১৬ বছরের বাইক এবং বাইকিং লাইফ নিয়ে কিছু কথা - রাকিব

This page was last updated on 29-Jul-2024 03:54pm , By Shuvo Bangla

আমি আসাদুজ্জামান রাকিব । বাসা কলারোয়া সাতক্ষীরা । আপনাদের সাথে আমার বাইক এবং বাইকিং লাইফ নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করবো ।

২০০৬ সালে আমার ছোট চাচার একটি Suzuki 100 বাইক ছিল , সে সময় ওটা চালাতে পারাটাই ছিল অনেকের স্বপ্ন , তখন গ্রামের মানুষ বাইক কেনার স্বপ্ন দেখতো না বললেই চলে , তবে এটা বুঝতে পারতাম যে আমার থেকে যারা ৫/১০ বছরের বড় তারা বাইক চালানো শেখার জন্য পাগল হয়ে থাকত । 

এবার বলি আমার কথা , আমাদের বাড়ি থেকে আমার কাকুর বাড়ি আধা কিলোমিটার দূর , কাকু দোকানদারি করত । প্রতিদিন দুপুরে খেতে আসত বাড়িতে , আমিও দুপুরের খাওয়া শেষ করে প্রতিদিন গিয়ে চাচার বাইক মুছে দিতে যেতাম । তবে শর্ত ছিল আমাকে প্রতিদিন বাইকে করে বাজারে নিয়ে যেতে হবে । আবার আমি বাজার থেকে হেটে বাড়ি আসতাম ।

বাইকের ড্রাইভিং সিটে বসলে মাটি নাগাল পেতাম না তখন , আমি প্রতিদিন দেখতাম আমার চাচা কিভাবে বাইক স্টার্ট দেয় কিভাবে চালায় কিভাবে জোরে চলে আস্তে চলে , কিভাবে থেমে যায় । 

এভাবে কেটে গেল প্রায় দেড় বছর , মাটিতে নাগাল পাই একটু একটু । এবার প্রতিদিন বাইক মোছার পরে সেটা সাইকেল এর মতো উঠানে ঠেলতাম ।  চাচা দুপুরে ঘন্টা দুয়েক ঘুমাতো , সেই ফাকে এবার কয়েক মাস পর ঠেলা বাদ দিয়ে উপরে উঠে বসতাম , আর আমার থেকে যারা ১/২ বছর এর ছোট ছিল তাদের দিয়ে ঠেলাতাম । তারা ঠেলতেও বেশ মজা পেতো কারন পুরা এলাকায় তখন দুইটা বাইক মাত্র ।

ওদের ভেতর এক এক জনের এক এক দিন চাচার সাথে বাজারে নিয়ে যেতাম তাই ওরাও ঠেলে দিতো,  প্রায় দুই বছর বাইকের সব প্রায় মুখস্থ হয়ে গেল,  হাতের ব্যালেন্স ও চলে আসল ওদের ঠেলা দিয়ে বাইক চালানোর সময়,  এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে হঠাৎ একদিন চাচার বাইকের তেল ফুরিয়ে যায় সেজন্য বাইক বাড়িতে রেখে দোকানে চলে যায় ।

বাড়ি থেকে পাম্প ছিল ৩ কিলোমিটার দূরে , আর সে সময় খোলা তেল ও বিক্রি হতো না গ্রামে কারন বাইকই ছিল হাতে গোনা ,  মাঝে মাঝেই চাচার তেল এনে দিতাম পাম্প থেকে । সেদিন ও আমাকে বলল যা তেল নিয়ে আয়,  গেলাম সাইকেল চালিয়ে তেল আনতে । চাচা বলল তেল বাইকে ভরে ঠেলে বাজারে নিয়ে আয়,  আমিও গেলাম । আমি ভাবলাম যে পোলাপান দিয়ে ঠেলে নিয়ে আসব । 

কিছু দূর আসতেই ওরা বলল রাকিব ভাই আজকে স্টার্ট দিয়ে চালা ,  কয়েক বার বলল আমিও দিলাম স্টার্ট দিয়ে ক্লাস চেপে দিলাম গিয়ার ঠিক এমন ভাবে ছাড়লাম যেনো আগে থেকেই আমি চালাতে জানি । কারন ওই যে ঠেলার সময় ব্রেক পিকাপ সব ধরতাম ছাড়তাম , তবে চালিয়ে বাজার পর্যন্ত যায়নি চাচার দোকানের আগেই থামিয়ে দিয়ে ঠেলে নিয়ে গেছিলাম ।

কারন ভয় ছিল চাচা যদি বকা দেয় , তবে পরের দিন এলাকার লোক জন বলে দিয়েছে দেখলাম যে কাল তোমার ভাইপো গাড়ি চালাচ্ছে , তবে চাচা রেগে না গিয়ে খুশি হয়ে পরের দিন চাচা নিজেই বলল নে চালা । আমি তো অবাক,  মানে পুরাই হতভম্ব । কিছু না বলে চাবি নিয়ে চালালাম সোজা বাজারে এসে রাখলাম , চারিদিকে লোকজন তাকিয়ে আছে ,  কি যে ভাল লাগছিল ৷  

হিরো হিরো লাগছিল তখন , তারপর থেকে টুক টাক চালাইতে দিতো চাচা । আমিও সুযোগ খুজতাম কি করে একটু চালানো যায় । তবে মাঝে মাঝে বাইক ভাড়া করতাম চালানোর জন্য , আমার বন্ধুদের ও চালানো শিখিয়েছিলাম, একদিনে ৩ জনকে একসাথে চালানো শিখাইছিলাম SSC পরিক্ষার আগে ।  

এবার আসি নিজের বাইক কেনার গল্পে , SSC পাশ করেছি 2011 তে, আব্বু ছিল দেশের বাইরে । বাইকের প্রতি নেশা ছিল সেটা বাড়ির সবাই জানে , যায় হোক ২০১৪ সালে বাইক কিনে দিয়েছিল ।  এলাকার এক বড় ভাই বাইক দেখে দিছিলো DISCOVER 135 সেই সময় এর কিং বাইক বলা যায় । রাস্তায় দেখলে মনে মনে ভাবতাম এমন বাইক যদি আমার থাকত , বাইক কেনার দিন আম্মু আর আমি গেছিলাম । বাইক কিনে বাইকে করে আম্মুকে নিয়ে আসছিলাম , বাড়ি আসার পরে নতুন বিয়ে করা বৌ যেমন দেখতে আসে মানুষ ঠিক সেভাবেই সবাই বাইক দেখতে আসছিল । সেই অনুভুতি প্রকাশ করার কোন ভাষা আমার জানা নেই ।

২০১৪ তে বাইক কেনার পরেও আমি বাইকের তেমন কিছু বুঝতাম না , শুধুমাত্র ভাল চালাইতে জানতাম আর বেশ কিছু জনকে চালানো শিখিয়েছি,  এক মিস্তী কাকা ছিল সে বলেছিল ১ হাজার কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করার জন্য । তবে সমস্যা হয়ে গেছিল যে ১ হাজার কিলোমিটার যেন ১০/১২ দিনেই হয়ে যাচ্ছিল । খুব বেশি হলে ২০ দিন । তেল কেনার টাকা আম্মুর থেকে টুক টাক নিতাম আর আমার নিজের মোবাইল সার্ভিসিং ও মেমোরি লোডের দোকান ছিল সেখান থেকে চালাতাম ।

বন্ধুরাও তেল কিনে দিতো , তবে মুশকিল হলো ইঞ্জিন অয়েল কেনার টাকা যেন গোছাতেই পারতাম না, কারন ১৫ দিনেই ১ হাজার হয়ে যায় । আমার মাথায় ধারনা ঢুকিয়ে দিছিল মিস্ত্রী কাকা তবুও ২ হাজার ৩ হাজার চালিয়ে ফেলতাম একই ইঞ্জিন অয়েল দিয়ে । তাও দেখি বাইকের কিছুই হয়না এখন বুঝি ১ হাজারে অয়েল বাদ দেয়া মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই না ।

যায় হোক DISCOVER 135 আমার কাছে থাকা কালীন সময়ে আমি প্রায় ২ লক্ষ কিলোমিটার এর কাছাকাছি চালিয়ে ফেলেছিলাম , সেটা এমন একটি বাইক ছিল যে তার সাউন্ড ও টান বর্তমান যুগের ২/৩ লাখ টাকার বাইকেও দিতে পারেনা ।  টান হয়ত বর্তমান কিছু কিছু বাইকে পেয়েও যেতে পারেন ২/৩ লাখ টাকার ভেতর,  কিন্তু ওই সাউন্ড আর ওইরকম স্মুথ ইঞ্জিন আর আদেও হয়ত বা পাওয়া সম্ভব না । 

গিয়ার সিফটিং ছিল অনেক স্মুথ কোন বাজে সাউন্ড ছিল না ৷ যারা Discover 135 ব্যাবহার করেছেন তারা বাদে এটার গুন কেউ বুঝবে না,  বাজাজ এর পালসার বাইক প্রায় বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছিল তাই ২০০৮ সালে এই বাইকটি বাংলাদেশের বাজারে  আমদানি ব্যান করে দেয়া হয় । ৮ বছর ব্যাবহার করেছিলাম বাইকটি ১ বার ফুল সার্ভিসিং করাইছিলাম, তাছাড়া টায়ারে হাওয়া দেয়া ও অয়েল চেঞ্জ করা ছাড়া তেমন কোন মেজর সমস্যা হয়নি । ব্রেক সু , ক্যাবল আইটেম এগুলা চেঞ্জ করতে হতো । তবে ইঞ্জিন নিয়ে একবার প্যারা খাইছি পিস্টন নস্ট হয়ে গেছিল সার্ভিস করার পরেই আবার সেই আগের রুপে ফিরেছিল ৷ 

২০২১ সালের দিকে চারিদিকে সবার কাছে আধুনিক বাইক দেখে মন চাইতো যে আমিও ভাল বেশি cc এর বাইক কিনব , তারপর থেকে বিভিন্ন ইউটিবার এর রিভিউ দেখতে থাকলাম ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের । আমার চয়েস হলো Pulsar NS160 ABS ৷  পছন্দ হওয়ার কারন ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার টাকার ভেতরে এটার মতো ফিচার অন্য কোম্পানি গুলোর ভেতর পায়নি । অয়েল কুলিং সিস্টেম, প্যারিমিটার চ্যাসিস সাথে ABS এবং দুর্দান্ত পাওয়ার , আর অসাধারণ ব্রেকিং,  সব মিলিয়ে ভাল লাগছিল তাই কিনেছিলাম তবুও Discover 135 টা সেল দেয়নি তখনও ।

তবে আব্বু বিদেশ থেকে বাড়ি এসে তার ভাগ্নের কাছে সেল দিয়ে দিছিল অন্য কোন নতুন বাইক কিনবে তাই , আব্বু Hero ignator পছন্দ করে কিনেছিল , Discover টা সেল করতে বারন করেছিলাম তা শুনেনি । তারপর Pulsar NS টা ২ বছর এর বেশি চালাইলাম , ব্রেক প্যাড চেঞ্জ করেছিলাম একবার চেইন স্পোকেট ২৩ হাজার কিলোমিটারের ১ বার চেঞ্জ করেছিলাম ।

ক্লাস ক্যাবল টা পরিবর্তন করেছিলাম ১২ হাজার কিলোমিটারে এছাড়া বাইকের ইঞ্জিন কখনো আমাকে হতাশ করেনি । তবে একবার ABS কাজ করা অফ করে দিছিলো সেটাও ২০ হাজার কিলোমিটার পরে । শোরুমে নিয়ে গেলে তারা ২০ মিনিটেই ঠিক করে দেয় ফ্রিতে , তবে আমি খুশি হয়ে মেকানিককে ৫০০ টাকা দিছিলাম । Pulsar NS কার কেমন লাগে জানিনা তবে এটা যত্ন করে রাখতে পারলে সেরা পারফরম্যান্স পাওয়া যায় ।

এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার বাইকটি চালিয়েছি , কোন প্রকার পাওয়ার লস করেনা এবং ওভার হিট পায়নি । তবে ১০০/২০০ কিলোমিটার প্রায় দিনে চালানো পড়ত । NS এর সব কিছু ভাল লাগলেও একটা জিনিস খারাপ লাগত সেটা হলো মাইলেজ , একটু স্পিডিং করলে ৩৪-৩৫ মাইলেজ পেতাম এবং নরমাল রাইড করলে ৩৭-৩৮ মাইলেজ পেতাম ।  

অয়েল কুলিং হওয়ার কারনে 1200 ML ইঞ্জিন অয়েল ক্যাপাসিটি ছিল,  সেটাও একটা প্যারা 1200 ML সব জায়গা পাওয়া যেতো না তাই দুইটা করে কিনতাম আবার পাচ বার দেয়ার পরে আবার দুইটা কিনতাম,  আমি তখনো ১ হাজারেই চেঞ্জ করে ফেলতাম অয়েল ,  কারন এতো ঘাটাঘাটি করা হয়নি ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে বা বিস্তারিত দেখিনি আগে ।

তবে আমি ২০২৩ সালে যখন বাইকের পার্টস এর দোকান দিলাম তখনই ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে একটু রিসার্চ করতে লাগলাম , অয়েল কত প্রকার কি কি এবং দামের পার্থক্য কেন হয় , আস্তে আস্তে ব্রেন খুলতে লাগল আর আফসোস হলো হায়রে এত গুলা বছর বাইক চালিয়েছি কিন্তু ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে কখনো ঘাটাঘাটি কেন করলাম না । ১ হাজার কিলোমিটারে অয়েল চেঞ্জ করতে হবে এটা বাপ দাদাদের রীতি ছাড়া আর কিছুই না । 

গ্যারেজ মেকানিক দের দিয়ে এটা বিভিন্ন অয়েল কোম্পানিই প্রচার করাইছিল যে বলবা ১ হাজারেই চেঞ্জ করতে হবে নইলে ইঞ্জিন নস্ট হবে,  সব কিছু বুঝতে পারার পরে ২৫০০/৩০০০ কিলোমিটার চালানোর পরে অয়েল চেঞ্জ করতাম , Use করতাম Vegalube Racing synthetic যথেষ্ট ভাল ইঞ্জিন অয়েল ৩ হাজার চালানোর পরেও যেন লালচে ভাব থেকেই যেতো । হাতে নিলে কালোই হতো না তাই বুঝলাম এতোদিন ছিলাম বিরাট বড় ভুলের ভেতর।

NS কেন সেল দিয়ে অন্য বাইক নিলাম -  

কোন সমস্যার কারনে NS সেল দেয়নি ,  হঠাৎ এক ভাই বলল যে একটা FZ v3 সেল দিবে , তো আমি ভাবলাম দেখি বাইকটা কিনে কেমন কি আছে তাতে , যদিও এর আগে অনেক গুলা V3 চালাইছি তবুও কেন জানিনা কেনার শখ লাগলো ,  কিনেও ফেললাম । তবে NS তখনও সেল দেয়নি,  আমার শালাবাবু আবার বাইক কিনবে বলে তার বাড়িতে তোলপাড় শুরু করে দিছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই,  তো আমি কোন কিছু না ভেবেই হঠাৎ তাকে বাইক টা দিয়ে দিলাম । শ্বশুর কে বললাম বাইক যখন চাইছে আমার  এটা সেল দেবো তো ওরেই দিই । 

Yamaha FZ v3 সম্পর্কে বিস্তারিত - 

Yamaha FZ V3 কেনার পরে ওটাতে আর মন বসে না ,  কারন NS এর মতো পাওয়ার নাই । আর ABS টাও NS এর মতো এতো সুক্ষ বা দক্ষ না কারন NS এর ABS প্লেট ও সেন্সর দুইটা আর FZ একটা । তাই স্বাভাবিক ভাবেই FZ পিছনের চাকার গতি বুঝতে পারবে না ,  যদিও দুইটা বাইক সিংগেল চ্যানেল ABS তার পরেও NS সেরা ছিল । 

FZ এ মাইলেজ পেতাম ৪৩-৪৫ আর স্পিডিং করলে ৪০ মাইলেজ পেতাম । বাইকটি কেনার পরে মনে হলো এই বাইক আমার জন্য না এটা বয়স্ক বা আধা বয়সি মানুষ এর বাইক । যারা বাইকে ককম্ফোর্ট চায় তাদের জন্য এটা । FZ v3 আমার বাড়িতে কারোর পছন্দ হলোনা ।  মা,  বাবা,  বৌ,  বাচ্চা,  সবাই বলল আগের টাই ভাল ছিল । কিন্তু কি আর করার ফেরানোর কোন পথ নাই কারন শালাবাবুর কাছে সেল দিছি তার ও শখের বাইক এখন সেটা ।

আমি মনে মনে ঠিক করলাম R15 M অথবা R15 V3 কিনব , সেকেন্ড হ্যান্ড খুজতে থাকলাম ১ মাস ধরে । হঠাৎ করেই আমার পাশের দোকানের মালিকের ছেলে একদিন বলল তার Suzuki Gixxer SF টা সেল দেবে । মাত্র ৫ হাজার কিলোমিটার চলেছে , সেল দেওয়ার কারন সে দোকান্দারি করে এবং বাসা দোকান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে তাদের Discoverer 100 আছে একটা সেটাই তারা রেগুলার ব্যাবহার করে এজন্য SF চালানোর সুযোগ পাইনা ।

২ বছরে মাত্র ৫ হাজার কিলোমিটার চালাইছে , দেখে তো আমি অবাক । মনে হচ্ছে বাইক কেবল শোরুম থেকে আনা ,  এক মুহুর্তে সিন্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ওটাই কিনব এবং কিনেও নিলাম । FZ v3 তখনও আমার কাছে এখন বাইক বাড়িতে ৩ টা আমার দুইটা আব্বুর একটা । FZ সেল দিয়ে দিলাম মাস খানেক এর ভেতর ।

Suzuki Gixxer SF এর বিস্তারিত - 

Suzuki Gixxer SF বাইকটি আমার কাছে আছে প্রায় ৪ মাসের বেশি এই চার মাসে আমি বাইকটি ৫ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি । দোকান থাকার কারনে আগের মতো বেশি বাইক নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে পারিনা , তবুও এই ৫ হাজার কিলোমিটারে আমি এই বাইকের বেপারে অনেক টাই ধারনা পেয়েছি ।  

Suzuki Gixxer SF এর ভালো দিক -

Gixxer SF এর কিছু ভাল দিক আছে যেমন এটা সেল করতে গেলে কাস্টমার পাওয়া যায়, মানে রি সেল ভ্যালু ভালো আছে । পাওয়ারও ভালো আছে যা আছে সেটা দিয়ে বাংলাদেশের মতো রাস্তার সব ধরনের রাস্তায় ভালো ভাবেই চলা সম্ভব এবং ট্যুর ও করা যাবে । আমি এই বাইক দিয়ে সাতক্ষীরা টু কুয়াকাটা গ্রুপ ট্যুর করেছি । রাতের বেলা রাইড করেছি ৩০০ কিলোমিটার, হেডলাইট এর আলো যা আছে তাতে ফগ লাইট এর প্রোয়জন ফিল করনি ।

আলো যথেষ্ট ভালো, ইঞ্জিন এর সাউন্ড অন্যান্য 155cc বাইকের অনুযায়ী সুন্দর। তেমন কোন হাতে পায়ে লাগার মতো ভাইব্রেশন নাই বাইকটিতে,  সিটিং পজিশন ও স্পোর্টস বাইক হিসাবে ঠিক ঠাক । মাইলেজ পেয়েছি লং রাইডে ৫০+ এবং গ্রাম গঞ্জ ঘুরলে ৪৫ এর আশে পাশে । পাওয়ার এবং বাইকের বডি হিসাবে মাইলেজ নিয়ে কোন অভিযোগ নাই , আর হ্যা এই বাইকের ABS টা মোটামুটি ভালোই তবে আমার আগের NS এর চেয়ে তুলনামূলক কম কাজ করে সেটা ১০ এর মধ্যে ৮ এমন ।

Suzuki Gixxer SF এর খারাপ দিক -

খারাপ দিক এর ভেতর আমার কাছে সবার আগে আসবে এটার পিছনের ব্রেকিং সিস্টেম । কারন ১৪০ সাইজ এর টায়ারে এত কম পরিমানে গ্রিপ রাস্তায় দেয়া হয়ছে যার কারনে এটা ব্রেক একটু জোরে প্রেস করলেই স্কীড করে । স্পীড যদি ইটের রাস্তায় ৩০/৩৫ থাকে তাহলে সব চেয়ে বেশি পিছনের ব্রেক প্যারা দেয় । তার প্রধান কারন পিছনের ব্রেক অনেক জোরে না চাপলে ব্রেক কাজ করেনা ।

আর জোরে চাপলেই অপ্ল স্পীডে বেশি স্লিপ করে, এবং আরো বাজে দিক হলো এটার ট্রাকশন কন্ট্রোল । টায়ারে গ্রিপ কম থাকার কারনে ১ ম এবং ২য় গিয়ারে যদি হালকা বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় থ্রটল একটু জোরে ধরেন তাহলে সামনের চেয়ে পিছনের চাকা বেশি ঘুরে,  ট্রাকশন ফেইল হয় । ইটের রাস্তায় তো আরো ভয়াবহ অবস্থা, রাইডিং পজিশন তো ঠিক ঠাক তবে লং রাইডে কাধ ও পিঠ ব্যাথা হয় ।

রেগুলার ২০ - ৩০ কিলোমিটার চালালে কোন প্যারা নাই, সুজুকির গিয়ার সিফটিং এর কথা আর কি বলব সেটা যে লাথি দিয়ে আপ ডাউন করতে হয় সেটা সবারই জানা । বাইকটিতে টপ স্পিড তুলেছি ১২৬ ।

ব্যাক্তিগত কিছু মতামত - 

১৬ বছরের বেশি সময় বাইক চালানো শিখেছি । নিজের ব্যাক্তিগত বাইক হিসাবে ২০১৪ থেকে ২০২৪ মানে ১০ বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটার এর বেশি রাইড করেছি । নিজের বাইক যখন ছিল না যাদের বাইক ছিল তাদের বাইক মুছে দিতাম চালানোর জন্য যদিও সেটা কিশোর বেলায় । ২০১৭ সালে কিছু বড়ভাই ও বন্ধুদের নিয়ে বাইকিং কমিউনিটি ও গড়ে তুলেছিলাম । 

৫০০+ অফিসিয়াল টি শার্ট পরিহিত মেম্বার ছিল এবং একই থানার এরিয়াতে । আমরা টুর দিতাম মাসে দুইবার সব মিলিয়ে বাইকের প্রতি ভালবাসার কোন কমতি ছিল না । ২০১৯ সালে বিয়ে করলাম তারপর থেকে কমিউনিটি তে সময় দিতে পারতাম না অফিসের কাজের জন্য , বাইকের প্রতি এই নেশা আর ভালবাসার কারনেই ২০২৩ সালে নিজেই বাইকের পার্টস এর দোকান দেই ।

এবং আবারো বিভিন্ন বাইকিং কমিউনিটিতে যোগদান করি ও বাইক বিডি সহ বিভিন্ন বাইকের স্টিকার দোকানে পরিচিত মানুষ আসলে নিজে হাতে স্টিকার  লাগিয়ে দেই । বাইক নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ টার মতো জেলা ঘুরেছি । তবে ইচ্ছা আছে বছরে অন্তত দুইবার গ্রুপ ট্যুর দেওয়ার এবং জীবনে একবার পুরা দেশ বাইক নিয়ে ঘুরে দেখার এবং প্রতিটা জেলার সার্কিট হাউজের সাথে নিজের একটা ছবি রাখার ।  

বাইক নিয়ে কিছু ধারনা -  

আমার নিজের কাছে মনে হয় আমাদের দেশে বাইক গুলার দাম ওভার প্রাইজ । স্পোর্টস বাইক যেন দিন দিন ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে , তবে পুরাতন দিনের সেই ইঞ্জিন কিন্তু আমরা পাচ্ছি না । প্রতিটা কোম্পানি যেন কস্ট কাটিং এর প্রতিযোগিতায় নেমেছে । হয়ত বা হাজার খানেক এর উপরে বাইক রাইড করেছি , এতটুকু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ।

২০১০ সাল পর্যন্ত বাইকের ইঞ্জিন গুলা যথেষ্ট মানের করা হয়েছিল এবং Yamaha RX এর ইঞ্জিন এর কথা নতুন করে বলার কিছু নাই CDI Yamaha RX , Suzuki 100 এগুলার ইঞ্জিনের মত হয়ত বর্তমান যুগের তাল মেলানোটা কঠিন । যদি ২০০৫ এর পরে আসি তাহলে এই ১৯/২০ বছরে এখনো Discover 135 এর ইঞ্জিন এর ধারে কাছেও কেউ আসতে পারেনি । 

বাইকের প্রতি ভালবাসা আর স্মৃতি লিখে শেষ করা সম্ভব বলে মনে হচ্ছেনা আর লিখলেও পড়ার ধৈর্য থাকবেনা সবার । ধন্যবাদ ।


লিখেছেনঃ  আসাদুজ্জামান রাকিব

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Upcoming Bikes

KTM Duke 250 (2024)

KTM Duke 250 (2024)

Price: 0.00

VOGE SR150GT

VOGE SR150GT

Price: 0.00

Revoo C03

Revoo C03

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes