়ার পরেই বাইক চালানো শিখে গেছি আমি।

তারপর প্রায়ই হুটহাট করে বড় ভাইয়ের বাইক নিয়ে বাসায় চলে আসতাম। এসব দেখে আব্বু আম্মু খুব'ই রাগ করতো। তবে আব্বু হচ্ছেন সেরা একজন মানুষ। যে আম্মুর কাছে ভাল থাকার জন্য তার সামনে আমাকে বকতো, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমাকে সাপোর্ট দিতো তবে আমাকে বুঝতে দিতো না সেটা।

livo motorcycle in bangladesh তারপর একদিন হুট করে Honda Livo 110 কিনেই ফেলি। অবশ্যই বাইক কিনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি। এটা সম্ভব হয়েছে আমার প্রিয় বাবার জন্য। ২০১৮ আগস্ট এর প্রথম দিন মানে এক তারিখে এই বাইকটা আমি কিনি। বাইকটি কিনেছিলাম আগ্রাবাদ মোড় honda motorcycle এর শো-রুম থেকে। সার্ভিস এক কথায় অসাধারন। আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত ৪ বার ফ্রি সার্ভিস করেছি। বাইকটি এখন পর্যন্ত ২০,০০০ কিলোমিটার চলেছে। সব কিছু আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো পারফর্মেন্স দিচ্ছে। 

বাইকটির  কিছু ভালো দিকঃ

  • বাইকের লুকস। ১১০ সিসি বাইকের মধ্যে আমার দেখা সেরা বাইক।
  • এর পিকআপ রেস্পন্স এক কথায় অসাধারন, বেশ স্মুথ।
  • স্মুথলি গিয়ার শিফটিং হয়। ৮০/৮৫  অনায়াসে ওঠে।
  • মাইলেজ খুব ভালো।
  • ব্রেকিং সিস্টেম বেশ ভালো।

বাইকটির  কিছু খারাপ দিকঃ

  • প্রথমত পেছনের চিকন টায়ার।
  • অল্প বৃষ্টিতে ব্রেক করলে গাড়ি স্কিড করে।
  • ১১০ সিসি সেগমেন্টের বাকি বাইক গুলো থেকে পাওয়ার কিছুটা কম ।
  • ১ থেকে ৩ গিয়ার এ ভালো থ্রটল রেস্পন্স পাওয়া যায় কিন্তু ৪ নম্বর গিয়ারে পাওয়ার একটু কমে আসে।
  • পেছনের শক এবজরবার গুলো দূর্বল মনে করি।  ভাঙা রাস্তায় পিলিয়নের বসতে কষ্ট অনুভব হয়।
  • হেডলাইট এর আলো খুব কম, রাতে রাইড করতে কষ্ট হয় ।

tour guide tips

বাইক নিয়ে এখন পর্যন্ত আমার তোলা টপ স্পীড ১০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। ইন্জিনটি বেশ শক্তিশালী। ভালো পাওয়ার রিলিস করে। আমি সিনথেটিক ইন্জিন ওয়েল ইউস করি 10w30 গ্রেডের। সামনের ডিস্ক ব্রেকটি এক কথায় অসাধারন। খুব কম সময়ে গতি কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। বাইকটির মাইলেজ নিয়ে আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক সন্তুষ্ট। সিটিতে ৪৫ থেকে ৫০ এবং হাইওয়েতে ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি। 

মডিফাই- পেছনের টায়ার, ৮০/১০০/১৮ সাইজের টায়ার দিয়ে যেহেতু আমার বাইকটি চালাতে অসুবিধে হচ্ছিল সেহেতু চেন্জ করে হাঙ্ক এর ১০০/৯০/১৮ টায়ারটি লাগিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন বাইকটির ব্যালেন্স এবং কর্নারিং এ বেশ ভালো কনফিডেন্স পাচ্ছি । সামনের উইন্ড শিল্ড লাগিয়েছি। বাইকের সামনের লুক ওটার জন্য আর ও জোস হয়ে গেসে। বাতাস কমপ্রেসার ও ইন্জিন এ ভালো বাতাস লাগানোর জন্য ইন্জিন গার্ডটি লাগানো। স্টক এর হেন্ডেলবার দিয়ে রাইড করতে একটু কষ্ট হতো ৫ ফুট ৮ ইন্চি আমার উচ্চতা। ৩/৪ ঘন্টা চালালেই কাধ ব্যাথা হতো। তাই এটি পরিবর্তন করেছি। 

honda motorcycle price in bangladesh

ভ্রমন- এই পর্যন্ত Honda Livo 110 নিয়ে আমি অনেক জায়গায় ভ্রমন করেছি যেমন: পতেঙ্গা, কুমিরা ঘাট,ভাটিয়ারী ইত্যাদি। এরপর একটু একটু করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল লাগা শুরু হয় আরেকটু দূরে দূরে রাইড করা শুরু করি। যেমন: কাপ্তাই, বাঁশখালী, পার্কি বীচ, কে-ইপিজেড, আনোয়ারা, পটিয়া, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, বাড়বকুন্ড, গুলিয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ফেনী ইত্যাদি। এখন খাগড়াছড়ি যাওয়ার ইচ্ছে আছে, সেটাও হবে ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি। কখনো সাথে প্রিয় বাবা, বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাই, যখন যাকে পেয়েছি তাকে নিয়েই ঘুরেছি। অফিসের কলিগ, ভাই ব্রাদার অনেককেই সাথে নিয়ে ঘুরাঘুরি হয়েছে। আমি আমার বাইকটি নিয়ে সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত আমার বাইকটি নিয়ে বড় ধরনের কোণ সমস্যা হয়নি। অনেক ঘুরেছি এই পর্যন্ত। এখনো ঘুরাঘুরি কন্টিনিউ রাখতে খুব ইচ্ছে করে, কর্মস্থলের ব্যস্ততার জন্য হয়ে ওঠেনা। তবে যখন'ই সুযোগ পাই সুযোগ কাজে লাগাই। এই ব্যাপারে আমি আবার খুব'ই সুযোগ সন্ধানী। ভ্রমন করলে আমার মন অনেক ভাল থাকে, আর মন ভাল থাকা মানে লাইফের সব ঠিকঠাক। 

honda livo 110cc bike tour tips

পরিশেষে একটা কথাই বলব, কোন বাইক ই আপনাকে ১০০% সন্তুষ্ট করতে পারবেনা। ভালো খারাপ নিয়ে প্রতিটা বাইক। নিজের মনের মত করে আপনার বাইকটি যত্ন নিয়ে ব্যবহার করুন, আপনার বাইক আপনাকে বেস্ট পারফর্মেন্স দিবে । সর্বদা হেলমেট পরে বাইক রাইড করুন । ধন্যবাদ।   

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ জহুরুল আলম সানী   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।