Haojue DR160 টিম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ
This page was last updated on 26-Jul-2024 05:05pm , By Raihan Opu Bangla
Haojue DR160 টিম বাইকবিডি টেস্ট রাইড রিভিউ
যখন কোন চাইনিজ বাইক কোম্পানির কথা বলা হয় তখন আমাদের সবার মাথায় যেসব কোম্পানির নাম আসে তাদের মধ্যে হচ্ছে লিফান, কিওয়ে বা টারো হতে পারে। তবে অনেকেই আছেন যারা Haojue নামটি বলে থাকেন না। কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে সেলস এর দিক থেকে চাইনিজ ১ নাম্বার কোম্পানি।
২০১৯ এ অনুষ্ঠিত ঢাকা বাইক শোতে Haojue লঞ্চ করেছিল Haojue DR160 বাইকটি। অনেকেই বলেছিল যে কোম্পানিটি খুব দ্রুত বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু এ বিষয়ে এত নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না।
১৯৯৩ সালে Haojue চায়নাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা জাপানী জায়ান্ট মোটরসাইকেল কোম্পানি Suzuki এর সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার করেছিল। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করি যে তারা কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছে এবং তারা তৈরি করেছে Haojue DR160। বাইকটির ইঞ্জিন হচ্ছে ১৬২সিসি ২টি ভাল্ব যুক্ত সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইঞ্জিন।
ইঞ্জিনটি হচ্ছে ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন এবং বাইকটির রয়েছে ১২লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক। এর ইঞ্জিন থেকে 14.8 BHP @ 8000 RPM & 14 NM of Torque @ 6500 RPM শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।অনেক বাইকের মত, এই বাইকে কোন কিক স্টার্ট নেই। তবে তারা যুক্ত করেছে হ্যাজার্ড লাইট ইন্ডিকেটর। Haojue এই বাইকটি নিয়ে অনেক সিরিয়াস ছিল। এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই বাইকটির স্পিডোমিটারে। বাইকটির স্পিডোমিটারটি সম্পূর্ন রূপে ডিজিটাল, এতে স্পিড, রেভ কাউন্টার, গিয়ার চেঞ্জ ইন্ডিকেটর, ফুয়েল গজ এবং অন্যান্য ওয়ানিং লাইটস শো করে।
যদি ভালভাবে খেয়াল করে দেখা হয় তবে বুঝতে পারবেন এতে একটি ওয়েল চেঞ্জ ইন্ডিকেটরও দেয়া হয়েছে। আপনি কবে এমন দেখেছেন যে ফোর স্ট্রোক বাইকে এমন কিছু দেয়া হয়েছে।
Haojue DR160 Review By Team BikeBD
বাইকটির হুইলবেস হচ্ছে কনভেনশনাল এবং বাইকটি ওজনে ১৪৮ কেজি। কিছুটা উচুও বটে, এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হচ্ছে ১৬৮মিমি এবং স্যাডেল হাইট হচ্ছে ৭৯০মিমি । এ থেকে বোঝা যায় যে এই বাইকটি ৫'৬'' উচ্চতার মানুষের জন্য কোন সমস্যা হবে না রাইড করতে। এছাড়া এই বাইকটির পাইপ হ্যান্ডেলবার এর টার্নিং রেডিয়াস এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহায়তা করে থাকে শহরের ভেতর রাইড করার সময়।DR160 এর সামনে এবং পেছনে দেয়া হয়েছে রেটর পেটাল ডিস্ক ব্রেক, ও এর দুটি ব্রেক ই CBS দ্বারা কানেক্টেড করা হয়েছে। তাই যখন আপনি পায়ের ব্রেক প্রেস করবেন তখন সামনের দিকে ব্রেকও এক সাথে কাজ করবে এবং এই ব্রেকটি দারুণ ভাবে কাজ করে।
সামনের দিক দেয়া হয়েছে ১০০সেকশন টায়ার যা আপনি হাই স্পিড কর্নারিং এর ক্ষেত্রে দারুণ কনফিডেন্স পাবেন। অপর দিকে রেয়ার টায়ার ১৩০সেকশন নিশ্চয়তা দেবে যাতে করে আপনি কর্নারিং এর ক্ষেত্রে স্লাইড না করেন। বাইকের ডিজাইন এমন ভাবে করা হয়েছে যে আপনি চাইলে কম বা বেশি স্পিডে সুন্দর ভাবে কর্নারিং করতে পারবেন।
বাইকটির হেললাইটের ডিজাইন করা হয়েছে ইউনিক ভাবে। এর লো বিমে দেয়া হয়েছে LED প্রোজেকশন, আর অপর দিকে হাই বিমে দেয়া হয়েছে হেডলাইটের সাথে দেয়া হয়েছে এক্সট্রা LED। সামনের দিকে দেয়া হয়েছে USD সাসপেনশন, আপনার মনে হতে পারে খারাপ রাস্তায় এর ফিডব্যাক ভাল হবে না, কিন্তু আসলে তা নয়।
সামনের দিকে সাসপেনশন শুধু নয় রেয়ার সাসপেনশনও ১০০০ কিলোমিটারের পর অনেক সফট হয়ে আসে। সাসপেনশনের ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের রাস্তার জন্য সুন্দর ভাবে সেট আপ করা হয়েছে। যদিও বাইকটির পেইন্ট কোয়ালিটি তেমন উজ্জল নয়, তবে যে ম্যাটেরিয়াল গুলো রয়েছে যেগুলোর কোয়ালিটি দারূণ।
তাই এই ক্ষেত্রে বলা যায় যে, সুইচ গিয়ার গুলো, বাইকের প্লাস্টিক গুলোসহ ওভার অল পুরো বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভাল। এছাড়া তারা আরও যুক্ত করেছে ডুয়েল এক্সেলারেশন ক্যাবল, যা এর এক্সেলারেশন রেস্পন্স আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।DR160 গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুব বেশি না হওয়াতে আপনি ভারী পিলিয়ন নিয়ে বাংলাদেশে স্পিড ব্রেকার গুলোতে রাইড করতে একটু সমস্যা হবে। বাইকের সুইচ গিয়ার গুলো রাতের বেলা আলোতে জ্বলজ্বল করে। যেহেতু বাইকটিতে দেয়া হয়েছে ফুয়েল ইঞ্জেক্টর দেয়া হয়েছে তাই ভাল মানের ফুয়েল দরকার এই বাইকটি থেকে ম্যাক্সিমাম পারফর্মেন্স পাওয়ার জন্য।
Haojue DR160 রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স
এটি একটি দারুণ বাইক। বাইকটির ইঞ্জিন থেকে যথেষ্ট পরিমান পাওয়ার উৎপন্ন করে থাকে যাতে করে আপনি হাইওয়েতে যেকোন ওভারটেকিং এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট কনফিডেন্স পাবেন। এছাড়া এর স্মুথ গিয়ার চেঞ্জ আপনাকে খুব সহজে ওভারটেকিং এ সহায়তা করবে। আর এর সামনে এবং রেয়ারের সাসপেনশন ফিডব্যাকও দারুণ।যেকোন রাস্তাতেই হাই স্পিড কর্নারিং এর ক্ষেত্রে বাইকটি যেন সব সময়ই প্রস্তুত থাকে । যেন যেকোন সময় এটাক করতে বাইকটি প্রস্তুত। বাইকটি খুবই স্মুথ। এছাড়া এর রাইডিংও অনেক কম্ফোর্টেবল।
অপর দিকে এর প্রতিযোগিতের সাথে রাস্তায় ভাল ই দাপিয়ে বেড়াতে পারবে। আপনি যখন বাইকটি রাইড করা শুরু করবেন তখন আপনার মনেই হবে না যে আপনি একটি চাইনিজ মেইড বাইক রাইড করছেন।
হ্যা যদি বলি যে দামের কথা, ১,৯৯,৫০০/- কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে বাইকটি CBU (Complete Build Unit) হিসেবে আসে, আর এজন্য ট্যাক্স দিতে হয় ১৫৪%। তবে যখন তারা বাইকটি ম্যানুফ্যাকচার করবে তখন দাম অনেক কমে আসবে। তবে আমার মনে হয় তখন অনেকে মাথা ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।আমাদের টেস্ট রাইডে টপ স্পিড পেয়েছি ১২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। অপর দিকে শহরের মধ্যে রাইড করার সময় আমরা মাইলেজ পেয়েছি ৩৮-৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৪২-৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার।
উভয় সময়ে আমাদের রানিং এবং রাইডিং স্মুথ ছিল। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে বাইকটিতে ওয়াটার কুলিং ব্যবহার করা হতে পারে। কিন্তু আমাদের টেস্ট রাইডিং এর সময় আমরা ইঞ্জিন ওভারহিটিং এর কোন ইস্যু পাইনি।
Haojue DR160 এর ভাল দিকঃ
- পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
- বিল্ড কোয়ালিটি
- হ্যান্ডেলিং ও ব্রেকিং
- মাসকুলার লুকস
- সাসপেনশন ফিডব্যাক
- হ্যাডলাইট ইলুমিনেশন
Haojue DR160 এর খারাপ দিকঃ
- দাম খানিকটা বেশি
- 6th গিয়ার মিসিং
- রিয়ার ভিউ মিরর কিছুটা ভেতরের দিকে। এটি কিছুটা প্রশস্ত আর বাইরে দিকে দেয়া হলে ভাল হতো
- যদি সঠিক টায়ার প্রেশার না থাকে তবে রেয়ার টায়ার ভেজা রাস্তায় কিছুটা স্কিড করবে
- এফআই ইঞ্জিন হবার কারনে সব সময় মেইন্টেনেন্স করতে হবে
DR160 এর আগে আমি আরও দুটি চাইনিজ বাইক টেস্ট করেছি, বাইক দুটি হচ্ছে Lifan KPR এবং CF Moto 150NK। যদিও বাইক দুটি অনেক ভাল তবে কিছু বড় খারাপ দিকও রয়েছে।
কিন্তু Haojue DR160 এর ক্ষেত্রে আমি সেভাবে মেজর কোন ইস্যু খুজে পাইনি। আমার বলতে কষ্ট হচ্ছে না যে এই বাইকটি আমার টেস্ট রাইড করা অন্যতম সেরা চাইনিজ বাইক।