আমার জীবনের প্রথম বাইক Honda CB Hornet 160R – সিহাব
This page was last updated on 31-Jul-2024 01:34am , By Raihan Opu Bangla
আমি সিহাব । আমি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম বসবাস করি । আমার প্রথম বাইক Honda CB Hornet 160R । এর আগে আমার কোন বাইক ছিলোনা। আজ আমি আমার বাইকটির ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
আমার জীবনের প্রথম বাইক Honda CB Hornet 160R
বর্তমানে আমার বাইকটা ৮০০০+ কিলোমিটার চলেছে। আমার শৈশবকাল থেকে বাইকের প্রতি একটা অন্যরকম অনুভূতি ছিলো যার কারনে আমার বাইক এবং বাইকিং খুব ভালোলাগে।
এছাড়াও বাইকের মাধ্যমে যেসকল স্থানে অন্য যানবহন প্রবেশ করতে পারেনা সেই সকল স্থানে খুব সহজে এবং অল্প খরচে ঘুরে বেড়ানো যায়,যা আমার কাছে একটা অ্যাডভেঞ্চার মনে হয়।
আমাকে বাসা থেকে ২লক্ষ টাকা বাজেট দেয়া হয়। আর আমার ইচ্ছে ছিলো একটা জাপানি বাইক কেনা। আমার জীবনের প্রথম বাইক এবং আমি নতুন চালক তাই অনেক রিভিউ দেখে মনে হয়েছে Honda CB Hornet 160R আমার জন্য একদম পারফেক্ট তাই আমি এই বাইকটা আমার জন্য বেছে নিয়েছিলাম।
Honda CB Hornet 160R বাইকটা ৩টা ভার্শনে আমাদের দেশে এসেছে-
১-নন এবিএস সিঙ্গেল ডিক্স
২-সিবিএস
৩-এবিএস
এর ভার্শন অনুযায়ী দামের ও ভিন্নতা আছে। যেহেতু আমার বাইকটা সিবিএস ভার্শন তাই এই বাইকের দাম ১,৮৯,৫০০ টাকা মাত্র। আমার বাইকটা আমার নিজ জেলার একটা অফিশিয়াল হোন্ডা শোরুম থেকে ক্রয় করি । honda bike price in Bangladesh সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ।
Honda CB Hornet 160R Test Ride Review By Team BikeBD
আমার জীবনে বাইক যেহুতু একটা অংশ জুড়ে ছিলো তাই বাইক কেনাটা আমার কাছে অনেকটা জরুরী মনে হয়েছে। তাই প্রায়ই আব্বু আম্মুকে বলতাম একটা বাইক কিনে দিতে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার বলে সব স্বপ্ন সহজে পূরন হতোনা।
অনেক বার বাইক কিনতে চাওযার পর যখন আব্বু আম্মু বুঝতে পারে আমার একটা বাইক প্রয়োজন তখন একদিন রাতে আব্বু আমাকে জিজ্ঞেস করে ২ লক্ষ টাকার ভেতরে কোন বাইকটা কিনলে ভালো হবে?
আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ছিলো Honda CB Hornet তাই আমি Honda CB Hornet 160R বাইকটির কথাই বললাম এবং ছবিও দেখালাম। বাইকটার ছবি দেখে সবার পছন্দ হলো। আব্বু হেসে বল্লো ব্যাংকে সঞ্চয় করা টাকা আজ উঠিয়েছি কালকে তোমাকে বাইক কিনে দেব।
তখন আমার কাছে মনে হলো আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি! নিজেকে চিমটি কেটে দেখলাম না এইটা স্বপ্নে না সত্যি শুনেছি। আমিতো মহা খুশি কালকে আমার বাইক কেনার ইচ্ছেটা পূরন হতে চলেছে! পরের দিন সকালে আমি আর আব্বু বাইক কিনতে চলেযাই আর আমার স্বপ্নের বাইকটা কিনে নিয়ে আসি।আমার বাইকটা প্রথম বার চালানোর অনুভূতি ছিল এক কথায় অসাধারন। নিজের প্রথম বাইক এবং যেই বাইকটা পছন্দ করেছিলাম সেই বাইকটাই কিনতে পেরেছি। এ কেমন অনুভূতি তা বলে বোঝানো সম্ভবনা।
আমার বাইকটা কেনা প্রথম বার ককপিটে বসে স্টার্ট দেয়া আর চালানো আমি কখনো ভুলতে পারবোনা। তখনের অনুভূতি আমার কাছে চরম এক পর্যায়ে ছিলো যা আমি কোনদিন ভুলতে পারবোনা।
Honda CB Hornet 160R বাইকটির ফিচার সমূহ -
- ইঞ্জিন টাইপ- Air Cooled, 4 Stroke
- সিসি ডিসপ্লেসমেন্ট- 162.71 cc
- ৫ টি গিয়ার
- ম্যাক্সিমাম পাওয়ার -15.04 BHP @ 8500 rpm
- ম্যাক্সিমাম টর্ক -14.76 NM @ 6500 rpm
- ওজন- ১৪০ কেজি
- ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি -১২ লিটার
- সিট হাইট- ৭৯০ মিলিমিটার
আমার বাইকটি সার্ভিসিং বুকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিলোমিটার পরপর যেই শোরুম থেকে কিনেছিলাম সেই সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে গিয়ে সার্ভিসিং করাই।
আমার বাইকটা এই পর্যন্ত ৪ বার সার্ভিসিং করিয়েছি। যদিও সার্ভিসিং সেন্টার এর সার্ভিস আমার পছন্দ না,তারপরেও ২ বছরের ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি পাবার আশায় সার্ভিসিং সেন্টার থেকে সার্ভিস করাই। তারা বাইক কেনার সময় বলেছিল তাদের কাছে সার্ভিস না করালে ২ বছরের ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি পাবো না।আমার বাইকটিতে ২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমি ৩৮-৩৯ মাইলেজ পেয়েছি এবং ২৫০০ কিলোমিটার পরে ৪২-৪৩ মাইলেজ পাচ্ছি ।
আমার কাছে আমার বাইকটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ যার কারনে আমি আমার বাইকটার অনেক যত্ন করি। কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব তাতক্ষনিক সমাধান করি।এছাড়াও সপ্তাহে ১দিন মেকানিকের কাছে নিয়ে বাইকটা ফুল চেকআপ করাই যদি ছোট খাটো কোন ক্রটি দেখা দেয় তারা ঠিক করে দেয় ।আমি আমার বাইকে প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত Honda ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। এই ইঞ্জিন অয়েলটি 10w30 গ্রেডের। আমি ইঞ্জিন অয়েল টা সার্ভিস সেন্টার থেকে ক্রয় করি যার দাম ৪৮৫ টাকা মাত্র।
সার্ভিস সেন্টারের মেকানিক আমাকে বলে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ভালো। যদি মিনারেল ব্যবহার করি তাহলে প্রতি ১০০০ কিলোমিটার পরপর পরিবর্তন করতে হবে এতে করে ইঞ্জিন ফ্রেশ থাকবে।
তাই আমি প্রথম থেকেই মিনারেল ব্যবহার করে আসছি। আর আমি নিজেও এই ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে কোন প্রকার পারফরম্যান্স কম পাইনি তাই ইঞ্জিন অয়েল ব্র্যান্ড পরিবর্তন এর প্রয়োজন মনে করি নাই।
আমার বাইকটিতে এখনো তেমন কোন বড় সমস্যা দেখা দেয় নাই তাই কোন কিছু এখনো পরিবর্তন করা লাগেনাই। সব কিছু একখনো বাইকের স্টকে যা ছিলো তাই আছে।
আমি আমার বাইকের স্টকে যে লুকটা পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্তুষ্ট তাই কিছু মডিফাই করাইনি। বাইকটি দিয়ে আমি এখনো পর্যন্ত ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২৫ টপ স্পিড পেয়েছি ।
Honda CB Hornet 160R বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- সিবিএস ব্রেক
- মোটা চাকা
- ইমার্জেন্সি ইন্ডিকেটর
- সিটিং পজিশন অনেক কমফোর্টেবল
- বাইকটার লুক এবং গ্রাফিক্স অসাধারণ
Honda CB Hornet 160R বাইকটার কিছু খারাপ দিক-
- ইঞ্জিন কিল সুইচ নাই
- সাইলেন্সার এর সাউন্ড একটু বাজে
- রেডি পিক-আপ নেই
- হেডলাইটের আলো কম
- ইঞ্জিনের ট্যাপিড বারবার লুজ হয়ে যায়
Honda CB Hornet 160R বাইকটি দিয়ে আমি একবার নাটোর থেকে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। আমার সেই টুরের অভিগ্যতা থেকে বলবো, আমার বাইকটা শুধুমাত্র তার রেডি-পিকাপ ছাড়া অভার অল দারুন পারফরম্যান্স দেয়।আমার কাছে বাইকটার রেডি-পিকাপ তুলনামূলক কম মনে হয়েছে। সবশেষে এটাই বলবো Honda CB Hornet 160R বাইকটা অসাধারন একটা বাইক সব কিছু মিলিয়ে মোটামুটি বাইকটা আমার কাছে ভালোই লেগেছে।
যাদের রেড়ি-পিকআপ আর একটু বেশি শব্দের প্রয়োজন তাদের জন্য এই বাইকটা না যদি এই দুইটা দিক সেক্রিফাইস করতে পারেন তাহলে Honda CB Hornet 160R বাইকটা হবে আপনার জন্যে বেস্ট অপশন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ সিহাব
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।