Honda CB Hornet 160R ১৫,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - অভি

This page was last updated on 31-Jul-2024 04:49pm , By Shuvo Bangla

Honda CB Hornet 160R বাইকটি চালাচ্ছি দুই বছরের বেশি হয়ে গেলো । অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা Honda CB Hornet 160R নিয়ে একটা রিভিউ লিখবার । কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছিলোতাই রিভিউ লিখতে দেরী হলো । রিভিউটির পাশাপাশি আপনি Honda bike price in Bangladesh সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন  আমাদের ওয়েবসাইটে  

honda cb hornet 160r

আসলে কোনো বাইক নিয়ে রিভিউ লিখতে হলে অনেকদিন ধরে বাইকটি পর্যবেক্ষণ করতে হয় । কারণ নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাইকের অনেক কিছুই জানা যায় নাবুঝা যায় না । আমার হর্নেট ১৫,৫০০কিলোমিটার চলার পরে আমি এই রিভিউ লিখতে বসেছি ।

এর আগে আমি আমার প্রথম কেনা বাইক ফ্রিডম রানার রয়াল প্লাস নিয়ে বাইকবিডিতে রিভিউ লিখেছিলাম । সেখানে আমার বাইক চালানোর ইতিহাস লিখা আছে । তাই আর কথা না বাড়িয়ে হর্নেটে কিভাবে আসলাম তাই বলি ।

এমনিতেই আমার বাইক আপগ্রেড করার ইচ্ছা ছিল । কারণ ১১০ সিসিতে আমার আর পোষাচ্ছিলো না । তাছাড়া ফ্রিডম রানার রয়াল প্লাস বাইকটি নিয়ে আমি কিছু সমস্যায় ছিলাম । এই যেমনপার্টস না পাওয়া । আমার হেডলাইটটেললাইটফর্ক টি রিপ্লেস করতে হয়েছিলো । কোনো পার্টসই আমি অর্ডার করার পর ছয় মাসের আগে ডেলিভারি পাই নি ।

দেশী কোম্পানি হিসেবে এটা খুবই দুঃখজনক । তাছাড়া রিসেল ভ্যালু নেই বললেই চলে । যাই হোকপেইড অ্যাড দিয়ে শেষ পর্যন্ত বাইকটি তিন ভাগের এক দামে বিক্রি করে দিই । রয়াল প্লাস আমি ২৩,৫০০ কিলোমিটার চালিয়েছিসেই তুলনায় কন্ডিশন বেশ ভালোই ছিল । কারণ আমি সবসময় খুব যত্ন করে বাইক চালাই ।

বাইক বিক্রির টাকা ও নিজের জমানো কিছু টাকা মিলিয়ে আমি হর্নেট কেনার সিদ্ধান্ত নিই । হর্নেট কেনার ইচ্ছা হবার মূল কারণ ছিল হর্নেটের মোটা টায়ারইঞ্জিন পাওয়ারব্রেকিং । সেই সময় হর্নেট সিঙ্গেল ডিস্কের দাম মাত্র কমানো হয়েছিল । কিন্তু আমি আগের বাইক বিক্রি করতে করতে হর্নেটের সিঙ্গেল ডিস্ক ভার্সন শেষ হয়ে যায়মার্কেটে ছিল ডাবল ডিস্ক সিবিএস যা সেই সময় আমার বাজেটের মধ্যে ছিল না ।

 তখন সিদ্ধান্ত নেই Honda X-Blade 160 ক্রয় করার, কারণ Honda X-Blade 160 তখন মার্কেটে নতুন এসেছে । আমি যখন বাইক কেনা নিয়ে এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম তখন বাবা নিজে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন । বাবা বললেন টাকা খানিকটা বেশি লাগলেও পছন্দের বাইক কেনাই সবদিক থেকে ভালো ।

honda cb hornet 160r bike

বাজেটের ঘাটতিটা বাবা পুরণ করে দিলেন । এভাবেই শেষ পর্যন্ত আমার হর্নেট কেনা হলো । এতোদিন ছোটো বাইক চালিয়ে এসেছিহর্নেটের মতো বড় বাইক চালাতে শুরুতে কিছুটা আনইজি লাগছিল । কিন্তু আস্তে আস্তে হর্নেটের ব্যালেন্সিং ও কন্ট্রোলে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম । 

হর্নেট নিয়ে যখন মাত্র ৩০০ কিলোমিটার পার করেছি তখনই একদিন লং রাইডে যাওয়ার দরকার পড়লো । বাইকে তখন ব্রেক ইন চলছিলো৫৫০০ আর পি এম এর ভেতরেই চালিয়েছিতবে মাঝে মধ্যে দুই এক বার ৮০কিলোমিটার গতি তুলেছি , তবে সেটা কৌতহল ঠেকাতে না পেরে । 

আমি আগে এতদিন ছোটো বাইক চালিয়ে এসেছি যা ৬০ কিলোমিটার স্পিডেই মনে হতো বাইক উড়ে চলে যাবেতাই ৮০কিলোমিটার স্পিডে ভয় লাগছিলো যেহেতু নতুন অভিজ্ঞতা । এটা দুই বছর আগের কথা । এখন আমি নিয়মিত ৭৫-৮৫ কিলোমিটারে ক্রুজিং করি ।

ব্রেক ইন পিরিয়ড ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেইনটেইন করি । যদিও ২৫০০ কিলোমিটার আগে আর হাইওয়েতে নামা হয়নিশহরের ভেতরেই চালিয়েছি । যত বেশি বাইক রাইড করা হয়েছে ততো বেশি ইঞ্জিন ফ্রি হয়েছে । এখন আমার বাইক পুরোপুরি স্মুথ । 

আমার Honda CB Hornet 160R বাইকটি নিয়ে আমি পুরোপুরি স্যাটিসফাইড । আমার প্রতিদিনের কমিউটিং খুব ভালোভাবেই হর্নেট দিয়ে পুরণ হচ্ছে । বাইকের ভালো দিক আর  খারাপ দি আলাদা করে আর বলছি না । আমি বাইকের বিভিন্ন অংশ নিয়েই আমার পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি ।

 প্রথমে আসি Honda CB Hornet 160R বাইকের লুকিং ও বিল্ড কোয়ালিটিতে -

আমার বাইকটি হর্নেট স্পেশাল এডিশন স্পোর্টি রেড । হর্নেটের যতগুলো ভার্সন আছে তার মাঝে আমার কাছে এই স্পোর্টি রেডকেই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে । এর এগ্রেসিভ হেডলাইটের ডিজাইনস্পেশাল এডিশনের স্টিকার লাগানো ফুয়েল ট্যাংকএক্স শেপড টেল লাইট বাইকটিতে একটি ইউনিক লুক এনে দিয়েছে । 

রাস্তায় হর্নেট আলাদা ভাবে চেনা যায় । বাইক পার্কিং এ থাকলে অচেনা কেউ কেউ বাইকে বসে ছবি তুলে । ব্যপারটা বেশ উপভোগ্য । হর্নেটের লুকিং যথেষ্ট ভালো হলেও তার বিল্ড কোয়ালিটির অবস্থা খুব খারাপ । হোন্ডা ব্র্যান্ডের নাম শুনলে আমাদের কল্পনায় যে শক্তপোক্ত একটা চেহারা ফুটে উঠে এর সাথে হর্নেটের বিল্ড কোয়ালিটি একেবারেই যায় না । 

কার্বন ফাইবারের মতো দেখতে প্লাস্টিং পার্টে খুব সহজেই দাগ পড়ে যায় । ট্যাংকের প্লাস্টিক যথেষ্ট নরম বাইকের অন্যান্য জায়গার মেটাল কোয়ালিটিও খুব একটা ভালো নয় । সেই তুলনায় হর্নেটের চেয়ে এক্স ব্লেডের বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে বেটার মনে হয়েছে । 

honda cb hornet 160r user review

 হর্নেটের ইঞ্জিন নিয়ে যদি কথা বলি -

১৬০ সিসির ইঞ্জিনে ১৫ পি এস বেশ ভালো পাওয়ার । টর্কও বেশ ভালো । তবে হর্নেটের আসল পাওয়ার ৬০০০ আরপিএম ক্রস করলে শুরু হয় । এই বিষয়টা হাইওয়েতে বেশ কাজে দেয় । কিন্তু শহরের ভিতরে রাস্তা খুব কম সময় ফ্রি পাওয়া যায় তাই ৬০০০ আরপিএমের উপর চালানোটা মোটামুটি অসম্ভব ।

 এই জায়গাতেই হর্নেটের দুর্বলতা । অর্থাৎ ৬০০০ আরপিএমের নিচে হর্নেটের থ্রোটল রেসপন্স তেমন একটা সুবিধার নয় । বিশেষ করে ফার্স্ট ও সেকেন্ড গিয়ারে রেস্পন্স নেই বললেই চলে । তবে থার্ড গিয়ার থেকে রেস্পন্স শুরু হয় । হর্নেটের মূল পাওয়ারই হচ্ছে থার্ড গিয়ার । থার্ড গিয়ারে অনায়াসে ১০০ কিলোমিটার এর উপর গতি তুলে ফেলা যায় যা বাংলাদেশের খুব কম বাইকেই আছে ।

 ফোর্থ গিয়ারেও ভালো পাওয়ার আছে । তবে ৫ম গিয়ারে আবার পাওয়ার কমে যায় । ৫ম গিয়ারের কাজ আমার কাছে মনে হয়েছে ইঞ্জিনের উপর প্রেশার কমানোর জন্যেই । হাইওয়েতে আমি ৭৫-৮৫ কিলোমিটার গতিতে সাধারনত ক্রুজিং করিআরপিএম থাকে ৬০০০ এর আশেপাশে । 

৬০০০ আরপিএমের আগ পর্যন্ত বাইক স্মুথ থাকে৬০০০ থেকে ৭০০০ আরপিএমের মাঝামাঝি জায়গায় ভাইব্রেশন থাকে যা খুবই বিরক্তিকর । তবে ৭০০০ আরপিএমের পর ভাইব্রেশন খানিকটা কমে আসে । ভাইব্রেশনটা মূলত লেগরেস্টে টের পাওয়া যায় । 

১০০ কিলোমিটার স্পিডের উপরে বাইক খুব স্মুথ হয়ে যায় । তবে হর্নেটের এরোডায়নামিক সেইপ খুব একটা ভালো নয় । তাই ১০০ স্পিডের উপরে বাতাসের বাধাটা খুব ভালো টের পাওয়া যায় । এখানেই হর্নেটের দুর্বলতা । আমি ১১৫ স্পিডের উপর স্পিড উঠাইনি এখন পর্যন্ত । ১১০ স্পিডে এক্সেলারেশন ধীর হয়ে যায় তাই টপ স্পিড কতো হবে দেখার জন্য অনেক লম্বা রাস্তা ও ফ্রি রাস্তা প্রয়োজন ।

যেহেতু আমি সিলেটে থাকি এবং কখনও মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে যাওয়া হয় নি তাই টপ স্পিড কখনও পরীক্ষা করেও দেখা হয় নি । তবে টপ স্পিড পরীক্ষা করে দেখারও দরকার নেই । এইসব আজকাল ইউটিউব ঘাটলেই পাওয়া যায় । তাছাড়া টপ স্পিড উঠানোর চেষ্টা করাটাও বিপজ্জনক । হর্নেটের জন্য ওই ৭৫-৮৫ কিমিতেই ক্রুজিং আমার কাছে আদর্শ মনে হয়েছে ।

প্রথম ৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি মোটেও সন্তুষ্ট ছিলাম না । ইঞ্জিন জ্যাম লাগতো । ৫০০০ কিলোমিটার পর থেকে ইঞ্জিন ফ্রি হওয়া শুরু করেছিল । ১০,০০০ কিলোমিটারে এসে ইঞ্জিন পুরোপুরি ফ্রি হয়ে যায় । এখন ১৫,০০০ কিলোমিটার এর উপরে আছে । বাইক এখন খুব ফ্রি ও স্মুথ ।

ইঞ্জিন ওয়েল -

 ফার্স্ট ড্রেইনে আমি হোন্ডারটা ব্যবহার করেছিলাম । তাতে ইঞ্জিনে অভারহিটিং ও ভাইব্রেশন বেশি হওয়া ও ইঞ্জিনের শব্দ বাজে হয়ে যাওয়ায় সেকেন্ড ড্রেইন থেকে আমি মতুল মিনারেল ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করি । ৪৫০০ কিলোমিটার এর পর লিকুইমলি সেমি সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে দেখি ইঞ্জিন কুলিং ভালো হলেও পারফরম্যান্স ড্রপ করেছে । 

এর পর মটোরেক্স ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার করেও খুব একটা লাভ হয় নি । শেষ পর্যন্ত ৭০০০ কিলোমিটারে ড্রেইন করে আমি মতুল ফুল সিন্থেটিক ব্যবহার শুরু করি । এখন পর্যন্ত মতুল ফুল সিন্থেটিকেই আছি । তবে অনলাইনের অফারে বিভ্রান্ত হয়ে নকল মতুল ফুল সিন্থেটিক ওয়েল কিনে সমস্যায় ও পরেছি মাঝে একবার ।

 পুরো ইঞ্জিন ফ্লাশ করতে হয়েছে তার জন্য । যাইহোকএখন পর্যন্ত মতুল ফুল সিন্থেটিকে ভালো পারফরম্যান্স পাচ্ছি বলে আর ব্র্যান্ড পরিবর্তন করিনি । হর্নেটের মাইলেজ নিয়ে শুরুতে আমি খুবই হতাশ ছিলাম । ব্রেকইন পিরিয়ডের পর হাইওয়েতে চালিয়ে মাইলেজ পেতাম ২৫-৩০ । 

তবে ৫০০০ কিলোমিটার পর বহুভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি মাইলেজ ৩৮ এর আশেপাশে থাকে । ১২,০০০ কিলোমিটার এর পর মাইলেজ পেয়েছি ৪০ । বর্তমানে হাইওয়েতে মাইলেজ পাচ্ছি ৪৫ । অবশ্য কয়েক মাস ধরে আমি ফুয়েলের সাথে ফ্লেমিঙ্গো অকটেন বুস্টার ব্যবহার করছি । 

অকটেন বুস্টারের যদিও দাম আছেতবে হিসাব করে দেখেছি শেষ পর্যন্ত অকটেন বুস্টার ব্যবহার করলেই লাভ হয় । তাছাড়া বুস্টার ব্যবহারের ফলে স্মুথনেসটা ভালো পাওয়া যাচ্ছে । এছাড়া আমি পরীক্ষা করে দেখেছি অকটেনের সাথে অকটেন বুস্টার মেশালে অকটেনের সাথে যতো ভেজাল মেশানো থাকে সব নিচে তলানি পরে ।

 সিলেটের সবচেয়ে নামকরা ফুয়েল পাম্প থেকে অকটেন নিয়েও আমি পরীক্ষা করে দেখেছি একই অবস্থা । এখানেই অকটেন বুস্টারের আসল কেরামতি । অকটেন বুস্টার মূলত অকটেনটাকে পিওরিফাই করেযার ফলে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায় । সম্প্রতি আমি খালি ট্যাংকে ১ লিটার অকটেন ভরে শেষ হওয়া অবধি সিলেট শহরের ভিতরে চালিয়ে মাইলেজ পেয়েছি ৪৩.৬ কিলোমিটার। 

অকটেন বুস্টার মিশ্রিত থাকলে আরো দুই কিলোমিটার মাইলেজ বাড়বে । পারফরম্যান্স ইমপ্রুভ করার জন্য আমি স্পার্ক প্লাগ স্টকটা পরিবর্তন করে লেসার ইরিডিয়াম স্পার্ক প্লাগ লাগিয়েছিলাম । কোনো পার্থক্য টের পাই নি । শুধু হাইয়ার আরপিএমে স্মুথনেস সামান্য বেটার পাওয়া যায় । উলটো লোয়ার আরপিএমে প্লাগ হেডে কার্বন জমে যায় । 

লেসার ইরিডিয়াম স্পার্ক প্লাগের সুবিধা হচ্ছে বাইকের জীবন কালে আর প্লাগ পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না । তবে যেখানে ১২০ টাকায় নতুন কপার প্লাগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ১৬০০ টাকা দিয়ে লেসার ইরিডিয়াম প্লাগের কি দরকার আমি মনে করি রেসিং কয়েলরেসিং ক্যাবল ব্যবহার না করলে হর্নেটে ইরিডিয়াম স্পার্ক প্লাগের কোনো দরকারই নেই । নতুন কপার প্লাগ সাথে একটা স্পেয়ার রেখে দিলেই হয় ।

১৬০ সিসির সেগমেন্টে হর্নেটের চেয়ে দুর্বল বাইক এক্সব্লেডই আছে । সুতরাং কেউ যদি পারফরম্যান্সের আশা করে তবে তার হর্নেট কিনে পোষাবে না । এই সেগমেন্টে ফোরভিএনএস পারফরম্যান্সের জন্য ভ্যালু ফর মানি হবে । পারফরম্যান্সের জন্যে জিক্সারও একটা ভালো অপশন হতে পারে । কাজেই কেউ পারফরম্যান্সের আশায় হর্নেট কিনলে হতাশ হবে । 

অনেকে বলবেটপ স্পিডে হর্নেট এগিয়ে থাকবে । কিন্তু টপ স্পিডে কখনও বাইক একটানা চালানো হয় নাবাইক সেই ৮০-১০০ তেই চালানো হয় । কাজেই রেডি পিকআপ ভালো থাকাটা জরুরি । হাইওয়েতে অভারটেকিং এর ক্ষেত্রে রেডি পিকআপটা খুব কাজে দেয় । তবে রেডিপিকআপের কথা বাদ দিলে হর্নেটের সবকিছুই মোটামুটি ভালো । আর মেইনটেইন্যান্স খরচও তুলনামূলক ভাবে কম ।

তবে হর্নেটের আরেকটা ইস্যু আছে তা হচ্ছে পাওয়ার লস ইস্যু । লং রানে পাওয়ার লস করে । তখন ১০০ এর উপরে গতি সহজে উঠতে চায় না । এই সমস্যাটা আবার শীতকালে হয় না । এয়ার কুল হবার কারণে এই সমস্যা । অন্তত ওয়েলকুলড হলে পাওয়ার লস ইস্যু কম হতো ।

 হর্নেটের ব্রেকিং এবং ব্যালেন্সিং- 

বাইকটি থেকে এক কথায় অসাধারণ ব্যালেন্স পাওয়া যায় । বিশেষ করে হর্নেটের সামনে ১০০ সেকশনের টায়ার ও পেছনে ১৪০ সেকশনের টায়ার রাস্তায় একটা আলাদা কনফিডেন্স দেয় । পিঠাপিঠি ট্রাফিক জ্যামে বাইক চালানোর সময় লো স্পিডে পা মাটিতে না লাগিয়েই বাইক ব্যালেন্স করে দীর্ঘক্ষণ চালিয়ে যাওয়া যায় । 

আমার হর্নেটের সিবিএস ব্রেকিং থেকে অসাধারণ ব্রেকিং পারফরম্যান্স দেয়তবে সামনের ও পেছনের ব্রেক একসাথে ব্যালেন্স করে চাপলে সর্বোচ্চ ব্রেকিং পারফরম্যান্স পাওয়া যায় । শুধু পেছনেরটা চাপলে উভয় চাকারই ব্রেকিং হয় তবে এর বাইট ভালো নয়তাই একটা প্রেশার দিয়ে পায়ের ব্রেক চাপতে হয় । 

পেছনের ডিস্কে নতুন অবস্থায় একটা কিচকিচ শব্দ হয় যা পরে চলে যায় । আমি ১৩,০০০ কিলোমিটারে আসার পর পেছনের ব্রেকপ্যাড পরিবর্তন করি যার ফলে আবারো পেছনের ডিস্কে কিচকিচ শব্দ করছে । ব্যালেন্স ও ব্রেকিং ভালো হলেও হর্নেটের রিয়ার সাসপেনশন মোটেও ভালো নয় ।

আমার বাইকটা ১৫,৫০০ কিলোমিটারে এসে এখনও নরম হয় নি । হাইওয়েতে অসুবিধা না হলেও ভাঙ্গা রাস্তায় হর্নেটের সাসপেনশনের সমস্যাটা টের পাওয়া যায় । তবে পিলিয়ন থাকলে সমস্যা অতোটা টের পাওয়া যায় না । টায়ার প্রেশার বাইকের গায়ে ২৫/২৫-৩০ লেখা থাকলেও বিভিন্ন টায়ার প্রেশার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি সামনের চাকায় ৩২ ও পেছনের চাকায় ৩৮ দিয়ে বেস্ট পারফরম্যান্স পাওয়া যায় । 

তাতে বাইক অনেক ফ্রি চলেমাইলেজও ভালো পাওয়া যায় । আরেকদিকে লাভ হয় যেটাটায়ার প্রেশার সময়ের সাথে কিছুটা কমে আসতে থাকে । আমি মাসে দু-এক বার টায়ার প্রেশার চেক করে প্রয়োজনে হাওয়া ভরি । দেখেছি যে সময়ের সাথে টায়ার প্রেশার কিছুটা কমে আসলেও তা রেকমেন্ডেড টায়ার প্রেশারের উপরেই থাকে । 

শুরু থেকেই আমি টায়ারে ফ্লেমিঙ্গো টায়ার সিল্যান্ট জেল ব্যবহার করছি । যদিও টায়ার জেলের মেয়াদ এক বছরেই শেষ হয়ে গেছেতবে কিছুদিন আগে আমি পেছনের টায়ার থেকে আস্ত একটা পেরেক টেনে বের করার পর ফুটো দিয়ে সামান্য জেল বের হয়ে ছিদ্র এমনিতে বন্ধ হয়ে গেছে ।

 এখন আসি হর্নেটের ইলেকট্রিক্যাল অংশে -

হর্নেট স্পেশাল এডিশনের সবচেয়ে বাজে দিক হচ্ছে এর এলইডি হেডলাইট । এই হেডলাইট নিয়ে হাইওয়েতে রাতের অন্ধকারে বের হওয়া মানে জীবন হাতে নিয়ে বের হওয়া । বলতে গেলে অন্যপাশ থেকে গাড়ি আলো ফেললে কিছুই দেখা যায় না । কালো পিচের ভাঙ্গাচুরা রাস্তার কিছুই বুঝা যায় না এই হেডলাইটের আলোতে । 

এলইডি সার্কিট বোর্ড ভিত্তিক হেডলাইট হওয়ায় সেখানে উচ্চ ক্ষমতা বিশিষ্ট কোনো বাল্ব লাগানোরও অপশন নেই । বিকল্প সমাধান হিসেবে আমাকে আলাদাভাবে দুটো উচ্চ ক্ষমতার ফগলাইট লাগাতে হয়েছে । তবে হর্নেটের ব্যাটারি মাত্র ৪ এম্পিয়ারের হওয়ার কারণে বিশেষ প্রয়োজন না হলে ফগ লাইট অন করি না । 

আমার তাই এখন পর্যন্ত ব্যাটারিজনিত কোনো ইস্যু হয়নি । হর্নেটের স্টক হর্নের সাউন্ড কোয়ালিটি মোটেও ভালো না । বিশেষ করে স্টক হর্নের সাথে রাস্তাঘাটের সিএনজি অটোরিক্সার হর্নের সাউন্ডে তেমন কোনো পার্থক্য নেই । আমি স্টক হর্ন খুলে D70 ডুয়েল হর্ন লাগিয়েছিলাম । কিন্তু তাতেও কাঙ্খিত সাউন্ড কোয়ালিটি পাচ্ছিলাম না ।

উল্টো আমার কাছে মনে হচ্ছিলো হয় ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছেনয় হর্নের কোয়ালিটিই খারাপ । পরে Denso Power Tone ডুয়েল হর্ন লাগিয়েও যখন ভালো সাউন্ড পাচ্ছিলাম না তখন বুঝতে পারলাম আসলে ওয়ারিং এর কারণে হর্নে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ যাচ্ছে না । 

পরে রিলে সুইচ লাগিয়ে সরাসরি ব্যাটারি থেকে হর্নে কানেকশন নিয়ে সমস্যার সমাধান হলো । বুঝলামD70 হর্ন রিলে করে লাগালেই কাজ হতোDenso হর্ন না লাগালেও হতো । হাইওয়েতে এখন হর্নের সাউন্ড নিয়ে আর কোনো সমস্যা নেই । হর্নেট স্পেশাল এডিশনে সুইচ কোয়ালিটি আগের চেয়ে ভালো করেছে । তবে ইঞ্জিন কিল সুইচ দেয়া উচিত ছিল ।

কমফোর্ট - 

হর্নেটের সিটিং পজিশন যথেষ্ট আরামদায়ক । এর প্রশস্ত সিটে বসলে একটা কম্ফোর্ট ফিল আসে । পিলিয়ন সিটও এই ক্যাটাগরির অন্যান্য বাইকের চেয়ে কমফোর্টেবল । তবে লেডিস ফুটরেস্ট আলাদাভাবে লাগিয়ে নিতে হয় (এটা কেন বাইকের সাথে দিলো না এটা একটা রহস্য!) । 

হর্নেট কেনার পর আমার স্ত্রীর পিলিয়ন সিটে বসতে কিছুটা অসুবিধা হতো । পরে অবশ্য অভ্যাস হয়ে যায় । পিলিয়ন থাকলে হর্নেটের সাসপেনশনও ভালো কাজ করে । গ্রাব রেইলের পজিশনও বেশ ভালো । বাজারের ব্যাগ ঝুলানোর জন্য আলাদা হুক লাগাতে হয় নাগ্রাব রেইলের গোড়ার দিকে একটা খাঁজ আছেসেখানে খুব ভালো ভাবে ব্যাগ আটকে রাখা যায় । আমি পনেরো বিশ কেজি ওজনের ব্যাগ অনায়াসে ঝুলিয়ে আনি। হর্নেট মূলত হাইওয়েতে চালানোর বাইক ।

বাইকের নিয়মিত যত্নের কথা বললে -

সবার আগে আসবে ড্রাইভ চেইনের কথা । হর্নেটের ড্রাইভ চেইন খোলা থাকায় ধুলাবালিতে প্রচুর নোংরা হয় । বিশেষ করে বর্ষাকালে কাদাপানি লেগে চেইনের অবস্থা খারাপ হয়ে যায় ও মরিচা পড়ে । চেইন নোংরা ও ময়লা জমে গেলে আমি কেরোসিন দিয়ে চেইন পরিস্কার করি । প্রথমে মতুলের চেইন ক্লিন ব্যবহার করতামতবে দাম বেশি দেখে বাদ দিয়েছি ।

ফ্লেমিঙ্গো চেইন ক্লিন এন্ড লুবWD-40 দিয়েও চেইন ক্লিন করেছিতবে কেরোসিনটাই আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে । চেইনে মতুলের চেইন লুব শুরুতে দিয়েছিতবে এখন চেইন লুব করতে শুরুতে গিয়ার অয়েল ব্যবহার করি । শীতকালে ৯০ গ্রেডের গিয়ারওয়েল ব্যবহার করিবর্ষায় পানি প্রতিরোধ করার উদ্দেশে কিছুটা ভারী ১৪০ গ্রেডের গিয়ারওয়েল ব্যবহার করি । প্রতি ৫০০ কিলোমিটার পর পর আমি চেইন লুব করি ।

স্পার্ক প্লাগ খুলে নিজেই পরিষ্কার করি । এয়ার ফিল্টার এখন পর্যন্ত দুইবার পরিবর্তন করেছি নিজে নিজেই । ইঞ্জিন ওয়েল শুরুতে ওয়ার্কশপে ড্রেন দিলেও এখন নিজে নিজে বাসাতেই ড্রেইন দিই । হর্নেটের ইঞ্জিন ওয়েল ড্রেন দেয়ার নাটের সাইজ হচ্ছে ১২ । ড্রেইন দেয়ার নিয়ম হচ্ছে বাইক ৫ মিনিট আইডল আরপিএমে চালু রেখে তারপর ৫ মিনিট বন্ধ রাখার পর ইঞ্জিন ওয়েল ড্রেইন দিতে হবে । তাতে ইঞ্জিন ওয়েলের সাথে সব ময়লা বের হয়ে আসবে ।

honda cb hornet 160r red

প্রতি ১৫ দিনে আমি বাইকের টায়ার প্রেশার চেক করি ও নতুন করে হাওয়া ভরি । টায়ার প্রেশার ভালো থাকলে মাইলেজ অনেক ভালো পাওয়া যায় । বাইক ওয়াশ সাধারণত নিজেই করি । এলেক্স কার ওয়াস শ্যাম্পু পানিতে মিশিয়ে বাইক ওয়াশ করি । ধুয়ে শুকিয়ে যাবার পর ফ্লেমিঙ্গো আলট্রা শাইন পলিশ স্প্রে করে দিই তাতে বাইক একেবারে ঝকঝকে হয়ে যায় ।

প্রথমে সিরামিক কোটিং করেছিলাম কিন্তু তা ছয় মাসের বেশি টেকে নি । যেহেতু হর্নেটের বডি প্রায় পুরোটাই প্লাস্টিক বিল্ডকাজেই সিরামিক কোটিং এর দরকার নেই বলে মনে করি । বাইকের সিকিউরিটির জন্য ডিস্কলক ব্যবহার করি । তাছাড়া পোর্টেবল জিপিএস ট্র্যাকার বাইকে লুকিয়ে রাখা আছে যেটায় বাইকের রিয়েল টাইম লোকেশন দেখা যায় । তাছাড়া অন্যান্য কিছু সুবিধা তো আছেই ।

তো এই হচ্ছে বাইকের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ । আর নিজের রক্ষণাবেক্ষনের কথা বললেআমি দুটো সার্টিফায়েড হেলমেট ব্যবহার করি । একটা ওজনে হালকা যা শহরে ব্যবহার করি । আরেকটা ডাবল ভাইজরেরকিছুটা ভারী যা হাইওয়েতে ব্যবহার করি ।

আমি যথেষ্ট সাবধানে রাইড করি তারপরেও দুর্ঘটনা এড়াতে পারিনি । দুর্ঘটনা যে নিজের দোষে হয় তাও না, অন্যের দোষেও হতে পারে, তাই সব সময় সাবধানে রাইড করতে হয় ও সামনের পাশাপাশি পেছনেও চোখ রাখতে হয় । একবার আমি সিলেটের সুরমা ব্রিজ থেকে উপশহর মোড়ে নামার ঢালে পেছনে থেকে রিকশাভ্যান আমার বাইকে ধাক্কা দেয় । 

তাতে ব্যাকলাইট প্যানেল পুরোটাই ভেঙ্গে যায়সাথে পুরো মাডগার্ড ও একদিকের কাউলিং । শোরুম থেকে পার্টস কিনে রিপেয়ার করতে আমার ৫০০০ টাকার মতো লেগেছে । হর্নেটের হেডলাইট ও ব্যাকলাইট দুটোই ব্যয়বহুল । তবে সুখের কথা এটাইশোরুমে মোটামুটি সব পার্টস পাওয়া যায় ।

অনেক লম্বা হয়ে গেলো রিভিউ ।

পাঠকের সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা তথ্য পয়েন্ট আকারে দিচ্ছি -

যতো বেশি চলবে ততো ইঞ্জিন ফ্রি হবে। আমারটা ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ফ্রি হয়েছে। পুরনো হর্নেট ইউজাররাও বলেছেন ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। ৩০০০ কিলোমিটার থেকে ইঞ্জিন ফ্রি হওয়া শুরু হয়। ৩০০০ কিলোমিটার আগে কেউ হর্নেট চালালে হর্নেটের আসল মজা সম্পর্কে তার ভুল ধারণা থাকবে। অর্থাৎ ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ডই ধরে নেয়া যায় ।

ইঞ্জিন ফ্রি হওয়ার সাথে ইঞ্জিন অয়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। যে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হোক না কেন ফ্রি হতে যে টাইম লাগার তা লাগবেই। কাজেই ইঞ্জিন ফ্রি হবার আগে কেউ সিন্থেটিক ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করলে আসল পারফরম্যান্স পাবে না। আমার মতে ১০,০০০ কিলোমিটার আগে সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েলের কোনো দরকার নেই ।

যেহেতু ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইঞ্জিন ফ্রি হতে সময় নেয়কাজেই ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে প্রতি ১০০০ কিলোমিটারে ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন করার ফলে ইঞ্জিন ক্লিন থাকবে ।

হর্নেটের মাইলেজ পুরোটাই নির্ভর করে চালানোর উপর। কেউ যদি বলে মাইলেজ ৫০ এর কাছাকাছি এটা যেমন সত্য তেমনি কেউ যদি বলে ২৫ এটাও সত্য। এভারেজ মাইলেজ ৪০। তবে মাইলেজ ৫০ এর কাছাকাছি পেতে হলে ফিফথ গিয়ারে ৪৮ স্পিডে চালাতে হবে । অথবা ফিফথ গিয়ারে ৪ হাজার আরপিএমের উপরে উঠানো যাবে না ।

হর্নেটের ব্যাটারি নিয়ে অনেকে ইস্যুর কথা বলে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে হর্নেটের ব্যাটারিজনিত কোনো ইস্যু নেই। হর্নেটের ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেম এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে ব্যাটারিতে তেমন কোনো প্রেশার পড়ে না। ড্রাই সেল ব্যাটারি রিচার্জ করারও কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ এই টাইপ ব্যাটারি একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর চার্জ দিলেও লাভ হয় না।

ব্যাটারি নিয়ে ইস্যু তাদেরই হবে যারা হর্নেটের ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেম মডিফাই করবে। যেমন অনেকে হেডলাইটের কানেকশন এসি থেকে ডিসি করে। এসি অবস্থায় হেডলাইটের পুরো পাওয়ার আসে ইঞ্জিনের ডায়নামো থেকে। ডিসি করলে তা সরাসরি ব্যাটারি থেকে কানেকশন দেয়া হয়। হেডলাইট ৩৫/৩৫ ওয়াট ডিপার অন থাকলে কারেন্ট টানে 2.91 অ্যাম্পিয়ারহাইবিম অন থাকলে কারেন্ট টানে 5.83 অ্যাম্পিয়ার। এদিকে হর্নেটের ব্যাটারি হচ্ছে মাত্র অ্যাম্পিয়ারের। ব্যাটারির ক্যাপাসিটির চেয়ে লোড বেশি হলে ব্যাটারিতে ইস্যু তো হবেই।

অনেকে বলতে পারেযেসব বাইকে স্টক অবস্থাতেই হেডলাইট ডিসি করা থাকে সেইসব বাইকের ব্যাটারিতে সমস্যা হয় না কেনএর উত্তর হচ্ছে সেইসব বাইকে ডায়নামো যে পাওয়ার প্রোডাকশন করে তার বেশিরভাগই ব্যাটারি চার্জিং এ ব্যবহৃত হয়। ফলে ব্যাটারির লোড শেয়ার হয়। 

কিন্তু হর্নেটে হেডলাইট সরকারি ডায়নামোর সাথে কানেকশন থাকার কারণে ব্যাটারি চার্জিং এর পাওয়ার কমিয়ে দেয়া আছে। যার ফলে একটা নির্দিষ্ট লিমিটের পর ব্যাটারিতে ডায়নামো থেকে পাওয়ার আর আসে না। এখন হেডলাইট সরাসরি ডায়নামো থেকে বিচ্ছিন্ন করে ব্যাটারিতে লাগানো হলেওডায়নামো থেকে ব্যাটারি চার্জ হতে যে পাওয়ার আসে সেটা আর বাড়ে নাকারণ আগে থেকেই লিমিট করা আছে ব্যাটারি সর্বোচ্চ কতো পাওয়ার পাবে। এবং সেটা 4000 আরপিএম এ সর্বোচ্চ 14.42 ভোল্ট।

 আরপিএম 4000 থেকে বাড়ালেও চার্জিং ভোল্টেজ 14.42 এর চেয়ে বেশি আসে না। কাজেই ইঞ্জিন চালু থাকা অবস্থাতেও ডিসি কানেকশনে হেডলাইট পাওয়ার টানবে 4.84 অ্যাম্পিয়ারযা ইঞ্জিন চালু থাকলেও ব্যাটারির উপর যথেষ্ট চাপ ফেলবে। যেসব বাইকে স্টক হেডলাইট ডিসি সেসব বাইকে ব্যাটারি চার্জিং পাওয়ার বেশি থাকার কারণে ব্যাটারিতে সমস্যা হয় না।

হর্নেটের নরমাল ও স্পেশাল এডিশন দুটতেই হেডলাইটের আলো রাতে হাইওয়েতে চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এর সমাধান হচ্ছে আলাদা ফগ লাইট লাগানো। তার জন্য স্টক হেডলাইটের কানেকশনে হাত দেবারই দরকার নেইওটা এসিই থাকুক। ফগ লাইট ডিসিতে কানেকশন করতে হবে। এবং ফগলাইট জ্বালালেও ব্যাটারিতে প্রচুর চাপ পড়ে। আমার হর্নেটে দুটো L6x ফগ লাইট লাগানো আছে যা অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট টানে। 

কাজেই আমি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ফগ লাইট অন করি না। 4000 আরপিএম বা তার উপরে চালালে ব্যাটারি ম্যাক্সিমাম পাওয়ার পায় ডায়নামো থেকে কিন্তু তাও ফগলাইটের লোড নেবার জন্য যথেষ্ট নয় হর্নেটে। তাছাড়া টেল লাইটপার্কিং লাইটইন্ডিকেটর লাইট ও হর্ন তো আছেই যেগুলো ডিসি। কাজেই ফগ লাইট অন থাকলে ব্যাটারি যতটুকু ডিসচার্জ হয়পরবর্তীতে ফগ লাইট অফ থাকা অবস্থায় তা আবার রিচার্জ হয়ে পুষিয়ে যায়।

দিনের প্রথম স্টার্ট কিক স্টার্ট দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো স্টার্টই দেয়া যাবে। তবে কিছুক্ষণ 4000 আরপিএমে রেখে দিলে ভালোতাতে ইঞ্জিন অয়েল রেডি হয়ব্যাটারিও কিছুটা চার্জ পায়।

টায়ার প্রেশার ম্যানুয়ালে যা আছে এটাই সবসময় রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অন রোডঅফরোডভাঙা রাস্তাপিলিয়ন -সবকিছু মিলিয়ে টায়ার প্রেশার ৩২/ আমার কাছে আমার বাইকে আদর্শ বলে মনে হয়েছে। এতে আমি সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স পেয়েছি।

১০ব্যাটারিতে চাপ পড়ে ও বাইপাস করে স্টার্ট করা যায় বিধায় আমি কোনো ইলেকট্রনিক সিকিউরিটি লক লাগাই নি। ভালো মানের ডিস্ক লক ও অ্যালার্মওয়ালা আরেকটা ডিস্ক লক দুই চাকায় ব্যবহার করি। এসব বাদে বাইকে একটা পোর্টেবল জিপিএস ট্র‍্যাকার লুকানো আছে। বাইরে থেকে চার্জ দিয়ে চালাই। প্রতি চার্জে ১ মাস যায়। জিওফেন্সবাইক কেউ নাড়াচাড়া করলে এসএমএস চলে আসে এসব সুবিধা আছে। আর ম্যাপে বাইকের রিয়েল টাইম লোকেশন দেখা যায়।

১১স্টক স্পার্ক প্লাগ ও লেসার ইরিডিয়াম স্পার্ক প্লাগের মাঝে পারফরম্যান্সে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কেউ পারফরম্যান্স ইমপ্রুভ করতে চাইলে রেসিং কয়েল লাগাতে হবে।

১২এয়ার ফিল্টার ৭০০০ কিলোমিটারে পরিবর্তন করে ফেলা ভালোযদিও সার্ভিস সেন্টারে বলে ১২,০০০ কিলোমিটার। এটা নিজে নিজেই করা যায়। আমি ইউটিউবের ভিডিও দেখে করেছি। একেবারে সহজ। যে কেউ পারবে । স্ক্রু ড্রাইভার হর্নেটের টুল বক্সেই আছে । বাজারে হর্নেটের এয়ার ফিল্টার ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়। 

১৩ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন করার স্ক্রু সাইজ ১২। আমি নিজে নিজেই ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন দেই। ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন দেয়ার আগে ৫ মিনিট ইঞ্জিন চালু রাখতে হবে। ঠান্ডা অবস্থায় ইঞ্জিন অয়েল ড্রেইন দিলে ময়লা ভিতরে থেকে যাবে।

১৪পেছনের ডিস্কে শুরুর দিকে কিচিকিচি শব্দ হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এটা ঠিক হয় যায়। দোকানে বাইক ওয়াশ করলে আগে থেকেই বলে দিতে হবে ডিস্কে যাতে ডিজেল ওয়াশ না করে। ডিস্কে ডিজেল লাগালে ব্রেকিং এর বাইট কমে যায় ।

১৫চেইনে কোনো নয়েজ নেই। যা আছে এটা সব বাইকেই থাকে। আমি কেরোসিন দিয়ে চেইন ক্লিন করি ও 90 গ্রেডের গিয়ার ওয়েল দিয়ে লুব করি। প্রতিটা লঙ ট্যুরের আগে ও পরে চেইন লুব করা উচিৎ। বর্ষায় 140 গ্রেডের গিয়ার ওয়েল লুব হিসেবে ভালো কারণ এটা সহজে চেইন থেকে যায় না বিধায় চেইন ভিজতে দেয় না। যদিও এটা ময়লা আকর্ষণ করে বেশি।

১৬হর্নেটের বডি বেশিরভাগ প্লাস্টিক ও স্টিকার। আমি সিরামিক কোটিং করিয়েছিলাম কিন্তু ৬ মাসে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রতি ওয়াশের পর পলিশ স্প্রে করে দেই। এটাই বেটার মনে হয়েছে।

১৭) Motul 7100 10W30 গ্রেডের ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে ভালো পারফরম্যান্স পাচ্ছি । এর আগে লিকুইমলি ও মটোরেক্স ব্যবহার করে দেখেছি কিন্তু আহামরি কিছু টের পাই নি। তবে এটা যার যা চয়েজ।

১৮ব্যাটারি সংক্রান্ত সব তথ্য আমি নিজে মাল্টিমিটার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে তারপর এখানে বলেছি। কেউ চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

১৯ফগ লাইটে রিলে লাগানো আছে। রিলে একটা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সুইচ ব্যাতিত কিছুই নয়। স্পার্কিং এড়াতে ও মূল ওয়ারিং এ লোড এড়ানোর জন্য রিলে ব্যবহার করা। রিলে ব্যাটারির উপর চাপ কমায় এটা পুরোটাই ধাপ্পাবাজি। একই জিনিস থার্ড পার্টি হর্ন লাগানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।

২০ভালো মানের অকটেন ব্যবহার করলে আলাদা ভাবে অকটেন বুস্টার ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজনই নেই।

হর্নেট বাইকটি কোন ধরণের ইউজারদের জন্য উপযোগী-

বাইকিং কমিউনিটিতে হর্নেট সাধারণত ভদ্র বাইক হিসেবে পরিচিত । ভালো মাইলেজের সাথে ভালো পাওয়ারউড়াধুড়া টান নেইভালো ব্রেকিং ও ব্যালেন্স যেকোনো ভদ্র রাইডারের জন্যেই উপযোগী । পিলিয়ন নেয়ার জন্যেও হর্নেট ভালো । তবে বউ বাচ্চা নিয়ে রাইড করা হর্নেটে কিছুটা অসুবিধাজনক । শুধু হর্নেট নাযেকোনো স্পোর্টস বাইকের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য ।

তো এই হলো মোটামুটি হর্নেটের ১৫,৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ । সবাই সবসময় সার্টিফায়েড হেলমেট পড়ে বাইক রাইড করবেন ও ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন । রাস্তায় অন্য রাইডারদের রেসপেক্ট করবেন ও সহযোগিতা করবেন । হ্যাপি রাইডিং ।

 

লিখেছেনঃ শতদ্রু গুপ্ত অভি

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।