Honda Livo 110cc টপ স্পিড ৮৫ কিলোমিটার/ঘন্টা - মহিউদ্দিন
This page was last updated on 27-Jul-2024 09:17am , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ মহিউদ্দিন এবং পেশায় একজন ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি ঋণ কার্যক্রম সম্বলিত একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকুরী করি। আমি একটি Honda Livo 110cc বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার এই বাইকটির ব্যাপারে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের কাছে শেয়ার করতে চাচ্ছি ।
Honda Livo 110cc টপ স্পিড ৮৫ কিলোমিটার/ঘন্টা - মহিউদ্দিন
আমার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। চাকুরীসূত্রে থাকি হচ্ছে হবিগঞ্জে। এইচএসসি কমপ্লিট করার পর থেকে ভ্রমণ এর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। প্রায় প্রতি মাসেই কোন না কোন একটি ট্যুরিস্ট স্পটে ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়তাম। এমন সময় চাকুরীটাও হয়ে গেল ফলে চাকুরীতে জয়েন করলাম।
চাকুরীতে যেহেতু ফিল্ড পর্যায়ে কাজ করতে হয় সেই জন্য এবং ভ্রমণটাকে আরেকটু সহজ লভ্য করে তুলতে আমার একটা বাইক জরুরী ছিল। এমন একটা বাইক যেটা দেখতে হবে আকর্ষনীয়, বেশি মাইলেজ, ভালো কন্ট্রোলিং এবং আমার শারীরিক উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ (৫ ফুট ৮ ইঞ্চি) হবে।
রাস্তায় যখন প্রথম Honda Livo 110 বাইকটি দেখেছিলাম তখনই তার আকর্ষনীয় লুকিং আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। পরে ইউটিউবে অন্যান্য বাইকগুলির সাথে তুলনামূলক রিভিউ দেখে সর্বশেষ Honda Livo 110cc সিসির বাইকটি নিতে মনস্থির করলাম।
প্রথমে হবিগঞ্জ শো-রুমে খবর নিয়ে জানতে পারলাম Honda Livo 110cc বাইকটি আপাতত তাদের স্টকে নেই। অনেকদিন অপেক্ষা করার পরেও যখন হবিগঞ্জ শো-রুম থেকে বাইকটি পাচ্ছিলাম না তখন Honda bikes এর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট Bangladesh Honda Private Limited এর মাধ্যমে কুমিল্লা সামিয়া অটো মটরসের সাথে যোগাযোগ করে দেখি বাইকটি তাদের কাছে এভয়লেভল আছে।অতঃপর ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ সালে ছুটির দিন থাকায় সেদিন সকালে দুইজন কলিগকে নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। এবং কুমিল্লায় পৌঁছে দুপুরের খাবার শেষ করে সামিয়া অটো মটরসে যাই। গিয়ে কলিগের পছন্দমতো লাল রঙ্গের হোন্ডা লিভো ১১০ সিসির ড্রাম ব্রেকের বাইকটি নিয়ে নিলাম। আমি নতুন রাইডার হওয়ায় ড্রাম ব্রেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
যাই হোক, বাইকটির ডিজিটাল মিটারে ফুয়েল ইন্ডিকেটর, সার্ভিসিং রিমাইন্ডার, ট্রিপ অপশন, টাইম সেটাপ অপশন থাকায় এবং বাইকটি টিউবলেস টায়ার হওয়ায় আমার কাছে আরো ভালো লেগেছিল। তাছাড়া ম্যানেজার সোহেল ভাইয়ের চমৎকার ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করেছিল। বাইকটির দাম নিয়েছিল ১,০৭,০০০ টাকা । তারা বাইকের সাথে একটা ডাস্ট কভার আমাকে উপহার দিয়েছিল ।
Click To See Honda Livo 110cc 2019 Edition First Impression Review
ডিলার পয়েন্টের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। কুমিল্লা থেকে বাইক নিয়ে হবিগঞ্জে ফিরে আসার প্রথম দিনের এই পারফরম্যান্স থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম বাইক কিনার সিদ্ধান্তটা নিতে আমি বিন্দুমাত্রও ভূল করিনি।
শুরুর দিকে মাইলেজ পেতাম শহরে ৪৫ ও হাইওয়েতে ৫০ এর মতো। ঠিকঠাক মতো ব্রেকিং পিরিয়ড শেষ করার পর থেকে এখন অবধি শহরে প্রায় ৬৩ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৬৫+ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।
Honda Livo 110cc ৪০০ কিলোমিটার চালিয়ে প্রথম ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করার পাশাপাশি প্রথম ২০০০ কিলোমিটারে ৩ বার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি। তারপর থেকে প্রতি ৯০০ কিলোমিটার চালিয়ে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতাম। শুরুর দিকে 10W30 গ্রেডের হোন্ডা ব্র্যান্ডের ডিফল্ট ইঞ্জিন অয়েলটা ব্যবহার করতাম।
মাঝখানে কয়েকমাস শেল এডভান্স ব্যবহার করেছি এবং বর্তমানে একই গ্রেডের মতুল ব্যবহার করছি। এখন পর্যন্ত মতুল ব্যবহার করেই বাইকের ইঞ্জিন সবচেয়ে বেশি স্মুথ এবং কমফোর্টেবল মনে হয়েছে।
হোন্ডা ব্র্যান্ডের যে বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো - আমার বাইকের ১ম, ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ সার্ভিসিং এর সময় প্রতিবারই সামিয়া অটো মটরস থেকে আমাকে ফোন দিয়েছে তাদের শো-রুমে গিয়ে বাইক ফ্রী সার্ভিসিং করিয়ে নিয়ে আসার জন্য। তবে কাছাকাছি হবিগঞ্জে শো-রুম থাকায় আমি এখান থেকেই সার্ভিসিং করিয়ে নিয়ে নিতে পেরেছি।
তারা বেশ আন্তরিকতার সাথেই আমার প্রতিটা সার্ভিসিং সম্পন্ন করে দিয়েছে। হবিগঞ্জ শো-রুম শেখ মটরসের ম্যানেজার জনাব মাসুদ চৌধুরী ভাই ও বাইকের ব্যাপারে আন্তরিকতার সহিত বিভিন্ন গাইডলাইন দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত আমার বাইকের বয়স আঠারো মাস, চালিয়েছি প্রায় ১৯০০০ কিলোমিটারের মতো। তন্মাধ্যে সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন, ১বার ব্যাক লাইটের ১টি বাল্ব, আর একটা এয়ার ফিল্টার ছাড়া আর কোন পার্টস পরিবর্তন করতে হয়নি। ১৯০০০ কিলোমিটারের পথযাত্রায় এখন পর্যন্ত আমি বাইকটির টপস্পিড ৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত পেয়েছি।
Honda Livo 110cc বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- বাইকটি দেখতে আকর্ষনীয়
- মাইলেজ তুলনামূলক বেশি
- ব্রেকিং সিস্টেম ভালো
- ডিজিটাল মিটারে টাইম ও ট্রিপ অপশন আছে
- যথেষ্ট কম্ফোর্ট
Honda Livo 110cc বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- ইঞ্জিন লং রাইডে গরম হয়ে যায়
- পার্টসের দাম তুলনামূলক বেশি
- পিছনের চাকা চিকন
- ডিলার পয়েন্ট ছাড়া সব জায়গায় পার্টস পাওয়া যায় না
- হেডলাইটের আলো কম
মজার ব্যাপার হলো প্রথম দিকে পরিচিত যারা হোন্ডা লিভো সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিলনা তাদের অনেককেই বিশ্বাস করাতে পারতাম না যে এটা ১১০ সিসির বাইক। তাদের ধারনা ছিলো বাইকটি ১২৫ কিংবা ১৫০ সিসির হবে হয়তো।
১৮ মাস বয়সী এই বাইকটাকে নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত অনেক জায়গা ভ্রমণ করেছি। হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চুনারুঘাট, আজমিরীগঞ্জ হাওর অঞ্জল সহ হবিগঞ্জের প্রায় সবকটি চা বাগান।
শ্রীমঙ্গের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বিটিআরআই, জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, ফিনলে চা বাগান, বধ্যভূমি ৭১, নীলকণ্ঠ চা কেবিন। এবং কুমিল্লার ধর্মসাগর পাড়, বার্ড, শালবন বিহার, বৌদ্ধ মন্দির, ব্লু ওয়াটার পার্ক ইত্যাদি জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করেছি।
সবকিছু মিলিয়ে বলা চলে বাইক কেনার ব্যাপারে Honda Livo 110cc কে বেছে নিয়ে আমি আসলে হেরে যাইনি। প্রয়োজন মনে করলে আপনিও কম বাজেটে কমফোর্টেবল ও আকর্ষনীয় এই বাইকটিকে সঙ্গী করে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ মোঃ মহিউদ্দিন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।