Honda Livo ৩৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - ইমতিয়াজ হাসান খান
This page was last updated on 18-Jul-2024 03:40am , By Raihan Opu Bangla
আমি ইমতিয়াজ হাসান খান। আমি হামজারবাগ, চট্টগ্রাম থাকি । আজ আমি আমার বর্তমানে ব্যবহার করা Honda Livo 110 বাইকটি ৩৫০০ কিলমিটার চালানোর পরে কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চাই ।
Honda Livo ৩৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
আমার সর্বপ্রথম বাইক ছিলো Yamaha RX 100 । Yamaha RX 100 বাইকটি আমি শুধুমাত্র বাইক রাইডিং শেখার জন্যই নেই । ছোটবেলা থেকেই শখ ছিলো আমার দেশটা সম্পূর্ণ ঘুরে দেখার । আর যদি হয় সেটি বাইক দিয়ে তাহলে তো কথাই নেই । বাইকিং ভালোবাসার একটাই কারণ যাতায়াতের ক্ষেত্রে সময় অপচয় খুব কম হয় । অতি সহজে অল্প সময়ের মধ্যে বাইকের মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়, যা অন্য কোন যানবাহনের মাধ্যমে স্থলপথে সম্ভব না । আমার বর্তমান ব্যবহার করা বাইকটি হলো Honda Livo 110cc । এই বাইকটি নেওয়ার একমাত্র কারণ হলো 110 cc বাইক গুলোর মধ্যে Honda Livo যে সার্ভিস দেয়, আমার মনে হয় না অন্য কোনো 110cc এর বাইক তা দিতে পারে। আমি এই বাইটি বেছে নেওয়ায় আরো একটি কারণ হলো বাইটির লুকস । বাইকটি দেখে মনেই হয় না যে এটি একটি স্বল্প বাজেটের ১১০ সিসি একটি বাইক ।
আমি যখন বাইকটি কিনি তখন Honda livo 110 cc বাইকটি শোরুম প্রাইজ ছিল ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা । যা আমি কিনেছিলাম আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম Honda Bike এর অফিশিয়াল শোরুম থেকে । আমার এই বাইকটি কিনার আগে Youtube এ প্রচুর বাইকের রিভিউ দেখেছি কোনো বাইটি এই বাজেটের মধ্যে বেস্ট হবে খুজেছি । সব কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম Honda livo বেস্ট হবে আমার জন্য । তাই বাইক কিনতে যাওয়ার আগেই আমার বাইক পছন্দ করা ছিলো বলেই কিনতে গিয়ে কোনো বিব্রতবোধ করতে হয়নি ।
যদিও কালারটা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম । তা অবশ্যই পরবর্তীতে শোরুমে গিয়ে সবকিছু বিবেচনা করে পছন্দ করলাম গ্রে কালারটাই বেস্ট, সুতরাং বাসায় পাশেই যেহেতু শোরুম ছিলো । তাই বাইক কিনতে এক বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলাম । শো-রুম থেকে বের করে বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভূতি ছিলো এক কথায় অসাধারণ । কেননা প্রথমবারের মতো নিজে গিয়ে বাইক কিনা এবং সেই বাইক নিয়ে বাসায় রাইড করে আাসা এটা ছিল আমার জন্য অনেক আনন্দের একটা মুহুর্ত ।
আমার বাইকটি চালাবার পেছনে মূল কারণ হলো অবসর সময়ে রাইড শেয়ার করে নিজের বাইকের মেইনটেন্যান্স খরচ নিজে বহন করা , এবং নিজের পকেট খরচ চালানো ও সেই সাথে ট্যুর করা তো আছেই । রাইড শেয়ারের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে মাইলেজ যেটার জন্য লিভো বাইকটি অসাধারন । বাইকের ফিচারগুলো সম্পর্কে বলতে গেলে এক কথায় এই বাজেটে অসাধারণ ফিচার সমৃদ্ধ একটি বাইক বলা যায় । প্রথমতো, লুকস যা আমি আগেও বলেছি । দ্বিতীয়ত, মাইলেজ যা আমাকে অন্য কোনো বাইক দিতে পারবে নাকি ঠিক জানি না । এছাড়া কম্ফোর্ট ব্রেকিং সিস্টেম তো আছেই।
আমি যখন প্রতিদিন আমার বাইকটি চালাই আমার কাছে অনেক কমফোর্ট লাগে । মাইলেজ বেশি হওয়ার আমার কাছে খুবই ভালো লাগে আমার বাইকটি । বাইকটি সল্প খরচে অনেকটা পথ যাওয়ার সাহস যোগায় আমাকে । এখন পর্যন্ত আমি বাইকটি ৩ বার সার্ভিস করিয়েছি । প্রতিবারই অফিসিয়াল Honda Showroom থেকে ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি । প্রথমবার সার্ভিসিং করাই ৬০০ কিলোমিটার পর, ইন্জিন ওয়েল চেঞ্জ করি এবং সম্পূর্ণ বাইক চেকআপ করে ওয়াস করে দেয় । এইভাবে দ্বিতীয় বার ১৬০০ কিলোমিটার পর সার্ভিস করাই। সবশেষ তৃতীয় সার্ভিস করাই ২৬০০ কিলোমিটার পর । সার্ভিস এর মান খুব ভালোই ছিল আমার সার্ভিস নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি ।
২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমি মাইলেজ ৫০-৫৫ পেতাম কিলোমিটার প্রতি লিটার। ২৫০০ কিলোমিটার পর এখন মাইলেজ পাচ্ছি ৬০-৬২ কিলোমিটার প্রতি লিটার। যা এই সেগমেন্ট এ অসাধারন মাইলেজ বলা যায়। মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট । যত্ন ও মেইনটেন্যান্স এর ক্ষেত্রে আমি প্রতি ১০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে ইন্জিন ওয়েল চেঞ্জ করে ফেলি । কেননা ইন্জিন ওয়েল গাড়ির ইন্জিন কন্ডিশন, সাউন্ড এবং মাইলেজ এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যত্নের ক্ষেত্রে নিয়মিত পরিষ্কার করাতো আছেই এবং চাকার হাওয়া প্রেশার ও চেক করি নিয়মিত।
এয়ার ফিটার ক্লিন, ক্লাচ ক্যাবেল লুব, থ্রটল ক্যাবেল লুব করা, চেইন এডজাস্ট করা নাট গুলো চেক করা এভাবেই চলতেছে লিভো নিয়ে পথ চলা । ইন্জিন ওয়েল হিসেবে শো-রুম থেকে সাজেস্ট করা Honda 4T 10W-30 গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েলটা ব্যবহার করি । প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পর পর চেঞ্জ করি । পারফর্মেন্স বেশ ভালোই পাচ্ছি ।
যেহেতু আমার বাইক এখনো নতুন তাই শুধু মাত্র ওয়েল ফিল্টার ময়লা হওয়ার কারণে একবার পরিবর্তন করি । এ ছাড়া কোন কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি । আমার বাইকে এখন পর্যন্ত কোনো অংশ মডিফাই করিনি । এখন পর্যন্ত আমার সর্বোচ্চ তোলা স্পীড হলো ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। যা ১১০ cc বাইকের মধ্যে আশাও করি নাই । ব্যালেন্সিং ও বেশ ভালো ছিল ।
বাইকটির ৫টি ভালো দিকঃ
- মাইলেজ ( ৫৫-৬০ চালানো এবং মেইনটেন্যান্স এর উপর নির্ভর করে )
- জাপানি ব্রান্ড এবং ভালো ইন্জিন
- লুকস ১১০সিসি সকল গাড়ি থেকে বেটার
- সিট বড় হওয়ার কম্ফোর্ট নিয়ে বসা যায়
- ইন্জিন সাউন্ড খুবই সুন্দর
বাইকটির ৫টি খারাপ দিকঃ
- পিছনের চাকা খুবই চিকন হওয়ার বাইক প্রায়ই স্কিড করে
- ইন্জিন কিল সুইচ না থাকায় চাবি দিয়ে বন্ধ করতে হয়
- বাইক হালকা হওয়ার ৭০-৮০ স্পিডে চালানো রিস্কি হয়
- ৬০ স্পিডে উঠার পর আর স্পিড উঠতে ইন্জিনে অনেক প্রেশার পরে । যার ফলে ইঞ্জিনের সাউন্ড অনেক বেড়ে যায় । ইনেস্টেড পিকাপ পাওয়া যায় না ।
আমি আমার বাইকটি নিয়ে দুবার লং ট্যুরে গিয়ে ছিলাম । কাপ্তাই ভ্রমণের কথা বলতে গেলে পাহাড়ি রাস্তাই চিকন চাকার বাইক নিয়ে যাওয়াটা খুবই রিস্কি । কন্ট্রোলে অনেক সমস্যা হয় যেহেতু চিকন চাকা । তবে এ কথা বলতেই হবে আমার Livo বাইকটি শহরের সিটির মধ্যে চালানোর জন্য স্বল্প বাজেটের মধ্যে বেস্ট বাইক আমি মনে করি । কম বাজেটে ভালো মাইলেজ এবং লুকস চাইলে অবশ্যই Honda Livo 110cc বাইকই বাজেটের শেরা বাইক । ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ ইমতিয়াজ হাসান খান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।