Hero Hunk বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - সাজিদউজ্জামান চমক
This page was last updated on 31-Jul-2024 08:24am , By Shuvo Bangla
আমি মোঃ সাজিদউজ্জামান চমক। আমি চট্টগ্রাম বন্দর হালিশহর এলাকায় বসবাস করি। আমি একটি Hero Hunk বাইক ব্যবহার করি , আজ আপনাদের সাথে বাইকটি নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
অনেক আবেগ, অনেক প্রেম জড়িয়ে আছে আমার এই বাইকটির সাথে। ছোট বেলা থেকেই বাইক খুব পছন্দ করতাম। ইচ্ছা ছিল আমারও একটা হবে একদিন। বাইকিং ভালো লাগার আরও একটা কারণ যেকোনো জায়গায় খুব সহজেই যাতায়াত করা যায় নিজের মত করে।
বাইক আমার কাছে অন্যরকম একটা অনুভূতি, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। এই অনুভুতি একজন বাইক প্রেমী ই বুঝতে পারবে। আমি যখন বাইকটি ক্রয় করি সেই সময়ে আমার বাজেট অনুযায়ী আমার কাছে ৩টি অপশন ছিল বাজাজ পালসার ১৫০, হিরো হাংক ১৫০, টি ভি এস এপ্যাচি ১৫০।
এক্ষেত্রে লুকস, কমফোর্ট, মেইনটেইন খরচ, আফটার সেল সার্ভিস ইত্যাদি বিবেচনা করে আমি হিরো হাংক ১৫০ বাইকটি বেছে নিইয়েছি । বাইকটি ক্রয় করি চৌমুহনী হিরোর শোরুম নিলয় মটরস থেকে। সে সময় প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি দাম দিতে হয়েছিল শখের বাইকটি ক্রয় করতে।
Also Read: Brothers Bike Solution in Plot-38, Road- 07, Block- J, Banasree
বাইক টি আমি ২০১৭ সালের জুন মাসে ক্রয় করেছিলাম। আমার জন্মদিন উপলক্ষে আমার বড় ভাই মোঃ শাহ নূর আজম চপল আমাকে বাইকটি উপহার দিয়েছিল। আরও একবার ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া তোমাকে বাইক কিনতে যাওয়ার দিন খুব বৃষ্টি ছিল, সেদিন সকাল থেকে ই অপেক্ষায় ছিলাম বৃষ্টি থেমে গেলে বের হব বাইক কিনতে কিন্তু না বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই।
এক পর্যায়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বেরিয়ে গেছি বাইক কিনতে। এত টাই খুশি ছিলাম যে ছাতাও নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। সি এন জি করে যাওয়ার সময় যেনো আর ধৈর্য হচ্ছিল নাহ, কখন শো রুম পৌছাবো।
আমার বাইক টি যখন রেডি করা হচ্ছিল অর্থাৎ ব্যাটারি কানেকশন এবং অন্যান্য বিষয় চেক করা হচ্ছিল তখন বার বার মিস্ত্রী ভাইদের বলছিলাম ভাই তাড়াতাড়ি করেন, মনে শুধু একটা ই তৃষ্ণা বাইক টা কখন চালাবো।
অতঃপর শো রুমের সকল কাজ শেষে যখন বাইকটি বের করে প্রথমবার স্টার্ট করি তখন শরীরের ভেতর যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করল, সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত ভাষা নেই আমার কাছে। মোটামুটি ভালোই বৃষ্টি ছিল, ভিজতে ভিজতে চালিয়ে আসছিলাম শখের বাইকটি, আহা সে কি শান্তি ।
আমার বাজেট অনুযায়ী যে বাইক গুলো ছিল তার মধ্যে আমার আস্থা ছিল হিরো ব্রান্ড এর উপর আর আমি হিরো হাংক বেছে নেওয়ার কারণ বাইকটির লুকস। বাইকের লুকে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, পাশাপাশি কমফোর্ট আর মেইনটেইন খরচের দিক থেকে আমার কাছে হিরো হাংক ই সেরা।
বাইকের ফিচারস তেমন কিছু ছিল নাহ, তবে হ্যা মজার একটা ফিচার আছে হাংকে সাইড স্ট্যান্ড নামানো থাকলে মিটারে সিগনাল শো হয়। ব্যাপারটা আমার ভালো মনে হয়েছে, এর ফলে দূর্ঘটনা হাত থেকে রাইডার বাচবে।
প্রথম প্রথম খাওয়া দাওয়া, গোসল, ঘুম সব ই ভুলে গেছিলাম, সারাদিন বাইক নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম। প্রতিদিন বাইকটি নিয়ে কত কত জায়গায় যেতাম, বাইকটি আমার সত্যি অন্যরকম এক আবেগ। বাইকটি আমার প্রতিদিনের সঙ্গী বলা চলে, আমি বহুদূর যেতে পারি আমার সঙ্গীর সাথে।
কোম্পানি থেকে বলা হয় প্রতি ৩০০০ কিলোমিটার পর পর সার্ভিস করাতে, আমি যদিও সেভাবে করাতে পারতাম না তবে প্রতি ৫০০০-৫৫০০ কিলোমিটার পর পর আমি সার্ভিসিং করাতাম। আর সার্ভিসিং এর জন্য আমি হিরোর সার্ভিসিং সেন্টারে যেতাম প্রতিবার। আমি তাদের সার্ভিসে খুশি ছিলাম এবং তারা আমার বাইকটি যত্ন সহকারে সার্ভিস করত।
মাইলেজের ব্যাপারে যদি বলি এটা সম্পুর্ণ রাইডারের উপর নির্ভর করে, যে যেভাবে চালাই সে সেভাবে ই মাইলেজ পাই। আমি স্বাভাবিক গতিতে রাইড করে ৫০ এর আসে পাশে মাইলেজ পাই, আবার প্রেসার দিয়ে রাইডে ৪৫ এর মত পাই। হ্যা মাইলেজের ব্যাপারে কিছু দিক লক্ষ্য রাখতে হয় অর্থাৎ কিছু নিয়ম মানতে হয়, সেক্ষেত্রে ভালো মাইলেজ পাওয়া সম্ভব।
বাইকের যত্নের ব্যাপারে যদি বলি তাহলে কিছু ব্যাপারে আমি গুরুত্ব বেশি দেই অর্থাৎ নিয়মিত প্ল্যাগ, এয়ারফিল্টার চেক করা। নিদিষ্ট কিছু সময় পর পর বাইকের প্ল্যাগ, এয়ারফিল্টার চেঞ্জ করা জরুরি, এক্ষেত্রে বাইকের পারফরম্যান্স ভালো থাকে। টায়ায়ের প্রেসারের ১০-১৫ দিন পর পর চেক করি কারণ টায়ার প্রেসার মাইলেজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত বাইকের চেক করা এবং চেন লুব করা প্রয়োজন আর নিজের বাইক নিজেই বাসায় যত্ন নিয়ে ওয়াস করি।
ইঞ্জিন ওয়েল হিসেবে আমি প্রথম থেকে Motul 10W30 গ্রেডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি, আমার ব্যাক্তিগত খুব পছন্দের। বর্তমানে আমার বাইকটি ৩১০০০+ কিলোমিটার রানিং, এ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ বাইকের ইঞ্জিনের কোনো কাজ করানো লাগেনি। দুইবার চেন সেট পরিবর্তন করতে হয়েছে, ব্রেক প্যাড কয়েকবার পরিবর্তন করতে হয়েছে এছাড়া আহামরি তেমন মেজর কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি।
বাইকের মডিফিকেশন বলতে বাইকের হেড লাইট পরিবর্তন করেছি অর্থাৎ বাইকের হেড লাইট লাইন ডি সি করে একটি ভালো মানের এলিডি লাইট লাগিয়েছি, একজোড়া হরণ লাগিয়েছি এবং বাইকের ব্যালেন্স একটু ভালো করার জন্য পিছের টায়ার চেঞ্জ করে ১২০ সাইজের টায়ার লাগিয়েছি এতে ব্যালেন্স এবং ব্রেকিং ভালো হয়েছে।
টপ স্পিডের ব্যাপারে বললে আমি অতিরিক্ত স্পিড পছন্দ করি না তবে হাইওয়েতে ১১০-১১২ এর মত স্পিড পেয়েছি, চেষ্টা করলে আরও উঠত তবে চেষ্টা করি নি।
Hero Hunk বাইকের কিছু ভালো দিক -
- লুকস সবার পছন্দের মত, এক কথায় সেরা
- মাইলেজ ভালো
- সিটি রাইড হোক বা হাইওয়ে হিরো হাংকের কমফোর্ট সেরা
- মেইনটেইন খরচ খুবই ফ্রেন্ডলি
- স্মুথনেস, যা সত্যি ই খুব ভালো
- মেইনটেইন করলে বাইক টি লং টাইম ভালো সাপোর্ট দেয়
Hero Hunk বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- হেড লাইটের আলো অনেক কম
- পেছনের টায়ার, আরও একটু বড় সাইজের টায়ার প্রয়োজন
- ওজন একটু বেশি, যা এডজাস্ট হতে একটু সময় লাগবে
- কোনো ইঞ্জিন কিল সুইচ ব্যবহার করা হয়নি
- চেন ঘন ঘন লুজ হয় এবং বাজে শব্দ করে
লং রাইড প্রায় অনেক ই করেছি এক্ষেত্রে আমি হাইওয়ে তে খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি বাইকটি থেকে। লং টাইম রাইডের পর কখন এই বাইকের ইঞ্জিনে কখনও ক্লান্তি অনুভব করিনি। ব্রেকিং কন্ট্রোলিং এ খুব ভালোই সাপোর্ট পেয়েছি এবং পাহাড়ি রাইডে বেশ সাপোর্ট পেয়েছি এই বাইকটি থেকে। এক কথা রাইডে কখনও আমাকে হতাশ করেনি ।
সর্বশেষে আমি বলব কম বাজেটে হিরো হাংক সেরা। কেউ যদি হিরো হাংক নিতে চান বা নেওয়ার কথা চিন্তা করেন আমি বলব চোখ বন্ধ করে নিতে পারেন, সব দিক থেকে ভালো সাপোর্ট পাবেন। আর যারা বলবে এই বাইক খারাপ তাদের বলব আগে ব্যবহার করেন বা রাইড করেন তারপর মন্তব্য করুন। হেলমেট পরে বাইক রাইড করুন এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলুন । ধন্যবাদ ।