Honda CB Trigger নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা- শিশির

This page was last updated on 06-Jul-2024 04:05am , By Shuvo Bangla

হোন্ডা একটি লিজেন্ডারি কোম্পানী তা নিয়ে কারও কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। আমাদের দেশের মানুষ বাইক বলতে এখনো হোন্ডাই মনে করে। কোয়ালিটি, কমফোর্ট, লং লাইফ ইত্যাদির সংমিশ্রনে হোন্ডা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে আসছে দিনের পর দিন থেকে। আমার বাইকিং লাইফ শুরুই হয় হোন্ডার হাত ধরে। এক বন্ধুর হোন্ডা সিবি শাইন দিয়ে প্রথম বাইকের হাতেখরি। তারপর অনেক বাইকই চালিয়েছি, কিন্তু হোন্ডার ভরসা কি আর সহজে মিলে।

Honda CB Trigger নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা- শিশির


যাই হোক মূল কথায় আসি, বাইক বিডি-তে জুন ভাইয়ের Honda CB Trigger রিভিউ পড়ার পর এর প্রতি অন্য রকম একটা আকর্ষন কাজ করতে থাকে। তাই অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম সিবি ট্রিগ্রার কিনব। কিন্তু একটা ভয় কাজ করছিল, তখন ঢাকায় হোন্ডার কোন ডিলার কিংবা সার্ভির্সিং পয়েন্ট ছিল না। কিন্তু মন মানছিল না। তাই গেলাম ইস্কাটনের এক দোকানে। সেখানে একটা ট্রিগার বাইকই ছিল, তাও আবার সিঙ্গেল ডিস্কের। কি আর করার! সেটাই নিয়ে নিলাম। কিছুটা ভয় কাজ করছিল যে কোন কিছু নষ্ট হলে স্পেয়ার পার্টস পাবো কিনা। কেনা শেষ করে যখন বাইক স্টার্ট দিলাম, সে এক অসাধারণ অনুভূতি! It’s like a butter smooth sound and acceleration.

হোন্ডা সিবি ট্রিগার চালাচ্ছি প্রায় ১বছর ৩মাস হল। যতই দিন যাচ্ছে বাইকের পারফর্মেন্স ততই স্মুথ হচ্ছে। যদিও লুকস এর দিক থেকে অন্যান্য বাইক থেকে ট্রিগার কিছুটা পিছিয়ে, কিন্তু এর পারফের্মেন্স দিয়ে সব কিছুকে ভুলানো সম্ভব।

হোন্ডা সিবি ইউনিকর্ন ছিল হোন্ডার এক অসাধারণ সৃষ্টি, সেটাকে কিছুটা মোডিফাই করে ভারতের বাজারে আসে সিবি ডেজলার, যদিও সিবি ডেজলার বাংলাদেশের বাজারে আসেনি। অবশেষে হোন্ডা সিবি ডেজলারের ইন্জিনকে আরও রিফাইন করে বাজারে নিয়ে আসে হোন্ডা সিবি ট্রিগার।

লুকস এন্ড বিল্ড কোয়ালিটিঃ

লুকসের দিক থেকে ট্রিগার অন্যান্য বাইক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এটি একটি কমিউটার মোটর সাইকেল। এর মধ্যে স্পোর্টি কোন লুক নেই বললেই চলে। তবে এর মাসকুলার লুকিং ফুয়েল ট্যাংক অনেকটা ইয়ামাহা এফ জেড এস এর মত, তাছাড়া ট্যাংকের দুইদিকে দুইটি প্লাস্টিক কিট আছে যার কারনে বাইটি দেখতে ভালোই লাগে। হ্যান্ডেল বারটি সাধারণ কমিউটার মোটর সাইকেলের মতই (যদিও তিন পার্ট হ্যান্ডেল বার হলে দেখতে আরও সুন্দর লাগতো)। পেছনে আছে এল ই ডি টেইল লাইট। এর এক্সজষ্ট বা সাইলেন্সারটি বাইকের তুলনায় কিছুটা বড় মনে হয়েছে, তবে লুকস সুন্দর।

বিল্ড কোয়ালিটি ওভারঅল ভালোই, তবে কোন ইন্জিন কিল সুইচ নেই যা থাকা উচিৎ ছিল। প্লাস্টিক পার্টগুলো তেমন একটা আকর্ষনিয় নয়। ট্রিগারের ফুল ডিজিটাল মিটার কনসোল একে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা।

ইঞ্জিন কোয়ালিটিঃ

ইঞ্জিন কোয়ালিটিতে হোন্ডা সবসময়ই আপোষহীন ছিল, ট্রিগারের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি। অসাধারন স্মুথ ইঞ্জিন এবং হোন্ডার আস্থা এই দুই মিলে রাইড করার সময় আপনার অনুভূতি হবে জাষ্ট ওয়াও। তবে হ্যাঁ 70+ স্পিডে কিছুটা ভাইব্রেশন অনুভূত হয়, যদিও তেমন বেশী কিছু না। এই প্রায় দেড় বছরে ইঞ্জিন থেকে কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি আমার, আশা করি ভবিষ্যতেও তেমন বড় কোন সমস্যা হবে না। টপ স্পিডের কথা যদি বলতে হয় আমি নিজে পিলিওন সহ সর্বোচ্চ ১০৮কি.মি./ঘন্টা তুলেছিলাম। এর পর আর সাহস করি নাই। তবে অনেকের কাছেই শুনি তারা ১২৬কি.মি. পর্যন্ত উঠাতে সক্ষম হয়েছিল।

ব্যালেন্সঃ

যে কোন মোটর বাইকের অন্যতম লক্ষণীয় অংশ হল তার ব্যালেন্স কেমন। কারন দূর্ঘটনার জন্য ব্যালেন্ট অনেকাংশে দায়ি। এই দিক থেকে হোন্ডা আমাকে হতাশ করেনি কখনও। সিঙ্গেল মনোশক সাসপেনশন হওয়ার কারনে ব্যালেন্স এক কথায় দারুন। পিলিওনের জন্যও তা আরামদায়ক। তবে ইয়ামাহা এফজি এর মত ব্যালেন্স পাওয়া যায় না, কারণ চাকা তুলনামূলকভাবে কিছুটা চিকন। এম.আর.এফ. টিউবলেস জেপার টায়ার হওয়ার কারনে রোড গ্রীপ খুবই চমৎকার। বাইকটির অন্যতম ভালোদিক হচ্ছে এর সিটিং পজিশন। একটানা ২০০কি.মি.+ চালালেও আপনার ক্লান্তি সহজে আসবে না।

ব্রেকিংঃ

সিবি ট্রিগারের সাধারণত তিনটি মডেল হয়। স্ট্যান্ডার্ড, ডিলাক্স এবং কম্বি ব্রেকিং ভার্সন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশে কম্বি ব্রেকিংটা আসে না। আমাদের দেশের বাইক ব্যবহারকারীরা অনেক ভালো জিনিষ থেকেই বঞ্চিত হয়। তদুপরি সিবি ট্রিগ্রারের ব্রেকিং তুলনামূলক অন্যান্য বাইক তুলনায় যথেষ্ট ভালো বলে মনে হয়েছে। ব্রেকিং দুরত্ব কম এবং চাকা স্কিড করার হার অনেক কম। ওভার অল ১০ এ ৯ পাবার যোগ্যতা রাখে।

মাইলেজঃ

অনেকেই ট্রিগারের মাইলেজ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। কিন্তু যারা ব্যবহার করেছে তারাই বলতে পারবে এর মাইলেজ সম্পর্কে। প্রতি লিটার অকটেনে আমি ৪২থেকে ৪৫কি.মি. এর মত পাই ঢাকায়, আর হাইওয়েতে ৪৮কি.মি.+। দু’একবার অবশ্য পেট্রোল ব্যবহার করেছিলাম, কিন্তু পেট্রোলে থ্রোটল রেসপন্স কিছুটা কম পাই জানিনা কেন।

খারাপ দিকঃ

প্রত্যেকটা বাইকেরই কিছু ভালো, আর কিছু খারাপ দিক থাকে। সিবি ট্রিগারের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়। আমার কাছে যেগুলো খারাপ দিক মনে হয়েছে-

  • হেডলাইটের আলো অনেক কম; রাতে হাইওয়ে রাইডে অনেক সমস্যা করে।
  • স্পোর্টি লুকস এর অভাব।
  • রেয়ার টায়ার কিছুটা মোটা দেওয়া উচিৎ ছিল।
  • ইঞ্জিন কিল সুইচ নেই এবং হ্যান্ডেল বারের লো কোয়ালিটি প্লাস্টিক।

 

শেষ কথাঃ

রিভিউর মতামতগুলো আমার ব্যক্তিগত এবং নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেওয়া। পরিশেষে এইটুকু বলতে পারি, অসাধারণ একটি কমিউটার বাইক Honda CB Trigger। ইদানীংকালে ভারত তাদের অভ্যন্তরীন বাজারে সিবি ট্রিগার বিক্রি বন্ধ রেখেছে, কিন্তু রপ্তানী করার জন্য এখনও উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি দেশে সিবি ট্রিগার পাওয়া যাচ্ছে। যাদের কাছে লুকস তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কেয়ালিটি এবং মাইলেজ আসল তাদের জন্য সেরাদের সেরা সিবি ট্রিগার।

শেষ একটি কথা, হেলমেট পরিধান করুন নিরাপদে থাকুন। ধন্যবাদ।

(মাহমুদুল হক শিশির)

বাইকবিডি নোটঃ আপনি ও লিখতে পারেন আপনার বাইক নিয়ে রিভিউ।