Honda Livo 110 ৬০০০ কিলোমিটার রাইড - নাসির উদ্দীন
This page was last updated on 25-Jul-2024 05:24pm , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ নাসির উদ্দীন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করি। আমার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আজ আমি আপনাদের আমার রাইড করা Honda Livo 110 বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করব। চলুন দেখে আসি Honda all bike price in Bangladesh রিভিউটির পাশাপাশি।
Honda Livo 110 ৬০০০ কিলোমিটার রাইড - নাসির উদ্দীন
যশোরে ৪ বছর ধরে আছি। এখানে নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করাতে হয়। আমি যখন থার্ড ইয়ারে পড়াশোনা করি তখন আমার টিউশনির চাপ অনেক বেড়ে যায়। সাইকেল চালিয়ে ৬-৭ কিলোমিটার দুরে যেতে হয়। এতে দেখলাম এতগুলো টিউশনি সামলাতে গিয়ে আমার অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই ভাবলাম যদি কম বাজেটে একটা বাইক হতো তাহলে অনেক ভালো হতো। বাইক কিনতে ১ লাখ টাকার কিছু উপরে লাগবে । কিন্তু আমার কাছে এত টাকা নেই। পরে খোজ নিয়ে জানলাম যে, হোন্ডা কোম্পানি কিস্তিতে বাইক দিচ্ছে।
আমার কাছে কিছু টাকা ছিলো আর কিছু টাকা বন্ধু মহলের থেকে কিছু টাকা ঋণ নিলাম। বাকি টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার প্লান করলাম। যেহুতু আমার বাড়ি যশোর নয়, তার কিস্তিতে বাইক কিনার জন্য একজন গ্যারান্টার লাগবে। এসময় আমাকে সাহায্য করলেন আমার ছাত্রীর বাবা আজিম খান। ছোট বেলা থেকেই বাইকের প্রতি একটা আগ্রহ ছিলো কিন্তু আমি কখোন স্বপ্নেও ভাবিনি যে, টিউশনি করিয়ে ছাত্র অবস্থায় বাইক কিনতে পারবো। বাইক কেনার সময় অনেকে আমাকে কিনতে নিষেধ করেছিল কিন্তু আমার প্রয়োজনীয়তা আমি অনুভব করেই আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকি। এর আগে কখনোও সেভাবে বাইক চালাইনি। মোটামুটি পারতাম আর কি। ইউটিউব ও আশেপাশে খোজ নিয়ে দেখলাম যে কম বাজেটে Honda Livo 110 দারুণ হবে।
আমি দেখতে হালকা পাতলা ধরনের। তাই বাইকের কন্ট্রোলের বিষয়টি মাথায় রেখে ১১০সিসি সেগমেন্টের বাইককে বেছে নিলাম। Honda Livo 110 দেখে আপনার কখোনো মনে হবেনা যে এটি ১১০ সিসি সেগমেন্টের বাইক (এটা দেখে আপনার আরও বেশী সিসি বাইক মনে হবে)। বাইকটির ফিচারের মধ্যে ডিজিটাল মিটার, অসাধারণ লুকিং, BS-6 ইঞ্জিন সহ স্পেসিফিকেশন গুলো দারুন। আর জাপানের হোন্ডা কোম্পানির প্রতি আমার অগাধ আস্থা আগে থেকেই ছিলো। ০৬ অক্টোবর ২০১৯, কোন এক সকালে বাইক কিনার জন্য আমার বন্ধুর সাথে যশোর হোন্ডা শোরুম ভেনাস অটো তে গেলাম। সেখানে ১ লাখ ১১ হাজারে বাইকটি কিনলাম এবং সাথে ২ বছরের জন রেজিষ্ট্রেশন বাবদ আরও ১৪০০০/- টাকা দিলাম।বাইকটির ৪ টি কালার ছিলো (কালো, লাল, ধূসর ও নীল) আমার পছন্দের নীল কালারের বাইকটি কিনলাম।
ড্রাইভিং লাইসেন্স বাইক কিনার আগেই প্রসেস শুরু করেছিলাম। বাইক কিনার দিনই হেলমেট কিনে ফেললাম। যথারীতি বাইক কিনে ও প্রসেস করতে প্রায় দুপুর ২ টা বেজে যায়। মজার ব্যাপার হলো সেদিনই হাত কাঁপতে কাঁপতে বাইক নিয়ে আমার মেসে পৌছালাম। শুরু হলো আমার বাইকিং জীবনযাত্রা। আমি যখন প্রথম Honda Livo রাইড করি তখন আমার কাছে এটা তেমন কঠিন মনে হয়নি। কারন, হোন্ডা লিভোর ব্যালেন্স ও কন্ট্রোল অনেক স্মুথ। আমি যেহুতু এই বাইক নিয়েই গাড়ি চালানো শিখেছি তাই বাইকটিতে শুরুর দিকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পেতাম। বাইকটিতে শহরে ৫৫ এবং হাইওয়েতে ৬২ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পেয়েছি।
এখন গড়ে ৫৫ - ৫৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাই। আমি সবসময় বাইকে অকটেন তেল ব্যবহার করি। আমি প্রথম ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড ভালোভাবে মেইনটেইন করেছি। এ কারনেই আমার বাইকের সাউন্ড এখনও অনেক স্মুথ। প্রতি হাজার কিলোমিটারে আমি হোন্ডা কোম্পানির 10w30 ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করেছি। বাইকটিতে আমি সর্বোচ্চ ৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা টপস্পিড উঠিয়েছিলাম। আরও উঠাতে গেলে মনে হচ্ছিল বাতাসে ভেসে যাবো। বাইকটিতে পরে আমি শখের বশে পিছনের চাকায় মাড গার্ড ও সামনের দিকে উইন্ডশীল্ড লাগিয়ে নিয়েছি। আমার কাছে এখনও মনে হয় হোন্ডা লিভো কিনে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বাইকটি কেনার পর আমি Bikebd অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে আমার অনুভূতি প্রকাশ করেছিলাম, সেখানে বিপুল পরিমান মানুষের উৎসাহ ও সাড়া পেয়েছিলাম। এটা আমার অনেক ভালো লেগেছিলো।
বাইকটি নিয়ে আমি যশোর হতে আমার গ্রামের বাড়ি ৩০০ কিলোমিটার দুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাতায়াত করি। লং ড্রাইভে বাইকটি অনেক ভালো। লং ড্রাইভে আমার কখনও কোমর/পা ব্যাথা করেনি। তবে ঘণ্টা খানেক চালিয়ে হালকা রেস্ট নিতে হয় নইলে পাঁজর জ্বালাপোড়া করে একটু। বাইকটি রেগুলার ব্যবহার করি অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে। হোন্ডা শোরুম থেকে অলরেডি ৩টি রেগুলার সিডিউলের (১মাস, ৪ মাস, ৮ মাস) সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছি।
বাইকটির ৫ টি ভালো দিক -
- বাইকটির লুকিং অসাধারণ
- কম্ফোর্ট অনেক ভালো
- মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট
- ইঞ্জিন সাউন্ড অনেক স্মুথ
- ব্রেকিং সিস্টেম ভালো
বাইকটির ৫ টি খারাপ দিক -
- ৬০ এর উপরে স্পিড উঠতে চায়না সহজে
- পিছনের চাকা চিকন হওয়াতে স্কিডিং হয় বেশী
- ইঞ্জিন গরম হয় খুব
- ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় সাসপেনশনে সমস্যা হয়
- রাতের বেলায় হেড লাইট এর আলো অনেক কম
আমি বাইকটি স্বল্প দুরুত্বে যাতায়াতের জন্য রেগুলার ইউজ করছি। শহর কিংবা হাইওয়েতে চালানো যায় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। কম বাজেটে গর্জিয়াস লুকিং এবং মাইলেজের ক্ষেত্রে এটা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। ১১০ সিসি সেগমেন্টের সেরা বাইক এটি। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ মোঃ নাসির উদ্দীন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।