Hero Ignitor 125 IBS ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ - মেহেরাব

This page was last updated on 31-Jul-2024 09:09am , By Raihan Opu Bangla

হ্যালো বাইকার্স , আমি মেহেরাব হোসেন । আমি Hero Ignitor 125 IBS বাইকটির একজন ইউজার। আমি বাইকটি ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড করেছি। তার অভিজ্ঞতার আলোকে আজ আপনাদের আমার বাইকটি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো ।

Hero Ignitor 125 IBS ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড রিভিউ

Hero Ignitor 125 আমি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বাসিন্দা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন ছাত্র । আমি আমার চাচার কাছ থেকে বাইক চালানো সেখার পর তার বাইক দিয়েই টুক টাক চালাতাম । তবে এক বছর আগে বাবা আমাকে Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি কিনে দেয় এবং এটাই আমার প্রথম বাইক।

বাইকের প্রতি ভালোবাসা শুরু হয় বাইক চালানো শেখার পর থেকে। যেদিন মাঠে বাইক চালানো শিখলাম আজ থেকে ৫ বছর আগে, সেদিন থেকেই বাইকের প্রতি অন্যরকম এক ভালোবাসা সৃষ্টি হয় । মানুষের সখ থাকে দামি গাড়ি কেনার কিন্তু আমার সপ্ন দামি বাইক কেনার। সব কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে বাইক রাইড করতে। সময় পেলেই বের হয়ে যাই বাইক রাইড করতে। 

অনেক কিছু বিবেচনা করে Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি নেওয়া, মূলত প্রাইস, মাইলেজ, কম্ফোর্ট , গুড কন্ট্রোলিং এবং গুড লুক এসব বিবেচনা করেই বাইকটি ক্রয় করেছি । যেহেতু আমি একজন ছাত্র সে ক্ষেত্রে বাইকের মাইলেজ এর ব্যাপারটি প্রথম বিবেচনার বিষয় ছিল তাছাড়া ছিল একটি নির্দিষ্ট বাজেট । তাই সবদিক মিলিয়ে আমার কাছে Hero Ignitor 125 IBS বাইকটি পছন্দের শীর্ষে ছিল । আমি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া আসা এবং ছোটখাটো ট্যুরে বাইকটি ব্যবহার করি ।

বাইকটি আমি গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে ক্রয় করি। বাইকটি রাইড করছি ১ বছরের বেশি সময় ধরে । বাইকটি কিনেছিলাম সাভারের বাইপাইল বগাবাড়ি নিলয় মটরস হিরোর আফিসিয়াল শোরুম থেকে এবং আমি এর প্রথম মালিক । বাইকটি যখন ক্রয় করি তখন এর দাম ছিলো ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা । 

৩ হাজার টাকা ডিস্কাউন্ট পেয়ে আমি এটি ১ লক্ষ ২৫ হাজার দিয়ে ক্রয় করি, সাথে একটি হেলমেট, রেইন কভার উপহার দেওয়া হয়। আসলে বাইকটি হঠাৎ করে ক্রয় করা হয় । আমার যাতায়াতে সমস্যা হয় বলে আমার বাবা আমাকে বাইকটি কিনে দেয় এবং বাইক কেনার দিন আমি জানতামও না যে আজ বাইক কিনতে যাব। 

সকাল বেলা হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাইক কেনার। বাসা থেকে আমাকে যে বাজেটের কথা বলা হয়েছে আমি ভেবে দেখলাম এই বাজেটে এই বাইকটি সেরা। বাজেটের মধ্যে পারফেক্ট একটি বাইক, সকল সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন । দুপুর ১২ টার দিকে আমি আমার বাবা এবং আমার চাচা চলে যাই শোরুম এ বাইক কিনতে। বাইক কেনার পর যখন আমার হাতে চাবি দেওয়া হল সে এক অন্যরকম অনুভূতি যা বলে প্রকাশ করার মত নয়। এটি আমার জীবনের প্রথম বাইক তাই অনুভূতিটা কেমন তা বুঝতেই পারছেন । চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না, আমার বাবাকে দিয়ে বাইকটি প্রথম স্টার্ট করাই । প্রথমবার বাইকটা চালানোর অনুভুতি ছিল অন্যরকম । প্রথম পিলিয়ন হিসেবে বাবাকে সাথে করে বাসায় আসি।

বাড়ি ফিরে প্রথম দিনে প্রায় ৮০ কিলোমিটার রাইড করি। ফিচারের কথা বলতে গেলে, প্রথমত এর রয়েছে একটি সুন্দর লুক 3D লোগো থাকার কারণে আরও এগ্রেসিভ মনে হয় দূর থেকে। বাইকটির অন্যতম পছন্দের দিক হলো এর আউটলুক, ইঞ্জিনের শক্তি এবং I3s নামে একটা নতুন ফিচার। I3s ফিচারের কারনে বাইক নিউট্রাল অবস্থায় থাকলে অটো ৩ সেকেন্ড পরে বন্ধ হয়ে যাবে। আবার ক্লাচ ধরলে বাইক অটো স্টার্ট নিবে যা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। 

এর পাওয়ার 11.1 BHP @7500 RPM এবং এর সর্বোচ্চ টর্ক 11 nm @6500 rpm । কোম্পানি থেকে এর পেছনের টায়ারে একটি টায়ার গাড দেওয়া হয়েছে। ব্রেক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে IBS সিস্টেম যাতে পেছনের ব্রেক প্রেস করলে পেছনে ৬০% ও সামনে ৪০% হারে ব্রেক ধরে যাতে খুব ভালো ব্রেকিং পারফরম্যান্স পাওয়া যায় । সব দিক থেকে বাজেট এর মধ্যে বেস্ট বাইক বলা যায় । 

বাইকের সাথে আমাকে ৪ টি ফ্রি সার্ভিস দেওয়া হয় । প্রথম সার্ভিস করাই ৭০০ কিলোমিটারে, বাকি সার্ভিসগুলো ২০০০ কিলোমিটার পর পর করাই । ৭ হাজার কিলোমিটার পর যখন ফ্রি সার্ভিস শেষ হয়ে যায় তখন হিরো সার্ভিস সেন্টার থেকেই সব পেইড সার্ভিসগুলো করাই। সবসময় এক ম্যাকানিক এর দ্বারা সার্ভিস করানোর কারনে খুব দ্রুতই ম্যকানিক সমস্যা খুজে বের করে ফেলতে পারে এতে বাইকের কাজও ভালো হয়।

২৫০০ কিলোমিটার আগ পর্যন্ত বা ব্রেক ইন পিরিয়ড এ মাইলেজ পাই ৩৫-৩৮ । ৩০০০ কিলোমিটার পর মাইলেজ পাই সিটিতে ৪০ এবং হাইওয়েতে ৪৬-৪৮ । বাইক মেইনটেনেন্সের ব্যাপারে কোন অবহেলা করি না । যখন যেটা করানো দরকার সেটাই করাই। 

৯০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি, চেইন টাইট, চেইন লুব, ক্লাচ ক্যাবল পরিস্কার, আর পি এম এডজাস্ট, স্পারক প্লাক ক্লিন, টায়ার প্রেসার সব ঠিক ঠাক রাখি । প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ বার ফোম ওয়াস করাই এতে বাইক থাকে নতুনের মতো । হিরো এর 10w30 গ্রেড এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি সেই শুরু থেকে। বেশ ভালোই সার্ভিস পাচ্ছি এই ইঞ্জিন অয়েল থেকে। 

মটুল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি যা খুব ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে। হর্ন , আর পি এম ক্যাবল, সিট লক , চেন স্পোকেট, থ্রটল ক্যবল, ইন্ডিকেটর সুইচ পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাইকের বেশি কিছু মডিফাই করা হয় নি সুধু মাত্র সিট কভার, হর্ন, হেড লাইট মডিফাই করেছি বাইকের রেডি পিকাপ খুব ভালো। এর সর্বোচ্চ গতি ১১৮ কিমি / ঘন্টা।

Hero Ignitor 125 IBS বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • কন্ট্রলিং
  • ব্রেকিং
  • এগ্রেসিভ লুক
  • মাইলেজ
  • রাইডিং কম্ফোর্ট

Hero Ignitor 125 IBS বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • হাই স্পিডে ভাইব্রেশন হয় ।
  • হর্ন কোয়ালিটি ভালো নয় ।
  • হেডলাইটের আলো খুব কম ।
  • কালার কোয়ালিটি ভালো নয় ।
  • ফ্রন্ট সাসপেনসন এবং রেয়ার স্প্রিং খুব একটা ভালো নয় খুব ঝাকি লাগে
  • ব্রেক প্যড খুব তারাতারি নষ্ট হয়ে যায়।

Hero Ignitor 125 IBS দিয়ে এক দিনে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার রাইড করি মোটামুটি ৪০ কিলোমিটার পর পর ব্রেক দিলে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। পিলিয়ন নিয়ে খুব ভালো ভাবে রাইড করা যায় লং রাইডে। এক দিনে ২৫০ কিলোমিটার রাইড করে কোন সমস্যার পরতে হয়নি । Hero Ignitor 125 IBS বাইকের সকল ফিচার এবং চালানোর অভিজ্ঞতার আলোকে আমার দৃষ্টিতে বাইকটি এই সেগমেন্টে সব দিক থেকে ভালো।

কিন্তু সব থেকে খারাপ লেগেছে এর কালার নিয়ে, আমার মতে ১২৫ সিসি সেগমেন্টের সবচেয়ে ভালো বাইক এটি। এর অল্প কিছু সমস্যা সমাধান করলে এর চাহিদা আরো বাড়বে বলে মবে করছি। যা যা ইনফরমেশন দিলাম সব বাইকটি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ মেহেরাব হোসেন   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।