desktop
noadd

Suzuki Gixxer বাইকের সাথে ১০০০০ কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা - মাহিম

This page was last updated on 01-Aug-2024 04:04am , By Shuvo Bangla

আমি শাহরিয়ার নাফিস মাহিম । আমার মতে বাংলাদেশের বাজারে Suzuki Gixxer বাইকটি খুবই জনপ্রিয় এবং তরুণদের কাছে প্রথম পছন্দ। জিক্সার সিরিজটি অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের বাজারে রয়েছে। গ্রাহকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তারা নতুন ডিজাইনের জিক্সার সিরিজ বাজারে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের বাজারে যখন নতুন জিক্সার আসে তখন থেকেই আমার একটা টার্গেট ছিল যে আমি এই বাইকটা কিনব। 

 Suzuki Gixxer

জানুয়ারি মাসে যখন নতুন মডেল গুলো বাজারে আসে তখন আমি অন্যান্য বাইকের সাথে তুলনা করে দেখলাম যে এই দামের মধ্যে অন্যান্য বাইকে ফিচারস রয়েছে তার থেকে তুলনামূলক বেশি ফিচারস রয়েছে জিক্সারের বাইকে। এই বাইকের যে দাম (২,৩৯,৯৫০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমি মনে করি ফিচারস অনুযায়ী ঠিক আছে তবে রাইড করার পর কিছুটা দাম নিয়ে সংশয় রয়েছে সেগুলো আমি বিস্তারিত নিচে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ।

বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ড যেমন ইয়ামাহা, হোন্ডা ইত্যাদি ব্র্যান্ডের যেসকল বাইক ছিল তার ফিচারস অনুযায়ী দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছিল কিন্তু জিক্সারের নতুন সিরিজ আসার পরে এর দামটা ফিচারস অনুযায়ী আমার কাছে ভাল লেগে যায় যার কারনে আমি আজ থেকে প্রায় ৭ মাস আগে এই বাইকটি ক্রয় করি এবং ক্রয় করে এখন পর্যন্ত রাইড করেছি ১০,০০০ কিলোমিটার। 

এই ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড করার পরে আমার কাছে এই বাইকটি নিয়ে কিছু ভালো মন্দ দিক এসেছে। আমি মনে করি যে এই ভালো মন্দ দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করলে আপনারা যারা জিক্সার বাইক কিনতে আগ্রহী হবেন বা যা যারা কিনবেন তারা একটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। মোটরসাইকেল ভ্যালী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে আজকে আমার জিক্সার এফ আই এবিএস বাইক নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।

শুরুতেই আমি এ বাইকের ভালো অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি -

প্রথমত আমার কাছে এই বাইকের ডিজাইনটা অনেক বেশি ভালো লেগেছে। নতুন জিক্সার এফ আই এবিএস বাইকের যে ডিজাইন রয়েছে তা আমার কাছে যথেষ্ট প্রিমিয়াম ডিজাইন মনে হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি যে বাইকটি অনেক নিখুঁতভাবে প্রত্যেকটা অংশ ডিজাইন করা হয়েছে যার কারণে বাইকটি সবদিক থেকেই দেখতে খুবই ভালো লাগে। দূর থেকে দেখতে কিংবা কাছ থেকে দেখতে আমার এই বাইকটি অনেক বেশি ভালো লাগে। আমি যখন প্রথমে বাইক নিয়ে রাস্তায় রাইড করি তখন অনেকেই আগ্রহের সাথে আমার এই বাইকটি দেখতে থাকেন।

ডিজাইনের পরপরই আমার কাছে যে বিষয়টি অত্যন্ত ভালো লাগে তা হল বাইকের এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম। আমাদের দেশে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি সে অনুযায়ী বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভালো এবং কার্যকরী। একটু বৃষ্টি হলে আমাদের রাস্তায় যে পরিমাণে কাদা বা ভাঙা দেখা যায় সে পরিমাণে ভালো মানের একটি ব্রেকিং সমৃদ্ধ বাইক খুবই দরকার এবং তা নিশ্চিত করেছে সুজুকি। যেকোনো পরিস্থিতিতে এবিএস ব্রেকিং খুব ভাল কাজ করে এবং আমি এ বাইকের ব্রেকিং নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট।

ইন্জিনটা আমার কাছে পূর্বের জিক্সার সিরিজের থেকে অনেক বেশি আপডেট মনে হয়েছে। পূর্বে মডেল ইঞ্জিন এর থেকে নতুন মডেলের ইঞ্জিন আরও বেশি স্মুথ এবং পারফরম্যান্স খুব ভালো পাচ্ছি।   ইঞ্জিনের টর্ক থেকে শুরু করে প্রতিটা বিষয়ে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে।

লং রাইড এর ক্ষেত্রে বাইকটি অনেক আরামদায়ক। আমি এক দিনে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার রাইড করেছি এবং রাইড করে আমার কাছে একটি খুবই আরামদায়ক মনে হয়েছে। স্প্লিট সিটিং পজিশন থাকার কারণে পিলিয়ন নিয়েও খুব আরামে লং রাইড করা যায়। সিটিং পজিশন থেকে ব্যাক পেইন বা খারাপ কোন অনুভূতি আমি এখন পর্যন্ত পাইনি। এর পাশাপাশি কন্ট্রোল আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। ভালো সিটিং পসিশন, সাসপেনশন, টায়ার, সব মিলিয়ে একটি খুব ভালো কন্ট্রোল দিতে সক্ষম বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।

ইঞ্জিনের পারফরমেন্স যেমন ভালো ঠিক তেমনি এই বাইকের ইঞ্জিন থেকে ভালো মাইলেজ পাচ্ছি। আমি দিনে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার গড়ে রাইড করি। শহরের মধ্যে আমি এই বাইক থেকে মাইলেজ পাচ্ছি ৩৮ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৪২ থেকে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি। এই নিয়ে আমি সন্তুষ্ট কারণ ১৫৫ সিসির বাইক থেকে এর বেশি মাইলেজ আশা করা বোকামি। এই মাইলেজ সম্ভব হয়েছে অত্যাধুনিক এফআই প্রযুক্তির কারণে।

এইবার এই বাইকের কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি -

প্রথম যে বিষয়টি আমার কাছে খারাপ লেগেছে তা হল একদিনে বেশি রাইড করলে ইঞ্জিনের শব্দ টা একটু নষ্ট হয়ে যায়। এতে পারফরমেন্সে কোন কমতি হয় না কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ শব্দ হওয়ার জন্য আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে। হয়তো ওভারহিটিং বা কোন ক্রটি থাকার কারণে হয়তো আমার এই ইঞ্জিনের শব্দ টা পরিবর্তন হয়েছে তাছাড়া ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স, টর্ক এই ত্রুটিপূর্ণ শব্দের কোন প্রভাব পড়ে না। আমি মনে করি যে এই বিষয়টি সুজুকি একটু নজরে নেওয়া উচিত। হয়তো অন্য কারো বাইকে হচ্ছেনা কিন্তু আমার এই বাইকে আমি সমস্যাটা লক্ষ্য করেছি।

বাইকের দাম অনুযায়ী আমার কাছে পারফরম্যান্স , ফিচারস ভালো লাগলেও এই বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি ও কালার কোয়ালিটি নিয়ে আমার মনে সংশয় রয়েছে। আমার মনে হয় যে এই বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি এবং কালার কোয়ালিটি টা আরো উন্নত করা উচিত। তবে পারফর্মেন্স ও ফিচারস বিবেচনায় আমার কাছে বাইকটি ভাল মনে হয়েছে প্রথম দর্শনে। এখন রাইড করে আমি এই সমস্যাটা পাচ্ছি। আশাকরি সুজুকি অচিরেই এই সমস্যাটি সমাধান করবেন।

আমি বাইক থেকে টপ স্পিড এখন পর্যন্ত পেয়েছি ১১৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা । আমি স্পিড তেমন পছন্দ করি না। বাইক নিয়ে ধীরগতিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভব করতে করতে রাইড খুব পছন্দ করি। সময় পেলেই আমি বাইক নিয়ে ছুটে যাই অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে। এই সুজুকি বাইক প্রথম দর্শনে আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিল এবং বাইকটি আমি খুবই বেশি পছন্দ করি। শুরুতেই যখন এই বাইকটি বাজারে এসেছিল তখনি আমি বাইক কিনেছিলাম এবং কিছু কিছু বিষয় ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্যান্য সব বিষয় নিয়ে আমি সন্তুষ্ট আছি। এ বাইক নিয়ে আমার ইচ্ছা আছে অনেক দূর দূরান্তের পথ পাড়ি দেওয়ার এবং আমার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী করে নেওয়ার।

আশা করি আপনারা সবাই সুজুকি জিক্সার এফআই এবিএস বাইক নিয়ে ভালো ধারণা পেয়েছেন এবং আমার রিভিউটি পড়ে বাইক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন । আমি আশাবাদী যে এই বাইকটি আমাকে অনেকদিন সাপোর্ট দিবে এবং আমার রাইড এর চাহিদা মেটাবে। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আপনাদের জন্য আমার দোয়া রইল। ধন্যবাদ আমার রিভিউটি এত সময় দিয়ে পড়ার জন্য। 

লিখেছেনঃ শাহরিয়ার নাফিস মাহিম

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।