Honda CB150R Streetfire ৮,০০০ কিলোমিটার রিভিউ - মিসবাহ উদ্দিন জিম
This page was last updated on 18-Jul-2024 02:20am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি মোঃ মিসবাহ উদ্দিন জিম। আমি বর্তমানে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ার মেডিকেল স্টুডেন্ট । আমার বাসা সাতক্ষীরা সদরে। আজ আমি আপনাদের বর্তমানে আমার ব্যবহার করা Honda CB150R Streetfire বাইকটির ৮ হাজার কিলোমিটার চালানোর পরে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
Honda CB150R Streetfire ৮,০০০ কিলোমিটার রিভিউ - মিসবাহ উদ্দিন জিম
আমার জীবনের প্রথম বাইক Honda CD 80। আমার আব্বুর বাইক, এলাকায় একটা রাজকীয় ভাব নিয়ে চালাতাম। কারন তখন আমাদের এলাকাতে আর কারো বাইক ছিলো না । আর নিজে বাইক কিনি স্টুডেন্ট অবস্থায় টিউশনের টাকা দিয়ে Yamaha FZS ১ম মডেল ২০১৭ সালে। আলহামদুলিল্লাহ মনের মাঝে অন্যরকম একটি ভালো লাগা কাজ করতো । আমরা ৪ বন্ধু, আমি, নাজমুল, তানভীর, ওবায়েদ চিটাগাং এর সব জায়গায় ২ টা বাইক নিয়ে আল্লাহর রহমতে ঘুরে ফেল্লাম। যেমন পতেঙ্গা, নেভাল,বাইজিদ, সি ইউ, চুয়েট,বাটার ফ্লাই পার্ক, মিনি বাংলাদেশ, ফয়েজ লেক, অনন্যা আবাসিক,ভাটিয়ারি ইত্যাদি। আর ওই প্রথম বাইক রাইডের সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। এই অনুভূতি মনের ভিতর থেকে আসে এভাবে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না।
বাইক ভালবাসার কয়েকটি কারন আছে যেমন - ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা ছিল আমার একটি পঙ্কিরাজ ঘোড়া থাকবে, আর তাতে আমি সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াবো। বড় হয়ে বুঝলাম এমন ঘোড়া আসলে নাই কিন্তু আমি আমার কল্পনার সেই ঘোড়া পেয়ে গেছি। আর তা হচ্ছে আমার বাইক। যখন ৪ চাকা চালাই তখন মনে হয় সেটা বডি মুভমেন্টের জন্যই চলছে, কিন্তু ২ চাকা চালানোর সময় মনে হয় ভিতরের আত্মাই এটা রাইড করছে। আর একটি বড় কারন আমি আর আমার উনি ২ জনই বিভিন্ন দূর্গম জায়গাতে রাইড দিতে ভালোবাসি। যা বাইক ছাড়া সম্ভব না।আরও অনেক কারন আছে, এই সব কিছুর জন্যই আমি আমার পাগলা ঘোড়া কে অনেক ভালবাসি।
আমার কয়েকটি ব্রান্ডের বিভিন্ন মডেলের বাইক রাইড করার অভিজ্ঞতা আছে। পরে যতগুলা বাইক রাইড করেছি তার মধ্যে আব্বুর HONDA CD 80 এর মত মজা আর পাইনি। তাই আবার Honda bikes তে শিফট হওয়ার জন্য বন্ধুদের সাজেশন আর আমার আব্বুর ইচ্ছা অনুযায়ী Honda CB150R Streetfire বাইকটি বেছে নিলাম। কোন বাইকের কন্ট্রোল আছে তো কম্ফোর্ট নাই, কোন বাইকের এই ২ টাই আছে তো স্মুথনেস নাই। আমি ৬.১ ফুট লম্বা, তাই হাইট বিবেচনায় আর আমার উনার সিটিং পজিশনের কথাটাও মাথায় ছিলো। তবে অবশেষে আমার কাঙ্ক্ষিত সব কিছুই একটা প্যাকেজে পেয়ে গেলাম আমার Honda CB150R Streetfire বাইকে, আলহামদুলিল্লাহ অনেক স্মুথ একটি বাইক।
বাইকটির দাম ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং এটি ২ বছরের পেপার্স সহ ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা ছিল ২০১৮ সালে। বাইকটি কেনা হয়েছিলো JME Motors Chittagong থেকে। বাইক কিনতে যাওয়ার অনুভূতি টা ছিল অন্যরকম। এটা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। তবুও একটু ধারণা দিবো, আসলে সেদিন মনে হচ্ছিল আমার লাইফে একটি স্বপ্নময় দিন। আমি, ওবায়েদ, তানভীর আর নাজমুল ৪ বন্ধু মিলে আব্বু থেকে পরামর্শ নিয়ে বাইক কিনতে যাই। লাইফে যে কয়েকটি বড় বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তার মধ্যে এটি একটি।
প্রথমবার যখন Honda CB150R Streetfire এর উপর বসে রাইড করি তখন মনে হচ্ছিল যে, এতদিন স্বপ্নে দেখা যে পঙ্কিরাজ ঘোড়ার জন্য অপেক্ষারত ছিলাম আজ তার দেখা পেয়েছি। আমার বাইক রাইডের মূল কারণ আমি ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে এক জন। প্যারাময় মেডিকেল লাইফ থেকে একটু রিলিফ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন স্পটে ট্যুর দেওয়া আমার বাইক রাইডের মূল কারণ। আর এই কারনেই বাইকটি কেনা।
Honda CB150R Streetfire বাইকটিতে যা আছে -
ফোর স্টোক সিংগেল সিলিন্ডার এর ১৪৯.১৬ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন। ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম, লিকুইড কুলিং সিস্টেম, 4-Valve, 16.7 BHP @ 9000 rpm, 13.8 Nm Torque @ 7000 rpm, ৬ টি গিয়ার, ১২ লিটার ফুয়েল ট্যাংক। প্রতিদিন বাইক নিয়ে যখন বের হই তখন ফ্যামিলির সবার কথা মাথায় রেখে বাইক রাইড করি। বিসমিল্লাহ বলে শুরু করি রাইড। এটি একটি আত্মার বন্ধন। বাইক সেইফলি ঘরে ফিরে আসলে আমিও সেইফ।
আমি প্রতি ১৫০০ কিলোমিটার পর পর বাইক সার্ভিস করাই। আর ৩০০০ কিলোমিটার পরপর মাষ্টার সার্ভিস করাই। বেশিরভাগ সময় চট্টগ্রামে আমার বাইক সার্ভিস করাই চট্রগ্রাম এর বিখ্যাত কদমতলি তে। আমার বাইকে ২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে সিটিতে মাইলেজ একটু কম পেতাম তখন ৩৪ এর মত পেতাম। এখন আলহামদুলিল্লাহ সিটিতে ৩৭ এভারেজ আর হাইওয়ে তে ৪১ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত পাচ্ছি।
বাইকের যত্ন সম্পূর্ন নিজের কাছে। কেউ চাইলে বাইক ১ বছরে নষ্ট করে ফেলতে পারে আবার কেউ চাইলে ২০ বছর ও নিয়ে যেতে পারে। শুধু সময় মত ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ, স্পার্ক প্লাগ ক্লিন, রেডিয়েটর ওয়াটার, ব্রেক অয়েল, ক্লাচ এবং ব্রেক ক্যাবল লুবিং, চেইন লুবিং, মাঝে মাঝে ওয়াশ, আর ভালো মানের পাম্প থেকে ফুয়েল নেওয়া, খোলা তেল কখনই ব্যবহার না করা ইত্যাদি সামান্য বিষয় গুলো একটু খেয়াল রাখলে ইনশাআল্লাহ বাইক নতুনের মত থাকবে। আমি এগুলো করি। আমার বাইকে আমি Motul 7100 10w30 full synthetic ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। আমি ১৫০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করি। যদিও এটা দিয়ে ইজিলি ২০০০ কিলোমিটার চালানো যায়।
Click To See Honda CB150R Streetfire Test Ride Review
আমার বাইক বর্তমানে ৮০০০কিলোমিটার রানিং। এখনো কোনো মেজর পার্টস আল্লাহর রাহমতে চেঞ্জ করতে হয়নি। তবে মনোশক সাস্পেনশন চেঞ্জ করবো কিছুদিন পরে। বাইকে তেমন কোনো মডিফাই করিনি। তবে সামান্য স্টিকার চেঞ্জ করা হয়েছে এবং ফ্রেম স্লাইডার লাগানো আছে বাইকের সেফটির জন্য। আমি ১৩০/৭০/১৭ এর জায়গায় ১৪০/৭০/১৭ রেয়ার টায়ার লাগিয়েছি ভালো গ্রীপ এবং কর্নারিং এর জন্য। আমি বরাবরই অতি স্পীডে বাইক রাইড করা অপছন্দ করি। তবে লাইফে একবারই টপ স্পীড উঠিয়েছিলাম চেক করার জন্য, তখন টপ স্পিড পেয়েছিলাম ১৪২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
আমার মতে বাইকটির ৫টি ভালো দিক-
- কম্ফোর্ট,স্মুথনেস।
- ভালো কন্ট্রোলিং।
- নো ভাইব্রেশন আন্ডার ১২০ কিলোমিটার।
- নো ব্যাক পেইন, নো হ্যান্ড পেইন।
- পিলিওন সিট আরামদায়ক।
আমার মতে বাইকটির ৫টি খারাপ দিক-
- ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই।
- পাস সুইচ নেই।
- এবিএস অথবা সিবিএস থাকা উচিৎ ছিল।
- বিল্ড ইন রেডিয়েটর গার্ড নাই।
- মেইন্টেইন খরচ একটু বেশি।
বাইকটি নিয়ে লং রাইডের অভিজ্ঞতা হলো চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই হয়ে আসাম বস্তির রাস্তা দিয়ে রাঙামাটি ঘুরে আবার চট্টগ্রাম ফিরে আসা। আর এই রাইডটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আমার বাইকের জন্য,কারন বাস অথবা অন্য যানবাহন ওই রাস্তায় চলাচল করে না। অপূর্ব সুন্দর কাপ্তাই লেকের পুরা পাড় জুড়ে এই রাস্তা। পাহাড় আর জলের নয়নাভিরাম সংমিশ্রণ এই ট্যুরের সাক্ষী।
Honda CB150R Streetfire নিয়ে শুধু একটি কথাই বলবো যে, It's a part of my daily life, It's my true dream, her speed is my heartbeat. সবার কাছে সবার বাইক ভালো, তবে যারা আমার মতো ৬ ফুটের আশে পাশে তারা এই বাইকটি রাইড করে বেশ মজা পাবেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ মিসবাহ উদ্দিন জিম আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।