Honda CB Trigger ১১,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন কৌশিক আহমেদ
This page was last updated on 06-Jul-2024 09:50am , By Shuvo Bangla
আমি কৌশিক আহমেদ। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে BBA ডিপার্টমেন্টে ২য় বর্ষে আছি। বাইক আমার জীবনের অন্যতম ভালোবাসার বস্তু, যদিও এখোনো নিজের বাইক নেই। ৭ বছরের বাইকিং জীবনে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা থেকে এটা BIKEBD তে আমার দ্বিতীয় রিভিউ। প্রথম রিভিউ লিখেছিলাম প্রায় ২বছর আগে Bajaj Discover 100 নিয়ে। আমার শ্রধ্যেয় বড়ভাই শুভ্র সেনকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই রিভিউ লিখায় অনুপ্রেরনা যোগানোর জন্য। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
Honda CB Trigger ১১,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ লিখেছেন কৌশিক আহমেদ
যেহেতু বাইকটি আমার বাবার জন্য তাই অনেক ভেবেচিন্তে HONDA CB Trigger নির্ধারন করি। বাবা যদিও এত বড় বাইক নিতে রাজি ছিলেন না প্রথমে, কিন্তু পরে আমার জোরাজুরিতে রাজি হন। আমরা আমাদের বাইকটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ নওগাঁর আহসান ট্রেডিং থেকে কিনি। দাম পড়েছিলো ২ লক্ষ ১ হাজার টাকা।
মোহাম্মদ সাদিকুল্লাহ, বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বাইকার যাকে আমরা সবাই জুন ভাই নামেই চিনি তিনি, বাইক বিডির প্রধান শুভ্র ভাই এবং ময়মংসিহের বাশার ভাই আমাকে এই বাইক সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছিলেন যার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা বাইকটি কিনি। আসুন এবার একটু বাইকটি সম্পর্কে আলোচনা করি এর ১১০০০ কিলোমিটার জীবনকালের পরিপ্রেক্ষিতে।
লুকঃ
প্রথমেই আসি বাইকের লুক নিয়ে। অনেকের কাছেই এটির লুক তেমন ভালো না লাগলেও আমার আর বাবার কাছে বেশ ভালোই লাগে। আর একটু ঘেঁটে দেখলে দেখবেন হোন্ডা বরাবরই মাইলেজ আর কম্ফোর্টের দিকে বেশি নজর দেয় লুকের চেয়ে। এই বাইকে আছে সুদৃশ্য LED টেইল ল্যাম্প যা বাংলাদেশের আর কোন হোন্ডা কোম্পানির বাইকে নেই। এই বাইকের ফুয়েল ট্যাঙ্ক আকারে ভালোই বড় যা আমার ভালো লেগেছে। আমার চোখে বাইকের সবচেয়ে আকর্ষনীয় জিনিসগুলো হল এটার সাইলেন্সার, মিটার আর ফ্রন্ট এন্ড ব্যাক লুক। লুকের দিক দিয়ে আমি একে ১০ এ ৮ দিবো।
ইঞ্জিন ও পারফর্মেন্সঃ
আসুন এবার দেখে নেই কি আছে এখানে। এই বাইকে আছে ১৪৯.১ সিসির শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী ইঞ্জিন যা অনেক স্মুদ। এটি ৮৫০০ rpm এ ১৪.৩৫ bhp পাওয়ার উৎপন্ন করতে পারে আর টর্কের ক্ষেত্রে এটি ৬৫০০ rpm এ ১২.৫০ Nm টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। এই ১১০০০ কিলোমিটারে এটির পারফরমেন্সে আমি সন্তুষ্ট। যেমন তার টান তেমন স্মুদ। এটির ইঞ্জিনকে আমি ১০ এ ১০ দিবো।
ব্রেকিং আর কন্ট্রোলিংঃ
আসুন দেখি এই বিষয়ে বাইকটি কেমন। বাংলাদেশে দুই ধরনের সিবি ট্রিগার আছে। একটি সিঙ্গেল ডিস্ক আর আরেকটি ডাবল ডিস্ক সমৃধ্য। বাবার কথা মাথায় রেখেই সিঙ্গেল ডিস্ক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ব্রেকিং নিয়ে বলব এটির ব্রেকিং অন্যতম সেরা ব্রেকিং। আর MRF NYLOGRIP ZAPPER টায়ার তো অতুলনীয়। ভেজা রাস্তায় হার্ড ব্রেকেও এটার চাকা কখনো স্কিড করেনি তবে একবার শুকনো রাস্তায় ইমার্জেন্সি থামার জন্য দুইটা ব্রেকই অনেক শক্ত করে ধরেছিলাম, তখন পিছনের চাকা হ্যাং হয়ে প্রায় ১ হাত মত স্কিড করেছিলো। কন্ট্রোলিং অনেক ভালো। খুব অল্প যায়গায় ঘুরানো যায়। হ্যান্ডেল তেমন ভারি না অন্যান্য ১৫০ সিসির বাইকের মত। আমি যত ১৫০ সিসির বাইক চালিয়েছি তার মধ্যে আমার কাছে এই বাইকের হ্যান্ডেলিং বেস্ট মনে হয়েছে। ব্রেকিং আর কন্ট্রোলিং মিলিয়ে আমি একে ১০ এ ৯ দিবো।
মাইলেজঃ
এবার আসুন আসল কথায়। আমরা বাইক কিনি সাধারনত খরচ আর সময় বাঁচানোর জন্য। এদিকে দিন দিন তেলের দাম যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে মাইলেজের কথা একটু হলেও ভাবা লাগে। এই বাইকে অকটেন ছাড়া অন্য কোন ফুয়েল নিতে মানা করেছে হোন্ডা বাংলাদেশ। আমার বাবা যখন চালান তখন তিনি ৫১ কিলোমিটার প্রতি লিটারে মাইলেজ পান। আর আমি চালালে ৪৭-৪৮ কিলোমিটার পাই প্রতি লিটার অকটেনে। ১৫০ সিসির কোন বাইক এত মাইলেজ দেয় বলে আমার জানা নেই। মাইলেজে আমি একে ১০ এ ১০ দিবো।
এক্সিলারেশন আর টপস্পিডঃ
এটির এক্সিলারেশন আমার কাছে অস্থির লাগে। অন্যান্য ১৫০ সিসির বাইকের সাথে কম্পেয়ার করলে বলব এটার এক্সিলারেশন অনেক ভালো। আর বাইকের টপস্পিড নির্ভর করে এর ইঞ্জিন কন্ডিশনের উপর। আমি এই বাইকে ১২১ কিলোমিটার প্রতিঘন্টায় স্পিড তুলেছিলাম। অনেকেই বলবেন বেশি বলছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আর নাই করুন এটি আমার Galaxy S4 এর GPS এ মাপা স্পিড।
পরিবর্তন সমূহঃ
এই ১১০০০ কিলোমিটারে আমরা একবার এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ করেছি, আর ১০০০০ কিলোমিটারে আমাদের বাইকের প্লাগটাও চেঞ্জ করেছি যদিও তাতে কোন সমস্যা ছিলোনা। এছাড়া আর কোন সমস্যা বাইকে দেখা দেয়নি এখন পর্যন্ত। আমরা হোন্ডার ইঞ্জিন ওয়েল ব্যাবহার করি যা ১৫০০ কিলোমিটার পরপর চেঞ্জ করি।
দীর্ঘ ভ্রমনঃ
যদিও মূলত এটি একটি কম্যুটার বাইক কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমনের জন্যও অনেক ভালো একটি বাইক। বাসায় গেলেই বন্ধুরা মিলে ছোটখাট একটা ট্যুর দেওয়া হয় ২০০-৩০০ কিলোমিটারের যদিও বাসায় সবসময় বলিনা। তবে দীর্ঘ ভ্রমনের জন্য এই বাইক অনেক আরামদায়ক। এটির পিছনের সাসপেনশন মনোশক হওয়ায় অনেক স্মুদলি পার হওয়া যায় খারাপ রাস্তা।
শেষ কথাঃ
বাইকটি ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ায় ৩ টি এওয়ার্ড পায়।
- HDTV Car and Bike award 2014 (Motorcycle of the year up to 160 cc)
- Bike India Award (Bike of the year up to 150 cc)
- Auto Tech review, IATIA India Award (Convenience Technology of the Year)
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে অবশ্যই অন্যতম সেরা বাইক এটি। দাম, মাইলেজ, কমফোর্ট, হ্যান্ডেলিং, পারফর্মেন্স এগুলো বিবেচনা করলে বলা চলে সেরা বাইক গুলির মধ্যে অন্যতম এটি।
[বি:দ্র: এটি আমার লেখা দ্বিতীয় রিভিউ। ভুল ভ্রান্তি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতি দেখার অনুরোধ রইল]
লিখেছেনঃ কৌশিক আহমেদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।